আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হা হা হা পায় যে হাসি! ভগবান পড়বে ফাঁসি! ( চতুরভূজ)

ধুলো থেকে আগমন আবার ধুলোতেই প্রত্যাবর্তন

মানুষ ভালবাসে, স্নেহ করে, কামনা বাসনায় উদ্বেল হয়। কখনও কষ্টে কাঁদে কখনও ফেটে পড়ে উল্লাসে! তবুও মানুষ জীবনকে ভালবাসে-প্রেমিকের ঠোঁটে চুমু খায় আবার নিয়তীর কাছে হেরেও যায়। এইভাবে হেরে গিয়েও মানুষের কাছে তার এই জটিল জীবন মধুর মনে হয়! আচ্ছা, মধুরতা কি? আমিতো বায়রনের মতই ভাবি! বাবার কাছে তার প্রথম সন্তান জন্মানোও খুব মধুর, প্রতিশোধও যেমন মধুর তেমন মধুর কলহের অবসান। বন্ধুর সাথে প্রীয়জনের সাথে ঝগড়া করাও মধুর, বোতল ভর্তি মদ আর ব্যারেল ভর্তি বিয়ারও মধুর। অসহায় কাউকে পৃথিবীর আক্রমন থেকে রক্ষা করাও মধুর।

আমার স্কুলের যে স্থানটিকে আমি আজও ভুলতে পারিনা সেটাও আমার কাছে মধুর মনে হয় যদিও সেখানে কেউ আমাকে হয়তবা মনে রাখেনা। মায়ের কোলে মাথারাখা যেমন মধুর তেমনি মধুর প্রেমিকের ঠোঁটে চুমু খাওয়া। গ্রীক পুরেনে প্রমিথিউস যে আমাদের জন্য স্বর্গ থেকে আগুণ চুরি করে এনেছিল সেটাও একটা মধুর স্মৃতী যদিও তাকে এজন্য ক্ষমা করা হয়নি! এতসব মধুরতার সীমা ছাড়িয়েও মানুষের ভেতর জন্ম নেয় দুর্মর ঘৃনা! রাগ, হিংসা, অভিমান এবং ঘৃনা - এইসব না বোধক মানবিক গুণাবলীও কখনও কখনও মানুষের কাছে মধুর মনে হতে থাকে! একজন মানুষের ভেতর হৃদয়ের চার প্রোকোষ্ঠেই রক্ত আর মাংশের বাইরে রয়ে যায় মমতা আর ঘৃনা। প্রকৃতি মানুষের জন্য না বোধক এবং হ্যাঁ বোধক সকল মানবিক বৈশিষ্টের ডালি সাজিয়ে বসে থাকে- আমরা বেছে বেছে গ্রহণ করি যে যতটুকু পারি! প্রকৃতির ডালি থেকে কেউ তুলে নেই মমতা আর কেউবা ঘৃনা। দিনে দিনে লালন করতে করতে বিশাল মহীরুহের আকার দেই সেই মমতা অথবা ঘৃনাকে।

এটাই স্বাভাবিক - যদি নিজেকে মানুষ স্বীকার করি! কিন্তু সভ্যতার জয়যাত্রা আর যন্ত্রের উত্কর্ষতা কি মানুষের পজিটিভ বৈশিষ্টগুলোকে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেগেটিভে রুপান্তরিত করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে? এটা কি সভ্যতারই অবদান? প্রতিদিন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে একটি সুরক্ষিত রুমে বসে দেখে যাই মানুষের আতি সাধের জীবন কেমন করে ভুলুন্ঠিত হচ্ছে সভ্য মানুষদের পদতলে! একদল কেবল চিরটাকাল নিষ্পেষিতই রয়ে যাচ্ছে! আর আরেকদল তৃপ্তি পাচ্ছে নিষ্পেষন করে! এসব কি সভ্যতার অবদান? মানুষ কি তবে এ কারণেই এত সভ্য? নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মানুষ মারা হচ্ছে পতঙ্গের মত! কেউ নেই দেখার! মৃতপ্রায় শিশু, নারী আর পুরুষের জান্তব চিত্কার কি আমরা অনুভব করতে পারি একফোঁটাও? এটা খুবই করুণ যে, সভ্য মানুষেরা শান্তি চায় কিন্তু মারনাস্ত্র তৈরী করে অশান্তির জন্য! এর নামই কি সভ্যতা? ইরাকে সভ্য মানুষদের অসভ্যতার দাপট এতটাই ভয়াবহ যে ইরাকীদের কাছে মৃত্যু যেন স্বাভাবিক আর নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার। ওহ তাহলে মানুষের মৃত্যুতেই সভ্যতার জয়ধ্বনী! যে যত বেশি মানুষ মারবে সে তত বেশি যেন সভ্য! ফিরে যাই নিজ দেশে- আমি ৭১ দেখিনি কিন্তু অনুভব করতে পারি, আমি ৯০ দেখেছি কিন্তু বুঝতে পারিনি, কিন্তু আমি ২০০৬ এর অক্টোবর (বি এন পি, আওয়ামিলীগ, জামাতের ত্রীমুখি সংঘর্ষ) দেখেছি, দেখেছি সাপ মারার মত করে মানুষকে পিটিয়ে মারার পর সেই লাশটিকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বিকৃত করা, দেখেছি স্বজাতী আর স্বজাতীয়তাবাদী দের প্রতি কি প্রচন্ড ঘৃনার প্রকাশ সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ! তারপর? তারপর একটি সুরক্ষিত রুমে বসে সেই মধ্যযুগীয় কায়দায় মানুষ মারার দৃশ্য দেখি আর আফসোস করতে করতে প্রতি পাঁচ বছর পর পর ফুলের মত পবিত্র চরিত্রের কোন খুনিকে সসন্মানে বসিয়ে দিয়ে আসি রাজকীয় আসনে! প্রতারিত হবার স্বাক্ষর সেই পার্মানেন্ট কালি হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে আসি আর অপেক্ষা করতে থাকি একটু শান্তির। আমরা কি এমন অপরাধ করেছি যার দরুণ দেখতে হচ্ছে এমন দিন? তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে ১৩টি জ্বলজ্যান্ত তাজা হৃদপিন্ডের হৃদস্পন্দন থেমে গেল আমাদের সবার সামনে। একেকজন লোকের সাথে জড়িয়ে থাকা একেকটি পরিবার, তার স্ত্রী সন্তানেরা সারা জীবনের জন্য বুকের মধ্যে গভীর ক্ষত নিয়ে হাহাকার করতে থাকবে আজীবন। কি পেল তারা? সভ্যতা তাদের কি দিয়েছে? আমরা কি এক ফোঁটা অনুভব করতে পারি তাদের কেউ হারিয়ে যাবার ব্যাথা, আমরা কি বিন্দু পরিমান টের পাই সেই হাহাকার? যারা এর পেছনে দায়ী তারাতো তাদের হাতের অদৃশ্য রক্ত ধুয়ে মুছে চমত্কার সব খাবারের আইটেম নিয়ে বসে যাবেন পরিজনের সাথে আনন্দময় ভোজনে! আমরা ভোট দিয়ে দিয়ে তাদেরই আবার আসনে বসাই যে কিনা আমার জীবন চিবিয়ে খায়!!! ৭১ এ যারা পাকিস্তানীদের হাতে শহীদ হয়েছেন তাঁদের জন্য আমার কোন কষ্ট নেই, আমি সুখ অনুভব করি, চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন! কিন্তু চরম দুঃখ পাই যারা আজও বেঁচে আছেন যুদ্ধে যোগদান করে।

তাঁরা আজ ভাবছেন কেন সেইদিনই হানাদারের বুলেটে লুটিয়ে পড়লামনা, কেন দেখতে হ্য় এমন দিন? আমার ভিষন ইচ্ছে করে কবর থেকে তাঁদের তুলে এনে এদেশের নেতাদের মুখে থুথু ছিটিয়ে দিতে, আমার ভিষন ইচ্ছে করে যারা গাজী হয়ে বেঁচে আছেন তাদের হাতে স্যান্ডেল তুলে এইসব রক্ত চোষাদের গালে চপোটাঘাত করতে- দেশপ্রেমিকের রক্ত আবর্জনার স্তুপে চাপা পড়লেও একটু শান্তি পেতাম। কিন্তু এখানেও বাধা, কারণ আমরা সভ্য! সভ্য হবার আরও একটা যন্ত্রনা- যখন যা ইচ্ছে করে তা করতে পারিনা। এখনও কি আমরা আগের মতই তাদের ভোট দিয়ে মানুষের মানবতাকে আরেকবারের জন্য ভুলুন্ঠিত হতে দেব? আমরা কি বর্জন করতে পারিনা তাদের?এখনও কি আমাদের সময় হয়নি নিজেদের ভেতরের সুগভীর চেতনাকে টেনে বের করার? আমরা কি পারিনা কেবল মধুর আর মধুরতার ডেফিনেশনটুকু আঁকড়ে ধরে রাখতে? কোথায় সেই পাগলা ভোলা যে দেবে প্রলয় দোলা! কবে হাসবো সেই হাসি যেদিন ভগবান পড়বে ফাঁসি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।