আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যবিত্তের গালি বিষয়ক রোমাঞ্চ!

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

ছোটবেলায় ডাংগুটি খেলতে খেলতে খেলার সাথীগো কাছ থেইকা কখন যে চ্যুৎমারানি গালি শিখছিলাম সেইটা মনে নাই, তয় মেজকাক্কুরে ঐ গালি দিয়া মায়ের কাছে যখন হালকা ঝারি খাইলাম তখন বুঝলাম এই গালি নিষিদ্ধ আমাগো মতোন মানুষের কাছে। ঐ গালির পর আমার মাস্তান টাইপ মেজো চাচাও বাড়িতে এই সব গালি দেওন বন্ধ করছিলো...এরপর থেইকা সে গালি দিতো হরিপদ, ভোদাই প্রভৃতি...তয় মধ্যবিত্তের অ্যাডভেঞ্চার মাইনা আমার পরানে বিদ্রোহ জমা হইছে সেই তখন থেইকাই...এইসব গালির বিরোধীতাও মধ্যবিত্তের মজ্জাগত এইরম একটা বিশ্বাস আমার তৈরী হইয়া গেলো প্রায়। কিন্তু দীর্ঘসময়ের প্রবহমানতায় আমার জীবনের শেষ তের বছর যখন কাটলো ঝাউচরে...আমার বাপের একমাত্র আয়ের উৎস ২০টা ভাড়া দেওয়া বেড়ার ঘরের নিম্নবর্গের ২০টা পরিবারের জীবন যাপন দেখতে দেখতে...তখন আমার অনেকগুলি রিয়েলাইজেশন পাল্টাইলো...সেই রিয়েলাইজেশন আরো পোক্ত হইলো বর্তমান ডিজুস জমানার আল্ট্রা বিদ্রোহী সব প্রাণের ঘনিষ্ঠতা পাইয়া। মধ্যবিত্তই আসলে গালির শ্লীলতা আর অশ্লীলতা নিয়া ভাবে বেশী! মধ্যবিত্ত তার শ্রেণী পাল্টানের ক্ষেত্রে আর অন্য কিছু নিয়া যাই মনে করুক, যাই বিশ্বাস করুক...গালির ক্ষেত্রে সে প্রতিবাদী হয়...একদল শুদ্ধতার আবরনে, আরেকদল হুদাই একধরনের জায়েজকরণে। বাস্তবিক কোন দলেরই তার শ্রেণীরে উৎরাইয়া যাওনের অ্যাম্বিশন থাকে না।

মানব সভ্যতার সকল শ্রেণীর মধ্যে মধ্যবিত্ত হইলো সবচেয়ে চিন্তক গোছের, আবার এই মধ্যবিত্তেরই প্যাটার্নের বাইরে গিয়া ভাবনের সমস্যা থাকে...সে আহত হয়...আর আহত হইলেই প্রতিবাদী হয়...ব্যক্তি আক্রমণে আর যেই শ্রেণীরই যাই লাগুক না ক্যান মধ্যবিত্ত খেপে...মধ্যবিত্ত ঘুরপথে যায়...তখনই গালির নির্ভরতা বাড়ে তার। গালির অশ্লীলতা বিষয়ক বিতর্কে মধ্যবিত্তেরই অংশগ্রহণ বেশি থাকে, হোক সে বিরোধী কিম্বা পক্ষের...গালি বিষয়ক অধিক চিন্তার প্যাটার্নটাই মধ্যবিত্তীয় একটা এক্সপ্রেশান। গালির পরিবেশ নিয়ন্ত্রনের চিন্তাটাই মধ্যবিত্তীয় চিন্তা। মধ্যবিত্ত এমনেই স্বপ্ন দেখে বইলাই জানি। সে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রনে থাকতে চায় নিজের রুচীবোধরে নিয়া।

গালি এইখানে উপলক্ষ্য মাত্র। নিম্নবর্গের মানুষের এক্কেরে কাছে থাইকা আমার যেই উপলব্ধি তৈরী হইছে জীবনের বড় একটা সময়ে...তারা গালির অশ্লীলতা বিবেচনা নিয়া ভাবে না, আবার একইসাথে তারা ঐটারে জায়েজ করনের যুক্তিতেও যায় না অশ্লীলতা-শ্লীলতা বিতর্ক দিয়া, ঐটা তারা করে এক্সপ্রেশন হিসাবেই...মুখে আইয়া পরলে আটকায়না... ভাবনা যা ভাবনের সেইটা আসলেই মধ্যবিত্তীয় রিয়েলাইজেশন। গালির শ্লীলতা অশ্লীলত বিবেচনা যারা করে তারা সব মধ্যবিত্ত চেতনার...হোক সে শুদ্ধ হোক সে গালির পক্ষে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।