আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ইনিংস

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

পাঠকের চক্ষুর কার্যক্ষমতা ব্যাহত হলে চশমা দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়, আছে আরও নানাবিধ উপায়ও। দর্শকের চক্ষু ও কর্ণের বিবাদ ঘটলে তা ভঞ্জন করানোর মতে অনেক মিডিয়া এজেন্ট পাবেন আপনি গুলশান-বনানীতে। কিন্তু সাতকানিয়া বা চন্দনাইশের পাহাড় দেখার পর যদি মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যিকার অর্থে চক্ষু ও কর্ণ তাদের যথাস্থানে আছে কি-না, তাহলে সেটি কি নিজের আত্মবিশ্বাসকে নড়িয়ে দেয় না? নাকি প্রতিষ্ঠিত করে সেই সত্য- এক জায়গায় বারবার ভ্রমণ করলে পরবর্তী সময়গুলোতে দেখা যায় প্রথমবারের চেয়ে অনেক বেশি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার চট্টগ্রামে যাওয়া হলো। আগেরবার যেমন চট্টগ্রাম শহরেই বেড়ানো হয়েছে বেশি, এবার হলো তার উল্টোটা।

বিশেষ করে পটিয়া, সাতকানিয়া এবং চন্দনাইশের গ্রামগুলো, শিকলবাহা, সাঙ্গু, শঙ্খ ও বরকল নদীগুলোর তীরে। ফলে এবার চোখের সামনে এতো বেশি জিনিস এসেছে যে, সেগুলো দেখতেই হয়তো ওই এলাকাগুলোতে আবার যাওয়া যায়। SIR না, আমরা কাউকে এই নামে ডাকিনি। স্যার হচ্ছে সাঙ্গু ইন রেস্টুরেন্ট। একদম সাঙ্গু নদীর তীরে অবস্থিত, যদিও রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসে নদীর তীর দেখা তো দূরের কথা, বাইরের প্রায় কিছুই দেখা যায় না।

তবে এই রেস্টুরেন্টের চাওমিন এবং কফি যদি একবার খেয়ে আসেন... আর কি কিছু বলার দরকার আছে? আদর্শ হিন্দু হোটেল বাইরেরর হলুদ ব্যানারে বড় বড় করে লেখা- এখানে উন্নতমানের বাবুর্চি দ্বারা রান্না করা হয়। হোটেলে ঢোকার পরপরই তাই ভালো করে লক্ষ করলাম, কিন্তু আমার কাছে বাবুর্চিকে মোটেই উন্নতমানের বলে মনে হলো না। অনানুষ্ঠানিক জাতীয় পোশাক লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত এই বাবুর্চি স্বাস্থ্যের দিক দিয়েও উন্নতমানের নয়। গড়পরতা চেহারা। যা হোক, উন্নতমানের বাবুর্চি পাওয়া গেলো না কিন্তু উন্নতমানের খাবার হয়তো পাওয়া যাবে ভেবে বসলাম।

কিন্তু খাবার মুখে দেওয়ার পর যেহেতু রোজার দিন, আর যেহেতু আমরা নিতান্তই ভদ্রলোক, তাই ঢাকার আজাদী হোটেলে যা করেছিলাম সেটি আর করলাম না (আজাদী হোটেলে আমরা খাবার না খেয়েই বেরিয়ে এসেছিলাম, যদিও হোটেলওয়ালা ১০২ টাকার বিল থেকে ২ টাকা কনসেশন দিয়েছিলো)। আমার মনে পড়লো মেরুল বাড্ডার সেই হোটেলের সাইনবোর্ডের কথা- উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা আমাদের অধিকার। অধিকারের থেকে অঙ্গীকারের দূরত্ব বেশি নয়। দুটো থেকে কমন নিলে ধিঙ্গী শব্দটি বেরিয়ে আসে। আমরা কেউই ধিঙ্গিপনা করিনি।

পরদিন ঢুকলাম আরেকটি হিন্দু হোটেলে। নাম ... থাক, নামটা না বলি। কিন্তু ভেতরে ঢুকেই দেখি বিশাল কাবাশরীফের ছবি। আমরা ভাবি, আমরা অবাক- ব্যাপারখানা কী? ভয়কাতুরে ... আজ এমন সাহসী! সাহস করে আমাদের একজন জিজ্ঞেস করেই ফেললেন। উত্তর পাওয়া গেলো এই যে- এই রোজা রমযানের দিনে মুসলিম মালিক দোকান খোলা রাখবেন না।

তাই একমাসের জন্য এই হিন্দু ভদ্রলোক হোটেলটি ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন। তবে ভেতরে একবার ঢুকে পড়লে হিন্দু-মুসলিম সবাই চাইলেই খেতে পারবেন বলে জানালেন তিনি। মাঝখানে একদিন আমরা বান্দরবানেও গেলাম। মেঘলা স্পটে ঘুরে দেখলাম একাকী ভালুককে। ভেতরে বানর আছেন কয়েকজন।

আমরা অবশ্য বাইরেই ছিলাম। যা হোক, ভেতরের বানরগুলো বোধহয় ভাবছিলো আমরা গিয়েছিলাম তাদের কিছুটা আনন্দে রাখার জন্য। এরকম ছোটখাট অনেক কাহিনী আছে। আছে অনেক মজার কাহিনী। সব হয়তো বলাও যাবে না।

পতেঙ্গায় গিয়েছি, গিয়েছি নাম না জানা অনেক পাহাড়ে, কথা বলেছি অনেক আদিবাসীর সঙ্গে। মজা পেয়েছি, নামের সব বাহার দেখে। চট্টগ্রামে যেমন 'কর্ণেলহাট' আছে, তেমনি আছে 'কেরাণীরহাট'ও। শোভনদণ্ডী, শিকলবাহা ইত্যাদি নামগুলো বেশ সুন্দর না? আমার নতুন আপলব্ধি- শহর চট্টগ্রামের বাইরের চট্টগ্রাম অনেক অনেক সুন্দর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.