আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগ-আলোচনা:: ইসলামী ব্যংক কি সুদ দেয়?

কে জানে কখন ভেঙ্গে পড়ি পাখা

সাম্প্রতিক একটি পোস্টে একজন ব্লগার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইসলামী ব্যংকিং নিয়ে । আলোচনায় প্রথমেই সেই ব্যপারটিই আসুক। পর্যায় ক্রমে আরো প্রশ্ন নিয়ে কথা বলা হবে, আশা করছি। ১. সাধারণভাবে আমরা জানি, ইসলামী ব্যংকিং হল (সুদ বিহীন) লাভ/লোকশান ভিত্তিক ব্যংকিং ব্যবস্থা। কিন্তু দেখা যায়, (বিশেষ করে আমাদের দেশের ইসলামী ধারার ব্যংক গুলোয়) তারা কেবল লাভই দিয়ে থাকে।

কিন্তু আমানতকারীদের লস দিতে কখনো দেখা যায়নি দিতে ? তাহলে কি তারা সুদকেই তাদের পলিসি হিসেবে অবলম্বন করে থাকে? ::আপডেট:: যাযাবর পংক্তিমালা বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক একটা ভাওতাবাজী। বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম না মেনে কি ব্যাংকিং করা যাবে? মধুমিতা বলেছেন : বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মানতেই হবে। ওখানে সুদে হিসাব হয়। গন্ডমূর্খ বলেছেন : এই ব্যাংক যখন তার গ্রাহককে লোন দেয় তখন কিন্তু এ কথা বলে না। তখন কিন্তু নির্দিষ্ট হারে লাভ চায়।

গ্রাহকের লস হলেও কিন্তু ইসলামী ব্যাংক সেটা বহন করবে না, তাকে ঐ হারে লাভ মানে সুদ দিতেই হবে। আর এই আদায়কৃত সুদের অংশই আমানতকারীরা গ্রহণ করছেন লভ্যাংশ বলে। জ্বিনের বাদশা বলেছেন : আমার মনে হয় এটা বেশ পড়াশোনার দাবী রাখা শাস্ত্র, এবং ইসলামী ব্যাংকিংয়ে কর্পোরেট বিজনেসের দিকনির্দেশনা কেমন হবে সে বিষয়েও জানা দরকার ... এখন তো আর মহাজনী সিস্টেম নাই ... কর্পোরেট সিস্টেমে আপনি একখাতের লস অন্যখাতের লাভ দিয়ে পোষান ... এখন ঘাইটা দেখতে হবে সেটা ইসলামী ব্যাংকিংয়ে জায়েজ কিনা ... যেমন ধরেন আপনার টাকা তারা খাটাইল তেলের বিজনেসে, আমারটা খাটাইল পরিবহনে ... এখন তেলের বিজনেসে অনেক লাভ হইল, পরিবহনে খানিক লস হইল, তখন কি হবে?... সব ব্যালান্স করে আপনি আমি সমান লভ্যাংশ পাব? নাকি, আপনি অনেক লাভ পাবেন, আমি লস পাব? এইখানে ইসলামী ব্যাংকিং কি বলে সেটা পড়াশোনার দাবী রাখে ... এইটাকে আরো বড় পরিসরে দেখা যায় ... বিজনেস গ্রুপ বা কর্পোরেট আকারে দেখলে তাগোর ব্যাংকিং খাত লস খাইলেও অন্যখাতের লাভ বা ক্ষতিপূরণ দিয়া সেটা তারা পোষাইয়া দিবে ... এখন আপনে কি বলবেন? 'তোমাগোর লস হয়না ক্যান?' এটা বলবেন? সেইটাই তো কর্পোরেট বিজনেস পলিসি ... শেয়ারহোল্ডারগো উপরে লস চাপাইয়া ব্যাংকের একাউন্ট হোল্ডারগোরে লাভ দিব ... শেয়ার হোল্ডাররা লস খাইতে মানসিকভাবে রেডী থাকে, সেইটা তারা জানে ... এক্সপ্লয়েট করতেই পারে ... তখন আপনের দেখতে হইব ব্যাংকের ইন্টারনাল ফিনান্সিং। বিগ কর্পোরেট সিস্টেমে আগামী এক দুই বছরের ক্যাশফ্লো, প্রফিট এইসব সম্পর্কে আগাম ধারনা নেয়া যায় ... সেই অনুযায়ী সেক্টরভেদে, বছরভেদে ক্যাশের ব্যালান্স ঘটাইয়া কোনএক সেক্টরে কোনএক ফিনান্সিয়াল ইয়ারের লস ঠেকানো যায় ... অজানা অচেনা বলেছেন : ওদের অনেক বেশী প্রজেক্টের মধ্যে লস হচ্ছে এমন প্রজেক্ট যেমন আছে, লাভ হচ্ছে এমন প্রজেক্ট ও আছে। নেট এফেক্ট টা প্রফিট হচ্ছে বলেই প্রফিট টা যোগ হচ্ছে।

আরো তথ্যের জন্য Islamic Economics Research Bureau থেকে বের হওয়া A Text Book on Islamic Banking বইটা পড়ুন। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ইসলামী ব্যাংক কিভাবে ইসলামিক ব্যাংকিং করছে, বাংলাদেশে, যেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। এ ব্যপারে একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়মের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক এবং কনভেনশন্যাল ব্যাংকের জন্য ভিন্নতা আছে- যেমন, statutory liquidity reserve। আর তাছাড়া ইসলামী ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ড দেশের বিখ্যাত সব আলেমদের দ্বারা পরিচালিত। উনাদের কারো সাথে সরাসরি দেখা/যোগাযোগ করলে আরো ভালভাবে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন।

শান্ত বলেছেন : এখানে প্রফিট লস শেয়ারিং নির্ভর করে কোন মোডে ইনভেস্টমেন্ট নেয়া হয়েছে তার উপর। যদি আপনি মুশারকা মোডে ইনভেস্টমেন্ট নেন, তাহলেই শুধু এখানে লাভ-লস শেয়ারে প্রশ্ন আসবে; বাই মুআজ্জল, বাই মুরাবাহা- এইসব মোড গুলো হলো ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত- তাই এসব ক্ষেত্রে লস শেয়ারিং প্রশ্ন আসেনা। যেমন- আপনি বাজার থেকে ডিম কিনে এনে ভেংগে ফেলে দোকানে গিয়ে যদি আবার ডিম চান, দোকানি আপনাকে পুনরায় ডিম দেবেনা। ব্যাংকের ক্ষেত্রেও পণ্য ক্রেতার হাতে হস্তান্তর করা পর্যন্ত ব্যাংক দায়বদ্ধ। মুশারাকা মুডে ব্যাংক কমই পুঁজি খাটায়, কারণ ভালো সত পার্টনার পাওয়া বর্তমান সময়ে খুব কঠিন।

অন্যান্য মুডেও লস হয়না - এরকম নয়। কারণ অনেক সময় ব্যাংক যে দামে পণ্য বিক্রির চুক্তি করে, ইতি মধ্যে বাজারে দাম বেড়ে গেলে, বেশি দাম কেনে চুক্তিকৃত কম মুল্যে পন্য ক্রেতাকে সরবরাহ করতে হয়। বাজারে যেহেতু ব্যাংক জমাকৃত টাকা জনগনের, তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা ব্যাংক কতৃপক্ষের নৈতিক কর্তব্য । এজন্য লস কম হয়, মোটের উপর লসের চেয়ে লাভের পরিমান বেশি হওয়ার কারণে বাইরে থেকে মনে হয়, ব্যাংক শুধু লাভই করছে। প্রকৃত ব্যাপার তা নয়।

আর আপনাদের এও জানা থাকা উচিত, বাংলাদেশ ব্যাংকে যে জামানত জমা থাকে, ইসলামী ব্যাংক সে টাকা বাবদ কোন সুদ গ্রহন করেনা। বিশদ জানার জন্য পড়ুন- "ইসলামী ব্যাংকিক সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা", লেখক - শামছুজ্ঝোহা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।