আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক উদ্দাম যৌবনাবতী আফ্রিকান সুন্দরীর গল্প ( শেষ পর্ব )

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
১ম পর্বর পর.. ভিক্টোরিয়া নীল থেকে এই আফ্রিকান সুন্দরী বুজাগালি ফলসের জন্ম যার আদিনাম "বুদাগালি" । এই ভিক্টোরিয়া নীল এর পূর্ব পার্শ্বে অববাহিকায় বসবাসরত প্রাচীন আদিবাসী জনগোষ্ঠী "বাসোগা" BUSOGA দের মাতৃভাষা "লাসোগা" তে LUSOGA এরা বুজাগালি কে বুদাগালি নামে ডেকে থাকে। প্রাচীনকাল থেকে এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাসোগাদের কাছে বুদাগালি ফলস্‌ হচ্ছে এক পবিত্রভূমি। তাদের পূর্বপুরুষের আমল থেকে ডাকিনীবিদ্যার বা BLACK MAGIC এর পারদর্শী ওঝারা এই জলপ্রপাতে ধারে নদীর দেবতাদের বা দুষ্ট আত্তাদের সন্তষ্টির জন্য বলি দিতে নেমে আসতো । এখনও এই জলপ্রপাতের আশেপাশের গ্রামে এরকম ওঝাদের গোপনে BLACK MAGIC চর্চার কথা লোকমুখে শোনা যায় ।

ইচ্ছা থাকা সত্বেও সময় স্বল্পতার কারনে সেই ওঝাদের BLACK MAGIC দেখতে যাওয়া আর হয়নি । বুজাগালি ফলস্‌ বা জলপ্রপাত এখানে ৭ টি শাখায় বিভক্ত হয়ে সারিবাঁধা পাহাড় এর ফাকফোঁকড় দিয়ে তীব্র খড়স্রোতা নদীর মত এগিয়ে গেছে সন্মুখে । এই জলপ্রপাতের চারপাশে অরণ্যে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাখির অবাধ বিচরনভূমি যা পাখি প্রেমিকদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য,জলপ্রপাতের দুপাশের অরণ্যর ধারঘেঁসে আছে আফ্রিকানপল্লী । মানুষ,প্রকৃতি আর জীবজগতের যেন এ এক অসাধারন মিলনমেলা । প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ভীড় জমায় এই আফ্রিকান সুন্দরী বুজাগালির রূপসুধা পান করার জন্য ।

এখানে আছে তীব্র খড়স্রোতা বুজাগালি জলপ্রপাতে রোমন্চকর রাফটিং এর অপূর্ব সুযোগ । সেইসাথে আছে রোমন্চকর বাংগি জাম্প । এখানে আশেপাশের অরণ্য ক্যাম্প ফায়ারের সুযোগ আছে । এছাড়া প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্য আছে অরন্যর অপূর্ব নয়নভিরাম প্রকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য হাইকিং করার সুযোগ। এই বুজাগালি জলপ্রপাতের ধারে পর্যটকদের মনোরন্জনের বিভিন্ন ব্যবস্হা আছে ।

জলপ্রপাতে নির্দিষ্ট স্হানে গাইডের তত্বাবধায়নে নিরাপদে সাতাঁর কাটার সুযোগ আছে। এছাড়া খাবারের জন্য আছে একটি রেস্টুরেন্ট । এখানকার স্হানীয় সাংষ্কৃতিক দল নানারকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যটকদের আনন্দদান করে থাকে । কিন্তু সভ্যতার করালগ্রাসে আজ সেই আফ্রিকান সুন্দরী বুজাগালি হারাতে বসেছে তার যৌবনাময়ীরূপ । সম্প্রতি উগান্ডা সরকার এই বুজাগালি জলপ্রপাতের উৎসে বাঁধ দিয়ে বিশ্ব ব্যান্কের সহায়তায় তৈরী করছে জলবিদূত্ৎ কেন্দ্র ।

ফলে বুজাগালি হারাতে বসেছে তার যৌবনের রূপ,সেইসাথে বদলে যাচ্ছে আশেপাশের ইকোসিস্টেম । একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে এই জলপ্রপাতের উপর বেঁচে থাকা জীবজগত অন্যদিকে তেমনি এই অববাহিকায় বসবাসরত প্রাচীন আদিবাসীরা । সেইসাথে বুজাগালিতে পর্যটকদের ভীড় আশংকাজনক ভাবে প্রতিবছর দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে এখানকার পর্যটনশিল্প এবং এর উপর নির্ভর করে থাকা মানুষের জীবন। যদিও এই জলবিদূৎ কেন্দ্রর উৎপাদনের সফলতা নিয়ে নিয়ে বিষেশজ্ঞদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে কারন ভিক্টোরিয়া লেকের পানি প্রতিবছর দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে ।

ফলে বিদুৎ উৎপাদনে যে পরিমান পানি দরকার সেটার ঘাটতি থেকেই যাবে ফলে লাভের তুলনায় ক্ষতির পরিমান বেশি হবে। কিন্তু সরকার তার সিধার্ন্তে অটল থাকায় বুজাগালি জলপ্রপাতের মৃত্যু এখন শুধু সময়ের অপেক্ষায় । হয়ত আর বুজাগালি তার যৌবনের উচ্ছলতা আর প্রানউদ্দমে ছুটে চলবেনা । পাখিরা হয়তো সেখানে ফিরে আসবেনা । শীতল জলের নির্মল পরশ নিতে হয়তো কোন পর্যটক এখানে আসবেনা ।

জলপ্রপাতের শোঁ শোঁ গর্জনের বদলে তখন হয়তো শোনা যাবে যান্ত্রিক মেশিনের কর্কশ আওয়াজ । এখানকার নীল আকাশ হয়ত ঢাকা পড়ে যাবে যান্ত্রিক সভ্যতার কালো ধোঁয়ায় । এরপরও মানুষ বেঁচে থাকে তার স্বপ্ন নিয়ে ,তার অনাগত সন্তানের জন্য রচনা করতে চায় একটি সুন্দর নির্মল পৃথিবীর । তাই উগান্ডার পরিবেশবাদীরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সরকার কে এরকম ভুল সির্ধান্ত না নেয়ার জন্য। একজন পৃথিবীবাসী হয়ে আমি তাদের হয়ে বলতে চাই আসুন আমরা আমাদের সবুজ প্রকৃতিকে ধারন করি আমাদের সমস্ত স্বপ্ন আর ভালোবাসা দিয়ে ।

আমাদের অনাগত ভবিষৎ বংশধরদের জন্য গড়ি এক সুন্দর, স্বপ্নিল পৃথিবীর। সমাপ্ত
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।