আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কার্টুন রাজনীতির নেপথ্যে

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

কি কাকতাল! এবারো জনাব ইবনে সালাম! আমার অমনিবাস নিকে যখন ভুল করে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ডেনিশ কার্টুনের একটি কপি কিছুক্ষণের জন্য প্রোফাইল হিসেবে করেছিলাম, ভদ্রলোক তার স্ক্রিনপ্রিন্ট দিয়ে ব্লগ গরম করে ফেলেছিলেন। আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল বিডিনিউজে গোয়েন্দা যাবে, আমার কোমরে দড়ি পড়বে। আমি ভাগ্যবান, আরিফুর রহমানের সেই দুর্ভাগ্য আমাকে সইতে হয়নি। আমি ভাগ্যবান তৌফিক ইমরোজ খালিদি মতিউর রহমান নন। ব্লগের কাহিনী শুনে মুচকি হেসে বলেছিলেন, ডোন্ট ওরি ম্যান, উই'ল ফাইট টিল দ্য এন্ড।

জনাব ইবনে সালামের সৌজন্যে আমরা নয়াদিগন্তের কাটপেস্ট সূত্র জানলাম প্রথম আলোর পাপের কথা। পাপ কার্টুন ছাপায় নয়, বরং আরিফকে নিজেদের কেউ নয় ঘোষণা ও সুমন্ত আসলামকে স্যাক করে তারপর প্রথম পাতায় বক্স করে সাফাই গাওয়ায়- আমরা দোষীদের শাস্তি দিয়েছি। বেনিয়াবাদের উৎকৃষ্ট নমুনায় এই নতজানুতা, এই আত্মসমর্পন। যেখানে লাখো শিক্ষিতের ঘরে পৌছে যাওয়া পত্রিকাটি অনায়াসে কার্টুনটির ব্যবচ্ছেদ করে বুঝিয়ে দিতে পারত এই নির্দোষ কৌতুকে দোষ খোজাটা উদ্দেশ্যমূলক ছাড়া আর কিছু নয়। আমাকে ব্লগে ব্যান করানোর পেছনে একটি বিশেষ মহল সেই কার্টুন স্ক্যান্ডাল ব্যবহার করেছিল।

কারণটা আর কিছু নয়, অমি রহমান পিয়াল ইজ আ পেইন ইন দ্য অ্যাস টু দোজ হু যাস্ট ডেয়ার টু ডিজঅনার দ্য ইনটেগ্রিটি অফ আওয়ার ফ্রিডম। তাদের শত গোয়েবলসীয় প্রচারণায় ডকুমেন্টেড উত্তর আসে ওই তরফে। তাই ক্রীড়া সাংবাদিক হবার পরও ডেনিশ কার্টুন সম্পর্কে আমার অজ্ঞতায় তারা ক্ষুব্ধ হয়। আমি কেমন সাংবাদিক নবিজীকে নিয়ে ধৃষ্টতামূলক কার্টুন আমার পিসিতে সংরক্ষণ করে রাখিনি। কেমন সাংবাদিক যে কিনা ছবি দেখলেই বলতে পারে এটা সেই কার্টুন যাতে অবমাননা করা হয়েছে আমাদের প্রিয় রাসুল (দঃ)কে।

মোটের উপর আমার কোন যুক্তি ধোপে টেকেনি। যাহোক। এবার ইবনে সালাম সাহেব আমাদের জানিয়েছেন প্রথম আলোর পাপের কথা। এরপর দেখছি সেইপক্ষে ব্লগের মুমিন মুসলমানরা ঝাপিয়ে পড়ছেন। নিজেরা পোস্ট দিচ্ছেন।

এবং চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন তাদের যারা চুপচাপ এই বালখিল্যতাকে অবজ্ঞা করছে। সেটাকে মিলাচ্ছেন চরম সাম্প্রদায়িক একজন ব্লগারের ব্যান হওয়ার সঙ্গে। হ্যা সুধীজন, নেপথ্য কাহিনী এটাই। এবার কার্টুন ইস্যু ব্লগে ব্যবহার হচ্ছে অন্য একটা বার্তা পৌছাতে। কর্তৃপক্ষ দেখুন আমাদের তৌহিদী ব্লগারদের ক্ষমতা, সো ভালোয় ভালোয় আমাদের সঙ্গীর ব্যানমুক্তি করুন।

অথচ এই বিশেষ মহলটির রাজনৈতিক তৎপরতা ও আদর্শের যে কেন্দ্র বিন্দু, সেই ইরানে এখনো কোরআনে মহানবী ও আলি (রাঃ) ছবি ব্যবহার হয়। আমার কাছে আছে সে ছবি। নবিজী সাহাবীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। এই ছবি কোন কার্টুনিস্টের আকা নয়। একজন ধর্মপ্রাণ ইরানি শিল্পীই হয়তো নবীপ্রেমের উদগ্র উৎকর্ষে একেছে সেই ছবি।

সেই কোরআনে, যেই কোরআন তার তেলাওয়াত করে একজন মুসলমান হিসেবেই। কিন্তু সেই শিয়াইজম নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। কাদিয়ানী নিয়ে যতটা। বরং সুন্নীবাদের সঙ্গে শিয়াদের মাজহাব ভিন্নতা ছাড়া আর কিছু আপাতত মানেন না তারা। ছবিটি আমি এই পোষ্টে দিতে পারতাম।

তাতে আমার হয়তো আরিফের দশা হতো। সামহোয়ারকে বিপন্ন করে, জিম্মি করে অপরাধী মুক্তির জন্য মুক্তিপনের ঘুটি হতাম আমি ও আমার পোস্ট। চোখে দেখেনি, পড়েনি। স্রেফ শুনেই অপরকে কতল করার যে মানসিকতা এইসব ব্লগার ধারণ করেন সেটা জেনেটিকাল ফ্যানাটিসিজম। এই ফ্যানাটিসিজমের কারণেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মুসলমানদের বলি চড়াতে তাদের বুক কাঁপেনি।

কারণ এসব মুসলমান তাদের স্বদেশী হলেও আদর্শের বিরোধী। তাই একজন আরিফুর রহমান কিংবা একজন অমি রহমান মুসলমান হলেও তাদের কিছু আসে যায় না। রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে এবং পথের কাটা দূর করতে সম্ভাব্য সব ধরণের অপকর্মই তাদের পক্ষে সম্ভব। যেমন সম্ভব হয়েছিল তাদের পূর্বসূরীদের পক্ষে এদেশের লাখো রমনীকে তুলে নিয়ে পাকিস্তানী প্রভুদের মনোরঞ্জনে ভেট দেওয়ার সময়। যেমন সম্ভব হয়েছিল এদেশের শিক্ষিত বুদ্ধিজীবিদের চোখ তুলে, কলিজা ছিড়ে তারপর বুলেট মেরে রায়েরবাজারে ফেলে দেয়া।

সামহোয়ার ইন ব্লগ এই মহল ব্যবহার করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে। পূর্বপুরুষরা কোনো পাপ করেনি এবং মুজিব থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সবাই আসলে এ দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে এই বাণীটিকে প্রতিষ্ঠাই তাদের ধ্যান জ্ঞান। একটু গবেষনা করুন। প্রত্যেকের পোস্টে পাবেন মোটামুটি একই ধাচের কথাবার্তা। ভারত আমাদের কতবড় সর্বনাশা প্রতিবেশী এটি প্রমাণ করতে পারলে প্রতিষ্ঠা হয় একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতায় তাদের সহযোগিতা ছিল আসলে আমাদের কলোনি বানানো এবঙ পাকিস্তানকে আলাদা করার নিমিত্তে মাত্র।

ভারত এত খারাপ বলেই তারা এবঙ তাদের বাপচাচারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। এটা কি অন্যায়? মুজিব স্বাধীন করে ছেলেপুলেসহ দেশটাকে লুটেপুটে খেয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা করেছে চুরি ডাকাতি। তাহলে যারা এই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তারা কি অপরাধ করেছে? এইভাবে অনেক জল ঘোলা করে তারা এগোচ্ছে। প্রথম আলোর কার্টুনের জন্য পত্রিকাটির কতৃপক্ষ যা করেছে, সরকার যা করেছে, তাতে বায়তুল মোকাররমের সাচ্চাদিল মুসলমানরা কতটা তুষ্ট হবে সেটা সময় বলে দেবে। কিন্তু ব্লগ রাজনীতিতে এটার ব্যবহার সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক মানছি।

স্বাধীনতার স্বপক্ষের ব্লগার যারা নিজেদের শিক্ষা, মেধা ও মননের কারণেই এই কার্টুন রাজনীতিতে অন্য গন্ধ পেয়ে দূরে আছেন, তাদেরকে কটাক্ষ করে চ্যালেঞ্জ করে ইসলামবিদ্বেষী বানানোর জোয়ার বইছে এখন ব্লগে। সেই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক পোস্ট দিয়ে ব্লগের চরিত্রহননকারীদের মুক্তি দাবী। আমরা এই ব্লগে গালাগালি করে নিজেদের নিচে নামিয়েছিলাম এসব হীনমন্যতার প্রতিবাদে, এসব নব্যগোয়েবলস ও নাজীদের প্রতিরোধ করতেই। ধন্যবাদ সামহোয়ার কর্তৃপক্ষকে যে তারা এখন নিক দেখেন না, নীতিমালার বরখেলাপ দেখেন। হ্যা এখন ব্লগ সুস্থ্য হচ্ছে।

সুশৃঙ্খল হচ্ছে। সেটা আমরা গালি বন্ধ করেছি বলে না, আমাদের উস্কানিদাতারা প্রথম পাতায় জায়গা হারানোয়। আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা তারা রাখে না যে মৌলিক পোস্ট দেয়ার ক্ষমতা ওদের নেই। এখনো সেই কাটপেস্ট আর গাইড বুক থেকে ভাগাভাগি করে দশজনার এক পোস্ট। আর কু-রাজনীতি।

ধিক্কার জানাই এদের এই হীন চক্রান্তের। সেই সঙ্গে সবাইকে সচেতন হতে বলি এদের ফাদে পা না দিতে। যেমন করছিলেন, অবজ্ঞা করুন। এদের পোস্টে কমেন্ট দেবেন না। রেটিং দেবেন না।

পাতা উল্টে দেখুন এরা সবাই ব্লগ গরম করতে কিছু উস্কানিমূলক পোস্ট কিছুদিন পরপর পোস্ট করে। আমরা আগে সদলে ঝাপাতাম এদের গালি দিতে। এখন এরা আমাদের কাছে খিঞ্জির। থুথু ছুড়ে পাশ কাটাই। পাত্তা দিই না।

পরিণাম দেখেন। নিজেদের পিঠ চাপড়াচাপড়ি ছাড়া আর কিইবা করার আছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.