আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত দর্শকের বয়ানাক্ষেপ: প্রসঙ্গ চট্টগ্রাম

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

সম্ভবত গল্পটির নাম ছিলো ‘পাঠকের মৃত্যু’। গল্পলেখক রেলস্টেশনে বসে আরেক পাঠকের আগ্রহের চিত্ত ডিঙ্গিয়ে যে বইটি গোগ্রাসে গিলছিলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে সে বইটিকেই তাঁর মনে হয়েছিলো অখাদ্য। গল্পলেখক নিজেই স্বীকার করেছিলেন, এ বইয়ের দোষ নয়, পাঠকের মানসিকতার পরিবর্তন কিংবা পাঠকের বয়সকেন্দ্রিক কৌতুহলের মৃত্যু। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম অফিসিয়াল কাজে। যাওয়ার আগে কয়েকজনের মনে আবেশ ছড়িয়ে গিয়েছিলাম- এমন একটি শহরে যাচ্ছি যেখানে ব্যস্ততা আছে কিন্তু ব্যস্ততার উগ্রতা নেই।

শহর আছে, কিন্তু নেই শহুরে প্রফেশনালিজম। আমার এ ধরনের কিছু অনুভূতি বলে গিয়েছিলাম ব্লগেও। কিন্তু এক সপ্তাহ ভ্রমণ শেষে সেই গল্পলেখকের বিপরীত স্বীকারোক্তি দিতে হচ্ছে- এ দর্শকের দোষ নয়, চট্টগ্রাম শহর ক্রমেই প্রতিযোগিতায় নামছে ঢাকার সাথে কিংবা শহরটির নিজের ভেতর যে গ্রামীণ ঠাণ্ডা ছোঁয়া ছিলো, তা যেনো উড়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বাতাসে। গল্পলেখকের সঙ্গে এই দর্শকের মিল এটুকুই যে- পরবর্তী দর্শনে গল্পলেখকের যেমন বইটি ভালো লাগেনি, দ্বিতীয় দর্শনে এই দর্শকেরও ভালো লাগেনি চট্টগ্রামের অনেক কিছুকে। বছরখানেক আগেও একবার গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে, শুধু শহর দেখতে।

আমি সুযোগ পেলেই পালাতে চাই ঢাকা থেকে যদিও এই শহর ছাড়া অন্য কোনো শহর আমার ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম। চট্টগ্রাম আমাকে আকর্ষণ করেছিলো তার নিজের ভেতরকার কিছু রূপ দিয়ে; যেনো বলেছিলো- ঢাকার চেয়ে আমি পিছিয়ে নেই খুব একটা কিন্তু ঢাকাতে এক ঝলক সারা বাংলাদেশ তুমি পাবে না, যেমনটা পাবে আমাতে। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম আমাকে সে কথা বলেনি। বরং বলেছে, দেখো তো, কী নেই আমার। তোমার ঢাকায় যেমন যানজট আছে, আমিও তেমন দিন দিন প্রসব করছি যানজটের বাচ্চা।

তোমার ঢাকা যেমন মানুষে মানুষে সম্পর্ক বিচার করে মুদ্রামানে, আমিও শুরু করেছি তেমনটি। ঢাকায় যেমন তোমরা বাদাম খেয়ে তার প্রসাদটুকু দাও রাস্তাকে, আমিও তাই আদায় করছি আমার মানুষগুলোর কাছ থেকে। তোমরা যেমন ঢাকায় প্রসেসের চাইতে আউটপুটকে নিয়ে মাতামাতি করো বেশি, আমার ছেলেমেয়েদরকে কোর্স করাচ্ছি তারই। তোমরা যেমন ঢাকায়... আমি থামিয়ে দিয়েছিলাম চট্টগ্রামকে। বলেছি, চট্টগ্রাম, তুমি আমাকে বড় করে দিয়েছো এক লহমায়।

আমার মধ্যে যে পুরনো মানুষটি ঘাপটি মেরে ছিলো, যে চাইতো শহরের ওপর বইবে গ্রামের বাঁশঝাড়ের গোসল করানো বাতাস, তাকে তুমি বুঝিয়েছো অবমুক্তবাজার অর্থনীতি। তুমি আমাকে উপলব্ধি করিয়েছো, নিজের মধ্যে পরিবর্তন না আনলে টিকে থাকা যায় না। আমি জেনেছি, তাই তুমি পরিবর্তিত হচ্ছো। আস্তে আস্তে গতির কালচার তুমি ঢোকাচ্ছ তোমার খুলিতে কোনো ধরনের চালুনি ছাড়াই। তুমি হয়তো জানছো না, না ছাকলে ডালের মধ্যেও ভেসে ওঠে চাল।

একটু আগেই বলেছিলাম, গল্পলেখকের ‘পাঠকের মৃত্যু’ হয়েছিলো। কিন্তু এখানে দর্শকের কোনো অসুখই হয়নি, মরা তো আরও কয়েক দশকের ব্যাপার। কিন্তু এখন এখানে এসে মনে হচ্ছে স্বীকারোক্তি করাই ভালো যে- এখানেও দর্শক মারা গেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।