আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়া বাঁশ খাইলে নিজ দায়িত্বে বাঁশ খাইয়েন বহুক্ষণ ধরিয়া আমি আর আমার বান্ধবী পিয়া লোকাল বাসে মহিলা সিটের সামনের স্ট্যান্ডখানা ধরিয়া বানরের ন্যায় ঝুলিতেছি। মহিলা সিটের একটি আসন আলোকিতো করিয়া বসিয়া আছে এক সুশীল সুবেশী পুরুষ। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমরা তাহাকে সিটখানা ছাড়িয়া আমাদের বসার সুযোগ করিয়া দিবার কথা বলিতে সাহস পাইতেছি না। হঠাৎ বাসের দরজার কাছে চোখ পরিয়া গেল। দেখিলাম,বোরখা পরা এক তরুণী বাসে উঠিবার চেষ্টা করিতেছে আর পিছন হইতে আরেক ভদ্র সুশীল সুবেশী তরুণীর গায়ে অনর্থক হাত লাগাইতেছে।
মেয়েটি সব বুঝিতে পারিয়াও কিছু না বলিয়া বাসে ওঠার চেষ্টা চালাইয়া গেল। অতপর মেয়েটি বাসে উঠিয়া আমাদের সকলকে অবাক করিয়া ওই ভদ্র সুশীল সুবেশী গালের উপর ধড়াম করিয়া এক খানা চড় বসাইয়া দিল। মেয়েটির চড় খাইয়াও লোকটি চুপ করিয়া রহিল।
ঘটনাটি দেখিয়া আমি আর পিয়া একটু সাহস পাইলাম। মহিলা সিটে বসিয়া থাকা সেই ভদ্র সুশীল সুবেশীকে বলিলাম, “এই যে ভাইয়া শুনছেন,আপনি যে সিটে বসে আছেন ওটাতো মহিলাদের সিট।
সিটটা কি ছেড়ে দেবেন?”
আমাদের কথা শুনিয়া লোকটি আমাদের দিকে এমন করিয়া তাকাইলো যেনো আমরা বড়ো অন্যায্য কথা বলিয়াছি। আমাদের দিক হইতে মুখ ঘুরাইয়া সে সামনের দিকে তাকাইয়া রহিল। আমরা আবার কহিলাম, “এই যে ভাইয়া,আপনি যদি একজন বিবেকবান মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে সিটটা ছেড়ে দেন। ”
আমাদের কথা ওই ভদ্র সুশীল সুবেশী তো শুনিলোই না,বরং উদাস ভঙ্গিতে সম্মুখ পানে চাহিয়া রহিল যেখানে আকাশ আর ট্রাফিক জ্যাম এক হইয়া গিয়াছে। লোকটির ভিতরকার বিবেক জাগ্রত করিতে গিয়া আমার নিজেরই বিবেক জাগ্রত হইয়া গেল।
আমার মনে হইল,হয়ত উনি কোনো উঠতি কবি। হয়ত এই মুহূর্তে তিনি এমন কোনো কবিতা কিংবা উপন্যাসের বিষয়বস্তু খুজিয়া পাইয়াছেন যাহা বাংলা সাহিত্যে সংযুক্ত করিবে আরো একটি নোবেল পুরষ্কার। এমন উচু দরের কবিকে কিনা আমি সামান্য একটা লোকাল বাসের সিটের জন্য বিরক্ত করিতেছি?ছিঃ ছিঃ!!! আমি এত নীচ!এত অধম!!নিজেকে মনে মনে প্রচন্ড ধিক্কার দিই। আবার পরক্ষনেই নিজেকে এই ভাবিয়া সান্তনা দিলাম যে ভাগ্যিস আমি কবিকে চিনিতে পারিয়াছিলাম। তাহা না হইলে তো আজ আমাদের সামান্য ভুলের তরে সমগ্র বাংগালী জাতি নোবেল হইতে বঞ্চিত হইত।
কিন্তু পোড়া কপাল আমার!আমি চুপ হইয়া যাইতেই পাশ হইতে শুনিলাম দুই ছোকড়া কবিকে শুনাইয়া শুনাইয়া বলিতেছে, “দোস্ত,ওই সিটের উপর লেখা আছে ‘মহিলা-শিশু ও প্রতিবন্ধিদের জন্যে বরাদ্দ’। ঠিক কিনা?”
২য় জন বলিল, “ঠিক তো। তোর সমস্যা কি?”
১ম ছোকড়াঃতাইলে উনি ওইখানে বইসা রইছে কেন?উনি কি মহিলা?
২য় ছোকড়াঃনা। সেই রকম তো লাগে না।
১ম ছোকড়াঃতাইলে একটু দেখত উনি শিশু কিনা?
২য় ছোকড়াঃনা।
তাও তো না।
১ম ছোকড়াঃতাইলে উনি কি?
২য় ছোকড়াঃআরে বুঝলি না?ওতো প্রতিবন্ধি। বুদ্ধি প্রতিবন্ধি!!
বদমাশ দুইটার কথা শুনিয়া কবি মহোদ্য় ওদের দিকে কটমট করিয়া তাকাইলেন। অতপর আমাদের দিকে অগ্নিদৃষ্টি বর্ষণ করিয়া মহিলা সিট ছাড়িয়া দিলেন। ওদিকে নোবেল হারানোর দুঃখে আমার মনটা হাহাকার করিতে লাগিল।
মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িলাম আর ভাবিলাম, “হায়রে মুর্খ জাতি,নোবেল পুরষ্কার চিনলি না। ”
আমি কবি মহোদয়ের ছাড়িয়া দেয়া সিটখানাতে বসিতে পারিনা। যে সিটে এমন মহান কবি বসিয়াছিলেন,সেইখানে বসিবে কিনা আমার মতন ক্ষুদ্র মানুষ?না তাহা কোনোভাবেই হইতে পারিবে না। তাহার চাইতে পিয়াই বসুক। তাহার লেখা কবিতা আবার ছেলেবেলায় একবার ইস্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হইয়াছিল।
আমি নাহয় দাঁড়াইয়াই থাকি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।