আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ বিদেশে সংস্কার, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব এবং আজরাইলী প্রতারণা-১

কে জানে কখন কেটেছে তোমার স্বপ্নমুগ্ধ রাত,আজকে কঠিন ঝড়ের বাতাসে দ্বারে করে কশাঘাত

অন্যায় ও অবিচার সরায়ে ভুল ও প্রবঞ্চনায় ভরা বিদ্যমান সমাজ কাঠামোর বিপরীতে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের অভিযোজন ঘঠানোর নামই হল সংস্কার। প্রেক্ষিতভেদে প্রতি সমাজ বা রাষ্ট্রেই মোটামুটি মনোমুগ্ধকর রুপ ও রঙে শুরু হলেও এর পরিসমাপ্তি সবসময় সুখকর হয় না। বরং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দিক নির্দেশনা ব্যতিরেকে এটিকে চলতে দেয়া হলে অধিকাংশ লোকের প্রারম্ভিক স্বতঃস্ফূর্ততা, উৎসাহ ও ঊদ্দীপনা কিছুদিন পরেই তিতিয়ে যায়, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে না। আর সংস্কারের প্রতিপক্ষ অধিকাংশ সময়েই শাসকশ্রেণীর কাছাকাছি থাকা মানুষগুলোর হাসি ক্ষণিকের জন্য উবে গেলেও পরে ঠিকই পূর্ববত যথাস্থানে দ্রুত ফেরত চলে আসে। শারিরীকভাবে সংস্কার বিরোধীদের উপর নাজেহাল করা থেকে শুরু করে কখনো কখনো এমনকি তাদের অসহায় মুর্তির উপরও সংক্ষুব্ধ জনতার আছড়ে পড়তে দেখা যায়।

প্রতি শতকেই এই জনপ্রিয় শব্দটি নিয়ে পৃথিবীতে অসংখ্য মহামানব-মানবীর আবির্ভাব ঘঠেছে। কেউ শির ঊঁচু করে শত বছর ধরে বেঁচে আছেন মানুষের মনের মুকুরে, কেউবা অন্ধ্বকারের অতল গহ্‌বরে ঘৃণাভরে নিপতিত হয়েছেন। কিন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম শিক্ষা হচ্ছে, খুব কম লোকই হতভাগা এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়। তাই স্বভাবতই অভিন্ন ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি হয়েছে এবং হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও হবে। বিশ্বব্যাপী সংস্কারের ব্যাপকতা বড় ধরণের ঝাঁকুনি দিয়ে মেহনতী মানুষের মুক্তির সনদ ‘রেড বুক্‌স’ খ্যাত দি কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো ও ডাস ক্যাপিটল নিয়ে এসেছিল কমিউনিজম।

মোটামুটি সম্মানজনক একটি সময় পার করে বিদেয় নিলেও সংস্কারের মাধ্যমে স্বগর্বে টিকে থাকা চীনের প্রাচীরের বর্ধিষ্ণু অর্থনৈতিক প্রসারতা ও কম্যুনিষ্ট ফিডেল ক্যাষ্ট্রোর অট্টহাসি নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অফ লিবার্টির ঊদ্ধত হাতের প্রদীপে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। হাল আমলে এশিয়ার সংস্কারের স্বপ্ন দেখেছিলেন মাহাথিরের এক সময়ের সবচে’ কাছের মানুষ আনোয়ার ইব্রাহিম। বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও জাতিগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত দুর্বল দেশটিকে একের পর এক সংস্কারের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশে পরিণত করলেন এই জুটি। মাহাথিরের সাথে তিক্ত সম্পর্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় উপপ্রধাণ ও অর্থমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে এশিয়ার পূণর্জাগরণ নিয়ে লিখলেন ‘দি এশিয়ান রেনেসান্স্‌ (The Asian Renaissance)’। মোট নয়টি অধ্যায়ে তিনি সুনিপূণভাবে তাঁর সুনির্দিষ্ট ভিশন তুলে ধরলেন কিভাবে এশিয়ার অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রক্রিয়া নিজস্ব কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের সাথে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নৈতিকতার (Socio-ethical) মধ্যে জৈবিক সম্পর্কের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।

এর যে সফল বাস্তবায়নও সম্ভব তা বাহ্যিকভাবে হলেও ইমার্জিং টাইগারের টুইন টাওয়ার, মিনারা কুয়ালালামপুর, কেএল এয়ারপোর্ট, গেন্টিং হাইল্যান্ড ইত্যাদি দেখলে যে কারও আঁচ করতে কষ্ট হয় না। পরস্পরের প্রতি চরম বৈরী ভাবাপন্ন তিন জাতি (মালয়, চীনা ও তামিল) কিভাবে এক ঘাটে পানি পান করে তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘মালয়েশিয়া বোলেহ্‌ (Malaysia Boleh)’ অর্থাৎ মালয়েশিয়া পারে। কর্ণেল গাদ্দাফীর ‘দি গ্রীণ বুক” লিবিয়ানদের ৩২ বছর আগে ঊল্লসিত করলেও এখন আর করে না। আপসরফা আর সমঝোতার পথ ধরে চলতে চলতে আলহামরা সদৃশ দূর্ণীতির প্রতীক তাবুতে থাকা ক্লান্ত এক সময়ের প্রিয় বিপ্লবী, অথচ বর্তমানের জগদ্দল পাথর দেশটির স্বঘোষিত এই ‘লিডার’। আমাদের মোয়াম্মার এখন ‘তুয আমেরিকা’ বলে গালি দেয়া একদম ভুলেই গেছেন! অন্যের প্রেসক্রিপশন ধরে চললে যে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে তা পাক প্রধাণ জেনারেল মুশাররফের ফ্যাকাশে মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

সংস্কারের রাজনীতি করতে গিয়ে একের পর এক ভুল পদক্ষেপ মানুষটিকে হিংস্র ও বর্বর বানিয়ে দিয়েছে। সম্পূর্ণ সরকার নিয়ন্ত্রিত খোদ রাজধানীর বুকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের অনতিদূরে লাল মসজিদে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত জংগীবাদের রহস্যজনক ঊথ্যান এবং তা দমনের কালো অধ্যায় হয়তোবা শেষ নয়। বরঞ্চ বলা যেতে পারে এটি রুগ্ন পাকিস্তানের অতি করূণ অধ্যায়ের পূর্বের ক্ষেত্র প্রস্ততি, অন্য কথায় দেশটিকে না জানি শেষতক শুধুমাত্র অখন্ডত্ব রক্ষা করাতেই ব্যতিব্যস্ত রাখবে সর্বক্ষণ। প্রতি শতকেই আধুনিকতার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে এমন ধারণা ও গবেষণা নিয়ে অনেক ইসলামী সংস্কারকদের আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁদের অনেকেই শাসকদের কোপানলে পড়ে আজীবন জেল খেটেছেন, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন, আগুনে পুড়েছেন, হত্যা নির্যাতন এমন কি বিষপানেরও শিকার হয়েছেন।

গেল শতাব্দীতে এঁদের মধ্যে সাইয়েদ কুতুব ও মাওলানা মওদূদী এবং ভিন্ন মেরুর মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াসের প্রভাব বর্তমানেও লক্ষ্যণীয়। প্রথম দু’জনের লিখিত বিশাল সাহিত্য ভান্ডার থাকায় তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানে থেকেও সংস্কারের সুর্নিদিষ্টিতা ও অভিন্নতা রপ্ত করতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রগতিমণাদের একদল সুসংগঠিত ও দূর্ণীতিমুক্ত অনুসারী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে তা জিদ না ধরে কঠিন সত্যটি সহজ ভাবে না হলেও স্বীকার করে নেয়াই বোধ হয় এ মুহুর্তে সমীচিন হবে। ইসলামপন্থী হয়েও জাতির বিভক্তি ঠেকাতে এঁদের অনুসারী জনপ্রিয় বর্তমান তুর্কী নেতৃবৃন্দ দেশটিকে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের মডেল বানাতে চরম বৈরী মতাদর্শ সেক্যুলারিজমের পক্ষে কথা বলতেও কার্পণ্য করেন না। সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া ব্যাপক আলোচিত ও শিক্ষণীয় নির্বাচন সম্পর্কে মুল্যায়ন করতে গিয়ে সেদেশের নির্বাচক বিশ্লেষকেরা লিখেছেন, হেডস্কার্ফ পরিহিতা মহিলা ও উৎসর্গীকৃত লম্বা দাড়ি-মোচ ওয়ালারাই শুধু নয় সেক্যুলার ব্যাকগ্রাউন্ডের অর্ধেকেরও বেশী ভোটার তাদের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর শ্ত্রু শাসক দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে ভোট দিয়েছেন বর্তমান সরকারের বিদ্যমান সংস্কার, বিজনেস-ফ্রেন্ডলি এবং ইউরোপের প্রতি উদার কর্মসূচীর ধারাকে অব্যাহত রাখতে, যা কি না তাদের নিজ দলসমূহ ১৯৫০ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত পারেনি।

মুসলমানদের সবচে’স্পর্শকাতর ইস্যু হিজাব নিয়ে তারা সস্তা, বোগাস ও সেকেলে আন্দোলনের ডাক দেয়ার পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে সহজ সমাধানের পথ খোজেন। সংবিধানে বাধা থাকায় স্বচ্ছ ইমেজের এই ক্যারিশ্‌ম্যাটিক লিডাররা হিজাব পরিহিতা আপন স্ত্রীদেরকে সরকারী তাবৎ অনুষ্ঠানাদি এমনকি মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রাপ্য সরকারী বাসভবন থেকে নিরাপদ দুরুত্বে রেখে, অন্য কথায় অতি মাত্রায় বিপ্লবী না হয়ে অথবা জেনারেলদের পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে তুর্কী জনগণকে আশংকামুক্ত করেছেন যে মুক্তবুদ্দির ঐতিহাসিক এই দেশটিকে তারা বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত ‘সেকেন্ড ইরান’ বানাবেন না। শেষেরজন মাওলানা ইলিয়াসের অনুসারীদের মধ্যে সংস্কারের উপস্থিতি তেমনভাবে দেখা না গেলেও ‘দি ব্লু বুক’ খ্যাত ফাজায়েলে আমলের প্রভাবে পরমতসহিষ্ণুতা ও নিজ বিশ্বাসে একনিষ্ঠতার কারণে চরম প্রতিকূলতাকেও তারা বাধা মনে করেন না। প্রেক্ষিতঃ বাস্তবতায় বাংলাদেশ রাজনীতিতে সংস্কারের হাওয়া বাংলাদেশে অনেকবার এলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাগ্য পরির্তন করতে এটি কতটুকু সক্ষম হয়েছে তা আজ মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এক ডজনেরও বেশী পরিবারের মধ্যে সংস্কারকে সর্বজনগ্রাহ্য ও স্থায়ী অবকাঠামোতে রুপ দেওয়ার অপার সম্ভাবনা এলেও একদল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বা ভিশনারী লিডারশীপের অভাব আজও দারুণভাবে প্রকট।

অজপাড়া গাঁয়ের চা-ষ্টলের আধা শিক্ষিত একজন কৃষক চায়ের চুমুকের সাথে সাথে পেন্টাগনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা গলা না খাকিয়ে বলে দিতে পারলেও আমাদের দেশের তিনযুগেরও বেশী সময় সক্রিয় থাকা পোড় খাওয়া ফুলটাইম পলিটিশিয়ানরা বলতে পারেননা ক্ষাণিক পরেই তাদের নিজ দেশে এমনকি খোদ তার নিজ ললাটে কি ঘটতে যাচ্ছে। তৎকালীন আমেরিকার ঢাকাস্থ রাস্ট্রদূত এবং বর্তমানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকা আমেরিকার সিনিয়র পলিসি স্কলার ঊইলিয়াম বি. মাইলাম আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে যখন তৃতীয় শক্তির ক্ষমতায় আসার আশংকা করেছিলেন তখন আমাদের দেশের দেশপ্রেমিক (!) পলিটিশিয়ানরা তাকে সস্তা গালি না দিয়ে আত্মসমালোচনায় ব্রত হলে আজ তাদেরকে হয়তো প্রতিদিন জেল আর হাসপাতালে যাওয়া আসা করতে হত না কিংবা দোয়া দরুদের বই, তসবিহ ও জায়নামাজে বসে সারাদিন কাটাতে হত না। সময়ের পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভাব বাংলাদেশের জন্য যেমন সত্য, সস্তা বিরোধীতা করে কারও যে অকল্যাণ বৃদ্দি করা যায় না সেটিও সমানভাবে সত্য। ইন্ডিয়া যেখানে আগামী শতকে এশিয়ার নতুন পরাশক্তি হওয়ার বাস্তবভিত্তিক টার্গেট নিয়ে নিরলসভাবে সব সেক্টরে প্রাণান্ত পরিশ্রমে ব্যস্ত, আমরা সেখানে পল্টন ময়দানে লাখো লোক জড়ো করে অচল ধারার রাজনীতি আঁকড়ে ধরে রাজপথ প্রকম্পিত করি। পদার্থ বিজ্ঞানের একটি সহজ সমীকরণ হলো, কাজ=বল x সরণ।

অর্থাৎ কোন বস্তর উপর বল বা শক্তি প্রয়োগের ফলে যদি এর সত্যিকারের সরণ না হয় বিজ্ঞান তাকে কাজ বলে স্বীকৃতি দেয় না। মাঝি তার নৌকা ঘাটে বেধে সারাদিন বয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘেমে গেলেও এর ফলপ্রসু সরণ না হওয়ায় বিজ্ঞান একে কাজ বলে না। মেধা, মনন ও গবেষণা বিকাশের জন্য কোন টেকসই (Viable)ইনস্টিটিউশন করতে আধিপাত্যবাদী ভারত কিংবা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আমাদের হাত জাপটে ধরে না। পাশ্চাত্য যেখানে রিসার্চের জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে আমরা সেখানে এর মূল ঊপকরণ কম্পিউটারের দাম বাড়ায়ে দিয়ে এর পথ রুদ্ধ করি। ইন্ডিয়া ও চায়না আজ আমেরিকার চাকরির বাজারে ‘সেকেন্ড হোম্‌স’ হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।

বিগ ত্রি অটোমোবাইল কোম্পানী (Ford, Chrysler, GM) থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইটির সিংহভাগ প্রজেক্ট আমেরিকার তুলনায় সস্তা দামে ওইসব দেশে দেদারছে চলে যাচ্ছে। ইন্ডিয়ার হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বা ৪র্থ বর্ষে পড়াকালীন অবস্থায় সহজেই চাকরির বাজারে প্রবেশ করে আমেরিকার সাথে দিন-রাত্রির ব্যবধান ব্যাপক হওয়ায় কাজের সাথে সাথে তারা পড়ালেখার পাঠটিও অনায়াসে পুষিয়ে নিতে পারছে। গত পাঁচ বছরে দেশটিতে যুবকদের বিদেশমুখী প্রবণতার সূচক নাটকীয়ভাবে নিম্নগামী। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রবাসী ছেলেরা দেশে বিয়ে করতে গিয়ে পাত্রীদের নিকট থেকে অভিনব শর্তের সম্মুখীন হচ্ছে। ‘দেশে একেবারে ফেরত আসতে হবে’ এরকম মুচলেকা না দিলে বিয়ে করবে না বলে বেকে বসছে দেশটির একবিংশ শতাব্দীর পাত্রীরা।

অতি নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হয়েও আমরা বর্তমান যুগের ফাস্ট কমিউনিকেশেনের একমাত্র মাধ্যম ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিসকে আজও আমদের ছাত্রদের দোড়গোড়ায় পৌছে দিতে পারিনি কিংবা কারও কোন পরিকল্পনার কথাও শুনিনি। অদূরদর্শী ও বায়বীয় নেতৃবৃন্দ এবং আমাদের চাওয়া গ্লোবাল ভিলেজের এই যুগে দুনিয়ার অগ্রগতি সম্মন্ধে বোধহীন এরকম নেতৃত্ব বেশীদিন টিকতে পারে না। বর্তমানের জরুরী অবস্থা যে তারই অনিবার্য পরিণতি তা আমরা ছয় মাস আগে না হলেও এখন খুব সহজেই বুঝি। কিন্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ধ্বংসের পরিণতি যে কি ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা এখনো বুঝিনা অথবা বেশী বুঝি বলেই করছি। সোমালিয়া কিংবা রূয়ান্ডা (ইরাক, আফগানিস্থানের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম) হওয়া ঠেকানোর জন্য সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, পরিপক্ক ও দূরদর্শীসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের যথেষ্ঠ দরকার।

কারণ অরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আরও খোলাসা করে বললে হঠাৎ করে রাজনীতিক বনে যাওয়া জেনারেলরা (দু’একজন বাদে) দুনিয়ার কোথাও ভাল কোন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেননি। আর পারার কথাও না। কারণ, তেতুঁল গাছ থেকে তো ফজলী আমের আশা করা অরণ্যে রোদন মাত্র! কেউ যদি বর্তমান অবস্থাকে দেড়শ বছর আগের পলাশী যুদ্ধের পূর্বের অবস্থানের সাথে তুলনা করেন তাকে আমরা দোষ দিতে পারিনা। কারণ একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধের ধরণ শুধু কামান, গোলা বারুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গণতন্ত্রের নতুন নতুন সংগা খুঁজে বের করার ও মুসলিম বিশ্বকে ‘নির্দোষভাবে’ ওয়াচ্‌ করার জন্য ‘সিনিয়র পলিসি স্কলাররা’ রিসার্চের ‘কেইস স্টাডি’ হিসাবে যে নতুন নতুন ‘গিনিপিগসমূহের’ সন্ধানে ব্যস্ত, তা বোধ করি আজ আর গোপন নয়।

দৃশ্যমান জগতের বাইরেও চরমভাবে সক্রিয় থাকা অদৃশ্য জগতের বিনিসূতোর মালার যে কি প্রভাব তা আমরা নিশ্চয়ই গত বছরের শেষ কোয়ার্টারে ভাইসরয়দের নির্ঘুম মুভমেন্টে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি! নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিসমূহ (যারা রাজনীতির প্রতি চরমভাবে বীতশ্রদ্ধ, আর তা হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণও রয়েছে, বিশেষ করে আমাদের দেশে) জটিল ও কূটিল রাজনৈতিক বিষয়সমূহের সমাধান বা তা মোকাবেলায় হাইজেনবার্গের নিগুঢ় রহস্য ল’ অফ আনসার্টেনিটি (Law of Uncertainty)-র মত মাইনাস প্লাস ফর্মুলার দিকে না গিয়ে যদি সমস্ত সেক্টরে শক্ত প্রশাসনিক অবকাঠামো তৈরি, সত্যিকারের সেবা ও জবাবদিহীমূলক আইনের শাসন এবং সর্বোপরি নৈতিকতার সুকুমার বৃত্তসমূহের পরিস্ফূটনের জন্য টেকসই ইনস্টিটিউশন গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন তা জাতির জন্য অনেক বড় পাওনা হবে বৈকি। এক হিসেবে দেখা গেছে, কোন দেশের শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ অনিয়ম হয় মানবীয় দোষত্রুটির কারণে আর বাকী ৮৫ ভাগই হয় ভাল সিস্টেমের অভাবে। আমরা জানি, উন্নত দেশসমূহে নেতৃবৃন্দের পরিবর্তনের সাথে সাথে আভ্যন্তরীন প্রশাসনিক অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন সাধিত হয়না। বরং নেতৃবৃন্দদেরকেই বিদ্যমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে দেখা যায়। ফলতঃ দুর্ণীতি, অনিয়ম, অবিচার যাই বলি না কেন তা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করতে পারে না।

তাই বলা যায়, সংস্কারের নামে বড় বড় দলসমূহ ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল ও অপরিপক্ক নেতৃবৃন্দের উদ্ভব ঘঠানো এবং তাদের দিয়ে পরবর্তী পার্লামেন্টে নিজেদের রেটিফাই করার বা দূর্বল ও ভংগুর কোয়ালিশন সরকার বানানোর প্রচেষ্টা খুব যে একটা স্থায়ী সমাধাণ নয় তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দ্রুত বুঝলে তা হবে দেশের জন্য অতি মংগলজনক। আর না বুঝলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্থায়ী অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে সবার প্রিয় এই দেশটিকে এবং আধুনিক মীরজাফররুপে আমাদের সবাইকে অরক্ষিত স্বাধীনতার পাহাড়াদার হিসেবে হয়তো ইতিহাসের পরবর্তী অধ্যায়ে জায়গা করে নিতে হবে। আজরাইলী প্রতারণা পরিশেষে বন্ধুপ্রবর সিরাজের নিজস্ব ব্লগে মিশরীয় এক বন্ধুর সত্য ঘটনা ‘আজরাইলী প্রতারণা’র বর্ণনা দিয়েই আজকের আলোচনার সমাপ্তি টানবো। কায়রোর রাস্তায় এক ট্যাক্সি চালক যাত্রী খুঁজছিলেন। এক জায়গায় অপেক্ষমান একজন যাত্রী দেখে তিনি তাকে তুলে নিলেন।

একটু সামনে এগিয়েই চালক দেখতে পেলেন ধবধবে সাদা আলখেল্লা পরিহিত অন্য আরেকজন সৌম্যদর্শন ভদ্রলোক ক্যাবের অপেক্ষায় হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে ট্যাক্সি চালক ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে গাড়ী থামালেন। ভাবলেন, গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে একজন ভালো মানুষের উপকার করি । এদিকে হঠাৎ গাড়ী থামানোতে ভেতরের আসল যাত্রীর ভীষণ রাগ হলো, ট্যাক্সি থামানোর কারন জানতে চাইলেন। অবশ্য ইতোমধ্যেই সাদা-পোষাকধারী আগন্তক সামনে চালকের পাশের আসনে আরাম করে উঠে বসে পড়েছেন।

ট্যাক্সি চালক আসল যাত্রীকে বললেন, আমি এই যে এ ভাইটিকেও নামিয়ে দিয়ে আসি। পরের অংশটুকুর জন্য এখানে ক্লিক করুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।