আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেনজোর কর্কশ ব্যাঞ্জো

বিকট
আমাদের পাড়ায় আমি খুব একটু পরিচিত মুখ না। চা-সিগারেটের দোকানে মহল্লার ছেলেদের তুমুল আড্ডায় যদিও বা কখনও যাই, ম্লানমুখ করে বসে থাকি। ওরাও আলাপ জমাতে গিয়ে খুব একটু সুবিধে করতে পারে না। তাই বছর খানেক এখানে আসার পরেও নিজাম সাহেবের সদ্য গজিয়ে ওঠা প্রতিপত্তি বা জামাল সাহেবের কর্মস্থলের দূরাবস্থা সম্পর্কে আমি মোটেও ওয়াকিবহাল নই। মা-খালাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডায় টুকটাক যা শোনা যায় আর কী।

অবশ্য আমার মত একজন বেকার, অপদার্থ, বাবার ভাষায় "গুড ফর নাথিং" একজন যুবককে পাড়ার হালহকিকত বলতে কারই বা বয়ে গেছে। এইতো কদিন ধরে বাসার কাজ শুরু হয়েছে, রড-সিমেন্ট, ঢালাই যন্ত্রের ব্যস্ততায় সবাই নিজেকে সন্নিবিষ্ট করে ফেলেছে, আমায় বাদে। এসব ব্যাপারে অবশ্য কোন আগ্রহও নেই, তারাও জানে আমার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করতে গেলে বিশাল একটা গুবলেট করে ফেলবো। এই বেশ ভালো আছি! এমনটাই আসলে আমি চাই। নির্ঝঞ্জাট জীবন, রাত জেগে জোনাকীদের কোরাস শোনা, আর স্লিপিং পিল খেয়ে দিনভর ঘুম।

আমার ফেভারিট ব্র্যাান্ড হলো জিওনিল। কেমিক্যাল নেম ব্রোমাজিপাম থ্রি এমজি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অবশ্য বজ্জাত দোকানদারেরা দেয় না, পরিচিত ডাক্তারও নেই যে একটা প্রেসক্রিপশন যোগাড় করবো। আগের পাড়াটা ভালো ছিলো। চাহিবা মাত্র ইনসমনিয়াক যুবককে ঘুমবটিকা প্রদানে বাধ্য থাকিতো! এই পাড়ায় কাউকে বাধ্য করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে একজনকে খুঁজে পেলাম।

এজন্যে অবশ্য আমাকে কিছুটা ছলচাতুড়ির দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো। "একটা ব্রোমাজিপাম দেন তো ভাই। আম্মার জন্যে লাগবে। প্রেসক্রিপশন আনতে ভুলে গেছি। প্লিজ ভাই!" উদাস চেহারার হালকা চুলের দোকানদার কী মনে করে যেন আমাকে বিশ্বাস করলো।

অবশ্য ব্রোমাজিপাম খুব কড়া ডোজের সিডেটিভ না, আমি এমনটাও শুনেছি যে একজন ৬০টা খেয়েও মারা যাওয়া তো দূরের কথা কিছুদিন ঝিমিয়েছিলো কেবল, আমার এক বন্ধু। সুতরাং, অতি সাবধানী দোকানদারদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে বিশ্বাসের পারদটা একটু উঠিয়ে সে দিতেই পারে! প্রথম প্রথম আমি তার কাছে একটা করেই নিতাম। সেও বুঝে গিয়েছিলো ওসব অভিনয়ের আর দরকার নেই, আমিও! ধীরে ধীরে এক পাতা নিতে থাকলাম। এখন হয়তোবা আপনারা তার অবিমৃষ্যকারিতার নিন্দে করতে পারেন, তবে বাস্তবতা হলো, আমি প্রতি দশ দিনে এক পাতা নিতাম। প্রতিদিন একটি করে পিল নিলে সেটা নিশ্চয়ই খুব ক্ষতিকর কিছু না! ফার্মেসির লোকজনেরা ঔষধ সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানে বৈকি! তার সাথে আমার কখনও কথা হয়নি লেনদেনের ব্যাপার ছাড়া।

নামটাও জানা হয়নি। যদিও এই পাড়াতে তার সাথেই আমার সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ ছিলো। খাতিরটা হয়তো হয়েও যেতে পারতো, কিন্তু হবে কী করে! সেও যে আমার মতো মুখচোরা আর বিরস বদনের অধিকারী! হয়তোবা সেও প্রতিরাতে জিওনিল নেয়। তারও হয়তো ঘুমের কষ্ট। চোখের কোণে কালি দেখে আঁচ করা যায়।

আমরা, বেনজোবাডিরা এতটুকু মৌন বন্ধুত্ব তো স্থাপন করতেই পারি! কথা বলা না বলা, নাম না জানা এতে কী বা আসে যায়! জ্বর-জারি, পেটের পীড়া, গ্যাসের প্রবলেম এসব আমার একদম হয় না। কিন্তু হতে কতক্ষণ! জীবনটা যেমন অনিয়মে চলছে, রাত জাগা, দিনভর ঘুম, নতুন ধরণের ঔষুধের প্রয়োজন পড়েই গেলো। এই ঔষধগুলো, যেমন প্যারাসিটামল, ওমিপ্রাজল ইত্যাদি ফার্মেসি থেকে নিতে প্রেসক্রিপশনের দরকার পড়ে না। বাসার পাশের ফার্মেসি থেকেই দিব্যি কিনে নেয়া যায়। তবুও আমি কেন যেন ঘুরপথে গিয়ে সেই বিষণ্ন যুবকের দোকানের শরণাপন্ন হলাম।

-এক প্যাকেট গ্যাসের ট্যাবলেট দেন তো। -কোনটা নিবেন? -কোনটা ভালো? -জেলড্রিন নিতে পারেন, ওমিপ্রাজল, লোসেকটিল... -আচ্ছা যেটা ভালো সেটাই দেন। এই ছিলো তার সাথে আমার এতদিনকার পরিচয়ে দীর্ঘতম কথোপকথন। হঠাৎ একদিন হলো কী, আমি একটা চাকুরি পেয়ে গেলাম। তেমন কিছু নয় অবশ্য, তবুও বেশ খুশির ব্যাপার।

সমস্যা একটাই, সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। জিওনিল খাওয়া বন্ধ করতে হবে। জিওনিলবিহীন প্রথম রাতটা বেশ কষ্টেই কাটলো। সিভিট চিবিয়ে তার বিকল্প বেছে নিলাম। তাতে আর কোন কাজ না হলেও মানসিক প্রশান্তি মিললো।

শেষরাতের আগেই কীভাবে যেন ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফর্মাল ড্রেস পরে যাবতীয় ফর্মালিটিজ পালন করে এবং গুরুজনদের উপদেশ এবং দোয়া গলাধঃকরণ করার পরে আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম, আমার কোনো চুঁয়ো ঢেকুর উঠলো না। দীর্ঘ নিঃসঙ্গ অন্তরীণ জীবনের অন্তিম লগ্নটা তেমন খারাপ না তাহলে! সদর রাস্তায় শর্টকাটে যেতে হলে আমার বেনজোবাডির দোকানটা এড়িয়ে যেতে হয়। তাতে কী! দরকার পড়বে না আর হয়তো। আর ব্যাপারটা তো এমনও না যে আমার বিরহে কাতর হয়ে সে দোকান বন্ধ করে দেবে! দরকার পড়লে তো আবার যাবোই! এবার তার নাম জিজ্ঞেস করে কিছুক্ষণ আড্ডা আর চা'ও হয়ে যাবে! শর্টকাট পথটিতে এর আগে আমি কখনও যাই নি।

যেতে গিয়ে এক অশীতিপর বৃদ্ধের ভেষজ ঔষধের দোকান চোখে পড়লো। সাইনবোর্ডে বিতং করে লেখা "এখানে যাবতীয় ইউনানী, ভেষজ এবং আয়ূর্বেদী চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ডিস, আমাশয়, নারীদিগের গোপন রোগ..." আরো কী সব যেন জটিল ব্যাধির নিরাময়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। বেচারা! তার স্বাস্থ্যের যা অবস্থা, তা এই দোকানের জন্যে মোটেও কোন ভালো বিজ্ঞাপন হয়নি। তাতে কজন বিশ্বাস করে চিকিৎসা নিতে আসবে সন্দেহ আছে! বৃদ্ধ নিজেও তার ব্যবসার ব্যাপারে খুব একটু উৎসাহী না বলে মনে হচ্ছে। একমনে একটি ধর্মীয় পুস্তক পড়ে যাচ্ছেন, বৃদ্ধ বয়সের সময় কাটানোর একটা পন্থা আর কী! আমার খুব ইচ্ছে করছিলো তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করি।

এই বয়সে ব্যবসা ফেঁদে বসে তিনি কী আশা করেন! কিন্তু আমার অত সময় ছিলো না। অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছিলো। অফিস জিনিসটা যেমন খারাপ ভেবেছিলাম মোটেই তা না। হতে পারতো, যদি মনমতো কাজ না পেতাম। লেখালেখি, অনুবাদ, রেডিওর ভয়েস ওভার খারাপ লাগে না করতে।

কাজ উপভোগ করছিলাম বেশ, দ্রুত একটা ইনক্রিমেন্টও পেয়ে গেলাম! এখন নিশ্চিতভাবেই আমাকে মুখোমুখি হতে হবে মায়ের চিরাচরিত সেই বাসনার। -এইবার একটা বউ এনে দে বাবা! যেন চাইলেই এনে দেয়া যায়! কীজন্যে যে তারা এত তাড়াহুড়ো করে আমি বুঝি না! তবে বউয়ের কথা বলায় আমার মধ্যে একটা অন্যরকম শিহরণ সৃষ্টি হলো। রণডম্বুর বাজতে লাগলো শরীরের আনাচে কানাচে। সেদিন আমি বাসায় ফেরার সময় আমার বেনজোবাডির ফার্মেসিতে গেলাম ঘুরপথে। কিছু কেনার জন্যে না, দাঁড়িয়ে থেকে অবলোকন করতে থাকলাম যৌনাবেদনময়ী প্যাকেটের কনডমগুলো।

বেনজোবাডিকে আজকে আরো বিষণ্ণ লাগছে। দোকানের হাল-হকিকতও খুব একটু ভালো না। ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে নাকি? কার সাথে যেন আলাপচারিতায় জানতে পারলাম ব্যবসা উঠিয়ে দেবার চিন্তা করছে। আমি অবশ্য তখন রঙ-বেরঙের কনডমগুলো দেখতে ব্যস্ত। জিনিসগুলোকে দ্রূত ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে হবে।

মায়ের উপদেশ আমার এই প্রথমবারের মতো যৌক্তিক মনে হলো! সেদিন আমি দোকান থেকে কিছু না কিনেই চলে আসি। অফিসে যাবার পথে আবারও সেই শর্টকার্ট পথ। বৃদ্ধ এখনও কী মনে করে দোকানটা খুলে রেখেছে কে জানে! আজকাল আমি বেশ প্রগলভ হয়ে গেছি। অপরিচিত মানুষদের সাথে কথা বলতে সংকোচ হয় না মোটেও। ভাবলাম বৃদ্ধের সাথে কিছু কথাবার্তা বলেই যাই! উপায় নেই! আজ সে গভীর ঘুমে মগ্ন।

বাসায় কী ভালো করে ঘুমোনোর সময় পায় না? ভেষজ ঔষধগুলো আসলেই যৌনক্ষমতাবর্ধক কী না জানলে মন্দ হতো না। কৌতূহলকে নিবৃত্ত করতে না পেরে আমি তাকে জাগিয়েই তুলি। -চাচা, শুনছেন? -কি হইছে? অদ্ভুত ব্যাপার! এতদিন পর কাস্টমার এলো, একটু সমাদর করবে তা না, এমনভাবে প্রশ্ন করছে যেন এসে বিশাল অপরাধ করে ফেলেছি! -না মানে, ঔষুধের ব্যাপারে একটু জানতে এসেছিলাম। -কী সমস্যা আপনের? এই বয়সেই ধ্বজভঙ্গ হইসেন? প্রশ্নের ছিড়ি দেখো! বোঝাই যাচ্ছে অসময়ের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি বেশ ক্ষিপ্ত। -হইসে কী না কেমনে বুঝবো চাচা! বিয়াই তো করি নাই! -আইচ্ছা বিয়া করলে পরে আইসো।

এখন মালসামান নাই। ঘুমাইবার দাও। মহল্লার পরিচিত দুই দোকানদারের মধ্যে বেশ মিল খুঁজে পাই আমি। দুজনেই নির্লিপ্ত, একজন অবশ্য বেশ কাটখোট্টা, দুজনের ব্যবসার অবস্থাই বেশ সঙ্গীণ। বিয়ের পরে বেশ কিছুদিন এই পথ দিয়ে চলা বন্ধ থাকলো।

দুজনের কারো সাথেই দেখা হলো না অনেকদিন। আমার অবশ্য ভেষজ যৌনবর্ধক বা জিওনিল কোনটাই আর দরকার পড়ে না এখন। তারপরেও মধুচন্দ্রিমা শেষে একবার তাদের সাথে দেখা করবার তাগিদ অনুভব করি। বিষণ্ন দোকানদার আমাকে একটা খারাপ সময়ে অনেক সহায়তা করেছে। হাঁফ ধরা বৃদ্ধের অসহায়তা আমাকে আপ্লুত করেছে।

তাদের সাথে একবার দেখা না করলে কেমন হয়! যদিও জানি কোন সহৃদয় আপ্যায়ন আমার জন্যে অপেক্ষা করছে না। তবুও গেলাম এক সান্ধ্যভ্রমণে তাদের খোঁজ নিতে। এছাড়া কনডমও শেষ, অচেনা দোকান থেকে কেনা তাও আবার মহল্লার, কিছুটা বিব্রতকর ব্যাপারটা আমার জন্যে। -কী ভাই, কেমন আছেন? এই প্রথম তার সাথে আমি সম্ভাষণমূলক কথা বলি। -আছি আর কী! -আপনার নামটা যেন কী? এতদিন ধরে পরিচয় অথচ নামটাই জানা হলো না! হেহেহে! -আমার নাম মমতাজ।

আপনার নাম শিহাব। আপনি একটা ভালো চাকরি করেন। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। এখন আর ব্রোমাজিপাম খান না। পাশের গলির ভেষজ দোকানদারের কর্মপন্থা সম্পর্কে আপনার বিশদ আগ্রহ আছে।

আর আমি এখনও বেনজো খাই। খায়া খায়া দোকান লাটে উঠাইসি। আমাকে স্তম্ভিত করতে এর চেয়ে বেশি কিছু দরকার ছিলো না। সে করলোও বেশ সূচারুভাবে। সে বলে চললো, -অবাক হইলেন? আমার মতো না-মানুষ তো আপনার মতো হ্যাঁ-মানুষের দিকে তাকায়া থাকবেই।

ভালা লাগে দেখতে এসব। আমার খবর হইলো, আজকেই দোকানের শেষ দিন। নতুন ব্যবসা ধরসি। বাসের কন্ডাকটারি করবো। বুড়া আমাকে ক্যাপিটাল দিয়া গেছে।

-সে আপনার কী হয়? -কিছুই না! আপনে আমার কী হন? কিছুই না। ব্রোমাজিপাম আপনার কি হয় এখন, কিছুই না! তারপরেও জীবন যাদের কিছুই দেয় না, তাদের কীভাবে কীভাবে যেন মিরাকলের মত কিছু একটা হয়ে যায়। আপনার কী লাগবো? কনডম? -না, ব্রোমাজিপাম। -বুঝছি! আমার কথা শুইনা সেন্টু খায়া গেছেন। তাই মাইন্ড রিলাক্সের জন্যে বেনজো খাইবেন।

বাদ দেন বস! জীবনের অত কিছু ধরতে নাই। -আপনার বাস কবে থেকে চালু হবে? -কালকে থেকে। মিরপুর-আজিমপুর রুট। -আমি যাবো। -যাইবেন সে আর কী কথা! যাইবেন।

-চাচারে একটু দেখতে যাবো। নিয়া চলেন না! ত্রিভূবনে কেউ না থাকাটা কষ্টকর। তবে জীবন একটা উপায় খুঁজে বের করেই নেয়! আশি বছরের বৃদ্ধের মাঝেও নতুন স্বপ্ন জাগ্রত হয়। তার সাথে যুক্ত হয় না-মানুষেরা! যেমন আমার প্রাক্তন বেনজো-বাডি! এতদিনে আমার এই বোধোদয় হয়েছে যে ব্রোমাজিপামের ঊনজীবন কোন জীবন না। আমি জীবন বেছে নিয়েছি।

অশক্ত ভেষজরাজ বৃদ্ধ তা পারেনি। বিষণ্ণ যুবক দোকানদার তা পারেনি। হঠাৎ করে আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা আসে, যদিও তা খুব স্বল্প পরিসরের, তারপরেও...। "ঐ শ্যামলী, কলেজগেট, রাপা প্লাজা, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, আজিমপুর..." মমতাজ যাত্রী ডেকে চলেছে। অফপিক টাইম।

খুব একটু মানুষ নেই। সারাদিনের ধকলে সে ক্লান্ত। অভ্যেস নেই তো! বাসের শেষের দিকের সিট সব ফাঁকা। আমি ওখানেই বসেছি। ভাড়া কাটা শেষ হলে মমতাজের আর কিছু করার থাকে না।

দাঁড়িয়ে থাকে অবিচল। হঠাৎ আমার দিকে চোখ পড়ায় সন্তর্পণে সে এগিয়ে আসে সামনে। কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে। এগুতে থাকে সে। সে চায়টা কী! ভাড়া কি দিইনি আমি? সিটের একেবারে কাছে শ্বাস ছোঁয়া দূরত্বে এসে সে থমকে দাঁড়ায়।

সে কি বসতে চায়? কে কবে দেখেছে কোন কন্ডাক্টরকে সিটে বসতে? তাদের পায়ে যান্ত্রিক সার্কিট, বনবন করে ঘোরে। তারা কখনও ক্লান্ত হয় না। নিয়ম নেই। হাজারটা সিট ফাঁকা থাকলেও তাদের বসার অধিকার নেই। আমার দিকে সকাতর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে অনুমতির প্রার্থনায়।

আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম। সে এখন আর আমার বেনজোবাডি না। একজন ঘামস্নান করা নোংরা কন্ডাক্টর। যাকে পরিচালিত করছে শীর্ণকায় না-মানুষ এক বৃদ্ধ। তাদের সাথে আনন্দভ্রমনটাকে ভ্রম হিসেবে বুঝতে পেরে আমি আমার পরিকল্পনার হাস্যকর দিকটা বুঝতে পারি।

সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে বাস এলে ভাড়া দিয়ে নেমে যেতে গিয়ে খেয়াল করি পকেট থেকে একটা কনডমের প্যাকেট বেরিয়ে এসেছে, যা মমতাজের কাছ থেকে গতকাল কিনেছিলাম। কনডমের পিচ্ছিল অঙ্গে আজ বীর্যের বদলে ঘাম, অশ্রূ আর রক্ত ইজাকুলেট হলে হয়তোবা আমি ক্ষণিকের জন্যে অবাক হলেও হতেও পারি! ক্ষণিকের জন্যেই!
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.