আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিচারণ ও অন্যান্যঃ মাগুরা, আমার (প্রায়) প্রাণের শহর

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!

স্মৃতি এক বড় অদ্ভুত জিনিস। কেউ কেউ বলেন স্মৃতি আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কেউ কেউ বলেন স্মৃতি আমাদেরকে পিছন থেকে টেনে ধরে রাখে এবং ক্ষণে ক্ষণে পলে পলে মনে আকস্মিক দুঃখের অনুভূতি সৃষ্টি করে বর্তমানের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। তবে যেটাই হোক, স্মৃতি না থাকলে মানুষ যে আর মানুষ হয়ে উঠত না এ বিষয়ে সম্ভবত কারোই দ্বিমত নেই। আমার প্রায় বাইশ বছরের জীবনের বিভিন্ন অংশ আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে কাটিয়েছি।

রংপুরে থেকেছি বছর চারেক, খুলনায় এক বছর, মাগুরায় সাত বছর, ফরিদপুরে নয় বছর ইত্যাদি। শৈশব কৈশোর বাল্যের বা তারুণ্যের বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে আমার আশেপাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছি, একাত্ম হয়েছি। একেক জায়গায় একেক অভিজ্ঞতা একেক দুঃখ একেক হাসি আমাকে আনন্দিত ব্যথিত করেছে। বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম স্মৃতি সযতনে আমার মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ অংশে সংরক্ষিত হয়ে আছে। তো এত বড় ভূমিকাটা যে জন্য দিলাম, সেই কারণটা হচ্ছে এই, গতকাল আমি প্রায় চার ঘণ্টা মাগুরায় ছিলাম।

মাগুরা ভ্রমণের কোন প্ল্যান সচেতন মস্তিষ্কে ছিল না, অবচেতনে থাকতে পারে তবে সেটা আমার জানা ছিল না। যশোর থেকে ফরিদপুরের সরাসরি বাস ছিল না বিধায় মাগুরার বাসে উঠেছিলাম, উদ্দেশ্য ছিল মাগুরায় নেমে আবার বাস নিয়ে ফরিদপুর চলে আসব। সবই ঠিক ছিল। মাগুরায় এলাম দেড় ঘণ্টায়। নামলাম ভায়না মোড়ে।

বুকের মধ্যে কোথায় যেন হাহাকার করে উঠল। ক্লাস সিক্সে আমি মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম। সালটা ২০০২। স্কুলে যেতে ভায়না মোড় অতিক্রম করেই যাওয়া লাগত। ভায়না মোড়ে আমার অতিপ্রিয় বন্ধু দিপের বাসা ছিল।

স্মৃতির কোন অভাব নেই। সুতরাং সিদ্ধান্ত নিলাম, ফরিদপুর না গিয়েই স্মৃতিচারণেই মত্ত হই বরং। তাই হলাম। ব্যাগ নিয়ে সোজা এমআর রোড ধরে শহরের দিকে হাঁটা দিলাম। এই রাস্তায় কত হেঁটেছি, কত সাইকেল চালিয়েছি! কোন দোকান থেকে একবার প্রিন্টারের কেবল ধার নিয়েছিলাম, কোন রাস্তার মাথায় একবার পিটিআইএর জুনিয়র একটা মেয়ের প্রাইভেট কারের রাস্তা আটকে দিয়েছিলাম সাইকেল নিয়ে তেরছাভাবে দাঁড়িয়ে থেকে, কোন দোকান থেকে ক্যাডেট কলেজ ভর্তি গাইড “ঝলক” কিনেছিলাম, কোন দোকান থেকে বারবার খাতা কলম আর কাগজ পেনসিল কিনতাম, সেই “মাগুরা খেলাঘর” যেখান থেকে অসংখ্য লাটিম কিনেছি, গার্লস স্কুলের সামনে সেই খন্দকার বুক হাউজ যেখান থেকে বাপের পকেট থেকে মারা টাকায় তিন গোয়েন্দা কিনে প্যান্টের পিছনে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে ছাদের ঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে একা একা পড়েছি! খন্দকারের সেই আঙ্কেল এখনও আছেন, পাশের ফুলের দোকানটা নেই, বান্ধব দোকানটা এখনও আছে, ওখান থেকে জন্মদিনের কেক কিনতাম আমরা, বান্ধবের বিপরীতে সিডির দোকানগুলো এখনও আছে যেখান থেকে আমার মেজো চাচা একবার মোস্তফা গেমটা আর দি লস্ট ওয়ার্ল্ড মুভির ডাবল সিডি কিনে দিয়েছিলেন, ঐ দোকানগুলোর নিচতলায় ভিডিও গেমের ক্যাসেট পাওয়া যেত সস্তায় যেগুলো আমি কিনতাম আমার ছোট চাচার টাকায়, ঐ রাস্তার শেষ মাথায় চার রাস্তার মোড়ে আমার সেজো চাচা হালিম খাইয়েছিলেন বছর দশেক আগের কোন এক সন্ধ্যায়, ওখান থেকে বায়ে গেলেই আমার পুরনো কোচিং, ডানে গেলেই একটা বিখ্যাত বইয়ের দোকান যেটা থেকে আমি ক্লাস সিক্সে চুরি করা আশি টাকা দিয়ে “ত্রাতুলের জগত” নামক অসাধারণ বইটা কিনেছিলাম, আর একটু সামনে গেলেই জুতাপট্টি, ডানে সেই পুরনো চলন্তিকা যেখান থেকে বারো তের বছর আগে আব্বাজান মিষ্টি কিনে আনতেন, তার পাশেই সেই মসজিদ যেখানে আমি ক্লাস টু-তে থাকতে জুম্মার নামাজ পড়তে যেতাম।

সেই গলি, যেটা ধরে আগিয়ে গেলেই হাজামজা পুকুর, তার পাশেই মাগুরা মাতৃসদন, তার পাশেই ডোমপাড়া, মাগুরা মাতৃসদনেই আমরা থাকতাম সেই ১৯৯৮ সালে, সেই লাল ইটের বাসা, বাসার সামনের সেই ফাঁকা জায়গা যেখানে নিজের হাতে বানানো ব্যাট দিয়ে ক্রিকেট খেলা হত নিয়মিত, বাসায় পিছনে খালেদা আন্টির সেই বাসা যেখানে আমি সারাদিন বসে থাকতাম, বৃষ্টি হলে সেই বাসায় সামনেরটুকু কাঁদা কাঁদা হয়ে যেত, খালেদা আন্টির বাসায় একটা বাচ্চা বিড়াল এসেছিল একবার, সেটাকে আমি আর লোপা আপু মিলে পালা শুরু করেছিলাম, লোপা আপুর সাথে আমি দাবা খেলেছি প্রচুর কিন্তু একবারও জিততে পেরেছি কি না একদমই মনে নেই। আজ এতদিন পরে গিয়ে শুনি লোপা আপুরা ওখানে এখন থাকেন না, উনার খুব ভালো জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে, শুনে অপার্থিব একটা সুখ কিভাবে যে হৃদয় দখল করে নিল কেন নিল কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার আম্মু যখন ঐখানকার মেডিকেল অফিসার ছিলেন তখন ভিজিটর ছিলেন তিনজন, খালেদা আন্টি, আছিয়া আন্টি আর সুলতানা আন্টি। কাল এতদিন পর গিয়ে দেখলাম আছিয়া আন্টি রিটায়ারমেন্টে চলে গেছেন, বাকি দুজন আছেন, সুলতানা আন্টির বাসায় গিয়ে পরিচয় দিতেই শুরু হল আপ্যায়ন, অতঃপর জানলাম আমার প্রাক্তন ক্লাসমেট এবং বন্ধু উল্লাস যে কি না সুলতানা আন্টির ছেলে সে আহসানুল্লাহতে পড়লেও এখন মাগুরাতে আছে, অতঃপর তাকে ফোন দিয়ে তড়িঘড়ি করে বাসায় আনানো হল এবং আমরা দুই বন্ধু বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উল্লাসকে শেষ দেখেছিলাম দুই বছর আগে, ছোটবেলার চেহারা ও স্বাস্থ্য ও ধরে রাখতে পারলেও আমি পারি নি একদমই, সুতরাং আমাকে দেখে কে যেন বলেই বসলেন, “ছোটবেলায় তো গাট্টুগুট্টু ছিলা, এখন এই অবস্থা ক্যান?” ইত্যাদি ইত্যাদি।

উল্লাসের বাইকের পিছনে চড়ে আরও ঘণ্টাখানেক মাগুরায় ঘুরলাম। নিজের হাতের মত করে যে গলি কানাঘুপচি গুলোকে চিনতাম সেগুলোকে মাঝে মাঝে কেমন অপরিচিত লাগতে লাগল আমার। জলি ম্যাডামদের বাসার সামনে আগে পুকুর ছিল এখন নেই, ক্লাস থ্রি থেকে আমরা সদর হাসপাতালের কাছে যে বাসায় থাকতাম সে বাসায় এখন কেউ থাকে না, বাসার সামনের যে রাস্তায় একদিন আমি, অনিক ভাইয়া আর মাহিম সারাদিন ক্রিকেট খেলতাম সেই রাস্তায় ড্রেন খুঁড়ে একাকার অবস্থা। আমাদের বাসার সামনেই সদর হাসপাতালের কর্মচারী নজরুল আঙ্কেল ফ্যামিলি নিয়ে থাকতেন, কতবার যে বল ওখানে পড়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই, ঐ বাসার পাঁচিলের উপর কতবার উঠেছি তারও কোন ইয়ত্তা নেই। নজরুল আঙ্কেলের বাসায় শুকনো কলাগাছ একবার এক দুষ্টু ছেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল, সেই ঘটনায় সুস্পষ্ট অংশগ্রহণ ছিল আমারও।

নজরুল আঙ্কেলের মেয়ে নাম সম্ভবত মিতা একবার আমার ও রিনা আপুর (আমাদের বাসায় কাজ করতেন, বিয়ে হয়েছে অনেক বছর) সাথে রাস্তার পাশ থেকে এঁটেল মাটি তুলতে গিয়েছিল, কারণ পিটিআইতে মাটি দিয়ে আম কলা পেঁপে ইত্যাদি বানানোর উপর পরীক্ষা হত এবং সেই পরীক্ষার নাম্বারও যোগ হত রেজাল্টের সাথে, আসার পথে বড় রাস্তা দিয়ে একের পর এক বাস আসছিল, আমরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম কখন রাস্তা একটু ফাঁকা হয়, একসময় একটা বাসকে ঠিকমত না দেখেই আমি বলে উঠেছিলাম – “এবার!” আমাকে বিশ্বাস করে মেয়েটা রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছিল, বাসটা একদম শেষ মুহূর্তে সরে গিয়েছিল বলে রক্ষা, নাহলে চোখের সামনে একটা মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে বাকি জীবন পার করতে হত আমায়, এটা জেনে যে সেই মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আমাদের বাসার পাশেই ফারুক আঙ্কেল থাকতেন, উনার বাসা থেকে প্রায়ই জোরে জোরে গানের শব্দ ভেসে আসত। ফারুক আঙ্কেলদের বাসার অপোজিটে আরেক আঙ্কেল থাকতেন, উনার বাসায় বল পড়লে মাইনাস চার রান হত, আমার এক ক্লাসমেটের আব্বু তিনি, এখনও ওখানে থাকেন, দেখা হল, পরিচয় দিতেই চিনলেন, মনে হল যেন আমি তার নিজের ছেলের চেয়ে কম কিছু না। আমাদের বাসাটার ভিতরে ঢুকে দেখা হল না, এই বাসার কোণে কোণে ছাদের প্রতিটা বর্গসেন্টিমিটারে আমার মুছে যাওয়া পায়ের ছাপ আর ভুলে যাওয়া অস্তিত্ব নীরবে আর্তনাদ করতে লাগল। বাসার একটু দূরে গরীবশাহ ক্লিনিক।

অনিক ভাইয়া আর মাহিমদের ক্লিনিক ওটা। আমি প্রায় সারাদিনই ওখানে পড়ে থাকতাম জীবনের এক বিশেষ সময়ে, সারাদিন পড়ে পড়ে হয় Contra খেলতাম নাহলে King of Fighters খেলতাম ওদের ভিডিও গেমটাতে। টিভিটাকে নিজের মনে করে বেশ কয়েকবার নষ্টও করেছি, আর তিনতলার সামনের ফাঁকা জায়গায় কত যে শর্টপিচ ক্রিকেট খেলেছি তার ইয়ত্তা নেই। ঐখান থেকে খালি বল নিচে পড়ত, প্রায়ই একজন কিংবা দুজন কিংবা একই সাথে তিনজন পিচ্চিকে রেলিং এর উপর দিয়ে তাকিয়ে “আঙ্কেল বল দেন, বল!” বলে চিৎকার করতে শোনা এবং দেখা যেত। জীবনের একটা বিশেষ আনন্দময় অংশ আমার ওদের সাথে কেটেছে, ক্যাডেট কলেজে যাবার পর সম্পর্কটায় ফাটল ধরেছিল, মাগুরা ছেঁড়ে ফরিদপুর চলে আসার পর প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিলাম ওদের, কিন্তু ভাগ্যের নিয়তি আবার আমাকে আর ওদেরকে এক করে দিল।

মাহিম আমার তিন বছর জুনিয়র হিসেবে নটরডেম থেকে পাশ করে ডিএমসিতে চান্স পেয়ে গেল। আমার চেহারা ক্যাডেট কলেজের বাঁশ এবং নানাবিধ কারণে একদম চেঞ্জ হয়ে গেলেও মাহিম আগের মতই আছে, মাহিমের আম্মুও ঠিক আগের মতই আছেন। উল্লাসের মোটর সাইকেলে চড়ে হাই স্কুলে গেলাম। মাত্র এক বছর পড়েছি এখানে, তবু স্মৃতির কোন অভাব নেই। কত স্যারের নাম মাথায় এল, সমস্যা হচ্ছে প্রায় সবার নাম মাথায় আসার সাথে সাথেই খালি ঐ স্যারের হাতে প্রাপ্ত মারের কথা মাথায় এল।

মনে আছে কবির স্যারের কাছে বেতের বাড়ি খেয়ে নিতম্বদেশ দাগ হয়ে গিয়েছিল অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণ না করার অপরাধে, মৃত্যুঞ্জয় স্যারের হাতে স্কেলের বাড়ি খেয়ে সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম বেয়াদপি করার অপরাধে। আনিস স্যারের কথা মনে আছে, আমাকে খুব বেশি আদর করতেন, ক্যাডেট কলেজে থাকতে স্যারকে চিঠি লিখেছিলাম নতুন স্কুলের ঠিকানায়, স্যার চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন কিন্তু সম্বোধনে লিখেছিলেন “শোয়াইব”, কিন্তু স্যার আমাকে চিনতেন “তিয়াস” নামে, সুতরাং আমি বুঝতে পেরেছিলাম স্যার আমাকে ভুলে গেছেন, অভিমান করেছিলাম স্যারের উপর, স্যারের শালা আমাদের ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়েছিল, স্যার এসেছিলেন, আমার খোজও করেছিলেন, আমি তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেওছিলাম কিন্তু প্রচণ্ড অভিমানে দেখা করি নি। গিয়ে জাহিদ স্যারের সাথে কথা হল। স্যার ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজ এর টিচার, শুধু মনে আছে স্যার দুহাতে দুটো বেত নিয়ে একসাথে দুই হাতের তালুতে পিটাতে পছন্দ করতেন। সেই স্যার আমার পরিচয় দিতেই চিনলেন, অতঃপর কথা হল অনেকক্ষণ।

পিটিআইতে যেতে পারতাম, ইচ্ছা করে গেলাম না। কেন জানি না। পিটিআইয়ের সাথে নানা কারণে আমার অনেক স্মৃতি, এত স্মৃতি যে বলে শেষ করা যাবে না। তবু গেলাম না। আবার বলছি, কেন জানি না।

তবে এটুকু মনে পড়ছে বহু বছর আগে এক ক্ষুদ্র গাট্টুগুট্টু বালক জনৈকা বালিকাকে এক নজর দেখার জন্য ঈদের দিন একা একা বাইরে বের হয়ে রিকশা দেখা শুরু করেছিল, এই আশায় যে সে যদি বের হয়! সেদিন ছিয়ানব্বইটা রিকশা দেখার পরও বালিকার দেখা পায় নি বালক, সেদিন তার ঠিক কি ধরণের দুঃখ হয়েছিল লেখকের মনে নেই, কিন্তু কাল অনেকদিন পরে বালক হঠাৎ করেই রিকশায় সেই বালিকাকে দেখতে পেল, এবং অতঃপর একটা সম্ভাব্য চরম রোম্যান্টিক ঘটনাকে সযত্নে ছাইচাপা দিয়ে বালিকা বালককে চিনতে না পেরে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। বালক শুধু মৃদু হাসল। হয়তো এ কারণেই ঐদিকে যাওয়া হয় নি। মাগুরা ভ্রমণের শেষ পর্বে আমি আর উল্লাস ভায়না মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। উল্লাস বলল, “তোমারে তো মাইর দেওন লাগে।

রেজাল্ট একটু খারাপ হইলেই আম্মা খালি কইত, তিয়াসের মত হও, তিয়াসের মত হও। তোমার নাম শুনতে শুনতে বাচ্চাকালে কান ঝালাপালা হইয়া গেসিলো মিয়া”। আমি বললাম, “আসলেই ব্যাটারে মাইর দেওন লাগে। আমার আম্মাও খালি একই কথা কয়”। উল্লাস চোখ কপালে তুলে বলল, “কেমনে? হাউ কাম?” আমি বললাম, “তোমারে তো কয় তিয়াসের মত হও, তিয়াসের মত হও।

আমারে কয়, আগে তুমি কত্ত সুন্দর পড়ালেখা করতা, এখন খালি আকাম কর। আগের তিয়াসের মত হও, আগের তিয়াসের মত হও। হা হা হা”। বাস চলে এল। মাগুরা ছেঁড়ে চলে এলাম।

একটু একটু খারাপ লাগছিল। চার বছর পর মাগুরা দেখেছি। খারাপ তো লাগবেই। কত জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, যাওয়া হল না। কত কথা বলার ছিল, বলা হল না।

ফরিদপুর এলাম। বাসায় এলাম। আসার পর আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয়া হল। ওখানে মোটা মোটা গোটা গোটা অক্ষরে লেখা – “দেরি করার কারণে তোমার বাসায় ঢোকা বন্ধ”; সাথে একটা স্টপ সাইন। নিচে লেখা – “আদেশক্রমে তারুণ্য, তোমার ছোট ভাই”।

অতঃপর একটা কচি হাতের আঙ্গুল সজোরে আমার কান আঁকড়ে ধরল। এবং আমি হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম – বেঁচে থাকা মোটেই খারাপ কিছু নয়। ১১/০৯/১৩ বিকাল ৫টা ৫৩ মিনিট

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।