আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জান যদি না থাকে , ধান দিয়া কি কাম?

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

গায়েবের প্রতি ভয় , ভালো অস্ত্র ঃ - উক্তিটা "লাল সালুর " অনবদ্য চরিত্র । সহজ সরল গ্রামের মেয়ে রহিমার । মজিদের প্রথম স্ত্রী , যাকে মজিদ বিয়ে করেছিলো সংসারের "মুফতি" কাজের মেয়ে হিসেবে । ধান মাড়াবে , চাল করবে, এক হাতে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলাবে । সহজ সরল এই মানুষটাকে শোষন করতে মজিদ খুব কার্যকরি একটা পথ নিয়েছিলো ।

"ভয়" । নাহ, মানুষের ভয় নয়। ঐশি ভয় , আল্লাহর ভয় । "ভয় " এর মত ইফেক্টিভ অস্ত্র আর হয় না । এই ভয় একজন মাকে দিয়ে খুন করাতে পারে , হয়ত সে স্বাভাবিক অবস্থায় একটা পিপড়েও মারবে না।

ইংরেজি ছবি , "স্টেট অফ ফিয়ার" দেখতে অনুরোধ করবো । দেখবেন , সেই আদি কাল থেকে ব্যবহৃত এই অস্ত্র কিভাবে বুশ কাজে লাগিয়েছে । এই বুঝি সাদ্দামের গুপ্তচররা ঝাপিয়ে পড়বে, কেমিকেল অস্ত্র ব্যবহার করে মেরে ফেলবে মার্কিনীদের । আদিকাল থেকে ব্যবহৃত অস্ত্র , ভয়ঃ মধ্যযুগে যখন বায়োলজিকাল উইপেন বা আনবিক বোমার ভয় ছিলো না , তখন ধর্ম ব্যবহার করেছে "অজানাকে ভয়ের " স্বাভাবিক প্রবৃত্তি । চার্চ , ধর্মের নামে "ডাইনি" বলে আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলেছে হাজার হাজার নারী।

জাহেলিয়াতের যুগে যেমন মেরে ফেলা হতো নারী শিশুদের । কিংবা এখন মেরে ফেলা হয় , ভ্রনাবস্থায় , একটা পুরুষ শিশুর দুর্বার আকাঙ্খায় । সর্বত্রই ভয় । প্রতিটা কাজ আপনি বিশ্লেষন করতে থাকুন , প্রতিটা আবেগকে প্রশ্ন করতে থাকুন - একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে আপনি একটাই উত্তর পাবেন । ভয় ।

হতে পারে , মরে যাবার ভয় । এবং পরকালে বিশ্বাসী হলে তো আরো সমস্যা । মরে যাওয়ার পরে আবার মৃত্যু যন্ত্রনার ভয় । ধর্ম চলে যাওয়ার ভয়। আল্লাহ রেগে যাবার ভয়।

মুহম্মদকে হারানোর ভয়। দারিদ্রকে ভয় । খোদাকে ভয় । ক্ষুধাকে ভয় । কিন্তু, ঐ যে বললাম, সবার শেষে , সবের মূলে ওই একটাই কারন।

মরে যাওয়ার ভয় । এই ভয়কে কাজে লাগিয়েই ধর্ম্প্রান মুসলমানকেও সন্ত্রাসী করে তোলা হয় । ব্রেইন ওয়াশ করা হয়। দলাদলিটাও ওখানেই । ওরা বুঝি আমাকে মেরে ফেলবে ।

তাই ভয়। রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার অস্তিত্বের লড়াই । আস্তিক আর নাস্তিকের অস্তিত্বের লড়াই । ধনী আর গরীবের অস্তিত্বের লড়াই। নারী আর পুরুষের অস্তিত্বের লড়াই ।

আমেরিকার সাথে বাকি পৃথিবীর অস্তিত্বের লড়াই। সকলেই ভাবছে , " অপর পক্ষ আমাকে মেরে ফেলবে"। তাহলে সমাধান ? নিজেকে বাঁচাও । নাহলে , "ওকে মেরে ফেলো। " মানুষের কর্মকান্ডের মূলেও ভয় ঃ মানুষের তথা জীবের "বেঁচে থাকার স্বাভাবিক" তাগিদ তাকে গনতান্ত্রিক করে ।

মানুষ সব সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষেই যায় । কারন , এতে মনুষ্য প্রজাতির "টিকে যাওয়ার" সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিলুপ্ত হওয়ার ভয় এর বিপরীতে। কিন্তু , এর বাইরেও , টিকে থাকার তাগিদের পরেও "নীতিবোধ " ও "আদর্শ " নামক এক আজব ঝামেলা দ্বারা মানুষ পরিচালিত হয় । এই চিন্তা ও চেতনার জায়গাটা আছে বলেই মানুষ পশু হতে হতেও হয় না ।

কখনো কখনো নিজে না বেঁচে অন্যকে বাঁচায় । সংখ্যালঘিষ্ঠের পক্ষে রুখে দাঁড়ায় । সব কিছুর উর্ধ্বে , কিছু "কমন গুড" কে পরিমাপক ধরে লড়াই করে ক্ষমতার পক্ষে নয়, বিরুদ্ধে । হয়ত সেও শোষিতের টিকে থাকার অধিকার রক্ষায় । নিপীড়িতের সংখ্যা এক হলেও , নীতি বোধের কারনে তার পাশে দাঁড়ায় ।

এই অদ্ভুত আচরনের কারনেই মানুষ , মানুষ হয়। পশু নয়। মানুষের কমন সেন্স , ভয় ছাপিয়ে উঠতে পারেঃ রহিমার মত " অতি সরল বোকা " মানুষটাও একদিন হঠাত করেই বুঝতে পেরেছিলো , জমিলার " জান এর দাম , ধানের চেয়ে অনেক বেশি। " মজিদের ধর্ম তাকে এই শিক্ষা দেয়নি। এই শিক্ষা সে পেয়েছিলো মাতৃত্ববোধ থেকে ।

আর এই বোধই তাকে প্রতিবাদী করেছিলো , মানব ঈশ্বর ভেক ধারি "মজিদের" বিপক্ষে , যাকে সে এতদিন পেত প্রচন্ড ভয়। রাজাকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে , খুন, শোষন, ধর্ষনের সহযোগিদের বিরুদ্ধে - যা পারি তাই নিয়ে - লড়াই করতে তাই খুব বেশি যুক্তি বা প্রমান লাগে না। এইটা কমন সেন্স । সাধারন বোধ থেকেই মানুষ সাহসী হয় । ঘৃনা করতে শেখে ।

প্রতিবাদী হয় । ৭১ এ যেমন হয়েছিলো । কারন, তারা কিছু অশুভ শক্তিকে ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেখে । এরা ধর্ম বিরোধী নয় । এরা রাজাকার বিরোধী ।

এরা মুহম্মদের বিরোধী নয় । পাকিপন্থী এন্টিবাঙালিদের বিরোধী । কোন কথায় চিড়ে ভিজবে না হে, তোমাদের মত এও আমাদের অস্তিত্বের লড়াই । তোমরা আমাদের মেরে ফেলবে , দখল নেবে , আমরা বিনা যুদ্ধে কেন দেব সূচাগ্র মেদিনী? আফটার অল, জানই যদি না থাকে তো ধর্ম কি ধুয়ে খাবে ? [ কেউ ব্লগ ছেড়ে যাবেন না , আমরা আর কত পালাবো?]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।