আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে গল্পের কোন নাম দেওয়া যায়নি



বাবা ও বাবা কাজে যাবা না? সকাল থকে শরীরটা ভাল নেই রহিম মিয়ার । অন্য কোন দিন বিরক্তই হত রহিম মিয়া । তাতে কোন সন্দেহ নেই । কিন্তু আজ বিরক্ত হওয়া যাবে না আজ যে একটা বিশেষ দিন । রহিম মিয়ার সংসারে সদস্য ৩ জন হলেও অভাব শব্দটা সাথে সে কখনোই পেরে ওঠে না ।

অভাব সবসময় তাতে পরাজিত করে ,সে যে চেষ্টা করে না তা না কিন্তু ভাগ্যদেবী কখনোই তাকে কেন সাহায্য করে না তা সে বোঝে না । তার স্ত্রী সব সময় বলে ফকির দেখাতে কিন্তু তার কথা তার গায়ে লাগে না । তবে এবার ভাবছে সে একজন ফকির দেখাবে । তারাতারি উঠে ব্রাশ করে । এটা তার মেয়ের কথা ঘুম দিয়ে উঠেই ব্রাশ করতে হবে ।

মুখ ধুয়ে পান্তা ভাত, মরিচ পোড়া আর একটা পিঁয়াজ দিয়ে সকালের খাবার শেষ করে কাজে বের হল সে । আবিদ চৌধুরী বংশের ছেলে রাজত্ব নেই তবুও তার মা তাকে রাজা ডাকে ! নাহ খুশিতে না তার মার চোখে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অলস তার ছেলে । আর তার জন্যই মায়ের কাছ থেকে দেশ বিজয় না করেও উপাধিটা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে !! সাধারণত দশটার আগে আবিদের ঘুম ভাঙ্গে না । কিন্তু আজ সে ভোর ৫ টায় একটা দরজার সামনে দাঁড়ানো । কারন আজকে তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটির জন্মদিন ।

আদৃতার সকালে স্কুল সাধারণত সেই প্রতিদিন তার ভাইয়াকে ঘুম দিয়ে তোলে । অ্যালার্মের শব্দটা বাজতেই ঘুম ভাঙ্গে আদৃতার । চোখ খুলতেই দেখে ওর ভাইয়া সুন্দর একটা গিফট নিয়ে দাড়িয়ে আছে । বিশ্বাস করতে পাড়ছে না যেই ভাইয়া ১২ টার আগে ঘুম দিয়ে ওঠে না সে তাঁর এত সকালে তাঁর চোখের সামনে ! আবিদ খুব জোড়ে গান গাইতে শুরু করে “হ্যাপি বার্থডে টুঁ ইউ,হ্যাপি বার্থডে টুঁ ইউ” অন্য কোন দিন হলে আদৃতা চিৎকার করে বলত, “ভাইয়া কাক গুলো ঘুমচ্ছে ওদের ঘুম ভাঙ্গাচ্ছিস কেন?” আজ সে বলল না বেশ আস্তে করে গিয়ে ভাইয়ার গলাটা জরিয়ে ধরে বলল থাঙ্কু ভাইয়া । আদৃতা জানে ওর ভাইয়া ওকে কত ভালবাসে ।

খুনসুটি,দুষ্টুমি তো সব ভাইয়ার সাথেই । আমি ঘুমুতে যাচ্ছি আপু তুই রেডি হয়ে স্কুলে যা । আদৃতা বুঝল শুধু ওকে উইশ করার জন্য ওর ভাইয়া রাতে ঘুমায়নি । চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল । পড়ার আগেই ধরে ফেলল আবির কিরে পাগলি মুক্ত কেউ ফেলে দেয় ? এটা আগলে রাখতে হয় ।

যা রেডি হয়ে স্কুলে যা, পকেট থেকে ১০০ টাকা বের করে আদৃতার হাতে দিয়ে বলে স্কুলের বন্ধুদের খাওয়াবি । রহিম মিয়া বলতে গেলে আজ কোন যাত্রীকে ছাড়ছেন না । কারো কাছে অনৈতিক ভাড়া ও চাচ্ছেন না, ন্যায্য ভাড়া চাচ্ছেন । এই ইট কাঠের শহরের মানুষ গুলোকে রহিম মিয়া ভাল ভাবে চেনেন ,ন্যায্য ভাড়া চাইলেও কম দিতে চায় । আজ রহিম মিয়া কিছু বলছে না, শুধু বলছে যাবে না ।

আবির ঘড়ি দেখল সন্ধ্যা ৭ টা ওর বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে । খালি রিকশা দেখে ডাক দিল “এই খালি যাবেন” ঃ যামু ঃচাচা একটু ঘুরতে হবে আমি একটা কেক কিনব তাঁর পর যাব । কত দেব? ঃআইচ্ছা বাজান যামু আর ভাড়া ন্যায্য যা হয় তাই দিয়েন । আবির সাধারণত বুড়ো মানুষের রিকসায় চরে না কিন্তু আজ চড়ল সময় নাই তাই । হঠাৎ রিকসা চালক বলল “বাবা কেক কিনবেন কার জন্য” “আমার বোনের জন্য চাচা, আজ ওর জন্মদিন” বলল আবির “আমার একখান উপকার করবেন বাবা?” বলল রিকসা চালক “কি চাচা” বলল আবির “আমার বয়স বাবা একষট্টি বিয়ার সাতাইস বছরেও কোন পোলা মাইয়া হয় নাই ।

যহোন আশা ছাইরা দিছি তখন ঘর আলো কইরা একখান মাইয়া হইছে । বাবা কইলে বিশ্বাস করবেন না আমার ভাঙ্গা ঘরে একখান পরী নামছে যেমন রুপ তেমনি গুন । ক্যালাস ফাইবে পড়ে ক্যালাসে ফার্স্টও হয়। সরকার ওরে ফ্রি পড়ায়, মাইয়াগো যে ভাল স্কুলডা আছে ওইহানে পড়ে । বাবা, ওর লগে যেই মাইয়ারা পড়ে তারা বড়লো্‌ অনেক আমোদ ফুর্তি করে আমার মাইয়ার মন খারাপ হয় কিন্তু আমাগো বুঝতে দেয় না ।

আইজ মাইয়াডার জন্মদিন আমি ওরে একখান সাম্প্রারাইজ দিতে চাই আমারে একখান ভাল কেক কিন্না দিবেন টাহা যা লাগে আমি দিমু । “ প্রথমে আবির হাসল বলল চাচা সাম্পারাইজ না সারপ্রাইজ । আচ্ছা কিনে দেব । বলতে বলতে ওরা একটা দকানের সামনে থামল । আবির কেক কিনল ।

রিকসা চালকেও কিনে দিল । পথে কথা বলতে বলতে জানল ওদের এলাকারই কাছে রিকসা চালকের গ্রেজ তাঁর একটু পর বাসা, পথে যাওয়ার মধ্যে তাঁর বাসাটাও দেখে রাখল আবির । বাসার সামনে নামার পর ভাড়া মিটিয়ে দিল আবির । রিকসা চালক আবিরকে ৪ টা চকলেট দিল বলল “বাবা আইজ যারা আমার রিকসায় উঠছে তাগো আমি চকলেট দিছি আপনেরে ৪ টা দিলাম আপনে দুইডা খাইবেন,আপনার বোনরে দুইডা দিয়েন” । আবির ওর বাসার কলিংবেলে চাপল ।

আদৃতা দরজা খুলল ভাইয়ার হাতে কেক দেখে যারপরনাই খুশি । কেক কাটার সময় হঠাৎ আবিরকে খুজে পেল না আদৃতা । বিদ্যুৎ চলে গেল । একটা জ্বলন্ত মোম নিয়ে আবির ঢুকল রুমে । আদৃতা কেক কাটল ।

আবির অর্ধেক কেক আলাদা করে রাখল । বাকি অর্ধেক কেক থেকে এক টুকরো খাইয়ে দিতে গেল আদৃতাকে, মাখা মাখি হয়ে গেল আদৃতার পুরো গাল মুখ আদৃতাও দমবার পাত্র না আবিরকে মাখিয়ে দিল মাখা মাখি করে পুরো ঘর নোংরা করে মায়ের বকুনিতে শেষ হল তাদের আনন্দ । আজকের দিনটা অবশ্যই আদৃতার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন গুলোর একটি । রিকসা গ্যারেজ করে বাড়ি ফিরছে রহিম মিয়া । হাতে কেক দেখে মহাজন বলল ঐটা কি? রহিম মিয়া বলল মিয়া ভাই মাইয়াডার জন্মদিন ও কিছু পায় নাই জীবনে তাই একখান কেক কিনছি ওরে সারপ্রাইজ দিমু ।

মহাজন বলল ফকিরনির শখ কত ভাত খাইতে পারে না কেক খায়। অপমানটা নিরবে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নাই হাটা শুরু করল । বাজারটা পাড় হলেই কিছুদূর হাটার পর রহিম মিয়ার বাড়ি । বাজার থেকে চকলেট কিনবে বলে একটা দোকানে দাঁড়াল সে । দোকান থেকে বের হয়ে ভাবছে আর হাঁটছে আজ তাঁর মেয়েটা কত খুশি হবে !! পিছন থেকে বেশ জোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল রহিম মিয়া ছিটকে পড়ে গেল হাতের কেকটা ।

বাজারের দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝে তাঁর কেক, পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন রহিম মিয়ার স্বপ্নের কেক । রহিম মিয়া দাঁড়াল তাঁর মাথার উপরে আকাশ নিচে মাটির ধুলোতে মিশে যাওয়া কষ্ট মিশে থাকা কেক রহিম মিয়া কোন দিকে তাকাবে ঠিক বুঝতে পাড়ছে না ... শেষ কিছু কথাঃআমি গল্প লিখতে পারি না একটু কাগজ কলমে কাটাকাটি করলাম সকল ভুল খমার দৃষ্টিতে দেখবেন

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।