আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিহ্ন ০০৩

সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াই

... কায়েসের চোখ আবারও চলে যায় দিলনাজের নিথর শরীরের দিকে। অপচয়। এই মৃত্যু এক বিশাল অপচয়। তার চটকা ভাঙে শারমিনের চাপা ধমকে, "কায়েস, মনসুর ভাই কী বলছেন তোমাকে? ডক্টর মালিককে একটু ডেকে আনো!" কায়েস চমকে ওঠে এবার। তার নামের এই অংশটায় সে অভ্যস্ত না।

নিজের নামটা মনে মনে হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে সে। কায়েস কামরান। কেমন একটা নাম! কামরান কায়েস হলে কি আরেকটু ভালো শোনাতো? উঁহু। যে-ই লাউ সে-ই কদু। নাকি একটা জবরদস্ত পদবী যোগ করা উচিত ছিলো নামটার লেজে বা মুড়োয়? কায়েস কামরান ফৌজদার! নাহ, ফৌজদার নামটা পছন্দ না তার, কায়েস কামরান তোপদার? কিংবা মনসবদার কায়েস কামরান? এবার শারমিন একটু ঠেলে দেয় তাকে হাতে ধরে দরজার দিকে।

কায়েস লজ্জিত হয়ে ওঠে হঠাৎ। একটা সুন্দরী মেয়ে ন্যাংটা হয়ে মরে আছে ঘরের মধ্যে, তা-ই দেখে আরেকটা সুন্দরী মেয়ে ফিট হয়ে পড়ে আছে, আর সে কি না ব্যাটাছেলে হাঁ করে এসব দেখছে? এ জন্যেই তো তাকে আরেকটা সুন্দরী মেয়ের ধাক্কা খেতে হলো। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে কায়েসের আবার মনে হলো, মনসুর ফৌজদার আসলেই ললাটবান লোক। না হলে কেন কায়েসকে বেরিয়ে যেতে হচ্ছে ঘর ছেড়ে, আর ঐ ব্যাটা দিব্যি দাঁড়িয়ে সব দেখছে? করিডোরে বেরিয়ে এসেই কায়েস ধাক্কা খায় ডক্টর মালিকের সাথে। মালিক আবদুল হক পাক্কা ছয় ফুট লম্বা, সেইরকম চওড়া, কায়েস এর আগেও একদিন তার সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্যথা পেয়েছে, কিন্তু কষ্টেসৃষ্টে চেহারায় একটা হাসি ফোটালো সে।

"ডক্টর, আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন মনসুর সাহেব ...। " মালিকের দশাসই চেহারার তুলনায় কণ্ঠস্বর অনেক মিহি, অনেকটা শচীন টেন্ডুলকারের মত। "আই নো!" কায়েসকে একরকম ঠেলেই ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো সে। কায়েস বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলো, মালিক আঁতকে উঠে চেঁচাচ্ছে, "ইয়া খোদা!" কায়েস কাঁধ ডলতে ডলতে আবার ঘরে ঢুকলো। মনসুর ফৌজদার মাঝারি উচ্চতার মানুষ, তার পাশে মালিককে দেখাচ্ছে দুঃখী একটা গরিলার মতো।

সে প্রায় ফুঁপিয়ে উঠে বললো, "হোয়াট হ্যাপেন্ড স্যার ...?" মনসুর ফৌজদার শীতল কণ্ঠে বললেন, "সেটা আপনাকেই আপাতত বার করতে হবে ডক্টর। " মালিক এগিয়ে গিয়ে সন্তর্পণে ঝুঁকে বিছানায় পড়ে থাকা দিলনাজের গলায় হাত রাখলো। কয়েক সেকেন্ড পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সে ধরা গলায় বললো, "শী ইজ ডেড স্যার!" মনসুর ফৌজদারের চেহারায় কোন পরিবর্তন লক্ষ করতে পারলো না কায়েস, শুধু পিঠের পেছনে বেঁধে রাখা হাতটা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। নিরুপমা ফৌজদার ওদিকে সোজা হয়ে বসেছেন, ডক্টর মালিক এবার তার দিকে এগিয়ে গেলো। "আর ইউ অলরাইট ম্যাম?" নিরুপমা মুখে একটা হাত চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে শ্বাস নিলেন।

"দিলনাজ ... দিলনাজ ...। " একটা হাহাকার বেরিয়ে এলো তাঁর কণ্ঠ থেকে। মনসুর ফৌজদার মালিকের দিকে ফিরে কঠিন কন্ঠে বললেন, "মালিক, দিলনাজ কিভাবে মারা গেলো?" মালিক একটা রুমাল বার করে ঘাড় মুছলো। কিছু বললো না। শারমিন নিচু গলায় বললো, "স্যার, আপনার মনে হয় পুলিশে ফোন করা উচিত।

" নিরুপমা ফৌজদার আবারও ফুঁপিয়ে উঠলো। মনসুর ফৌজদার কিছু বললেন না, তীব্র চোখে শুধু তাকিয়ে রইলেন ডক্টর মালিকের দিকে। মালিক গলা খাঁকরে বললো, "আই থিঙ্ক শী হ্যাজ টেকেন সাম পয়জন স্যার। " ঘরে সবাই হঠাৎ চুপ করে গেলো। কায়েস এই নীরবতার মধ্যে কোন কিছু খুঁজে না পেয়ে আবার তাকালো দিলনাজ দুররানির মৃতদেহের সাথে।

চমৎকার একটা বাদামী শরীর ছাড়া ঘরের আর সবকিছু তার কাছে অচেনা উদ্ভিদের মতো মনে হতে লাগলো। দিলনাজ, দুরন্ত দিলনাজ, আজ বিকেল বেলাও কায়েস তাকে চোরাচোখে দেখে বারবার মুগ্ধ হচ্ছিলো, কী চমৎকার শরীরের বাঁধন, কী অদ্ভুত মিষ্টি কণ্ঠস্বর ... এখন সে মরে পড়ে আছে একটা কলাগাছের মতো। ঘরে সবাই একসাথে সরব হয়ে ওঠে, আর এর মধ্যেই করিডোরে ভেসে আসে একটা পায়ের আওয়াজ। কয়েক সেকেন্ড পরই হন্তদ্ত হয়ে একটা শরীরের ঝলক ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে। "হেই, কী হচ্ছে ...।

" লানার কথাটা যেন হঠাৎ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয় স্তব্ধ হয়ে যায়। আবার বিশ্রী নীরবতা নেমে আসে ঘরের মধ্যে। "বাবা? হোয়াট'ম গোয়িং অন?" ঘড়ঘড়ে একটা প্রশ্ন ভেসে আসে লানার কাছ থেকে। মনসুর ফৌজদার অস্বস্তিভরে এগিয়ে যান মেয়ের দিকে। "লানা, মামণি, শান্ত হও।

তোমার দিলনাজ আন্টি মারা গেছেন। " লানার ছোট্টখাট্টো কিশোরী শরীরটা এবার বিচিত্র একটা যন্ত্রণায় যেন এঁকেবেঁকে ওঠে। মনসুর ফৌজদার মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে যান, কিন্তু লানার চিৎকারে ফৌজদার ভিলার প্রত্যেকটা জানালার কাঁচ যেন ঝনঝন করে ওঠে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে অনেক দূরে ডেকে ওঠে কয়েকটা কুকুর। কায়েস আবার দেয়ালে হেলান দেয়।

নিরুপমা ফৌজদার আবারও এলিয়ে পড়েছেন সোফার ওপর। কায়েসের দৃষ্টি তাঁর মুখ থেকে পিছলে গলা বেয়ে নেমে আসে খানিক উন্মুক্ত বুকের খাঁজের দিকে। কায়েস টের পায়, শারমিন তীব্র চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে, কিন্তু সে পরোয়া করে না। জাহান্নামে যাক সব কিছু। (পরে আরেকটা টুকরো দেয়া হবে ...)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।