আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ-৮~*~চেরাপুঞ্জি হতে সুরমার শীতলতায়

কাব্য-দিনের কথাঃ স্পর্শের আগুনে! অন্যদিগন্ত: www.fazleelahi.com

আগের পর্ব পড়ুন পাইকপাড়া গাঁয়ের স্বপ্নঃ পাইক পাড়ার কথা- লুৎফাদের গাঁয়ের নাম ছিল পাইকপাড়া, যে গাঁয়ে আমাদের এযাবৎ অবস্থান। গাঙের পূব কিনার ধরে গড়ে উঠা গ্রামটি পুবের আবাদী জমিতেও বেশ কিছুটা দখল বসিয়েছে। দক্ষিণে ভিণ গাঁয়ের গা ঘেঁষে আছে, পশ্চিমে ভিন্ দেশের সীমানা, কাঁটা তারের প্রতিটি কাঁটা মুহূর্তে মুহূর্তে বিএসএফ-এর অন্যায় অস্ত্রনলের মত জানান দিচ্ছে যে, এখানেই থেমে যাও। তবুও প্রথম দিন থেকেই শিশুমনে উঁকি ঝুঁকি দিত যে, ইস্, কাঁটা তারের ওপাশে পা দিতে পারলেই তো আমি বিদেশ পৌঁছে যাই; 'সীমানা' বড়ই অর্থবহ এক শব্দের নাম। পাইকপাড়ার দক্ষিণ থেকে তাকালে মনে হবে যেন গ্রামটি চেরাপুঞ্জির কোলে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, অথচ উত্তরে যেতে যেতে মনে হবে পুঞ্জির কি অভিমান, যতই হাত বাড়িয়ে ধরতে যাই, ততই দূর থেকে দূরে সরে যায় সে।

উত্তরী টিলাগুলো এ গাঁয়ে সাঁঝ-প্রহরের আগমন পূর্বেই সন্ধ্যাবাতি জ্বালিয়ে দেয়। তারপর গাঁয়ের মানুষদের গল্পবলা আর নাকডাকার সাথে হুক্কাহুয়াদেরও মিতালী মিলিয়ে চলতে থাকে ভোরের আলোর অপেক্ষা। গাঁয়ের উত্তরের বাসিন্দা ছিলেন 'টেকার বাপ'। (গাঁয়ের প্রতাপশালী এই বক্তিকে নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি, অন্য পর্বে তার আসতে পারে। ) টেকার বাপের ভয়ংকর সব গল্প লোকমুখে শুনে শুনে সেদিকে যাওয়ার সাহস খুব একটা পেতাম না, তথাপি একেবারেই যে যাইনি তা নয়, সে অন্য গল্প, অনেকটা যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় নয়; বরং উল্টো বলতে হবে রাত পোহায়।

অন্যদিকে চোরাচালানীদের পাকড়াও করার জন্য রাত-দিন হাফপ্যান্ট বাহিনীর অভিযান অব্যাহত। কেননা, পাইকপাড়া গ্রামের পরই ভারতের সীমানা আর ভারতের মডার্ন বাজার ও গারো, খাসিয়া এবং মগদের পল্লীও সীমান্তের কাছাকাছি, অনেক শুনে শুনে যেন না দেখেও দেখে ফেলেছি। সিলেট ফেরার বহুদিন পরও যখন সেদিনগুলোকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে যেতাম, তখনকার কোন একদিন স্বপ্নে দেখলাম যে, টেকার বাপের বাড়ীর উত্তরে গাঙের পানি ঘাস আর লজ্জাবতী লতায় ঘেরা সরু পথ ছুঁই ছুঁই করছে। সে পথ পেরুলেই পাদদেশীয় কি চমৎকার উদ্যান, বড় বড় গাছের গুড়ি পড়ে এখানে ওখানে, সবুজে সুবজে সাগর ঢেউ যেন, মাঝে মাঝে গাছালীর ফুল আর বৃদ্ধ পাতাদের লাল-হলুদ রঙ যেন খোঁপায় পরা ঝিঙে আর কৃষ্ণচূড়া। বিমুগ্ধ সে স্বপন আমাকে বাস্তবতা ভুলিয়ে দিল, আজো আর স্মরণ করতে পারিনি যে, টেকার বাপের বাড়ীর ওপাশটা কেমন ছিল।

(চলবে) [ধারাবাহিকগুলো এখন থেকে 'ফজলে এলাহি ব্লগ' থেকে স্থানান্তরিত হয়ে 'ফজল ব্লগ'-এ আসবে] ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে। পরের পর্ব পড়ুন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।