আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

♥ll সরস্বতী পুজা ২০১৩ , ১৫ ই ফেব্রুয়ারী রোজ শুক্রবার। স্ব স্ব স্কুল, কলেজ, পাড়া ,মহল্লা , বাড়িতে পুজার প্রস্তুতি শুরু। ll♥

--------------------------------------------------- ♥♥♥ মা সরস্বতী দেবী ♥♥♥ ---------------------------------------------------- সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অন্যতম প্রচলিত পূজা। সরস্বতী দেবীকে শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী ও আশীর্বাদাত্রী মনে করা হয়। বাংলা মাঘ মাসের ৫মী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা, সংগীত ও শিল্পকলায় সফলতার আশায় শিক্ষার্থীরা দেবীর পূজা করে থাকে। বাকদেবী, বিরাজ, সারদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা, পৃথুধর, বকেশ্বরী সহ আরো অনেক নামেই দেবী ভক্তের হৃদয়ে বিরাক করে।

পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মের মুখ থেকে উথ্থান। দেবীর সকল সৌন্দর্য্য ও দীপ্তির উৎস মূলত ব্রহ্মা। পঞ্চ মস্তকধারী দেবী ব্রহ্মা এক স্বকীয় নিদর্শন। পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেত বস্র পরিধান করে থাকে যা পবিত্রতার নিদর্শন। দেবীর আসন কে পুষ্পশোভামন্ডিত করে রাখা হয়।

পরিবারের সকল সদস্য খুব ভোরে স্নান শেষে পরিস্কার বস্র পরিধান করে দেবীর সামনে অবস্থান করে থাকে। পুরোহিত পূজা শুরু করবার আগ পর্যন্ত দেবীর মুখমন্ডল ঢাকা থাকে। পূজার অর্ঘ্যর পাশাপাশি দেবীর পূজার অারেকটি প্রধান অংশ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক। সরস্বতী পূজার একটি বিশেষ অর্য্য হল পলাশ ফুল। দেবীর অঞ্জলীর জন্য এটি একটি অত্যবশ্যকীয় উপাদান।

পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ (৩ বার পাঠসহ) ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে। । নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ। বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।

। এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ। । প্রনাম মন্ত্রঃ নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।

। জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে। । সরস্বতীর স্তবঃ শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।

শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা। । শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ। পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।

। স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্। যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে। । হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– বিদ্যা দেবী।

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণের প্রকৃতি খণ্ডের প্রথম অধ্যায় বলা হয়েছে- বুদ্ধিরূপা, বাক্যরূপা, বিদ্যারূপা। সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী হিসাবে ইনি পূজিতা হয়ে থাকেন। ইনি স্মৃতি ও মেধা দান করেন। সব মিলিয়ে ইনি সর্ববিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসাবেই পূজিতা হয়ে থাকেন। পদ্মপুরাণ মতে– 'দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা।

অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। '[২]। সরস্বতীর বাদিত বীণার নাম কচ্ছপী। দেবী কখনো দ্বিভুজা, কখনো চতুর্ভুজা, আবার প্রয়োজন বোধে কখনো বা ষোড়শভুজা। এই দেবীর চিত্র বা মূর্তি অনুসারে যত প্রকরণ পাওয়া যায়– তাদের সকলেরই মাথার উপর মন্দিরের মত উঁচু মুকুট রয়েছে।

সকলেই ললিত মুদ্রাসনে আসীনা, একটি পা নীচু করে রাখা, আর একটি পা সম্মুখদিকে গুটানো। সকলেরই ডান হাত বুকের উপর বরমুদ্রায় স্থাপিত, বাম হাত মোড়া এবং উঁচুতে তোলা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিতা হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা বা চতুর্ভুজা, রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।

বৈদিক যুগের শুরুতে সরস্বতীর প্রধান পরিচয় ছিল নদী হিসাবে। আর্যরা ভারতে প্রবেশের পর ব্রহ্মাবর্ত নামক একটি স্থানে প্রথম বসতী স্থাপন করেছিলেন। সেই স্থানের একটি নদীকে আর্যরা সরস্বতী নামে আখ্যায়িত করেন। এই নদীটি ক্রমে ক্রমে পবিত্র নদী হিসাবে আর্যদের কাছে সম্মানিতা হয়ে উঠে। বেদে সরস্বতী নদীর উল্লেখ আছে।

ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের তৃতীয় সূক্তির ১০-১২ শ্লোকে প্রথম এই সরস্বতী শব্দটি পাওয়া যায় যে ভাবে, তা হলো– ১০. পবিত্রা, অন্নযুক্তযজ্ঞবিশিষ্টা ও যজ্ঞফলরূপধনদাত্রী সরস্বতী, ১১. সনৃত বাক্যের উৎপাদয়িত্রী, সুমতি লোকেদের শিক্ষয়িত্রী সরস্বতী আমাদের যজ্ঞ গ্রহণ করছেন। ১২. সরস্বতী প্রবাহিতা হয়ে প্রভূত জল সৃজন করেছেন এবং সকল জ্ঞান উদ্দীপন করেছেন। উল্লেখ্য সরস্বতী নামে ভারতে একাধিক নদী রয়েছে। ঢাকাস্থ নওরোজ কিতাবস্থান ও গ্রীন বুক হাউস লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিত 'বাংলা বিশ্বকোষ (চতুর্থখণ্ড)' এই নদী সম্পর্কে যা জানা যায়, তা হলো– ১. ভারতের আরাবল্লী পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সিধুপুর ও পাটন অতিক্রম করে রাধানপুরের ২০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে কচ্ছ উপসাগরে পতিত হয়েছে। আনুমানিক দৈর্ঘ্য ১০৫ মাইল।

২. হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে আমবালা জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছিল। আর্যরা এই নদীর তীরে বসতি স্থাপন করেছিল। ৩. উত্তর-পূর্ব ভারতের ঘাগগর নদীর অপর নাম সরস্বতী। শিবালিক পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে রাজপুতনার মরুভূমি পর্যন্ত প্রবাহিত। এর দৈর্ঘ্য ২৯০।

এই নদীর তীরে বসবাসকারী ব্রাহ্মণরা সারস্বত নামে খ্যাত। সুবল চন্দ্রমিত্রের 'সরল বাঙ্গালা অভিধানের মতে– ভারতের প্রথম আর্য উপনিবেশ স্থাপনের সময় পঞ্জাব প্রদেশে এই নদীর তীর প্রসিদ্ধিলাভ করেছিল। এই নদীটি সরমুর নামক স্থানে উদ্গত হয়ে অম্বালা জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অনেক জায়গায় বালুর ভিতরে নদীটি হারিয়ে গেছে– আবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পরে এটি ক্ষীণতর হয়ে- থানেশ্বর ও কুরুক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাতিয়ালা রাজ্যের প্রবেশ করেছে।

পরে এই নদী ঘর্ঘরা (ঘাগগর) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে– অন্তঃসলিলারূপে প্রবাহিত নদীটি প্রয়াগধামে গঙ্গা ও যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই নদীগুলোর ভিতর ঘাগগর নদীকে বেদে বর্ণিত সরস্বতীকে বিবেচনা করা হয়। এই নদীর তীরে ঋষিরা অত্যন্ত নির্বিঘ্নে ধর্মাচারণের জন্য আবাসভূমি হিসাবে নির্বাচন করেন। কালক্রমে এই নদীতীরে বৈদিক ঋষিদের একটি বড় পল্লী গড়ে উঠে।

বৈদিক ঋষিদের সম্মিলিত বেদপাঠ উক্ত স্থান মুখরিত করে রাখতো বলে– উক্ত স্থান বাগ্দেবীর আবাস হিসাবে বিবেচিত হতে থাকে। বেদের টীকারদের মতে– এই নদীটি সেকালে-একালের গঙ্গা নদীর মতোই পূজিতা হতো। তবে, আর্যরা এই নদীকে জ্ঞান উদ্দীপনা বা বাক্যের উৎপাদয়িত্রা হিসাবেই পূজা করেছেন। কালক্রমে বিভিন্ন উপ্যাখ্যানের সূত্রে এই নদীকে দেবী সত্তায় উন্নীত করা হয়েছে। ঋগ্বেদের ১।

১৪২। ৯ শ্লোকে বাক্-দেবী হিসাবে তিনটি নাম পাওয়া যায়। এঁরা শুচি ও দেবগণের মধ্যস্থা নামে অভিহিত হয়েছেন। এই তিন দেবী হলেন- ভারতী স্বর্গস্থ বাক, ইলা পৃথিবীস্থ বাক এবং সরস্বতী অন্তরীক্ষস্থ বাক। গরুড় পুরাণের সপ্তম অধ্যায় মতে– সরস্বতীর আটটি শক্তি বিদ্যমান।

এই শক্তিগুলো হলো- শ্রদ্ধা, ঋদ্ধি, কলা, মেধা, পুষ্টি, প্রভা ও মতি। সরস্বতী দেবী হিসাবে পূর্ণাঙ্গরূপ পায়- বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত উপখ্যানের মাধ্যমে। যেমন– ১. মৎস্যপুরাণের মতে– ব্রহ্মা প্রজাসৃষ্টির উদ্দেশ্যে যখন জপ করছিলেন, তখন তাঁর দেহ ভেদ করে অর্ধ স্ত্রী ও অর্ধ নর রূপে একটি মূর্তি আবির্ভূত হয়। এঁর স্ত্রীরূপ শতরূপা নামে অভিহিত হয়। এই শতরূপাই– সাবিত্রী, গায়ত্রী, সরস্বতী ও ব্রাহ্মণী নামে খ্যাতি লাভ করেন।

এই কারণে সরস্বতীকে ব্রহ্মার কন্যা বলা হয়। আবার কামদেবের শরে বিদ্ধ হয়ে ইনি সরস্বতীকে কন্যাকে কামনা করতে থাকেন। পরে এই কন্যার সাথে মিলিত হয়ে প্রজা সৃষ্টি করেন। এই সূত্রে সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী হিসাবে অভিহিত হন। [চতুর্থ অধ্যায়।

মৎস্যপুরাণ]। ২. ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণের মতে– সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্ম নিজেকে দুই ভাগে ভাগ করলেন। তাঁর ডান অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল পুরুষ সত্তা এবং বাম অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল নারী সত্তা। এই নারী সত্তার নাম 'প্রকৃতি'। প্রকৃতি কৃষ্ণের ইচ্ছায় নিজেকে পাঁচভাগে বিভক্ত করেন।

এই পাঁচটি ভাগ হলো– দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, সাবিত্রী, রাধা। প্রকৃতির সাথে কৃষ্ণের যৌনসম্ভোগের সূত্রে সৃষ্ট প্রকৃতির নিশ্বাস ও ঘাম থেকে বিভিন্ন দেবদেবীর সৃষ্টি হয়েছিল। এই সঙ্গমের সূত্রে প্রকৃতি একটি ডিম প্রসব করলেন। প্রকৃতি এই ডিমকে সাগরের জলে নিক্ষেপ করেন। এতে কৃষ্ণ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন যে– নিজ সন্তানকে ত্যাগ করেছ– এই কারণে তুমি কখনো সন্তান লাভের সুখ পাবে না কিন্তু অনন্তযৌবনা হয়ে বিরাজ করবে।

এরপর দেবীর জিহ্বার অগ্রভাগ থেকে জন্মগ্রহণ করেন– সরস্বতী। পরে প্রকৃতির বাম অংশ থেকে লক্ষ্মী এবং ডান অংশ থেকে রাধার জন্ম হয়। কৃষ্ণের অভিশাপের কারণে লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং রাধার কোন সন্তান হয় নাই। এঁরা তিনজনই কৃষ্ণের সাথে বৈকুণ্ঠধামে বসবাস করতে থাকেন। একবার সরস্বতী, লক্ষ্মী ও গঙ্গার মধ্যে বিবাদ হয়।

এই সময় গঙ্গা সরস্বতীকে নদী রূপে প্রবাহিত হওয়ার অভিশাপ দেন। সেই সূত্রে কলিকালে সরস্বতী নদীর উদ্ভব হয়। [প্রকৃতি খণ্ড। ব্রহ্মবৈববর্ত পুরাণ] হিন্দুধর্ম ছাড়াও খ্রিষ্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকে রচিত মহাযান বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাযান সূত্রে সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।