আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন লাভিং মেমোরি অব মাই হাজবেন্ড

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

স্বামীর কবরে প্রিয়তমা স্ত্রী জেসিজি লিখে গেছেন ‘ইন লাভিং মেমোরি অব মাই হাজবেন্ড’। স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শুনে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে শ্রীমঙ্গলে ছুটে এসেছিলেন বৃটিশ নাগরিক জেসিজি। স্বামীর সঙ্গে তার আর শেষ দেখা হয়নি। শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রিতে নাম পরিচয়হীন পাঁচটি কবরের একটিতে অশ্রুসিক্ত নয়নে লিখে গেছেন এই উক্তি। শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রিতে জেসিজির স্বামীর মতো চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ৪৬ জন বৃটিশ নাগরিক।

এর মধ্যে একই সঙ্গে একটি কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন এক বৃটিশ দম্পতি। চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে আছে আরও ৯ নিষ্পাপ শিশু। শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত সিমেট্রির অবস্থান শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫ কি·মি· দূরে জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ডিনস্টন চা বাগানের ভেতরে। সিমেট্রি এলাকাজুড়ে কোথাও কোলাহল নেই,সুনসান-নিথর নীরবতা। শতাধিক বছর ধরে জেমস ফিনলে চা কোম্পানির এই সিমেট্রি রণাবেণ করছে।

১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর ১৮৮০ সালে শ্রীমঙ্গলে বৃটিশরা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। সুদূর বৃটেন থেকে এখানে টি প্লøান্টার্সদের আগমন ঘটে। ততকালীন সময়ে যেসব বৃটিশ এবং তাদের স্ত্রী-পুত্র,স্বজন মারা যান তাদের ডিনস্টন সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত এ সিমেট্রিতে বৃটিশদের কবর রয়েছে ৪৬ টি। জেমস ফিনলে টি কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, জেমস ডিনস্টন চা বাগানের এ সিমেট্রিতে সর্বপ্রথম সমাহিত করা হয় রর্বাট রয়বেইলি নামের এক বৃটিশ নাগরিককে।

৩৮ বছর বয়সে ১৮৮৫ সালের ৩০ শে আগষ্ট তিনি ডিনস্টন চা বাগানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮৯৬ সালের জুন মাসে শিশু উইলিয়াম জন ও ডেভিড সহাবির মৃত্যু হলে তাদের এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯১৮ সালের ১৮ই মে জর্জ উইলিয়াম পিটারের সহধর্মিনী মেরি এলিজাবেথ পিটার মারা গেলে তাকে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ১৯১৯ সালের ২রা অক্টোবর জর্জ উইলিয়াম পিটারও পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। ডিনস্টন সিমেট্রির নীরবতায় পাষাণ কবরের একই আচ্ছাদনে একই কবরে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে জাহাজযোগে নিজ দেশে যাওয়ার পথে মারা যান রামসান্টার। ১৯০২ সালের এপ্রিলে পানিতে ডুবে মারা যান এফডাবি-উ এলান। এ দু’জনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। স্মৃতি রার্থে তাদের বন্ধুরা ডিনস্টন সিমেট্রিতে দু’টি প্রতীকী কবর তৈরি করে। ১৯১৯ সালের ২০শে জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের দারগাঁও চা বাগানে মারা যান অ্যাডওয়ার্ড ওয়ালেস।

এদিন ছিল তার ২৫তম জন্মদিন। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৭ সালের শুরুর দিকে হান্ট নামের একজন বৃটিশ নাগরিক তিনিও এই সিমেট্রিতে শায়িত আছেন। ১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার একটি বিমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন কিংবা অবতরণের সময় শ্রীমঙ্গলের উদনাছড়া চা বাগানে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় নিহত বিমানের দু’জন চালকের মরদেহ ডিনস্টন সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়। পরে আমেরিকার সামরিক বাহিনী দু’বিমান চালকের মৃতদেহ কবর থেকে উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যায়।

১৯৩৭ সালের ১৩ই ডিসেম্বর ৩৫ বছর বয়সী গিলবার্ড হেনরিটেটের ছেলে পিটারটেট পিতার সমাধি দেখতে শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন। গিলবার্ট হেনরির স্ত্রীর অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী তার মৃত্যুর পর মরদেহের ভস্ম প্রিয়তম স্বামীর পদপ্রান্তে অশ্রুসজল নয়নে রেখে গেছেন পুত্র পিটারটেট। চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে কালের সাী হয়ে রয়েছে শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত শ্রীমঙ্গলের এই ডিনস্টন সিমেট্রি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।