আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা যখন অচ্ছুৎ , অবহেলিত

জাদুনগরের কড়চা

উইকিপিডিয়াতে আমার বিভিন্ন সময় বিচিত্র সব ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। আগের লেখাতে এর কিছু কিছু ঘটনার কথা লিখেছি। আজ লিখছি রবীন্দ্রনাথের লেখা "জন গণ মন" গানটি নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ গানটা লিখেছিলেন প্রথম বঙ্গভঙ্গের পরে। পরে অনেকে বলেছিলো, এটা আসলে রাজা জর্জের স্তুতি গেয়ে, কিন্তু আসলে তা না, বরং ভারতবর্ষের মানুষের কথা নিয়েই এটা লেখা।

যাহোক, ভারতের স্বাধীনতার পরে ১৯৫০ সালে সংবিধান সম্মেলনে অনেক বাকবিতন্ডার পরে এটাকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহন করা হয়। কেউ কেউ "বন্দে মাতরম" এর পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু ওটাতে মাতাকে বন্দনা করার কথা বলা হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারে, তা ভেবে রবীন্দ্রনাথের জন গণ মন গানটিকেই ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে বেছে নেয়া হয়। গানটি পুরাই বাংলা (বন্দে মাতরমের কিছু কিছু অংশ সংস্কৃতে লেখা)। কিন্তু ভারতের সরকারের এক ওয়েবসাইটে, এবং অনেক গুলো পাঠ্যবইতে দাবি করা হয়েছে, এই গানের "হিন্দি সংস্করণ"কে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে, মূল বাংলা নয়। অবিশ্বাস্য!! রবী ঠাকুর বেঁচে নেই, তাই রক্ষা!! উইকিপিডিয়ার জন গণ মন নিবন্ধে যখন এ নিয়ে তর্ক বাঁধলো, গানটা হিন্দি নাকি বাংলা, তখন কয়েক হিন্দি ভাষী ভারতীয় "ট্রোল" দাবি করলো, ওদের সরকারের ওয়েবসাইটে লেখা আছে, এটা হিন্দি, বা "হিন্দি সংস্করণকে" জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে, অচ্ছুৎ বাংলাকে নয়!!! যেন বাংলা ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত থাকাটা অ-ভারতীয় সূলভ আচরণ!! ওয়েবসাইটের দাবি দেখে ভাবলাম, কে জানে, ১৯৫০ সালের ঐ সম্মেলনে হয়তো বিধায়কেরা আসলেই এটা করে থাকতে পারেন।

হাজার হলেও বাঙালিরা তো সুভাষ বসুর পরে আর ওরকম শক্তিশালী নেতা পায় নি সর্বভারতীয় অঙ্গনে। কিছু দিন পরে আমার বুয়েটের সহপাঠী বন্ধু প্রদীপ্ত (ইয়েলে পড়ছে এখন) সাংবিধানিক সম্মেলনের মূল ট্রান্সক্রিপ্ট বের করে পড়ে দেখলো, মোটেও কোথাও "হিন্দি সংস্করণ" এর কথা বলা হয়নি। উইকিপিডিয়ায় গানটির নিবন্ধে এটা ঠিক করলাম আমরা। কিন্তু তাতে কি আর ট্রোল বাহিনী থেমে থাকে!! মোটেও তারা মেনে নিতে পারেনা, যে বাংলার মতো একটা ভাষায় সর্বভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত থাকতে পারে। তাদের অদ্ভুত দাবী, গানটা হিন্দিভাষীরা গাইবার সময় "জন গণ মন"র বদলে "জানা গানা মানা" বলে গায়, আর তাতে করে নাকি গানটা হিন্দি একটা রূপ পেয়েছে, আর সেটাই সত্যি।

ভারতে বাঙালিদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের কবিতা গান নিয়ে আজ এরকম টানাটানি শুরু হয়েছে, এই ব্যাপারে বাঙালিদের প্রতিবাদে এগিয়ে আসা উচিৎ। উইকিপিডিয়া তো পরের কথা, খোদ পাঠ্যবইতেই এই মিথ্যা চাপাবাজি শেখানো হচ্ছে, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিন্দি ভাষায়। বাংলা ভাষা কি তাহলে অচ্ছুৎ? অভারতীয়? (ব্লগে কয়েকজন ভারতীয় বাঙালি আছেন, আশা করি তাঁরা ভারতে বাংলার মর্যাদা সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবেন। ইন্টারনেটে হিন্দিভাষীদের যা মনোভাব দেখছি, তাতে আমি ভারতে বাংলার মর্যাদা সম্পর্কে বেশ শংকিত) [ডিস্ক্লেইমার: এটা ভারত বিরোধী বা ভারতপন্থী - এরকম কোনো পোস্ট না।

দয়া করে ঐরকম ভাববেন না। বাংলা ভাষা পন্থী পোস্ট, তা অবশ্য ধরে নিতে পারেন]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।