আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ জগত জয়ে উত্তম কথার বিকল্প নেই

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

কথা যে শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তা প্রারম্ভ থেকেই প্রমাণিত। জন্মগ্রহণ করার পর শিশু প্রথম শিক্ষা পায় কথা থেকেই অর্থাৎ, বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মুখ থেকে নানা শব্দাবলী শুনে শুনে সে সেগুলো শিখে নেয়। তারপর মক্তব, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নিয়ে উচ্চতর সকল শিক্ষা এমনকি ব্যবহারিক জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত মানুষ শিক্ষার জন্য কথাকে সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন তো পৃথিবীতে এসেছেই কথার মাধ্যমে, জিবরীল 'আলাইহিস্ সালাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কথা বা শব্দ মাধ্যম ব্যবহার করেই আল্লাহর কালাম শুনিয়েছেন এবং রাসূল তা মনে রেখে সাহাবাদেরকে শুনিয়েছেন, তারপর কুরআন লিপিবদ্ধ আকারে সংরক্ষিত হয়। কিন্তু 'শোনা-মনে রাখা-শিক্ষা দেয়া' -এই প্রক্রিয়াটি কুরআনের বেলায় আজো বিশেষভাবে কার্যকর রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্তও থাকবে।

অতএব, শিক্ষা-তা প্রাতিষ্ঠানিক অথবা ব্যবহারিক-যাই হোক না কেন তা অর্জনে, গ্রহণে, বর্জনে, দানে কথার গুরুত্ব অপরিসীম। আর সেই কথাগুলো যে বলবে এবং যারা শুনবে তাদের অবশ্যই এই বিবেচনা সম্মুখে রাখতে হবে যে, তা কতটা ভাল এবং কতটা মন্দ, কতটা গ্রহণযোগ্য আর কতটা বর্জনীয়, কতটা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য উপকারী আর কতটা অপকারী। তবেই হবে 'কথা' নামক এ মাধ্যম থেকে সঠিক ফায়দা অর্জন করা। জীবনের প্রয়োজনেই আমাদেরকে কথার আশ্রয় নিতে হয়, চাই তাতে কোন শিক্ষা থাকুক বা না থাকুক। মূলত এমন কোন কথা নেই যাতে কোন না কোন সুশিক্ষা অথবা কুশিক্ষা নেই, যেমন একটা খবর কারো অজানা থাকলে কেউ যদি তাকে তা শোনায় তবে এতে সে বিষয়টা সম্পর্কে অবগত হলো, অতএব তা-ই তার জন্য শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হবে।

এমন ধারার শিক্ষক ও ছাত্র আমরা সকলেই, কিন্তু সমাজে যারা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা অথবা আলেম অর্থাৎ, জ্ঞানী ব্যক্তিগণ ও সমাজের ভালমন্দ সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিরা যদি কর্ম হিসেবে হোক কিংবা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে হোক, মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তবে নিঃসন্দেহে তারা যেকোন সমাজ ব্যবস্থার জন্য একাধারে নির্মাতা, সংস্কারক ও অগ্রদূতের সম্মানিত ভূমিকায় রয়েছেন। ভালকথার শিক্ষকদের শ্রেণী বিভাগকে আরেকটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, তাতে রয়েছেন প্রতিজন পিতামাতা, দাদাদাদী, বড় ভাইবোন ও নিকট আত্মীয়, সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকগণ, সমাজের জ্ঞানী ব্যক্তি তথা আলেমগণ এবং সার্বিক পর্যায়ে আমরা সকলেই; এক কথায় আমরা কেউই উত্তম কথার শিক্ষকের অন্তর্ভুক্তি থেকে বাদ পড়ছি না। পরিবার, সমাজ, দেশ ও বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিটি শিরা-উপশিরায় যে মাধ্যম (কথা) ও তার উত্তম দিকটির শিক্ষার (ভাল কথা শিক্ষা) কল্যাণ ধাবমান এবং যার গুণাগুণে টিকে আছে জাগতিক সুসভ্যতা; তার রক্ষক, প্রতিপালক ও প্রক্রিয়াকারকদের মর্যাদা তাহলে কেমন হওয়া উচিত? আসুন শোনা যাক ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে কি বলেন, তিনি বলেনঃ ((নিশ্চয়ই মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা প্রদানকারীর প্রতি আল্লাহ্ তা'আলা দয়া করে থাকেন এবং ফিরিশ্তারা, আসমান ও যমীনের অধিবাসীরা এমনকি গর্তের পিপিলিকা ও পানির মৎসও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। )) [তিরমিযীঃ ২৮২৫, আলবানী সহীহ বলেছেন] সোবহান আল্লাহ্! এমন প্রতিদানই যথাযথ, তদুপরি এ তো শুধু পাওয়া, ভোগ করাটা তো মরণের পরবর্তী অনন্ত জীবনে, যার ব্যাপকতা কল্পনায়ও নিঃসীম। কর্মটা যত ব্যাপক তার প্রতিফলও ততটাই ব্যাপকতার দাবী রাখে, আর এই প্রতিফল আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালকের নিকট হতে বলে কথা।

তাই তিনি তাঁর নিজের দয়ার কথা তো উল্লেখ করেছেনই, সাথে সাথে সমস্ত ফিরিশ্তাদের দো'আ এবং আসমান ও যমীনের জানা-অজানা সকল অধিবাসীদের দো'আকে শামিল করেছেন। উদাহরণস্বরূপ গর্তের পিপিলিকা ও পানির মাছেদের দো'আর প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন। তাহলে বাকী থাকল কি? কিছুই নেই; স্রষ্টার দয়া থেকে শুরু করে সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই উত্তম কথা শিক্ষাদানকারীর জন্য দো'আ করে থাকে। হতভাগ্য তারাই যারা উত্তম কথার শিক্ষা নেয়না, তাই জানেও না এবং তা শিক্ষা দেয়ার কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং আমাদের উচিত নয়কি জীবনটাকে উত্তম কথা ও ভাল কাজ দ্বারা সুশোভিত করে তোলা? যার প্রতিদান স্রষ্টার দয়া ও সমগ্র সৃষ্টির দো'আ।

(গতিশীল >>>) ধারাবাহিকঃ এ পর্বের নাম- @ দো'আপ্রাপ্ত (৩/২)=মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা প্রদানকারী পূর্ব পর্ব পড়ুন- শ্রবণে নিরন্তর শুনি শব্দের কারুকাজ


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।