আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বি আর টি এ র দুর্নীতি কমেছে?

ব্যান হবো না তো! আমার গাড়ীখানা দিন কে দিন পুরাতন হইয়া যাইতেছে। ইতিমধ্যে উহা ক্রয়ের চার বছরকাল অতিবাহিত হইয়াছে। তাই উহা শারীরিক ভাবে সক্ষম কিনা তাহা পরিক্ষা করাইবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে। আগে যাহা দালাল ধরিয়া টাকা দিয়া করাইতে হইতো এখন তাহা আর প্রয়োজন হয় না। গাড়ীর কাগজ পত্র নিয়া নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়া টাকা জমা দিতে হয়।

নিজে ব্যংকার হওয়াতে ব্যাংকার সমাজের সাথে কিছু জানাশুনা থাকায় লাইনে দাঁড়াইয়া টাকা জমা দেওয়ার ঝক্কি আমাকে পোহাইতে হয় না। এক প্রকার নির্ঝঞ্ঝাটেই টাকা জমা দেওয়ার কাজটি সম্পাদন করিয়া ফেলিলাম। তারপর শুরু হইলো ঝামেলার পালা। যে ঝামেলা আগে অল্পকিছু টাকার বিনিময়ে দালাল পোহাইয়া দিতো, তাহা এখন নিজেকেই পোহাইতে হইবে। বি আর টি এ, মিরপুরে গাড়ী সংক্রান্ত কাজে যাহারা গিয়াছেন তাহারা সবাই অবগত আছেন সেখানকার অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে।

খোজখবর নিয়া জানিতে পারিলাম দালালদের দৌড়াত্ম নাই বটে, তবে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে থাকিতে থাকিতে গাড়ীর তৈল নিঃশেষিত হইবার অবস্থা হয়। মনে মনে প্রমাদ গুনিলাম। অফিস কামাই করিয়া তো আর সেখানে যাইতে পারিবো না, তাই পরিচিত এক পেশাদার গাড়িচালককে ভাড়া করিলাম আমার গাড়িখানার সক্ষমতা পরীক্ষা করাইয়া আনিবার জন্য। আগে যে টাকা দালালকে দিলে আমার গাড়ির সক্ষমতার ছাড়পত্র ম্যজিকের মত আমার হাতে আসিয়া পৌছাইত এক্ষনে তাহার দ্বিগুন টাকা গুনিতে হইলো। তাও ভাল, দেশ হইতে দুর্নীতি হ্রাস পাইয়াছে ভাবিয়া তৃপ্তির ঢেকুর তুলিলাম বটে, কলিজাখানা ফাটিয়া যাইতে লাগিলো এতগুলো টাকার শোকে।

ভোরবেলা হইতে বিকাল অবধি লাইনে থাকিয়া থাকিয়া যে পরিমান তেল, শ্রমঘন্টা আর অর্থ অপচয় হইলো তাহা মনে করিয়া আরেকবার মুর্ছা যাইবার উপক্রম হইল। নিজেকে স্বান্তনা দিলাম -“দুর্নীতি কমিতেছে”। কিন্তু তাহাতে আমার কি লাভ হইলো? গাড়ির সক্ষমতার ছাড়পত্র হাতে পাইবার পরে, আরেকবার মুর্ছা যাইবার মত খবর শুনিতে হইলো। নতুন নম্বরযুক্ত থালার (Number plate) জন্য টাকা জমা দেওয়া হইয়াছে কিন্তু থালা খানা দিবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে। আমাকে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে জানাইবে কবে আমি উহা পাইবো।

আমাকে আবার বি আর টি এ তে গাড়ি পাঠাইতে হইবে। আবার ভোর হইতে বিকেল পর্যন্ত লাইনে থাকিতে হইবে। বিপুল পরিমান তেল, শ্রমঘন্টা আর অর্থের অপচয় করিতে হইবে। দুর্নীতি কমিয়াছে বটে, তেল, শ্রমঘন্টা আর অর্থের অপচয় কমাইবার কোন পদ্ধতি এখনো বঙ্গদেশে আবিস্কৃত হয় নাই। অপেক্ষার প্রহর গুনাও একদিন শেষ হইলো।

পঞ্চদশ দিবসে কাঙ্ক্ষিত ক্ষুদে বার্তা পাইলাম। অষ্টাদশ দিবস, রোজ শুক্রবার আমাকে ডিজিটাল নম্বরযুক্ত থালাখানা আনিবার নিমিত্তে গাড়ি সমেত হাজির হইতে অনুরোধ করা হইয়াছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলিয়া মনস্থির করিলাম এইবার আর ভাড়া করা গাড়ি চালক নয়, নিজেই যাইবো। খুব সকালে নাস্তা খাইয়া রওয়ানা হইবার প্রাক্কালে প্রকৃতি ডাক দিতে শুরু করিলো। বার কয়েক সারা দিয়া রওয়ানা হইতে হইতে প্রায় সাড়ে আট ঘটিকা বাজিয়া গেল।

প্রাকৃতিক ডাকের লক্ষন দেখিয়া ইতিমধ্যে আবার সেই ভাড়া করা গাড়ি চালকের স্মরনাপন্ন হইয়াছি। আমি গাড়ি চালাইয়া চালককে পাশে বসাইয়া যথাস্থানে পৌছাইতে প্রায় সাড়ে নয় ঘটিকা বাজিয়া গেলো। দেরি করিবার স্বাস্তি হাতে হাতে পাইলাম। গাড়ির সারি যে এত বড় হইতে পারে নিজের চোখে না দেখিলে বিশ্বাস করিতাম না। প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা সারি দেখিয়া উদ্দম হারাইবার প্রমাদ গুনিতেছি।

তবে দশটার দিকে বি আর টি এর সদর দরজা খুলিবার পর প্রথমে অনেকগুলি গাড়ি একসঙ্গে ঢুকিয়া গেলো। স্বস্তি পাইলাম। কিন্তু ইহার পরে সম্বুক গতিতে গাড়ি আগাইতে লাগিলো। মধ্যাহ্ন প্রহরে আমাদের গাড়ি সদর দরজার কাছাকাছি আসিলো । কিন্তু একি সদর দরজা বন্ধ হইলো কেন? খোজ নিয়া জানা গেলো, নামাজ ও মধ্যাহ্ন ভোজনের নিমিত্ত দুই ঘন্টার কর্ম বিরতি।

উপস্থিত নাস্তিকরাও “হায় আল্লাহ” বলিয়া বিলাপ করিতে ছাড়িল না। বেলা দুই ঘটিকার সময় সদর দরজা খুলিলো। তিন ঘটিকার সময় আমি গাড়িখানা নিয়া ভিতরে প্রবেশ করিবার সু্যোগ পাইয়া যারপর নাই আনন্দিত হইলাম। গাড়ির সত্যতা যাচাই করিয়া নম্বর থালা সংযোজন করিবার জন্য আনা হইলে দেখা গেলো নম্বর থালার সাথে যে ষ্টিকারখানা সংযোজন করিবার জন্য আনা হইয়াছে তাহা যন্ত্র দ্বারা পাঠোদ্ধার করা যাইতেছে না। কি আর করা, গাড়ি খানা এক কোনে দাড়া করাইয়া রাখিবার নির্দেশ পাইয়া বিষন্ন মনে অপেক্ষা করিতে থাকিলাম।

স্টিকারখানা ভিতরে পাঠানো হইলো । মিনিট পনের পরে ফিরিয়া আসিলো বটে কিন্তু সমস্যার সমাধান হইলো না। আবার ভিতরে পাঠানো হইলো। এইবার আধাঘন্টা পরে ফিরিয়া আসিলে সমস্যার সমাধান হইয়াছে দেখিয়া পেটের ভিতরের ছুচোর দৌড়াদৌড়ির জ্বালা ভুলিয়া গেলাম। রাজ্য জয় করিবার আনন্দ আলেকজেন্ডার উপভোগ করিতেন কিভাবে তাহা আমার জানা নাই।

তবে ডিজিটাল নম্বরযুক্ত গাড়ির থালা পাইবার আনন্দ আমার কাছে কম মনে হয় নাই। বাড়ি ফিরিবার পর দারোয়ান যখন গাড়িতে নতুন থালা খানা দেখিতে লাগিলো গর্বে আমার প্রান ভরিয়া গেল। আরো গর্ব অনুভব করিলাম যখন অপর এক গাড়ি চালকের প্রশ্নের জবাবে বলিলাম “হাজার চারেক টাকা খরচ করিয়া থালা খানা কিনিয়াছি”-যাহার বাজার দর কোনভাবের এক হাজার টাকার বেশী না(দুর্নীতি হয় নাই!)। গর্বের শেষ নাই, দুর্নীতি কমিয়াছে এই ভাবিয়া। কিন্তু একখানা দুশ্চিন্তা আমাকে পাইয়া বসিলো।

বেতন হইতে এখনো দশ দিন বাকি। গাড়ি চালাইবার তেল কিনিবো কি করিয়া। এক সপ্তাহ বাসে যাতায়াত করিতে হইবে নিশ্চিত। দুর্নীতি কমিয়া আমার লাভ হইলোনা ঠিক, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের নিশ্চিত লাভ হইবে- এই ভাবিয়া শান্তি পাইতেছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।