আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ আত্মহত্যাঃ কেন? কি কারণে?

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

আপনাত্মাকে হত্যা করাই আত্মহত্যা। পৃথিবীতে আগমনী ঘটনার প্রকার দু'একটি হলেও চলে যাওয়ার ঘটনা গুনাগুনতিহীন। হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই স্বাভাবিক মৃত্যু থেকে শুরু করে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, নানবিধ রোগ-ব্যাধিতে, দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে, ছিনতাইকারী-চোর-ডাকাতের হাতে, প্রকাশ্য ও গোপন শত্রুর হাতে, বিবাদ-বিষম্বাদে, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মহামারী হয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত সীমা-সংখ্যাহীন পন্থা রয়েছে অজানা সময়ের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য জীবন থেকে বিদায় নেয়ার। কোথায় চলে ভাবনারা, কোন্ গলিপথে আটকে আছে জীবনের ব্যাপ্তি, হত্যার পূর্বে হন্তারকের ভাবনায় কেন গুঞ্জরিত হয় না নানা শৈশবী গান, আশাময় যৌবন, বার্ধক্যের নিঃসীম অসহায়ত্ব; কেন ধ্বণিত হয় না একথা যে, হতকে কোথায় পাঠাচ্ছি, অথচ আমাকেও তো সেখানে পৌঁছুতে হবে দু'দিন পরেই। আর আত্মহত্যাকারী! সে কি জানে, কোন চুলি্ল ভেঙ্গে সে কোন মহাভাটায় নিমজ্জিত করতে যাচ্ছে নিজেকে? কত মূর্খতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন তার দু'চোখ, কত অজ্ঞনতার তিমিরে বেঘোর তার অন্তর, কত সংকীর্ণতার পরিমণ্ডলে তার জীবন; প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিজের জন্য এহেন অন্ধকার এঁদো ডোবা থেকে উন্নত কিছু ভাবা, উত্তম কিছুর সন্ধান করা, জীবনের অনন্ত পরিধি নিয়ে ভাবা; চাই সে হোক পৃথিবীর শিক্ষায় মহাশিক্ষিত অথবা নিরক্ষর কেউ।

হত্যা বা নিহত হওয়ার একটা অংশমাত্র হলেও আত্মহত্যারও রয়েছে অসংখ্য কারণ। তন্মধ্যে মৌলিকতার ছোঁয়াময় কিছুকে তুলে ধরছি এই পরিসরে- [গাঢ়]অজ্ঞানতাঃ[/গাঢ়] আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় কারণ যা, তা হলো অজ্ঞানতা। কেননা, ব্যক্তি ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না সত্য কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যম হতে পাওয়া তথ্যাদির জ্ঞানও যদি তার নিকট থাকে অনুপস্থিত, তাহলে সে তার ধারণারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক যে, বর্তমান যন্ত্রণার মত কোনরূপ যন্ত্রণা মৃতু্যর পর তার জন্য থাকছে না। সুতরাং সে নির্দ্বিধায় নিজেকে হত্যা করতে সংকল্প নেয়। আর ভবিষ্যত সম্পর্কে জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে ওহী, তাই দেখা যায় যে, যার নিকট ওহীর জ্ঞান নেই কিংবা ওহীর জ্ঞান সম্পর্কে যারা উদাসীন আত্মহত্যায় তারাই সর্বাধিক অগ্রগামী।

[গাঢ়]অধৈর্য্যঃ[/গাঢ়] রাগ মানুষের একটা স্বাভাবিক গুণ, তেমন ধৈর্য্যও। অতিরাগ কিংবা অধৈর্যের স্বীকার হয়ে আত্মহত্যা করতে বেশী দেখা যায় কিশোর-কিশোরী, কৈশর পেরুনো যুবক-যুবতীদের। বাবা-মা শাসন করলো, অথবা এ জাতীয় অন্যান্য কারণে এমনটি ঘটিয়ে থাকে। এছাড়াও রোগ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারায় আত্মহত্যার খবরও শোনা যায় কখনো কখনো। [গাঢ়]মস্তিষ্ক বিকৃতিঃ[/গাঢ়] এ সম্পর্কে বলার পূর্বেই সর্বশক্তিমান দয়াময় আল্লাহর প্রশংসা করে নেই যে, তিনি আমাকে/আমাদেরকে সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন এক জন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন এবং আজ পর্যন্ত প্রতিপালন করে যাচ্ছেন।

মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। ছেলেবেলার একটা চাক্ষুষ ঘটনা তুলে ধরতে পারি- ঘুম ভাঙ্গতেই শুনি বেশ হৈচৈ আমাদের ৮/৯ বছরীদের মাঝে, তারপর অজস্রবার নানান কায়দায় জানতে পারলাম গলায় ফাঁস দেয়া একটা ছেলে ঝুলে আছে (একদার) ধোপাদের বিরান বাড়ীর পুকুরের আমগাছে। ভয়ে ভয়ে দূর থেকে দেখার চেষ্টা করলাম, গ্রামবাসীদের কেউ কেউ এগিয়ে গিয়ে দেখে এসেছে আর বহুদূরের থানা শহরে লোক গিয়ে পুলিশে জানান দিয়ে এসেছে। জানা হলো যে, পার্শ্ববর্তী গ্রামের ছেলে, ছোটবেলা থেকেই মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটে মাঝে মাঝে (পারিবারিক স্বীকারোক্তি)। দিন গড়িয়ে গেল, পুলিশ এলো পরদিন।

আশ্চর্যই বটে, ছেলেটি ফাঁসির দড়ি হিসেবে ব্যবহার করল শুকনো একটি মাত্র কলাপাতাকে; যার উপর তার মৃতদেহটি ঝুলে ছিল পানির উপর প্রায় দু'দিন। অবশ্য এ নিয়ে কেচ্ছাকওয়াদের কেচ্ছার কমতি ছিল না, গাঁয়ের রাত-বিরাতে খড়ের গাদায় বসে বসে জিন-ভুত আর অলৌকিকতার সবটুকু শেষ করতে বাকী রাখেনি। [গাঢ়]অতি আবেগঃ[/গাঢ়] এ পর্যায়টিও দেখা যায় কিশোর-কিশোরী ও যুবকদের মাঝেই। আবেগ সর্বদাই বিবেককে অন্ধ করে দেয়; তালা ঝুলিয়ে দেয় জ্ঞানের গবেষণাগারেও। তদুপরি যদি তা হয় পচনশীল সমাজ ব্যবস্থার এই বুলির উপর ভিত্তিশীল যে, "প্রেমের জন্যই তোমার-আমার জন্ম" অথবা, "প্রাণপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ্ই যদি মরে গেল তবে আর বেঁচে থেকে কি লাভ" ইত্যাদি।

কেননা, চিত্রনায়ক সালমান শাহ-এর মৃত্যু সংবাদ শুনেও আত্মহত্যা করতে দেখা গেছে। আর প্রেম রোগে আক্রান্ত যুবক-যুবতীর তো জীবনটাই শুধু বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছা, অথচ যারা সে পর্যন্ত পৌঁছুতে পেরেছে, দেখা গেছে ক'দিন পরই তাদের পার্থিব জীবন লাভের কারণ(?) "ভালবাসা" জানালার পথ ধরে উধাও হয়েছে, তারপর কোথাও বিচ্ছেদ, কোথাও অস্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন আবার কোথাও পরকীয়ায় জড়িয়ে একজন আরেকজনকে হত্যা করতেও পিছপা হয়নি। অবশ্য অনেকেই যে সুখী জীবনযাপন করে যাচ্ছেন, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দুঃখজনক পরিণতি হলো, প্রেম প্রেম খেলুড়েদের তো একটা প্রেমে মন ভরে না, কারণ সমাজ তো শিখিয়েছে যে, প্রেমের জন্যই তাদের পার্থিব জীবন। তাই শুরু হয় নতুন ফুলের সন্ধান, আর তখনি ঘটে অঘটন, হোক বিয়ের পূর্বের প্রেম অথবা পরের; প্রেমিক কি প্রেমিকা যখন দেখে যে, তার স্থলে প্রিয়/প্রিয়া অন্য কারো বাহুবন্ধনে, তখনি অন্তরজ্বালা মেটাতে আশ্রয় নেয় আত্মহত্যার।

চলচিত্রের মাধ্যমে এসবের বিভিন্ন ধরন, প্রেক্ষিত, পন্থা ও আত্মত্যাগ(?)-এর অর্থাৎ, আত্মহত্যার উৎসাহও দেয়া হয়ে থাকে। মূলতঃ এই সার্বিক ব্যাপারটাই আবেগের সাথে সম্পৃক্ত, আর আবেগের অতিমাত্রাই বিবেককে রুদ্ধ করে দেয়, নয়তো ভালবাসার মৃত্যু হলে আত্মাকেও সতীদাহ পন্থায় হত্যা করতে হবে; স্বাভাবিক জ্ঞানও কখনো একথায় সায় দেবে না। অন্যদিকে দেখা যায় অতি ভালবাসার প্রিয়তম অথবা প্রিয়তমা অথবা বন্ধু মরে গেলে জীবিত জন আর বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে করে। অনেক ঘটনাই শুনা যায় এমনতর, এমনকি বেশ ক'বছর পূর্বে কয়েক বন্ধু নদীতে নৌভ্রমণে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা ডুবি ঘটে, এতে অন্য বন্ধুরা মরে গেলেও তীরে ফিরে আসে মাত্র একজন; অবশেষে ভালবাসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে উত্তাল স্রোতের বুকে সেও লাফিয়ে পড়ে আবার পৌঁছে যায় বন্ধুদের নিকট, যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসেনি। এসবই অতিমাত্রার আবেগপ্রবণতার ফল; বিবেকের সুস্থ চিন্তার ফসল নয়।

[গাঢ়]অতিমাত্রার আত্মনির্ভরশীলতাঃ[/গাঢ়] এটাও এক ধরণের মরণ ব্যাধি; যার ভাইরাস অতিমাত্রায় রয়েছে নাস্তিক, ক্ষমতাধর, শক্তিমান, অর্থশক্তিসম্পন্ন ও এ জাতীয় লোকদের অন্তরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক হিটলারের বিশ্বাস যাই হোক না কেন, তার অতিমাত্রার আত্মনির্ভরশীলতাই তাকে বাধ্য করেছে হেরে যাওয়ার পর আত্মহত্যা করতে। শারিরিক শক্তি ও অর্থশক্তি সম্পন্নদের মধ্যেও দেখা যায় অর্থের লড়াইয়ে হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করে বসেছে। কারণ, হেরে গেছে তার প্রতিপক্ষের নিকট; এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। (নাস্তিকতার প্রসঙ্গ আলাদা প্যারায় দেয়া হলো) [গাঢ়]অপমানবোধের প্রাবল্যঃ[/গাঢ়] আত্মনির্ভরশীলদের জন্যও এটা প্রযোজ্য, তবে এ পর্যায়কে আলাদা দেখানো হলো এজন্য যে, অনেক সময় দেখা যায় সন্তান কর্তৃক বাবা-মা, ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক, অধঃস্তন কর্তৃক উচ্চপদস্থ এ জাতীয় বিবিধ পর্যায়ে অপমানবোধের প্রাবল্য মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে।

যদিও এমন আত্মহত্যার খবর খুব একটা পাওয়া যায় না, তবে এমন পরিস্থিতিতে আত্মহননের বোধ যে ব্যক্তির মধ্যে জেগে উঠে; তা সত্য। [গাঢ়]নাস্তিকতাঃ[/গাঢ়] এরাও অতিমাত্রার আত্মনির্ভরশীলদেরই একটা অংশ। একজন নাস্তিক যেহেতু স্রষ্টার সত্যতা স্বীকার করে না, সেহেতু সে তার যাবতীয় কর্ম, সমস্যাবলী ও চাওয়া-পাওয়াকে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে এবং নিজেকেই এসব সম্পাদনের যোগ্য মনে করে থাকে। কিন্তু ছাগলের গুতোতেই চিৎ হয়ে পড়া, অথবা অন্তত ষাঁড়-সর্পের কথাই ধরা যাক; এমন দুর্বলতা নিয়ে মানব কি করে সম্ভব করতে পারে তার নিজেকেই (অন্ততঃ) রক্ষা করতে? একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি যখন তার জীবনের সমস্ত চাওয়া-পাওয়া, সকল বিপদ-মুসীবত-আকাংখাকে তার বিশ্বাসের প্রতিপালকের সমীপে পেশ করে দেয়, তখন স্বভাবতঃই সে হয়ে যায় ভার শূন্য, নিজেকে সে মনে করতে পারে নিরাপদ, সে একথা বুঝে যে, তার রয়েছে কোন কাজের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা করার ক্ষমতা মাত্র, এমনকি শত চেষ্টার পরও তার প্রতিপালক যদি না চান তবে চেষ্টাকৃত কর্মের সুফল সে কখনোই পেতে পারে না, যদিও অন্যান্য অসংখ্য বস্তুনিচয় সে না চাইতেই পেয়ে আছে। সুতরাং সে জীবনের বোঝার ভারে ক্লান্ত দেহ নিয়ে যখন ঘরে ফেরে তখন সকল বোঝা তার প্রতিপালকের নিকট সমর্পণ করে বলে যে, "হে প্রতিপালক, আপনি যেহেতু আমার প্রতিপালক সুতরাং আপনিই আমার জন্য দুনিয়ার সকল শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট", বিশ্বাসী এই প্রার্থনা করে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তে পারে।

অন্যদিকে একজন নাস্তিকের জন্য সে নিজে ছাড়া তিনভুবনে তার জন্য আর এমন কোন শক্তি নেই, যার নিকট সে দু'হাত পাততে পারে, সাহায্য চাইতে পারে (যারা কোন মৃতের জন্য মাগফেরাত কামনা করে, আমার বুঝে আসে না তারা তা কার নিকট কামনা করে, আসলে এরা আসল নাস্তিক নয়; বরং মুনাফেক নাস্তিক)। সুতরাং, তার আর নিশ্চিন্ত ঘুম হয়ে উঠে না, এভাবে দিনের পর দিন তার মস্তিষ্ক এসব চাপ সহ্য করতে করতে যখন সীমা অতিক্রম করে যায়, তখন হয় সে পাগল হয়ে পড়ে অন্যথা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কারণ, তার বিশ্বাস যে মৃত্যুর মাধ্যমেই তার পরিসমাপ্তি; কি অভাগা! নাস্তিক বলা হলেও তারা মূলতঃ নাস্তিক নয়; বরং তারাও বিশ্বাসী, তারা বিশ্বাসী হয় তাদের নফস বা নিজের উপরই, নিজ ইচ্ছাশক্তিকেই তারা তাদের রব, ইলাহ্ ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে এবং ইচ্ছাশক্তির আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। এ সম্পর্কিত আরো অনেক কথা থাকলেও তার জন্য এই পরিসর সম্পূর্ণ ভিন্ন। (এই লেখার আগামী পর্বে/পর্বসমূহে থাকছে- সমাজে আত্মহত্যার জন্য দায়ী কারা, ইসলামে এর বিধান কি এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনে এ সম্পর্কে ইসলামের সংবাদ কি?) !@@!603614 !@@!603615 !@@!603616 !@@!603617 !@@!603618 !@@!603619 !@@!603620 !@@!603621; !@@!603622 !@@!603623 !@@!603624 !@@!603625 ছবির জন্য !@@!603628 যেখানে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।