আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর : কার জন্য কার লড়াই

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

পরশু রাতে এনডিটিভি দেখতেছিলাম। আবারও বারখা দত্তের অনুষ্ঠান উই দি দি পিপল। আলোচ্য বিষয় : নন্দীগ্রামে পুলিশি হামলা। লালমুখো পশ্চিমবঙ্গ।

লাইভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতা, অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটকর। চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, পরিচালক ও আনন্দবাজার মিডিয়া লিমিটেড থেকে প্রকাশিত সানন্দা পত্রিকার সম্পাদক অপর্ণা সেন। ভারতীয় লোকসভায় সিপিএম-এর এমপি মোহম্মাদ সেলিম। শিল্পায়ন বিষয়ক ভূতপূর্ব সরকারি কর্মকর্তা। আর সিভিল সোসাইটি ও সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিরা।

আলোচনা হচ্ছিল কলকাতার জেমস প্রিনসেপ মেমোরিয়ালে। আলোচনার শুরুতে বারখা বললেন, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সিপিএম ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কি জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না? চাওয়া উচিত। একশ ভাগ উপস্থিত মানুষ হাত তুললেন। দ্্বিতীয় প্রশ্ন, এই ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা ওভার রিঅ্যাক্ট করেছে বলে মন করেন কিনা? একশ ভাগ মানুষের হাত উঠলো আবার। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের ঘটনাটা বেশ অনেকদিন ধরেই খেয়াল করছি।

এই ঘটনার আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার মোটামুটি কৃষকদের পক্ষের শক্তি হিসাবেই পরিচিত ছিল। বলা হয়, বামফ্রন্ট সরকারের এতদিন টিকে থাকার অন্যতম কারণ ভূমি সংস্কার। নূ্যনতম ভূমি রাখার সিলিং নির্ধারণ কৃষি জমির বণ্টন, বর্গা ইত্যাদি নিয়ে তারা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর এ কারণে তাদের জনপ্রিয়তা গ্রামে ছিল আকাশছোঁয়া। কলকাতা বা শহর অঞ্চলে তারা তৃণমূল বা কংগ্রেসের সঙ্গে নিয়মিত হারলেও গ্রাম হলো বামফ্রন্ট সরকারের মূল ঘাঁটি।

কিন্তু জ্যোতি বসুর অবসর নেয়ার পর বুদ্ধদেব একটু অন্য চালে চলতে থাকেন। তিনি আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ গড়ার জন্য শিল্পায়নের ভিত্তি তৈরি করার জন্য কিছু সংস্কার কর্মসূচি নেন। মালটিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর আস্থা অর্জন করতে থাকেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে। বেশ কিছু বিনিয়োগ হয়। কিছু কারখানাও স্থাপিত হয়।

কিন্তু মালটিন্যাশনালদের আব্দার মেটাতে একবার রাজি হলেই শেষ। তাদের আব্দারের শেষ নেই। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে তারা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলাপ-আলোচনা, মতামত তৈরি ছাড়াই আগাতে থাকেন। ফলে শিল্পায়ন নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো আস্থা তৈরি করতে তারা পারেনি। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে যে মডেলটা বিশেষভাবে অনুসরণ করা হয়, পিআরসি মডেল নামে পরিচিত।

পিআরসি মানে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। চীন সিঝুয়ান প্রদেশের বিশাল এলাকাকে এসইজেড স্পেশাল ইকোনোমিক জোন) হিসাবে তৈরি করেছে। এবং পর্যায়ক্রমে একে সম্প্রসারিত করেছে। চীনের শিল্পায়নে এই এলাকাগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এই এসইজেডগুলো স্থাপনের সময় বিপুল মানুষ উচ্ছেদ ও ঘরছাড়া হয়েছেন।

কিন্তু তেমন কোনো বিদ্রোহ বা বিক্ষোভের খোঁজ আমরা পাইনি। অথবা বিদ্রোহ ঘটেনি। অনেকে বলেন, চীন যেভাবে দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়েছে তাতে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের পর্যাপ্ত সতর্কতা ছিল। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এই পিআরসি মডেল অনুসরণ করতে গিয়ে বিশাল ঝামেলা হয়ে গেল। সোভিয়েতপন্থীদের চীনপন্থী পতন হয়তো একেই বলে!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।