আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুশ প্রশাসন ও একজন সুলেমান

স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।

ইরাক ধর্ষনের চার বছর পূর্তি আজ। সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতের বিরুদ্ধে 2003 সালের এই দিনে মার্কিন বাহিনী ইরাককে পালাক্রমে ধর্ষন শুরু করে। ধর্ষনের তিন বছরের মাথায় 2006 সালে প্রথম এই আক্রমনের হোতা বুশ প্রশাসন নিজেদের ভুল স্বীকার করে।

ধর্ষিত ইরাক ও বাংলাদেশের গ্রামের জরিনার প্রভাবশালীর পুত্রকতৃক ধর্ষনের মাঝে বেসিক কোন পার্থক্য নেই। জরিনার বাপের সাথে চেয়ারম্যানের জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্ দ্্র করে জরিনাকে রাতের অন্ধকারে বেড়া কেটে লম্পট চেয়ারম্যানের লম্পট পুত্র সুলেমান ও তার সহযোগী বাবুল তুলে নিয়ে পাশর্্ববতর্ী পাটক্ষেতে রাতভর ধর্ষন করেছিল। আর সিনিয়র বুশের সাথে কুলাঙ্গার সাদ্দামের মরণাস্ত্র সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্ দ্্র করে লম্পট পুত্র ছোট বুশ ও তার সহযোগী ব্লেয়ার রাতের অন্ধকারে চোরের ঢুকে মত ইরাককে ধর্ষন শুরু করে তাদের সর্বেসর্বা, একান্ত অনুগত , উচ্চ প্রশিক্ষিত কথিত মিত্রবাহিনী বা পোষা কুকুরের দলের ছত্রছায়ায়। পরদিন সকালে ঘটনা জানতে পেয়ে জরিনার বাপ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে, জরিনার ভাই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ও জরিনার মা কীটনাশক পান করে মৃত্যুকে আলিংগন করে আর এই দেখে গ্রামের সাধারণ জনগণ কানাকানি করে। কিন্তু চেয়ারম্যানের সামনে বলতে সাহস পায় না।

সাদ্দাম হোসেন আত্নহত্যার সুযোগ পাননি। তবে তার সহযোগীরা অর্থের বিনিময়ে তাকে ধরিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। জরিনার ভাইয়ের মত নিরুদ্দেশে যাওয়ার সুযোগ পাননি উদে-কুশে। তাদেরকে বর্বরের মত হত্যা করে বলা হয় "কিলড ইন এ্যাকশন"। এসময় উদের 14 বছর বয়সী ছেলেটিও বর্বরদের হাত থেকে রক্ষা পায় নি।

এই নির্মমতা ও পাশবিকতা দেখেও বিশ্বব্যাপী সরকার প্রধানরা গ্রামের জনগণের মত কানাকানিতেই নিজেদের কর্মসূচী সীমাবদ্ধ রাখলেন। বুশের বিপক্ষে বেফাঁস কথা বলে কেউই আমেরিকার বিরাগভাজন হতে চান নি। সুলেমান ধরেই নিয়েছিল এত মানসিক চাপের মুখে জরিনা ভেঙ্গে পড়বে ও যা বলা হবে তাই মেনে নেবে বা আত্নহত্যা করবে। তাই সে কলার উঁচিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগে ও নিজের কর্মবিবরণী গ্রামের মানুষের কাছে বুক ফুলিয়ে বলতে থাকে। কিন্তু জরিনার রুখে দাঁড়ানোতে সুলেমান থমকে যায়।

প্রতিবাদী জরিনা গ্রামের মানুষ ও চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে বসে। ততদিনে গ্রামের মানুষের কানাকানি নতুন মাত্রা পায় ও ভয়কে জয় করে তারা জরিনার পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করে। ফলে বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান সালিশ ডাকে। বুশ ধরেই নিয়েছিল সাদ্দামের পতনের পর যাবতীয় তেলক্ষেত্রগুলো মার্কিন কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে ও সাধারণ ইরাকিরা বিষয়টি মেনে নেবে। কিন্তু ফুঁসে উঠে ইরাক।

মানুষ মার্কিন শাসকদের বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়ায়। আবু গারিবের কেলেঙ্কারি পুরো বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যোগ করে ও সারা পৃথিবীতে ছি ছি রব পড়ে যায়। ঘটনা সামাল দিতে ইরাক দখলের প্রায় দেড় বছর পর আমেরিকা ইরাক সংক্রান্ত বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা প্রার্থনা করে ও নিরাপত্তা কাউন্সিলে বৈঠক ডাকে। সালিশে জরিনাকে প্রথমে দুশ্চরিত্র প্রমান করার অপচেষ্টা করে সুলেমান ও গঙরা। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে ভেসে যায় সে প্রচেষ্টা।

একেবারে খালিহাতে তো ফেরা যায় না, তাই জরিনার বাপের আবাদী জমিতে বিনা খরচে বছর দু'য়েক চাষ করতে দেয়ার সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে চেয়ারম্যান হাত করে নেয় জনা দু'য়েক মাতব্বরকে। জাতিসংঘে প্রথমেই সাদ্দাম হোসেনের 14 গুষ্টি উদ্ধার করে সমস্ত দোষ ইরাকের উপর চাপিয়ে দেয় বুশ ও ব্লেয়ার। কিন্তু বাকি সদস্য দেশগুলোর প্রতিবাদে ভেসে যায় সে প্রচেষ্টা। তবে অস্ট্রেলিয়ার মত কিছু দেশের কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস মিলে বুশ-ব্লেয়ার গংদের। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে চেয়ারম্যান কোনঠাসা হয়ে পড়ে ও সুলেমানের সাথে জরিনার বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু জরিনা মেনে নেয় না। কারন সে কোন প্রহসনমূলক বিচার চায় না, চায় সুলেমানের মৃত্যুদন্ড বা কারাদন্ড। এরই মধ্যে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু হয়। প্রশাসন জেগে উঠে। পুলিশ এলে চেয়ারম্যান ফাঁসিয়ে দেয় সহযোগীতায় অস্বীকৃতি জানানো জনৈক মাতবরকে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড়ে কোনঠাসা হয়ে যায় বুশ। অবশেষে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার নামে পাপেট ইরাকি সরকার বসানো হয় । কিন্তু ইরাকিরা বুঝতে পারে প্রহসন। মুহুমর্ুহু বোমা বিস্ফোরনে কেঁপে উঠতে থাকে ইরাক। জাতিসংঘে ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে নেয়ার জন্য দোষারোপ করা হয় ইরান ও আল-কায়েদাকে।

অবশেষে নিজের দোষ স্বীকার করে সুলেমান। তাকে ও বাবুলকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় পুলিশ। আর জরিনার আশ্রয় জুটে নারী আধিকার সম্পর্কিত এক মানবাধিকার সংগঠনে। পূর্বাকাশে সূের্যর লাল আভা দেখা যাচ্ছে। আমরা বিশ্ববাসী ভোরের আকাশের দিকে চেয়ে প্রতীক্ষায় থাকি সেদিনের, যেদিন বুশ-ব্লেয়ারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে মানবতার বিরুদ্ধে আপরাধের অভিযোগে ও ইরাকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হবে সাধারণ ইরাকিদের হাতে।

সেদিন কি খুব বেশি দূরে? না মনে হয়। হয়ত আজকেই সে দিন। আজকেই সে দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।