আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ বিভাগ - সুফল ও কুফল

জাদুনগরের কড়চা

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগে কিছু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। ওদের সাথে নিয়মিত দেখা হলেই আমরা প্রাণ খুলে বাংলায় কথা বলি। যদিও কথার আঞ্চলিক টান দুই বাংলায় দুই রকম, তবু বাংলা ভাষার এই পুরানো বন্ধন এক করে রাখে বাঙালিদের। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ আমাদের কী সুফল দিয়েছে, আর কী সর্বনাশ ডেকেছে। সুফলের মধ্যে প্রথমেই আসে পূর্ববঙ্গের উন্নতি।

হ্যাঁ, পাকিস্তানী আমলে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, কিন্তু তবুও তো পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় একটা দুটো করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বুয়েট একটা স্থানীয় কলেজ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। কলকাতাকেন্দ্রীক রাজনীতির জন্য পূর্ববঙ্গ সব সময় অবহেলিত হয়েছিলো, নগরায়ন, শিল্পায়ন সব দিকেই পিছিয়ে ছিলো। অন্তত সে দিক হতে আলাদা হয়ে পূর্ববঙ্গ নতুন দিক নির্দেশনা পেয়েছে। এখানকার সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যা হয়েছে, কিন্তু পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের ব্যাপক সামাজিক, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক উন্নতি হয়েছে।

আজকেই প্রথম আলোতে আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা পড়ছিলাম, উনি লিখেছেন, দেশভাগের পরে পঞ্চাশের দশক হয়েছিলো বাঙালি মুসলমানের বাঙালি হয়ে ওঠার সময়, আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়ার সূচনার সময়। এবার আসি কী সর্বনাশ হয়েছে। পূর্ববঙ্গের এক বিশাল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দেশ ভাগের সময় ও পরের বছরগুলোতে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। নিজের দেশ ছাড়তে তাঁদের কী পরিমাণ কষ্ট হয়েছে, তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না কোনোদিনই। আজো অনেক পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির সাথে কথা হলে তাঁরা আমাকে বলেন, তাঁদের বাবা বা মার বাড়ি চট্টগ্রাম, বা বরিশাল, আজো তাদের বাবা-মায়েরা পূর্ববঙ্গের দেশের বাড়ির কথা বলেন।

আমরা হারিয়েছি জীবনানন্দ দাশ, অমর্ত্য সেন, মেঘনাদ সাহা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, এদের। পশ্চিমবাংলার বর্তমানের প্রচন্ড খ্যাতনামা অনেক সাহিত্যিকের বাড়িই কিন্তু পূর্ববঙ্গে। আরবানার টেগোর ফেস্টিভ্যালে সুনীল আর মমতাজউদ্দিন এসেছিলেন। দুজনের কথাতেই এই বেদনার প্রকাশ ঘটলো। সুনীলের বাড়ি ফরিদপুরে, আর মমতাজউদ্দিনের বাড়ি মালদহে।

৪৭ এর দেশ বিভাগের পরে দুজনেই নিজের মাটি ছেড়ে চলে গেছেন পরদেশে। সুনীলকে কাছ থেকে দেখে সহজেই দেখতে পেলাম, সেই বাঙ্গাল চেহারার ছাপ। কথাতেও আজও কলকাতার প্রভাব অতটা লাগেনি। অমর্ত্য সেনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বাড়ি পুরানো ঢাকায়।

সেরকমই জ্যোতি বসুর বাড়ি। এভাবে দেশ ভাগের ফলে আমাদের বাঙালি সত্ত্বা দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়েছে আজ। অবশ্য, সুফল কুফল বিচার করে দেশ বিভাগ না হলে কী হতো, তা বলাও কঠিন। দেশ ভাগ না হলে অমর্ত্য সেন হয়তো ঢাকার অর্থনীতিবিদ হিসাবে আমাদের খুব কাছে থাকতেন, কিন্তু দুলা মিঞা সওদাগরের ছেলে মুহাম্মদ ইউনুস হয়তো ডঃ ইউনুস হতে পারতেন না, সুযোগের অভাবে। যাহোক, অনেক লম্বা করে ফেললাম কথা।

আসলে একটু আগে আমার অ্যালবামে !@@!526149 আর মমতাজউদ্দিনের সেই ব্যথিত চাহনির ছবিগুলো চোখে পড়লো, তাই এতো কথা এলো মনের মাঝে। হাজার পাসপোর্ট আর কাঁটা তারের বেড়া সত্ত্বেও দুজনেই বাঙালি, বাংলার মাটির সাথেই নাড়ির টান (ম্যাপটি ১৮৯৩ সালের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ম্যাপ, উইকিপিডিয়া হতে মুক্ত লাইসেন্সে প্রাপ্ত)।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।