আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

> নাটকের গান \

পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ

যখন শুধু একটাই চ্যানেল ছিলো, সবেধন নীলমণি আমাদের বিটিভি, তখন অখন্ড মনোযোগে সেটায় প্রাচারিত প্রায় সব নাটকই দেখা হতো। এখনো ভালো নাটক নিয়ে কথা বলতে চাইলে বুড়ো মানুষদের মতো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি, একে একে মনে আসে ছোটবেলায় দেখা নাটকগুলোর কথা। আজ আনমনে ভাবতে গিয়ে অনেক আগে দেখা অনেকগুলো নাটকের বিচ্ছিন্ন কিছু দৃশ্য, সংলাপ আর গানের কথা মনে আসছিলো এক এক করে। সংশপ্তকের ডায়ালগ মনে পড়ে, টাকা আমার চাই, নইলে জমি! মধু পাগলা, হুরমতী আর কানকাটা রমজানের কথাই বা ভুলি কেমনে? সম্ভবত বারো রকম মানুষ নাটকের একটা বহুল প্রচলিত সংলাপ ছিলো- ছিটগ্রস্ত বালিকা। রূপনগরের খালেদ খানের মুখে- ছি ছি, তুমি এত খারাপ- সেই ছোটবেলায়ও বলতাম বন্ধুদের।

রূদ্্রের লেখা গান- ভালো আছি ভালো থেকো- প্রথম শুনেছিলাম কোন একটা নাটকে। নাম ভুলে গেছি, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে- শংকর সাঁওজাল ছিলেন সেই নাটকে। নাটকের গান কথা ভাবলেই আমার সবচে বেশি মনে পড়ে অয়োময়ের কথা। বেশ কিছু সুন্দর গান ছিলো তাতে, যেমন, -> আউলা চুলে নাচোরে, বাউলা গলায় গাও, নাচিতে নাচিতে বন্ধু- এদিক ওদিক চাও। এটা মনে হয় আবুল হায়াতের গলায় চিত্রিত হয়েছিলো।

তাই কি? আরো একটা গানের খন্ডাংশ মনে পড়ে- -> আমারে লইয়া চলো রহমত চাচার বাড়িতে, রহমত চাচা বইসা আছে আমড়া কাঠের পিড়িতে। আরেকটা গান মনে আছে। মোবারক যখন পাখিকে গোসলের জন্যে নদীতে নিয়ে যায়, তখন একটা গান গাইছিলো- -> দুনিয়া চলে চমৎকার, চলে দুনিয়া চমৎকার, আমি এই দেখি চান্দের আলো, এই দেখি অন্ধকার। তবে, অয়োময়ে প্রচারিত আমার সবচে পছন্দের গান হলো- -> আসমান ভাইঙ্গা জোসনা পড়ে, আসমান ভাই-ঙ্গা-া-া জোসনা পড়ে, আমার ঘরে জোসনা কই? আমার ঘরে এক হাঁটু জল পানিতে থই থই। খুব মন খারাপ হলে, যখন নিজেকে প্রতারিত মনে হয়, অথবা অবহেলিত, নিজে নিজে এই গান গেয়ে উঠি।

আরেকটা গানের এক লাইনও আমার ভীষন প্রিয়- " আমার মরণ চানি্ন পহর রাইতে যেন হয়...। '' নাটকের গান নিয়ে ভাবতে বসে আরেকটা গানের কথাও মনে পড়ছে- শুভ্র দেবের গাওয়া নাকি গলার গান- -> জীবনের ছোট ছোট ঢেউ, অভিমানে, আবেগে, নিয়ে যায় কোথায়, জানে না কেউ। জানে না কেউ। শুভ্র-র গান আমার খুব ভালো লাগে না। তবু মনে পড়লো দেখে লিখলাম।

আরেকটা গানও আমার খুব পছন্দের ছিলো। কোন নাটক, কার গলায় চিত্রায়িত মনে নেই, আফসানা মিমি, বা শান্তা ইসলাম হবে হয়তো, গানটা এরকম- -> থেকে থেকে কোকিল ডাকে , মন যে কেমন করে লো, চারিধারে জোসনা ঝরে, আমি একা ঘরে লো! অতীব চমৎকার গান। গানের শেষে, আরেকটা জটিল ডায়ালগ আছে, "আহারে, মইরা যামু গা!'' প্রশান্ত জলাশয় কত দূরে আর কত দূরে- বলে একটা গানের কথাও মনে পড়ছে খুব। এই একটা লাইনই জানি, সেটাই গুনগুনাই মাঝে মাঝে। লিখতে লিখতে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে- আপাতত শেষ করি আমার খুব প্রিয় একটা দৃশ্যের কথা বলে।

অয়োময় নাটকে, আবুল হায়াত তার সবচে ছোট মেয়েকে কোলে তুলে গলা জরিয়ে গান গাইছেন, আগে চলে দাসী বান্দি পিছে সখিনা, ও ময়না পিছে সখিনা, তাহার মুখটা না দেখিলে, প্রাণে বাঁচতাম না! গাওয়া শেষে কি একটা কথার পরে হায়াত পিচ্চি মেয়েটাকে বলছেন, " জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ, বলো তো মা কই যাই?'' ঐটুকুন মেয়ে চটপট করে বলে, " বাজান, তুমি গাছে ওঠো!'' এখনো মনে পড়লে প্রাণ খুলে হেসে উঠি, জীবনের সরলতায় মন ভেজাই। -------------!!!----------------

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।