আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোজা আঙুল ভাল না - আঙুল বাঁকাতে শিখুন।



বিজ্ঞাপন নির্মাণের সাথে সামান্য হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানেন, কায়েন্টের চাপ কি ভয়াবহ! না, সেরকম কোনো চাপের গল্প করব না। উদ্ভূত চাপের ক্রিয়ায় আমার প্রতিক্রিয়ার গল্পটা শোনাব। গতকাল রাতে হুট করে কায়েন্টের ফোন - কাল সকালের মধ্যে গুড়া মসলার এ্যাডের একটা স্ক্রিপট চাই। আপনারা আবার ভেবে বসবেন না যে - স্ক্রীপট হাতে পেলেই তারা পরদিন আমাকে শু্যটিংয়ে যেতে বলবেন। দেখা যাবে 3 মাস পরে কোনো একদিন খবর হয়েছে।

যাহোক, ধান ভাঙতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে। হোলনাইট ফাইট দিয়ে একটা স্ক্রীপট দাঁড় করালাম। ভোরে ন্যাচারালি উঠতে দেরী। ঘুম থেকে উঠে দেখি 10.30। 12 টার মধ্যে যেতে হবে।

ব্রেকফাস্টের গুলি্ল মারি। দ্রুত পোশাক পরে ছুটলাম। মো:পুর টু মতিঝিল। বাসের কাউন্টারের লাইন দেখে আঁতকে উঠলো প্রাণ। সমস্ত শহরই তিন দিনের অবরোধ শেষে বোধহয় আজ জেগে উঠেছে।

না, কোনোভাবেই বাসে যাওয়া যাবে না। উপায়? উপায় সিএনজি। সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে নেই। মাঝে মাঝে একটা দুটো হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশই ভরা।

10 মিনিট কেটে গেল। ঘড়িতে 11টা । আমার ইতিমধ্যে মেজাজ খারাপ হতে শুরু করেছে। দূর থেকে একটা কালো ক্যাব এসে থামলো। হুড়মুড় করে তাতে এক মহিলা উঠলেন।

আমি কোনো কথা বলারই সুযোগ পেলাম না। মহিলাটা জিতে গেল । মেয়েরা সবসময় এমন করে জিতে যায়। বার বার ঘড়ি দেখছি। সেকেণ্ডের কাঁটা কি আগেও এত দ্রুত চলত? না কি আজই হুট করে ঘড়ির তিনটি কাঁটা কমপিটিশনে নেমেছে।

এবার এলো একটা ইয়েলো ক্যাব। এবার আর কোনো মহিলাকে সুযোগ দেয়া হবে না। প্রায় দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললাম। কিন্তু তিনি মতিঝিল যাবেন না। রাস্তার মধ্যে হুট করে একজন মানুষের পাদুটো চেপে ধরলে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে কি না- একবার ভেবে দেখলাম।

প্রেস্টিজে বাঁধছে। তারচেয়ে বরং টাকার অফার করি। বললাম, 10 টাকা বাড়িয়ে দেব। ক্যাবওয়ালা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো - মনে হলো আমার মত ফকির সে এই জীবনে দেখেনি। ইচ্ছে হলো, শালার কানের ঠিক দুআঙুল নীচে বসাই একটা ঘুষি।

আর আমার ঘুষি মানে বুঝতেই পারছেন - ছোটবেলায় ডিম দুধ কম খাই নাই। কিন্তু, পারলাম না। এবার ঠিক করলাম - শালাকে নীলামে চড়াই। বাড়াতে লাগলাম মিটারের ওপরে টাকার পরিমাণ। 20 টাকা, 30 টাকা ------ 50 টাকা।

শেষ পর্যন্ত মিটারের ডবল। রাজী হয় না। এরমধ্যে ফিট বাবুটি সেজে এক সু্যট পরা ভদ্রলোক এলেন বারিধারা যাবেন। ক্যাবওয়ালা একটা কথা না বলে তাকে নিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল। আমাকে নিলো না কেন? সু্যট পরে ভদ্রলোক সাজিনি - এজন্য।

নাহ, ফরম্যাল ড্রেস পরব না - বিষয়টা নিয়ে আর মৌলবাদি আচরণ করব না। মাই ক্যাজুয়াল ড্রেস সাকস্। ঘড়িতে 11.20। সহ্যের শেষ সীমায় আমি। হাঁটতে শুরু করলাম।

মাথা কাজ করছে না। বাসের লাইনে দাঁড়ালে এতণে উঠে যেতে পারতাম হয়ত। গলির শেষ মাথায় একটা সি এন জি। ইউরেকা, ইউরেকা। দে দৌড়।

তার কাছে যেয়ে অত্যন্ত বিনীতভাবে বুঝিয়ে বললাম আমার সমস্যাটুকু। তিনি ততোধিক বিনীতভাবে আমাকে বললেন, তিনি এখন চা খাবেন। চা খাওয়া শেষে উত্তরার খেপ মারার চেষ্টা করবেন। মতিঝলের প্রশ্নই ওঠে না। এবার আমার বিদ্রোহের পালা।

একপশলা গালির বৃষ্টি। আমি সিএনজির ভেতরে উঠে গাট হয়ে বসলাম। বললাম, 'আমাকে মতিঝিল না নামায়ে আপনি উত্তরা তো উত্তরা - জাহান্নামের খেপও মারতে পারবেন না। এই আমি বসলাম। বাসায়ও আইজ যাইতে পারবেন না।

' ইতিমধ্যে আমার গালাগালির ফোয়ারায় লোক জমে গেছে। মানুষগুলি আওয়ামীলীগ বিএনপির মত দুভাগ না হয়ে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমার পক্ষ নিল। সিএনজিওয়ালা কোনো উপায় না দেখে আমাকে নিয়ে রওয়ানা দিল। মরাল: সোজা আঙুলে ঘি ওঠানোর দিন শেষ - ভবিষ্যতের মায়েদের কাছে একটা পারসোনাল রিকোয়েষ্ট, তারা যেন আঙুল বাঁকা সন্তানের জন্ম দেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।