আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাফ নদীর তীরে..কিম্বা তীরের পাশেই নাফ নদী...(4)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

নিউ রিফু্যজি ক্যাম্পের সেলিম যখন আমার সাথে কথা কইতাছে তখন আরেকজন লোক পাশে কখন আইসা দাঁড়াইছে টেরও পাই নাই। সে হঠাৎ মাঝখান থেইকা কয়, ডু দে ওয়ান্ট টু হেল্প? সেলিম জানতো আমি খালি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উপস্থিত হইছি...সাথে কিছুটা ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বা নিয়া আগ্রহ, তাগো কোনরম সহযোগিতা করবার পারুম না এই বিষয়েও বলা ছিলো। তো সে নিজ উদ্যোগেই ঐ লোকরে শুনাইয়া দিলো যে, না উনি আসছেন আমাগো সাথে কথা কইতে। আমি একটু ভয় পাইলাম ঐ লোকের দিকে তাকাইয়া। ছাত্র রাজনীতি করনের টাইমে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকরা ছিলো...তাগো চেহারায় একরম নিরাসক্ত ভাব থাকতো সবসময়...এই লোকের চেহারায় সেইটা পাইলাম পুরাপুরি।

তাছাড়াও আমার রিসার্চের গাইড ওবায়েদ ভাই কইয়া দিছিলো এই এলাকায় নাকি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বেশ অ্যাক্টিভ আর তারা ঝামেলাও করে, আমি একটু কনফিউসড চোখে তার দিক তাকাইয়া হাসলাম। সে আমার দিকে হাত বাড়াইয়া দিয়া নাম কইলো, আলমগীর...আমি স্কুলের মাস্টার...এরপর দেখি সে আমাগো আলোচনাতেই ঢুইকা গেলো। সে আবার এনজিও বিষয়ে ভীষণ আগ্রহী। মাত্র 500 টাকা বেতনের বাইরে তার কিছু ইনকাম হয় এনজিওরা আসলে...সে সাদা চামরাগো লগে গাইড হিসাবে কাজ করে। আমার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভ্রমণ বিষয়ে অনেক গোপণ গোপণ খেলতে চাইছিলাম যাওনের আগে।

কিন্তু আমার যা গোপণ বিষয় সব ছিলো বিভ্রান্তিকর তথ্যের লেইগা। আমি শুইনা গেছিলাম রোহিঙ্গারা এখনো অনেক রক্ষণশীল, তারা আসলে অনেক দূর্গম, ইসলামী ভাবধারার কারণে তারা কোন রম আধুনিক পরিবার প্রথা কিম্বা জন্ম নিয়ন্ত্রণের মতো কোনকিছু দেখলে প্রতিরোধে ঝাপাইয়া পরে। কিন্তু আমার সব ধারণা পালটাইলো একবেলায়। সেলিমের বাবা নূর ইসলাম আমার সাথে আইসা ঈদ পরবর্তী কোলাকুলি করলেন...সেলিমরে কইয়া গেলেন আমারে যাতে সমাদর করা হয় যথাযথ ভাবে ( যদিও আমি তখন ভয় পাইতেছিলাম রোহিঙ্গাগো সমাদর কিরম হইবো। ) আলমগীর আর সেলিম আমারে উলটা বুঝাইতে শুরু করলো ক্যান কনডম ব্যবহার জরুরী...তয় তারা স্বীকার করলো অতীতে তাগো সব ধর্মীয় বৈঠকে কনডম ব্যবহার বিষয়ে কেরম নিষেধাজ্ঞা আছিলো...কিন্তু এখন তরুণ রোহিঙ্গারা আর এইরম নাই।

তারা পুরামাত্রায় সচেতন। এই যেমন 25 বছর বয়সী আলমগীর বিয়া করছে 17 বছর বয়সে কিন্তু মাত্র দুইটা বাচ্চা নিছে এতোদিনে। আর আমার দেখা একমাত্র বিশোত্তির্ণ তরুণ সেলিম, যে এখনো অবিবাহিত। এরমধ্যে হুল্লোড় পইরা গেলো মাংস আননের লেইগা। মুসলিম এইড, টার্কি, যে একটা জামায়াতি এনজিও এইটা রোহিঙ্গারা এখন পুরামাত্রায় অবগত।

তারা আর এখন এইসব এনজিও নিয়া ভাবতে আগ্রহী না। তারা আর কোন রাষ্ট্রীয় বিরোধে জড়াইতে চায় না। বহুত হইছে। রোহিঙ্গারা স্থায়ী ভাবে থাকতে চায় এই দেশে। তারা ক্যাম্পের জেলখানায় থাকতে চায় না।

অনিশ্চয়তাবোধের কারণে বাকীগো মতোন এই 27 হাজার রোহিঙ্গা অন্য জেলায় যাইতেও পারতেছে না। তয় আলমগীর মাস্টর শুনাইলো ক্যাম্পে একটা হাই স্কুল প্রয়োজন, ছেলেপেলেগো একটু উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন। আমি রীতিমতো তাজ্জব হইলাম আলমগীর মাস্টরের শিক্ষাগত যোগ্য তা জাননের পর। সে মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ছে! কিন্তু ভাই বুকে হাত রাইখা বলবার পারি, এই ছেলে আমার অফিসেরই অনেক ডিগ্রী পাশ দেওয়া লোকের চাইতে ভালো ইংরেজী কইবার পারে, বুঝতে পারে। তবুও তাগো চেষ্টা থাকে জামায়াতি এনজিওর সামনে মুসলিম থাকনের... ক্যাম্প থেইকা বিদায় নেওনের মুহুর্তে আলমগীর মুসুনীপালং ক্যাম্পে যাওনের দাওয়াত দিলো, তারপর মোবাইল ফোন নাম্বার বিনিময়।

যোগাযোগের এই ব্যবস্থা থেইকা রোহিঙ্গারাও বঞ্চিত নাই ভাইবা খারাপ লাগলো না আমার। নুরুল আমিনরে সাথে কইরা ফিরলাম টেকনাফ শহরে। তারপর মৌসুমরে নিয়া গেলাম টেকনাফ বীচে...আমার দেখা সেরা সমুদ্র সৈকত। শীতের সময় সমুদ্র অনেক মৃতবৎ থাকে...আমার এইরম সমুদ্রের রূপ ভালো লাগেনা আগেই কইছি, কিন্তু তা'ও কক্স'সবাজার বীচের চাইতে জায়গাটা অনেক ভালো লাগলো...আমরা সন্ধ্যাটা ভালোই কাটাইলাম...লোনা স্বচ্ছ জলে পা ভিজাইয়া। সাথে ঝিনুক কুড়াইলাম...মনে হইলো ঝিনুকেরও কোন দেশ নাই...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।