আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখ ফিট তো দুনিয়া হিট

সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াই

আমি বাংলাদেশী পণ্যের জন্য নির্মিত ভারতীয় বিজ্ঞাপনের পৃষ্ঠপোষক নই। তবে সেসব বিজ্ঞাপনের মান খারাপ নয়। বাংলাদেশে কিছু বস্তাপঁচা অকথ্য বিজ্ঞাপন আগে প্রাকএকুশেটিভি যুগে বিটিভি অধিকার করে রাখতো, পরবর্তীতে তরুণ নির্মাতারা এগিয়ে আসার পর নিম্নমানের স্ক্রিপ্ট, ধুমসী মডেল, বমীয়ান জিঙ্গেল প্রভৃতি থেকে জাতি পরিত্রাণ লাভ করে। তবে ভারতে নির্মিত বা ভারতীয় নির্মাতার তৈরি বিজ্ঞাপনের একটি ময়লা স্রোত মাঝখানে আমাদের গ্রাস করে রেখেছিলো, বড় বড় কিছু প্রসাধনী নির্মাতাদের ভারতীয় সিইওদের কল্যাণে এখন সেই স্রোত একটি স্বীকৃত ধারা। এখন ঢাকার রাস্তায় ঐশ্বরিয়ার পীন পয়োধর খুবই সাধারণ দ্রষ্টব্য জিনিস।

এরকমই একটি বিজ্ঞাপনের ক্যাচ ফ্রেজ হচ্ছে, মুখ ফিট তো দুনিয়া হিট। আজ এই বদখদ সময়ে এসে এই বাক্যটির মূল্য আমি দিতে শিখেছি। পৃথিবীতে অনেক স্বৈরশাসক দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন, বা ক্ষমতা তাঁদের দখল করে রেখেছে, এবং এঁরা প্রায় সবাই সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শক্তসমর্থ লোক। দৈহিক ফিটনেস না থাকলে ক্ষমতা বেশিদিন ধরে রাখা যায় না। বেশিদূরে যেতে হবে না, আমাদের একদা স্বৈরশাসক এরশাদ অত্যন্ত ফিট ব্যক্তি, 78 বছর বয়সেও তিনি মোজোবান।

তাকান মুয়াম্মার কাদ্দাফির দিকে, কিংবা সাদ্দাম হোসেন, কিংবা শ্রদ্ধেয় ফিদেল কাস্ত্রোর দিকে, নবাগত উগো চাভেজের দিকে। লাতিন আমেরিকার স্বৈরশাসকরা ঈর্ষণীয় রকমের ফিট হয়ে থাকেন, কিন্তু সেখানে আবার ফিট লোকের অভাব নেই বলে তাঁরা বেশিদিন টিকে থাকতে পারেন না প্রতিযোগিতায়। আমার দুশ্চিন্তা এখানেই। শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে কিছুদিন আগে যমে মানুষে টানাটানি হয়েছে, তাঁকে তোল্লাতুলি্ল করে নিয়ে যেতে হয়েছে সিঙ্গাপুরে, সেখানে সন্দেহজনক গোপনীয়তায় চিকিৎসার পর কোনমতে আজরাইলের নখর থেকে তাঁকে কাফেরনাসারা চিকিৎসকগণ ছিনিয়ে এনেছেন, বলেন সুবহানআল্লাহ। এমতাবস্থায় 76 বছর বয়স্ক নিরীহ জ্ঞানতাপস, এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছিপছিপে ড. ইয়াজউদ্দিনের কৃশ কোমরবন্ধে প্রবেশ করেছে তিনটি তরবারি।

সশস্ত্রবাহিনী প্রধানের ভারি এক, রাষ্ট্রপ্রধানের ততোধিক ভারি দুই, আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার তিন। চিকিৎসিত হৃৎপিন্ড নিয়ে বৃদ্ধ মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে এই খাটনির মুখে না পড়লেই কি চলতো না? সংবিধান নাকি বলে, চলতো। মাহমুদুল আমীন চৌধুরী আর হামিদুল হক খান ছিলেন। রাষ্ট্রপতি নাকি সেসব অপশন পোলভল্ট করে পেরিয়ে গেছেন। পেরিয়ে যাবার সময় তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে শপথ গ্রহণ করেছিলেন সংবিধান সমুন্নত রাখার, সেটিই নাকি তিনি লঙ্ঘন করেছিলেন।

মূর্খ মানুষ, বুঝিনা এসব সংবিধানের ধারার মারপ্যাঁচ। কিন্তু অধ্যাপক রাষ্ট্রপতি শুধু শুধু কাদের পরামর্শে এমন বিতর্কিত ধারার দিকে গেলেন, তা বুঝি না। যারা হাসিমুখে খুব জোর গলায় তাঁকে সমর্থন করেছে, তাদের মধ্যে একজন স্বৈরশাসক ও একজন যুদ্ধাপরাধী আছে। আজ প্রথম আলোতে দেখা গেলো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রূপসী মুখে এক ক্লান্ত অবসন্ন কিন্তু স্বস্তির প্রায় বিজয়চুম্বী হাসি। আরো পড়লাম বিডিনিউজে, শেখ হাসিনার কাছে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পৌঁছেছে 5 মিনিট আগে।

এসব ঘটনায় চোখে পড়ে কেবল দলীয় পোলারাইজেশন। রাষ্ট্রপতিও চারদলীয় জোটের মনোনীত ব্যক্তি, তিনি কি পারবেন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের ফিটনেস প্রদর্শন করতে? নাকি প্রধানমন্ত্রীর 5 বছরের উন্নয়নের কাল্পনিক ফিরিস্তির মতো মৌখিক ফিটনেস দিয়েই দুনিয়া হিট করার চেষ্টা আমরা আবারও দেখতে থাকবো? উপদেষ্টাদের চেহারা দেখার আগ পর্যন্ত বলা মুশকিল হবে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, শেখ হাসিনা তৎক্ষণাৎ কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেননি। তাঁর অনিয়ন্ত্রিত ভাষা অতীতে অনেক ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, গতকাল যে হয়নি তার জন্য তিনি ধন্যবাদার্হা। আমরা নিশ্চিতভাবেই গত দুইদিনের মারপিটের ধারাবাহিকতা কামনা করি না।

দেশে শান্তি ফিরে আসুক। একটি সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসযোগ্য সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। বলেন আমীন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।