আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি তো পঙ্গু, আমি অভিশপ্ত (300 তম পোস্ট)

কপিরাইট সাকিব ২০০৬-২০০৯: সামহোয়্যার ইন ব্লগ, সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত

তখন আমি অনেক ছোট হামাগুড়ি দিয়ে চললাম। ধীরে ধীরে দুই পায়ে ভর করে হাটতে শুরু করলাম। একটু একটু করে বড় হতে লাগলাম। খেলাধুলা খুব ভালোবাসি। তাই, যখন ছোট ছিলাম তখন আমাকে তিন চাকার ছোট একটা গাড়ি কিনে দেওয়া হলো... আমি বিকাল বেলা আমার বন্ধুদের সাথে চালাতাম।

খুবই ভালো লাগতো। তারপর আরো একটু বড় হলাম। ইচ্ছা করলো সাইকেল চালাতে, কিন্তু বাবা কিনে দেয় না। তারপর আরো একটু বড় হলাম, অনেক জোড়াজোড়ি করলাম, কিনে দিতেই হবে, বাবা সুন্দর একটা স্টাইলিশ সাইকেল কিনে দিলো, আমি বন্ধুদের সাথে রেসিং এর জয়েন করতাম। স্কুল ছুটি হলেই... সাই সাই করে... গতির ছিলো আমার প্রিয়... আরো ফাস্ট... আরো... কোন এক দুপুর বেলা... সাইকেল রেসিং আর... হঠাৎ একটা এঙ্েিডন্ট, কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই জ্ঞান হারালাম।

জ্ঞান ফিরে কিছু বুঝতে পারলাম না। সব কিছূ কেমন যেন, সাদা-কালো রং নিয়ে খেলা করছে। একটু পড়ে বুঝতে পারলাম, আমি হসপিটালে। শরীরে তেমন কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না। দুই পা কেমন যেন ভারী ভারী লাগছে।

দেখলাম পা থেকে বুক পযনর্্ত সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মা পাশেই ছিলো। ধরে বসিয়ে দিলো। পা খুব ভারি লাগছে, এমন লাগছে কেন, দেখার জন্যে কাপড়টা সরিয়ে দেখি আমার পা দুটো নেই।

আমি চিৎকার করে উঠি... ও... মা... মা... আমার পা কোথায়? ডাক্তার কি করছে... কি করছে... কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই একটা নর্াস শরীরে একটা ইনজেকশন দিলো... দুই চোখে ঘুম ভেঙ্গে আসলো... আবার আমি অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে রইলাম। আবার সন্ধার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো। আস্তে আস্তে আমি সব বুঝতে পারলাম। সব। আর বাকি কিছুই রইলো না।

দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকলো। আর মা একটা কাপড় দিয়ে চোখ এর পানি মুছে দিতে লাগলো। সবাই আমার পাশে দাড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ কোন কথা বলে না... মনে হয় বোবা হয়ে গেছে... বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় পরিবেশটা কেমন যেন? সব কিছু নতুন লাগছে। মনে হয় সবাই আমার সাথে অভিনয় করছে।

আমি বুঝতে পারি সব। কিন্তু এ অভিনয় শুধু আমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্যেই... আমি জানি, আমি সব বুঝতে পারি, সব। সব কিছূ আমার কাছে স্পষ্ট... সময় গড়াতে লাগলো। আমার সারাজীবন এর ঘনিষ্ট বন্ধু হলো একটা হইল চেয়ার। ওর সাথে আমি খেলা করি।

তবে আর রেসিং খেলতে পারি না। স্কুল এ আমার বন্ধু গুলো কেমন যেন আমার থেকে দুরে চলে যেতে লাগলো... আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি... আমি তো এখন ... সবার সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা আমার নাই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডও টাও কেমন যেন হয়ে গেল। একটা বন্ধু ছিলো, ওর আমার জন্যে অনেক কষ্ট করেছে, আমি ক্লাসে আসতে না পারলে ও আমার জন্যে সব গুলো লেখা লিখে রাখতো, যেন আমার কষ্ট কম হয়। ও আমার থেকে দুরে চলে গেছে।

আমি এখন একটা বোঝা সুরূপ। কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারবো না। একাকীত্ব আমার বন্ধু, আর সময় শত্রু... কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। কি করবো। চিন্তা করতে লাগলাম।

আপন করে নিতে লাগলাম, ভাচৃয়র্াল সমর্্পক কে। অনলাইনে বন্ধুত্ব হতে লাগলো। অনেক অনেক বন্ধু... সবাই কত্ত ভালো... অনেক এর সাথে কথা হয়, অনেক এর সাথে অনেক ভালো সমর্্পক। অনেকের সাথে দিনে একবার কথা না হলে ভালো লাগে না। আর অনলাইনে তো কেউ কেউকে দেখে না, সুতরাং ...।

কিন্তু সবার সাথে তো দেখা করতে পারি না... যাওয়া সম্ভবও না... আমার একটা বন্ধু আছে। ও ইন্ডিয়ায় থাকে। ঈদে এবার গিফট পাঠাবে। দেশে আসবে আমার সাথে দেখা করার জন্যে। কিন্তু আমি যে করি, আমার ও ইন্ডিয়া যেতে ইচ্ছা করে।

আমি জানি, হয়তো আমাকে দেখে ওর মন খুব খারাপ হয়ে যাবে, হয়তো ওর সাথে আমি প্রতারণা করেছি, হয়তো আমি আমার অনেক কিছু লুকিয়েছি, হয়তো ওর সাথে ঐ দিনই আমার সমর্্পক এর শেষ, আমি জানি শেষটা ভালো হবে না... বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে, হয়তো দুই চোখে কোনের কিছু পানি চলে আসবে... এই তো...। কিন্তু আমি তো অসহায়... এত্ত ভালো একটা বন্ধু কখনই পেতাম না... কিন্তু যখন পেলাম তখন আমার কি অবস্থা... সবই আমার ভাগ্য। মেনে নিয়েছি সব... সময় তো বহিয়া চলে... আমাকেও চলে যেতে হবে... সবাই তো সবার দু:খকে নিয়ে আছে। নিজের দু:খটা কে সব সময় বড় মনে করে, আমার মত দু:খী মানুষ বুঝি আর নাই। একজন মৃতু্য পথযাত্রীর কথা শুনার সময় নাই যেখানে... সেখানে আমার কথা... এই তো ঐদিন অনলাইনে একজন বিদায় নিলো... হয়তো উনি মৃতু্যর সাথে যুদ্ধ করছে... হয়তো চলে গেছে... আর তো অনলাইনে দেখি না... কখনোও না... একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছিলাম, একটু সাহায্য চেয়েছিলাম-একটু ভর করে হাটবো-একটু দুরে চলে যাবো, একটু আশার আলো চেয়েছিলাম, একটু সাহস চেয়ে ছিলাম।

কিন্তু সবাই দুরে ঠেলে দেয়, করুণার পাত্র হয়ে গিয়েছি তো। ভালোবাসার নামে কষ্ট আর ছলনা, সাহায্য এর নামে সময় নাই, আশার নামে আরো হতাশাগ্রস্ত করা, এই তো... [গাঢ়] কিন্তু কখনোও কি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছেন, আসলে একজন অসহায় মানুষ আরেক জন্য সহায় মানুষ এর কাছ থেকে কি চায়? [/গাঢ়] [গাঢ়] আমার প্রিয় ব্লগারদের উৎসর্গ করলাম: [/গাঢ়] [link|http://www.somewhereinblog.net/jhorohowa|S

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।