আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট খাট আরেকটি বাংলাদেশ এবং বস্নাকগোল্ড (স্থান কালপাত্র// লুব্ধক)



ড. মোহাম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে এই লেখা শুরু করছি। এদিকে গত মাসে হঠাৎ করে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম, সেই সুবাদে কক্সবাজারও ঘুরে আসা হয়েছে এক চক্কর। কক্সবাজার এখন আর আগের কক্সবাজার নাই। বলতে গেলে রীতিমত জমজমাট এক শহর।

লোকজন গাড়ী ঘোড়া দোকানপাট শপিং সেন্টার (তারমধ্যে বার্মিজ শপিং সেন্টারগুলিই বেশী জমজমাট) পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল মোটেল ছাড়াও প্রাইভেট হোটেল মোটেল কটেজ রেসত্দোরাঁ। বছর দশেক আগেও যারা কক্সবাজার গিয়েছিলেন, এখন তারা দেখলে কক্সবাজারকে চিনতেই পারবেন না। এর ভালমন্দ দুটি দিকই রয়েছে। সেই আগেকার ঝাউ বন, বাতাস যাদের উপর দিয়ে শাঁ শাঁ করে বয়ে যেত, সেই ঝাউ বন এখন চোখে পড়ে না। 4 জুলাই 2003 তারিখের কলামে লিখেছিলাম, বাংলাদেশের আয়তন বাড়ছে,ঃ বিগত 4 দশকে বাংলাদেশের আয়তন বেড়েছে তিন হাজার বর্গমাইল।

উক্ত কলামে একাধিক তথ্য সূত্রের বরাত দিয়ে আরো বলেছিলাম, বাংলাদেশের দৰিণের ভূভাগ থেকে 3/ 4শ কিলোমিটার পর্যনত্দ কন্টিনেন্টাল শেপ। বাংলায় যাকে বলা হয়, মহীসোপান। এই মহীসোপান অগভীর। গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও মেঘনার নিষ্ক্রমণ ব্যবস্থা এবং আরো নদনদী প্রতি বছর প্রায় 2শ 40 কোটি টন পলি বঙ্গোপসাগরের ওই মহীসোপান অঞ্চলে বয়ে নিয়ে আসে। উলেস্নখ্য যে, 1970 সালের বিপর্যয়কর ঘূর্ণিছড় ও জলোচ্ছ্বাসের দরম্নর যে ৰয়ৰতি সাধিত হয়েছিল, তার ফলে ওই অঞ্চলের প্রতি উন্নত দেশসমূহের উৎৰিপ্ত সেটেলাইট তথা উপগ্রহসমূহের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।

তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপগ্রহ পরিবেশিত তথ্যে জানা গিয়েছিল যে, বাংলাদেশের দৰিণ ভাগে উপকূল ঘেঁষে সমুদ্র বৰে জেগে উঠছে এক সুবিশাল ভূমি খণ্ড। উপগ্রহের তথ্যানুসারে নতুন জেগে উঠা ওই ভূমিখণ্ডের আয়তন 40 হাজার থেকে 46 হাজার বর্গমাইলের মত। অর্থাৎ এ যেন ছোট খাট আরেকটি বাংলাদেশ! সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরম্ন হয় আগে থেকে। 1957 সালে সেই পাকিসত্দানী আমলে পুরাতন মেঘনা চ্যানেলের কম গভীর স্থানে নির্মিত হয় মেঘনা এক নম্বর ক্রসড্যাম। এই ক্রসড্যামের মাধ্যমে রামগতি উত্তর হাতিয়াকে লক্ষ্মীপুরের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

এই বাঁধ নির্মাণের ফলে দু'বছরের মধ্যেই 80 বর্গমাইল চর এলাকায় জনবসতি ও চাষাবাদ শুরম্ন করা সম্ভব হয়। এরপর নির্মিত হয় মেঘনা ক্রসড্যাম-নম্বর 2, 1964 সালে। এর মাধ্যমে সোনাপুর থানার সাথে চর জব্বার সংযুক্ত হয় এবং 4 বছরে 200 বর্গমাইল নতুন ভূমি উদ্ধার সম্ভব হয়। পরে এই বাঁধ আরো সম্প্রসারিত হয়, এবং 7 বছরে আরো 120 বর্গমাইল নতুন ভূমি উদ্ধার সম্ভব হয়। সেই ক্রসড্যামের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মার্কিন উপগ্রহে। বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানসহ বঙ্গোপসাগরে বিরাট ভূমিখণ্ড জেগে উঠবার আভাস পাওয়া গেছে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রাকৃতিক নিয়মেই এই ভূমিখণ্ড পুরাপুরিভাবে জেগে উঠতে বিশেষত. জনবসতি ও চাষাবাদের উপযুক্ত হিসাবে গড়ে উঠতে 50/60 বছর লাগতে পারে। সেজন্য আরো ক্রসড্যাম নির্মাণ করে ওই ভূমিখণ্ডের জেগে ওঠা ত্বরান্বিত করা। সে কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, নাফ-নদীর মোহনায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমানত্দের মাঝে বাংলাদেশের সীমানায় জেগে উঠেছে একটি বিশাল চর।

এই চরটি ইতিপূর্বে জেগে উঠা চারটি ছোট ছোট চরের সংযোজন ও বেড়ে উঠবার পরিণতি। পত্রানত্দরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে আরো জানা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের পুরো 710 কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত জুড়ে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন চর বা দ্বীপ। তন্মধ্যে নিঝুম দ্বীপ, সোনার চর, রূপার চর ও চর কুকড়ি মুকড়ি অন্যতম। কুয়াকাটার সমুদ্র উপকূল ঘেঁষেও চর সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে। ঃ বাংলাদেশ (প্রসত্দাবিত) এই ক্রস বাঁধের নির্মাণ দিয়ে 25 হাজার বর্গ কিলোমিটার এর বিশাল ভূখণ্ড ছাড়াও লাভ করবে আরো কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড।

কক্সবাজারের বিষয়ে আমার দ্বিতীয় যে বক্তব্য, তাও আদৌ নতুন নয়। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের বাসুতে রয়েছে বেশ কতিপয় মূল্যবান খনিজ সম্পদ, যেমন রম্নটাইল, মেগনেট ইট, মোনাজাইট, গারনাইট, ইলমেনাইট এবং জিরোকন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ওই সব মূল্যবান খনিজ সম্পদ আবিষ্কৃত হয় 1950 সালের দিকে। আবিষ্কার করেন এদেশের স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর কুদরত-ই-খুদা (মরহুম)। ইত্তেফাকের কলামে একটি লেখায় বাংলাদেশের কক্সবাজারের এই সমুদ্র সৈকতে উপরোক্ত মূল্যবান খনিজ সম্পদের অবস্থান জানতে পারে বিশিষ্ট খনিজ পদার্থ বিজ্ঞানী লুৎফর রহমান লিখেছিলেন, যে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীদের সাথে করে নিয়ে দিনের পর দিন মাসের পর মাস সর্বদা আরবের হাজার হাজার মাইল মরম্নভূমি চষে বেড়িয়েছি, সেই মূল্যবান খনিজ সম্পদ কক্সবাজার বালুকা বেলায় এভাবে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে জানতে পেরে খুবই খারাপ লাগছে।

এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি বলা যায়। উলেস্নখ্য যে, বর্তমানে বিশ্বে ওইসব মূল্যবান খনিজ পদার্থের যোগানদাতা একমাত্র অস্ট্রেরিয়া। অস্ট্রেলিয়াই বিশ্বের শতকরা 93 ভাগ বস্নাকগোল্ডের চাহিদা পূরণ করে থাকে। অথচ অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতের বালুতে বস্নাকগোল্ডের পরিমাণ মাত্র শতকরা 5 ভাগ। আর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালুতে বস্নাকগোল্ডের পরিমাণ শতকরা 15 ভাগ।

বিষয়টি নিয়ে বহু লেখা হয়েছে। এই ৰেত্রে বাংলাদেশ কতর্ৃপৰের যা করা উচিত তা হয়নি, এটাই দুঃখের সাথে বলা ছাড়া আর কি-ই বা বলা যেতে পারে। ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ 16.10.2006 ঃঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।