আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ সিয়াম সাধনার লক্ষ্য

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

পূর্ব পর্বসমূহ পড়ুন: ১) Click This Link ২) Click This Link ৩) Click This Link পৃথিবীতে কোন কাজই কারণ ছাড়া সংঘটিত হয় না, ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ প্রতিটি কাজের পেছনেই থাকে কোন না কোন উদ্দেশ্য; চাই তা হোক মহৎ কিংবা অসৎ। তাবৎ মানুষের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং সৎকর্ম করতে আগ্রহী, তাদের জন্য সবার স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা'আলা বিধান দিয়ে দিয়েছেন যে, কি কি হবে সৎকাজ এবং সেসব কোন্ কোন্ পন্থায় পালন করতে হবে এবং সেসবের কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষ কি কি কল্যাণ লাভ করতে পারবে। ইসলামের পরিপূর্ণতার এই সুন্দর ও পরিপূর্ণ রূপ মুগ্ধ করে, প্রশান্ত করে, নিশ্চিন্ত করে মুমিনের অন্তরকে। তাই প্রফুল্ল চিত্তে একজন মুমিন ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করে দয়াময় আল্লাহ্র সেই আদেশ পেয়ে, যেখানে তিনি বলেছেনঃ ((হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। )) [সূরা আল-বাকারাহঃ ১৮৩] উপরের আয়াত থেকে আমরা একথা জানতে পারি যে, আল্লাহ্ তা'আলা পূর্ববর্তী উম্মতসহ আমাদের উপরও সিয়ামকে ফরয করেছেন, যাতে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি।

আসুন জানতে চেষ্টা করি তাকওয়া এবং মুত্তাকী বলতে কি বুঝায়? মুত্তাকী শব্দের মূল ধাতু 'তাকওয়া'। তাকওয়া হলো, নিরাপদ থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো, বান্দা যেন আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। আর তা করতে হলে যা করতে হবে তা হলো, তাঁর নির্দেশকে পুরোপুরি আনন্দচিত্তে মেনে নেয়া এবং তাঁকে ভয় করে তাঁর নিষেধকৃত বস্তুকে পুরোপুরি ত্যাগ করা। আর মুত্তাকী হলেন, যিনি আল্লাহর আদেশকে পুরোপুরি মেনে নিয়ে, এবং তাঁর নিষেধ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থেকে তাঁর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।

আর আমাদের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র নির্দেশ হচ্ছেঃ ((হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা প্রকৃত ভীতি সহকারে আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর। )) [সূরা আলে-ইমরানঃ ১০২] সুতরাং এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিয়ামের আদেশে যে তাকওয়া অর্জনের কথা বলা হয়েছে, সে তাকওয়াকে প্রকৃতরূপ দান করাই মূল কথা। তাকওয়ার ব্যাপারটি ইসলামের পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার সাথেই সম্পৃক্ত। আমাদের প্রসঙ্গ যেহেতু সওম, তাই সিয়াম কিভাবে তাকওয়া অর্জন শেখায়, পর্যালোচনাকে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ((হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার ক্ষমতা আছে, তার বিয়ে করা উচিত।

আর যার ক্ষমতা নাই তার সওম পালন করা উচিত। কেননা, তা (সিয়াম) তার জন্য যৌনউদ্দিপনা দমনকারী। )) [বুখারী ও মুসলিম] এটা এজন্য যে, সিয়াম যেমন মানুষের অন্তরকে পবিত্র করে, তেমনি পবিত্র করে থাকে মানুষের শরীরকেও। কারণ, মানবশরীর পানাহার পেলেই শুধু অন্যান্য রিপুগুলোকে সক্রিয় করে থাকে। আর যদি পানাহারকে সীমাবদ্ধ করা হয় এমনভাবে যেন শরীরিকভাবে দুর্বলও না হয়ে পড়ে এবং তার বিপরীতে পানাহার থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যায়ক্রমে বিরত থাকার কারণে অন্যান্য জৈবিক ও খারাপ রিপুগুলোও সংযত বা দুর্বল হয়ে পড়ে।

সিয়াম সাধনার মৌলিক দুনিয়াবী কল্যাণসমূহের একটা বড় কল্যাণ এটা। অন্যদিকে যদি সিয়াম সাধনা করে কেউ তাকওয়াই অর্জন করতে পারলো না, তার জন্য আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ((যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা কাজ ত্যাগ করেনি, তার খানা-পিনা ছেড়ে দেয়াতে আল্লাহর কোন কাজ নেই। )) (বুখারীঃ ২/২৩৪, হাদীস নং- ১৭৬৮] এ থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যে তাকওয়া অর্জন সম্ভব, তা অর্জনের পথে সবচেয়ে বড় শত্রুই হচ্ছে মিথ্যা কথা ও কাজ; যা ত্যাগ করতে না পারলে সিয়ামের বিধান সম্বলিত আয়াতে বর্ণিত তাকওয়া অর্জন করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। তাই সর্বান্তঃকরণে আমাদের চেষ্টা করতে হবে সিয়াম সাধনার এই একমাস মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজকে পরিত্যাগের মাধ্যমে জীবনের বছরের বাকী এগারটি মাসকেও মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজমুক্ত রাখার। সিয়াম কি আসলে শুধুমাত্র খানা-পিনা ছেড়ে দেয়াকেই বলে? না, মূলতঃ সিয়ামের সাধনার পরিধি অনেক ব্যাপক।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা থেকেই আমরা জানতে পারি যে, সিয়াম কি এবং কতটা ব্যাপকতা রাখে এবং কিভাবে সিয়ামের ফলাফল বিনষ্টকারী কার্যাদি থেকে আমরা নিজেদেরকে হেফাজত রাখতে পারি। আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ((সিয়াম খানা-পিনা ছাড়ার নাম নয়; বরং বেহুদা বা অনর্থ এবং অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম। সুতরাং যদি কেউ সিয়াম পালনকারীকে গালি দেয় অথবা মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে, তখন সে যেন বলে- 'আমি সায়েম বা সিয়াম পালনকারী, আমি সিয়াম পালনকারী। ')) [সহীহ্ ইবনে খুযায়মাঃ ৩/২৪২, হাদীস-১৯৯৬] উপরোক্ত আলোচনা এবং বিভিন্ন প্রমাণাদি থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, তাকওয়া অর্জনই সিয়ামের মূল লক্ষ্য; যা আমাদের দুনিয়াবী পবিত্র জীবন যাপনে মহাসহায়ক এবং আখেরাতে যার জন্য রয়েছে দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার। সুতরাং তাকওয়া বা আল্লাহ্-ভীতির মাধ্যমে তাঁর নিষেধকৃত কার্যাদি থেকে বিরত থেকে এবং তাঁর আদেশগুলোকে যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা লাভ করাই আমাদের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট আমরা সিয়ামের মূল লক্ষ্য হাসিলের তৌফিক কামনা করছি। আমীন। (চলবে) ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.uml.edaama.org/uml/ramadan2003.jpg

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।