আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এত এত মূল্যহীন ডিগ্রি দিয়ে কি লাভ?

কামরুল কেমিস্ট

মহসিন ভাই একবার ভাবেন হাস মুরগি পালন করবেন, আবার ভাবেন বিদেশ চলে যাবেন। কিন্তু হাস আর মুরগি পালন করার জন্যে কি এই ডিগ্রি নিয়েছেন? আত্মীয় স্বজন সবাই তাকে শিক্ষিত বলে জানে, কিন্তু মহসিন ভাই তো বুজতে পারেন এই শিক্ষার মুল্যায়ন। মাঝে মাঝে আক্ষেপ করেন, পড়াশুনার পিছনে এত সময় ব্যয় না করে বিদেশ যাওয়া উচিত ছিল। এই আট বছরে হয়ত অনেক কামাই করতে পারতেন। আবার বলেন এইচ. এস. সি এর পড়ে খামার করা উচিত ছিল।

ছিল। কিন্তু সময় চলে যায়, বয়স যায়, বিদেশ যাওয়া হয় না, খামার করা হয় না। গ্লানি নিয়ে সময় কাটান তিনি, আর সপ্ন দেখেন। মহসিন ভাই, সরকারি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। ভালো একটি চাকরি করার ইচ্ছা।

ফারমাসিউতিক্যাল এ কোয়ালিটি কন্ট্রোল এ চাকরি করতে চান । এছাড়া পেইন্ট কোম্পানির প্রডাকশান এ চাকরি করতে চান। ওনার আক্ষেপ , এসব কম্পানিতে এপ্লাই করলে কখনই ডাকে না, শুধু পাবলিক ভার্সিটির ছেলেদের ডাকে। একই বিষয় পড়ে তাহলে এত বৈষম্য কেন? মহসিন ভাই, রসায়ন ভালই পারেন। ট্রাইত্রেশান কি জানেন।

এবং তিনি মনে করেন এটি তিনি করতে পারবেন। এটি খুব ই সাধারন। সব যন্ত্রপাতি আর ক্যামিক্যাল দিয়ে সাধারন একটি ট্রাইত্রেশান করতে বলা হল ওনাকে। তিনি যে ভুলগুলি করলেন তা হলঃ ১. প্রথম বারে ইনডিকেটর দিতে ভুলে গেলেন। ফলে অনেকক্ষণ ধরে ক্যামিকেল খরচ করে কোন ফল পেলেন না।

২. আবার শুরু করলেন তিনি। বুরেত বসাতে গিয়ে কি যে অবস্থা !! এবার ইনডিকেটর দিলেন। কিন্তু যে ফলাফল বললেন তা প্রায় ২১৭ % বেশি। ৩. ৪ বার চেষ্টা করেও সঠিক ফলাফল বের করতে পারেন নি। কারন তিনি এত দ্রুত এসিড ছাড়েন যে ইনডিকেটর অনেক আগেই রঙ পরিবর্তন করে ফেলে।

৪. তিনি ০.৫ মোলার দ্রবন তৈরি করতে মজার পদ্দতি ব্যবহার করেন, যা রসায়নের সাথে খাপ খায় না। গোলতলি ফ্লাস্কে কাটা দাগের উপরে পানি উঠে গেলে সেই বাড়তি পানি ফেলে দিয়ে কাটা দাগে আনেন। অদ্ভুদ এই পদ্দতি কে তাকে শিখিয়েছে, সেটা বোধগম্য হয় না। মহসিন ভাইকে অবজ্ঞা করার জন্যে এই লেখা নয়। তার ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে বলা হল যে কেন তাকে ফারমাসিউতিক্যাল এ কোয়ালিটি কন্ট্রোল এ চাকরীর জন্যে ডাকে না।

সঠিক পরিমান নির্ণয় করতে না পারলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে, সেটা কি তিনি জানেন !!! কিন্তু কারো যুক্তি তিনি মানতে রাজি নন। পাবলিক ভার্সিটিতে (যেমনঃ শাবিপ্রবি)প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই টি ল্যাব করতে হয়। উপরের সেমিস্টারে আরও বেশি। রিসার্চ তো আছেই। ২৮+ জন শিক্ষক, ( অনেকে বিদেশে ডিগ্রির জন্যে বিদেশে থাকেন), মাত্র তিনটি ক্লাস রুম , একটি ডিপার্টমেন্টাল লাইব্রেরী ও ১২ টি বিশাল ল্যাব ( একটি ল্যাব ক্লাসরুমের অন্তন তিন গুন) নিয়ে প্রথম সেমিস্টার থেকে যন্ত্রণা শুরু।

তারপর ও ছাত্রদের আক্ষেপ যে তেমন কিছুই শেখানো হয় না। ( প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুটি ল্যাব রিপোর্ট জমা দিতে হয় ) । আর মহসিন ভাই শুধু পরীক্ষার আগে কোনমতে ল্যাব করেন, তাও এমন ল্যাবে যেখানে পর্যাপ্ত ক্যামিকেল নেই। তিনি শুধু নোট বই পরেন, ওনার কাছে দেশি লেখকদের ই কোন বই নেই, বিদেশি লেখক তো অনেক দুরের কথা। গতানুগতিক কিছু সাজেসান্স পড়ে সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছেন।

অনার্সে পড়াকালীন সময়ে এন.জি. ওতে চাকরি ও করেছেন ( কোন ক্লাস করতে হয় নি)। এবার মূল কথায় আসি, আসলে এই ব্যবস্থার জন্যে দায়ি কে? এত এত মূল্যহীন ডিগ্রি দিয়ে কি লাভ? এই ডিগ্রি কি কাজে আসবে? এই ডিগ্রির এমন ই গুন যে জাতীয় ভার্সিটি থেকে পাস করা ছেলেদের কোম্পানি গুলো ডাকে না। ডাকলেও সেলস এ ডাকে। মুখে সমান মান বলে কর্মে অসমান কেন? এই অসম্মান কেন? মহসিন ভাই একবার ভাবেন হাস মুরগি পালন করবেন, আবার ভাবেন বিদেশ চলে যাবেন। কিন্তু হাস আর মুরগি পালন করার জন্যে কি এই ডিগ্রি নিয়েছেন? আত্মীয় স্বজন সবাই তাকে শিক্ষিত বলে জানে, কিন্তু মহসিন ভাই তো বুজতে পারেন এই শিক্ষার মুল্যায়ন।

মাঝে মাঝে আক্ষেপ করেন, পড়াশুনার পিছনে এত সময় ব্যয় না করে বিদেশ যাওয়া উচিত ছিল। এই আট বছরে হয়ত অনেক কামাই করতে পারতেন। আবার বলেন এইচ. এস. সি এর পরে খামার করা উচিত ছিল। কিন্তু সময় চলে যায়, বয়স যায়, বিদেশ যাওয়া হয় না, খামার করা হয় না। গ্লানি নিয়ে সময় কাটান তিনি, আর সপ্ন দেখেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।