আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোড টু কক্সবাজার



আকাশ ভারী হয়ে আছে। যদিও এটা জৈষ্ট্যমাস তবুও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। যারাই মহেশখালী জেটি দিয়ে চলাচল করছে সবারই পদচারনা দ্রুত। বৃষ্টির জন্য জেটির মধ্যে ঢুকে পড়ার রিক্সাগুলো ভীড়ে চলাচল করা দায় হয়ে দাড়িয়েছে। ভারী মহিলাটি একটা বাচ্চাসহ মুরগীর মত ভিজছে।

মেরুন রঙ্গের একটা বোরকা লেপ্টে যাচ্ছে তার দেহে । তার শরীরের উর্বর স্থানগুলো আরো উর্বর হয়ে দেখা দিচ্ছে। যেন বৃষ্টি তাকে ধীরে ধীরে একটা ভাস্কর্যে পরিণত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা যাওয়ার লোকগুলো ছাতা তুলে আড়চোখে তার ভারী পাছাটা দেখে নিচ্ছে। স্পীডবোট গুলো সারিবদ্ধ ঘোড়ার মত দড়ি দিয়ে বাধা জেটির রেলিঙ্গের সাথে।

কুতুব দিয়াগামী দুতলা লঞ্চগুলো ভেঁপু বাজাচ্ছে। মাঝে মাঝে স্পীডবোটের হেলপারগুলো 'হেই ককসোবাজার এজ্জন, 'হেই ককসো বাজার এজ্জন, বলে হাক মারছে। সুদর্শন ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলের যুবকটি বৃষ্টির মধ্যে একটার পর একটা ছ বি তোলে যাচ্ছে। কুতুবদিয়াগামী বোটগুলো থেকে বস্তা তোলতে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে এক কিশোর শ্রমিকটি পড়ে গেল নদীতে। লোকগুলো সব ওদিকে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।

কে এক জন একটা রশি ফেলে ছেলেটাকে উঠালো। লিকলিকে ছেলেটা ন দী থেকে উঠেই ঝাপিয়ে পড়ল সেই কুলিটার ওপর। তারপর শুরু হয়ে গেল মারা মারি। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকাগুলো সারিবদ্ধ হয়ে বাধা আছে জেটির অদুরে। সমুদ্র উত্তা্ল।

সমুদ্রের কম্পনে নৌকাগুলো দোলছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ভেতর নদী তীরবতর্ী এলাকাগুলোকে ঝাপসা চাদরে আবৃত কোন ছবির মত মনে হচ্ছে। স্পীডবোটটা ছেড়ে দিল। স্পীডবোটে বসে সুদর্শন বারবার ভেজা মহিলাটির দিকে তাকাচ্ছিল। সবার তাকানোর কারনে যদিওমহিলার অস্বস্থি হচ্ছিল কিন্তু সে সুদর্শনের দিকে চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্চিল।

ইতিমধ্যে বাতাস শুরু হয়ে গেছে। জেটিতে চলাচল রত দুতিনটা ছাতা উড়ে গেল। ছাতার মালিকেরা বেকুবের মত তাকিয়ে তাকল উড়ে যাওয়া ছাতা আর দস্যু বাতাসের দিকে। ঝড়ের বেগ বাড়ার সাথে সাথে মহিলার বাচ্চাটা কেঁেদ উঠল। 'আব্বু কি ভয় পেয়েছ? এদিকে এসো- বাচ্ছাটার দিকে হাত বাড়াল সুদর্শন।

'যাও তোমার আংকেলের কাছে যাও-বোরকা বাচ্চাটাকে সুদর্শনের দিকে এগিয়ে দিল। বাচ্চাটা মায়ের অনুমতি পেয়ে হুড়মুড় করে সুদর্শনের কোলে চড়ে বসল। ঝড় বাড়ার কারনে কালো একটা তেরপাল দিয়ে পুরো স্পীডবোটটা ঢেকে দেয়া হয়েছে। বোরকার লম্বাচুল গুলো ভিজে জবজবে হয়ে গেছে। 'আপনার ছেলে এখন আর ভয় পাচ্ছে ন া-সুদর্শন বোরকার সাথে আলাপ জমাতে চাইল।

বোরকা সুদর্শনের দিকে তাকিয়ে দাঁত দেখিয়ে হাসল। বোরকার দিকে তাকালেই বুঝা যায় বেচারির খুব কষ্ট হচ্ছে। বাকখালী নদী এখন খুবই উত্তাল। ঢেউ কেটে কেটে স্পীডবোটটা চলেছে। তার ওপর এই ছোটা বোটটার মধ্যে দশজন মানুষ।

বৃষ্টি উত্তর উত্তর বেড়েই চলেছে। স্পীডবোট স্টার্ট দিতেই দুইজন সিগার জালিয়ে আড্ডা জুড়ে দিয়েছে। এই ভেজা তেরপাল ঘেরা দমবদ্ধ যাত্রার ভেতর সিগারের ধুঁয়া নিঃশ্বাসটাকে আরো ভারী করে তোলেছে। একেকটা ঢেউ এসে বোটটাকে মাথায় তোলে নাচিয়ে যাচ্ছে। সুদর্শনের কোলে ছেলেটা আর ভয় পাচ্ছেনা।

যখনই সুদর্শন বোরকার দিকে তাকাচ্ছে, বোরকা সকৃতজ্ঞ নয়নে একেকবার তার দিকে তাকাচ্ছে। একটা বৃদ্ধলোক বারবার হাঁছি দিয়ে যাচ্ছে। একটা লোকের ভাঙ্গা হাতটা তার গলায় বেধে দেয়া হয়েছে। সাথে আর একটা মহিলা। প্রত্যেক ঢেউয়ের সাথে লোকটা ককিয়ে উঠছে।

একপাশে এক পুলিশ তার হাতে একগাছা দড়ি। সে সম্পুর্ন ভিজে গেছে আর দড়ির অপর প্রান্তে লিকলিকে বাধা লোকটা তার কাহিল অবস্থা দেখে হাসছে। এই আসামী মহেশখালী কোর্ট থেকে কক্সবাজার জেলে চালান হয়ে যাচ্ছে। এদের সবারই নিঃশ্বাস তেরপালের ভেতর ঘুরে ঘুরে অসহনীয় করে তোলেছে বাতাস। বোটটা মুল মোহন অতিক্রম করে কক্সবাজারের খারির ভেতর গিয়ে পড়ল।

ঝাকানিটা কমে আসার সাথে সাথে সবার কপাল থেকে দুশ্চিন্তার ভাজগুলো খসে পড়ে। চেহারাগুলো পরিছন্ন হয়ে আসে। বোরকা সুদর্শনের দিকে তাকিয়ে উজ্জল হয়ে। ভেজা চুলের মাথাটা ঝাকি দেয়। অনেক ঝিমুন্ত ফিশিং ট্রলারের মাঝখান দিয়ে স্পীডবোটটা এগিয়ে চলে ছয় নাম্বার জেটির উদ্দেশ্যে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।