অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
শ্রাবন শেষ হলো মাত্র, গত এক সপ্তাহ ধরে আকাশ থমথমে,মুখ গোমড়া করে আছে, প্রতিদিন বিকেলে মেঘ জমছে কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই, এবারের খন্দ মাঠে মারা যাবে, পেকৃতি যদি এমন করে, রক্ষা করো মা, মাটিকেই মা বলে জেনেছেন এত দিন নদু শেখ, 4 বিঘা জমিই তার সম্বল, দেশের সাথে প্রকৃতিও বিগড়ে গেছে মনে হয়, গন্ডগোলের বছরম ধলুর দড়িটা খুলছিলো সে তখনই মজা পুকুরের দিকে চোখ গেলো,
ভাদ্্রের আকাশ উজ্জ্বল নীল, ভিটার সাথের পুকুরে আশে পাশের কয়েক বাড়ীর মেয়েরা সিনান করে আর গেরোস্থালীর ছোটোখাটো ধোঁয়াধুঁয়ির কাজ সারে।
চারপাশে প্রাচীন গাছের ছায়ায় স্যাঁতস্যাঁতে, ঝোপঝাড় আগাছা, এখন এই সময়ে কেউ আসে না, বাসী বাসন মাজার জন্য মেয়েরা আসতেও এখনও ঘন্টা খানেক দেরী আছে।
যেভাবে কেতড়ে পড়ে আছে মনে লয় জান লাই শইলে, গত রাত থেকে আজকে ভোর যেকোনো সময় আসতে পারে, কতক্ষণ এই নাদান জান এইখানে পড়ে আছে, কে জানে, এমনই দেশের অবস্থা কে রাখে কার খবর? এখনও গোঁফের রেখা পষ্ট হয় নাই, কোন মায়ের ছেলে কে জানে,গন্ডগোলের বছরে জান পানির চেয়ে সস্তা হয়ে গেছে।
শেখ সাহেব তো মনের সুখে পাকিস্তানে বসে আছে গিয়ে, তার পরিবারের গাঁয়েও আঁচ লাগছে না কোনো, অথচ তার ডাকে এতগুলো কচি প্রাণ মরতে নেবেছে, আরে বাবা ওরা কি ঘাস খায় নাকি সব মস্ত জোয়ান পাঠান সৈন্য, দিলে রহম নাই এক ফোঁটাও, এককেবারে কচুকাটা করে ফেলবে, জমির মুন্সির কথা ফেলে দেওয়ার মতো না,গঞ্জের বড় দোকানটা তার, ভজহরি সাহার কাপড়ের দোকানটাও নাকি তাকে বেঁচে দিয়ে সে ব্যাটা হিন্দুস্তান ভেগেছে, আর রহমতের দোকানটাও তার জিম্মাদারিতে আছে এখনও, বৈশাখের মেলার দিন থকে উধাও রহমত কই যে গেলো, নতুন টিনের ছাউনি দিছে ঘরে মুন্সি, রেডিও আছে, সব খবর থাকে ওর কাছে।
আশে পাশে তাকায় নদু শেখ, বলা যায় না কে দেখে ফেলে কখন, ঘাড়ে বয়ে দূর্গতি বাসায় টেনে নেওয়ার কোনো মানে হয় না, কে গিয়ে কাকে কান কথা লাগাবে, শেষে দুশমনের চর হিসেবে তাকে ধরবে, এমন কি মেরেও ফেলতে পারে, এখন মরার জন্য কোনো কারন লাগে না, নিড়ানী দেওয়ার মতো এরা সব কাফের কে মেরে পাকিস্তান পবিত্র করে ফেলবে, যারাই শেখে ডাকে সাড়া দিয়েছে ওরাই গাদ্দার,হিন্দুসানের দালাল, পাকিস্তানের দুশমন, ইসলামের দুশমন,তাদের সাথে থাকা মানেই গাদ্দারি করা, যাদের ঈমান নেই তারাই পাকিস্তানের ক্ষতি করার জন্য হিন্দুস্তানের ফাঁদে পা দিয়েছে, সব ঈমানদার মানুষের দায়িত্ব এদের কাছ থেকে ইসলামকে রক্ষা করা, পাকিস্তানের বুলন্দি হাসিল করা, জুমা বারের খোতবায় ইমাম সাহেব বলেছেন, সফেদ নূরানী দাড়ি, মাথার চুলে মেহেদি দেওয়া আব্দুল আলীম এনায়েতপূরি সাহেব মিথ্যা বলেন না।
কোন মায়ের ছাওয়াল কে জানে, বেজায়গায় এসে মরে যাবে, তার খিড়কিতে পড়ে মরলেও তার বিপদ, ঠাওর পান না নদু শেখ, ছেলেটার ঠোঁট নড়ছে, নিস্তেজ গলা, শইলে বল নাই একদম, পানি পানি করে যদি তার সামনেই মরে যায়, মৃতু্যর পর আল্লা মিয়ার কাছে কি জবাব দিবেন তিনি, যখন সাওয়াল জবাব হবে তখন যদি আল্লা মিয়া প্রশ্ন করে তোমার সামনে পানি পানি করে মরে গেলো বান্দা আমার, তুমি কি করছিলা তখন, তোমার সামনে আমার অসহায় বান্দা মরলো তিয়াসে, আর তুমি পৃথিবীর লোভে বান্দাকে পানি দিলা না এক ফোঁটাও, কি জবাব দিবেন তিনি?
কারবালায় পানির তিয়াসে ছটফট করে মরেছেন ইমাম হোসেন, পাপিষ্ঠ সীমার বুকের উপর চড়ে খঞ্জর চালিয়েছে,কিন্তু এক ফোঁটা পানিও দেয় নাই,আমিও কি সীমা হয়ে যাবো? নদু শেখের ধন্দ কাটে না, আল্লার বান্দা চোখের সামনে মরলেও পাপ, আবার সাহায্য করলেও বিপদ, সামনে জঙ্গল পেছনে খাল অবস্থা তার, জঙ্গলে বাঘের ভয় আর খালে কুমীর।
বাব তুমার দ্যাশ কুথায়?
তিয়াস লাগছে বা'জান, একটু জিরাও, তুমারে ছাওয়ায় রাখতে হবে---
রহিমার মা ঘুম থকে উঠেছে ভোর ফোঁটার আগেই, সারারাত ক্ষিধার জ্বালায় ঘুমাতে পারে নাই, সেই কোন দুপুরে একমুঠা ছাতু খেয়েছে, আজ ঘরে কিছুই নাই, চৌধুরীদের ভিটার পিছন থেকে কথুয়া শাক তুলতে এসেছিলো, মজা পুকুরের পাশে শোল কচু আর মান কচুর ঝোপ,হেলেঞ্চা আর কলমি শাকে পুকুরের একপাশ ভরা, সেখান থকে কিছু তুলে সকালসকাল বাজারে গিয়ে বেঁচলেও কয়েক আনা আসবে হাতে। অভাবের ডানা ঝাপটায় চারপাশে, এখন পতিত জমির এইসব নিয়াও কাড়াকাড়ি,গাঁয়ের অভাবিরা এইসব খুঁটে তুলে অভাবের মাস কয় একপেটা আধপেটা খেয়ে বাঁচতো, এই বছরে এই খানেও টান পড়েছে, পেটেই চাই বড় চাই,অন্ধকার ঠিক মতো মোছার আগেই নেমেছে রহিমের মা, লতু বাতাসী এিসব ডেঁপো ছুকড়ি আসার আগেই ধামায় কয়েক আঁটি ভরে নিয়া বাজারে 4 আনা আঁটি বেঁচলেও সের খানেক খুঁদ কেনা যাবে, আর মনে করে 1 আনার নুন কিনতে হবে ফরিদের দোকান থেকে, 30 মিনিৎাক হাঁটলেই গঞ্জের বাজার, মনে করে একটু তেল আন নুন না আনলে হবে না , শুধু কচু সেদ্ধ আর হেলেঞ্চার ঝোল মুখে রুচে না, এই বয়েসে তার নিজের লোল দেখে নিজেরই লজ্জ্বা লাগে।
পুকুরের পাশে গিয়ে রহিমের মা থমকে থাকে, সামনে পড়ে আছে ছেলেটা, পায়ের ওখানটায় ব্রিিী ঘা, গায়ে কালসিটে পড়ছে, কার ছেলে যে এই খানে এসে পড়ছে কে জানে, নদু শেখকে আসতে দেখে একটু নেমে এক হাঁটু পানিতে গিয়ে ঝোপে আড়ালে লুকালো রহিমের মা।
ও মা বলে ছেলেটা নেতিয়ে পড়লে নদু শেখ পাঁজকোলা করে তুলে নিয়ে গোয়ালের দিকে রওনা দিলেন, সেখানে খড়ের আঁটি ভেঙে তাকে শুইয়ে দিয়ে গেলেন রসুই ঘরে, কখন খেয়েছে কে জানে, গামছা ভিজিয়ে আনলেন তিনি,ছেলেটার মুখে ভেজা গামছা বুলিয়ে দেওয়ার পর ছেলেটা চোখ মেললো, করমচার মতো লাল হয়ে আচে চোখ, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা, এর একটু পানি চেটে চেটে খেলো,
কি নাম বাজান তুমার? দ্যাশ কুথায়?
নন্দিগ্রাম জামাল পুর, আবারও নেতিয়ে পড়লো ছেলেটা।
একটা সানকিতে একটু মুড়ি গুড়, আর আরেকটা সানকিতে একটু পানি রেখে ধলুর দড়িটা খুলে রওনা দিলেন নদু শেখ,
পোয়াতি গরু, বিয়ানোর সময় হয়েছে, দড়িটা একটু আলগা করে রেন্ডি গাছের সাথে বেঁধে রাখলেই হবে, ওখানে সরস ঘাস, বলদ দুটাকে জাবনা দিতে হবে, এর পর ক্ষেতির কাজ আছে। আল বেঁধে পানি জমিয়েছিলেন,ভাদ্্রের আঁচে জমির ভেতরটা খাঁ খাঁ করে, শোঁ শোঁ পানি টানে জমি, মাটিতে ফাটল লেগেছে, আজকের বিকালটাতে যদি বৃষ্টি না আসে তাইলে সঁেচের উপায় দেখতে হবে,কেবল মাত্র দুধ আসছে শীষে এখন যদি নেতিয়ে পড়ে গাছ তাহলে পুরা আবাদ বরবাদ হয়ে যাবে তার।
জয়নুদ্দির ক্ষেত থেকে নালা টেন পানি আনা যায়, কিন্তু জয়নুদ্দি চাইলেই জমিতে নালা কাটতে দিবে না, ওর নধর গাছ, এখনও পুরুষ্টু হয় নাই, এখন গাছের তিয়াস থাকে বেশী।
জয়নুদ্দির সাথে হালকা কথা চালাচালি হয়েছে তার, এই শ্রাবনে তেমন বৃষ্টি হয় নাই, এখন পানি লাগবে বেশী, যদি বৃষ্টি না হয় তাইলে দোন বেঁধে দুজনেতে মিলে একরাত সেঁচলেই আবার লকলকে হয়ে উঠবে গাছগুলো। খটখটে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনাগত বৃষ্টির সম্ভবনা খতিয়ে দেখে ঘরে রওনা দিলেন নদু শেখ।
*****
কৃতিত্ব কনফুসিয়াসের, যদিও এখনও তেমন করে ফুটে উঠে নাই লেখাটা। শেষটাও তেমন জুতের হয় নাই, তবে আরও কয়েকবার পলিশ দিলে একটা কিছু দাঁড়াবে, পরবর্তি অংশ আগামি কাল আসছে, একদিনে এত বেশী লেখা ঠিক না*****
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।