আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাপ্তি ও পিটার প্যানের ছাদে এক বর্ণীল সন্ধ্যা

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

23শে জুন 23শে জুন 23শে জুন............. মনে মনে দিনটার জন্য প্রতীায় ছিলাম। ভেতরে ভেতরে একটা দ্রিমিকি দ্রিমিকি গুড় গুড় অপো তৈরী হচ্ছিল। আমার আর কৌশিক ভাইয়ের আলোচনায় অচেতনভাবে ফিরে ফিরে আসছিল 23শে জুনের প্রস্তুতি।

প্রাপ্তির ডকুমেন্টরীর কাজটা শেষ করতে পেরে দুজনই কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম এবং অনেকখানি অস্বস্তিতে ছিলাম দিনটা কেন আরো তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছেনা। অনেকদিন পর নানাবাড়ীতে যাবার উত্তেজনা কাজ করতে শুরু করেছিল। আমরা মহানগরের বাসিন্দা থেকে হয়ে উঠছিলাম অ-নাগরিক দুই উত্তেজিত বালক। এতগুলো সম্ভাবনাময় দূর্দান্ত মহাবিশ্বকে একসাথে পাবার যে আকাঙ্খা তা কিছুণ পর পর ডুকরে ডুকরে উঠছিল। অবশেষে শুক্রবার বিকেলের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আর সহ্য হচ্ছিল না।

অবশেষে যখন রওনা দিয়েই দিয়েছি তখন কালপুুরুষের ফোন, সূর্য তো আর আড্ডার জন্য অপো করবে না সে ইতমধ্যেই মন খারাপ করে অস্ত যেতে শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে তখন কয়েক শ মিলিত সূর্যের উত্তেজনা। বনানীকে কখনোই এতটা দূরের মনে হয়নি যতটা সেদিন মনে হয়েছিল। অবশেষে পৌছলাম...গেটের দারোয়ান প্রায় কোন প্রশ্ন ছাড়াই বলে দিল ক'তলায় যেতে হবে ...সে ব্যাটাও বেশ বিষ্ময়ে ভাবছিল টপ ফোরে আজ কিসের আয়োজন এত বিচিত্র মানুষজনের আগমনে উদ্দেশ্য কি? আমি মুচকি হাসছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম কিভাবে একটি আমন্ত্রণ আমাদের উত্তেজিত বালক বানিয়ে ছাড়ল। তবে আর যাই হোক একটু সভ্য ভব্য হয়ে তো যাওয়া দরকার.. কিন্তু কিসের সভ্য ভব্য....হৃদয়ের আর আন্তরিকতার খোলা দরজা দিয়ে যখন কালপুরুষের বাসায় ঢুকব ঢুকব করছি তখনই এগিয়ে এলেন আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু আমাদের তরূণ কালপুরুষ, নিজেকে আর একলা মনে হল না মনে হল মেঘ বালক আর বালিকাদের টানে এসে গেছি পিটার প্যানের রাজ্যে।

আর মাথায় স্কার্ফ লাগিয়ে আন্দ্রে আগাসি হয়ে ঘরময় ছুটে বেড়াচ্ছে পিটার প্যানদের কনিষ্ঠতম সদস্য প্রাপ্তি। ওকে একবার দেখেই মনে হল মানুষের ভালোবাসার কাছে প্রবল পরাক্রমী ক্যাপ্টেন হুক আর ওকে ছুঁতে পারবেনা। এরপর আর কিভাবে স্থির থাকি একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ধানসিড়ি আর আবু সালেহর পেছনে লুকোচুরি করছে প্রাপ্তি আর আমরা লুকোচুরি বাদ দিয়ে শুরু করলাম ধুম আড্ডা। প্রথমে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানে।

আমাদের সেনাপতির বেলি রোড থেকে আনা যে পিয়াজুরা মন খারাপ করে ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল সেগুলি এবার প্রাণ পাওয়া শুরু করল আর তখনই তারা বোকামী করে ফেলল। দেখতে দেখতে সবশেষ। সুনীল সমুদ্র মোবাইলে বাংলা লেখা নিয়ে যা বলছিলেন বলছিলেন তা মুড়ির সাথে চিবিয়ে খাওয়া শেষ, ধানসিঁড়ি মাত্র বইয়ে পড়া আর নেটে পড়ার নিয়ে কথা শুরু করছিলেন সেটিও বেগুনী ভাজার সাথে সাথে হজম, কৌশিক ভাই এমনিতে বেশি খান না তবে সেদিন মুখে মুড়ি আর চপের সাথে সাথে অনেক কথাই খেয়ে ফেললেন তা বোঝা গেল। এদিকে পিটারপ্যান আমাকে বলছেন কিভাবে তিনি সম্ভাব্য একটা যুদ্ধকে এড়িয়ে গেলেন.....আসল ঘটনা হল যে আমি তাকে বলেছিলাম মোরগ পোলাও খাব এজন্য তিনি বাজারে বেছে বেছে সব মোরগই এনেছেন কোন মুরগী আনেন নি পাছে আমি এটা নিয়ে কোন.....হে.হে.হে....তবে আস্ত মেয়ের জন্য আমার একটু দু:খই হল একটা আস্ত মোরগ (সময় কিন্তু তিন মাস না হলে ......দিমু না) এদিকে সারিয়া আপুর একটু কষ্ট হয়েছে সামনে মজার খাবার আর সেই সাথে একটার পর একটা ফোন কোনটা যে আগে ধরবেন সেটাই বুঝতে পারছিলেন না। আবু সালেহ আর ঝড়ো হাওয়াতো অন্ধকারে একটু হাতসাফ করবেন বলে ভাবছিলেন কিন্তু একি দুর্দৈব কথার মোড় গিয়ে পড়ল তাদের ঘারে।

কিন্তু পিটার প্যান যে শক্তিবলে এত আয়োজন করেছেন তার কথা কিন্তু বলা হয়নি তিনি চুপিসারে এসে এসে আমাদের খাবার আর পানির যোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হাসান ভাইয়ের ফোন । আমি তো কোন কথা শুরু করতে দেবার আগেই জেরা...লেখা বন্ধ করা নিয়ে যাই হোক অবশেষে স্রোত থামল, জানালেন একটু পরে আবার ফোন করবেন। আর তখনই মনে পরে গেল একটু পরে বলছি আর কামুউজার কথা। আতাউর ভাই মনোযোগ দিয়ে সব শুনছিলেন ..হঠাৎ ধানসিঁড়ি একেবারে বুকের সবটা উজার করে দিয়ে আতাউরকে বললেন আড্ডায় যোগ দিন আর দূরে থাকা কেন।

এদিকে প্রাপ্তির আম্মু এবং কৌশিক ভাবি তো তখনই জম্পেস সম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছেন। এমন সময় নতুন সদস্য আরাফাতের.....আগমন আর বরাবরের মতই আমি আর ঝড়ো মুচকি হাসলাম.....পাওয়া গেছে....এইবার বলেন কে কোনটা.... সমস্ত ছাদ জুড়ে শুধু পিটার প্যানদের উড়োউড়ি.....চলবে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।