আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ-4,,;;''-'';;..চেরাপুঞ্জির ঝর্ণা হতে সুরমার শীতলতায়,,;;''-'';;..

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

পূর্বাংশ পড়ুন- Click This Link নদীতে তখন ছোট ছোট ঢেউ দুলছিল, মাঝ নদীতে পাল তোলা নৌকা থেকে শুরু করে লঞ্চগুলো ঢেউয়ের তালে তালে ধেয়ে ধেয়ে চলছে, চলছে মালবাহী লম্বা লম্বা বৈঠাবাওয়া নৌকাগুলোও। লঞ্চটি স্থির হয়ে ছিল, একটা তক্তার মাঝে মাঝে খণ্ড খণ্ড টুকরো কাঠের সংযোগে তৈরী হলো লঞ্চে উঠার সিঁড়ি। বৃষ্টি-কাদায় মাখামাখিতে ছিল দারুন পিচ্ছিল, নদী-আবেগ, নদী-ভয়, বৃষ্টি-পিচ্ছিল সিঁড়ি, ঝড়ের ভয়, সবকিছুর মিশ্রণে লঞ্চ-ইঞ্জিনের মতই বুকের মাঝে একটা মৃদু কাঁপুনি অনুুভব করলাম আমিও। একসময় চড়ে গেলাম লঞ্চে, নীচতলা-উপরতলা ঘুরে ফিরে কিছুই পছন্দ হচ্ছিল না বলে কতর্ৃপক্ষ আমাদের জন্য উপরের ছোট্ট একটা কেবিনের ব্যবস্থা করে দিল, যেখান থেকে নদী দেখা অনেক মজার, চারপাশ উন্মুক্ত। নদীর বুকের সূর্য দেখা, বৃষ্টি দেখা, ঢেউ দেখা, চর দেখা, অন্যান্য নৌকা-লঞ্চগুলোর চলাচল দেখা, দূর পল্লীতে, মাঠে-ঘাটে মানুষের চলাচল, কাজকর্ম দেখা, যাত্রীদের উঠা-নামা দেখা, এতকিছুর অপূর্বতায় ভয়ের কাঁপুনি এখন আনন্দের চাঞ্চল্যতায় রূপ নেয়, এই ভ্রমণেও আম্মুর বিরক্তিকর আরেকটি কাজ যোগ হয়- আমাদের সামলে রাখা; কারণ, বেশ লাফালাফি আর খেলাধুলায় মেতে উঠেছিলাম দু'ভাই মিলে।

শুধু ক্লান্ত হলেই কেবিনে ফিরে আসতাম, বাকী সময় ডকে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি আর নদী ও নদী তীরের প্রকৃতি দেখেই চোখ জুড়ালাম। বানর নিয়ে উঠতে দেখেছিলাম এক বানরওয়ালাকেও। দেখতে দেখতে আর খেলতে খেলতেই পেঁৗছে গেলাম ছাতক, ঠিক সিমেন্ট ফ্যাক্টরীটার পাশ ঘেঁষেই লঞ্চটি এগিয়ে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। ফ্যাক্টরির ভেতরের কার্যক্রম তো দেখা যাচ্ছিল না, তবে বাইরের দিকটা বেশ ভাল লাগছিল, কিভাবে ভেতর থেকে সিমেন্টের বস্তাগুলো বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে করে একটা পেঁচানো মসৃন সিঁড়ি দিয়ে গন্তব্যে পেঁৗছুচ্ছে, নদী-পথই ছিল তখন সিমেন্ট বহনের মাধ্যম, নদী-তীরের ফ্যাক্টরী বলে এখনো হয়তো তাই আছে, লম্বা লম্বা নৌকাগুলো দাঁড়িয়ে থাকতো নীচে আর মাঝি-শ্রমিকরা বস্তাগুলো নেমে আসলেই সাজিয়ে রাখতো, এসব দেখতে দেখতেই দেখি লঞ্চ আমাদের নিয়ে তীরে ঠেকলো। তারপর আর দেখার অবসর ছিল না কারুরই, কিন্তু বাবা আমার হাত ধরে চলছেন আর আমি এই ফাঁকে তখনো দেখেই যাচ্ছি অন্ত্রের মত পেঁচানো ফ্যাক্টরির বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া সব পাইপগুলো।

রিক্শায় সবেমাত্র চড়ে বসলাম, অমনি এমন বিকট শব্দ হলো যে প্রায় পড়েই গিয়েছিলাম, বাবা ধরে ফেলাতে সে যাত্রা রক্ষা, চমকানির শিহরণ কমতেই আশপাশ থেকে জানতে পারলাম যে, কোন কারণে সাইরেণ বেজে উঠেছিল মাত্র। বালক মনের ধুক-পুক নিয়েই চুপচাপ রিকশায় বসে রওয়ানা হয়েছিলাম চেরাপুঞ্জির সারির দিকে। পূর্ব থেকেই বাবা ও চাচা বলে-কয়ে কিছুটা সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, অনেক দীর্ঘ পথ হয়তো হেঁটেই পাড়ি দিতে হতে পারে, কারণ, এলাকাটা এতই প্রত্যন্ত যে রিক্শাও খুব একটা পাওয়া যায় না, পেলেও বেশি দূর চলতে পারে না। যদিও পাহাড়ী পথ নয় তবুও বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ভয়াবহ ভাঙ্গন, যেখানে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা থাকে, আবার শুকনার দিনে একটু কাপড় গুটিয়েও চলা যায় বেশ। পাহাড়ী পথ অথবা পর্বত পাদদেশে এমনটিই হওয়া স্বাভাবিক, পর্বত মালার এখানে ওখানে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন ঝর্ণাগুলো থেকে জন্ম হয় পাহাড়ী নদী বা গাঙ্গের, স্বাভাবিকতায় তো চলে যায় কোন রকম, ঢল নামলেই হয় মুশকিল, শুরু হয় ভাঙ্গনের খেলা সরকারের বানানো রাস্তাগুলোতে।

বেশ কিছুটা পথ চলতে পেরেছিলাম রিকশা যোগে, তারপরই শুরু হলো পায়ে চলা পথ, দীর্ঘ পথের ক্লান্তি-ভয়ে বুকটা দুরু দুরু করছিল, কিন্তু যখনি সামনের দিকে তাকাই একটা অজানা শিহরণ খেলে যায় বুকের ক্ষুদ্রতায়, আকাশের মেঘেরও অনেক উপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে চেরাপুঞ্জি মেঘের মতই কালো বর্ণ নিয়ে, আমাদেরই সম্মুখে। যখনি পর্বতমালার দিকে তাকাই, মনে হয় এই তো আর কিছু দূর এগুলেই হয়তো আমাদের সামনে কোন পথ থাকবে না, দেখবো পেঁৗছে গেছি পাদদেশে, কিন্তু পথের দিকে চোখ পড়লেই ছানাবড়া, অনেক বিস্তৃত সীমানা, পর্বত-পথের দূরত্বের এই টানাপোড়নে কখনো কখনো মনে হয় বুঝি চেরাপুঞ্জি উঠে এসেছে আমাদেরই মাথার উপর। ঠিক মনে করতে পারছি না এখন যে, কোন্ পর্যন্ত চলেছিলাম রিকশায়, হয়তো বাংলা বাজার কিংবা বোগলা বাজার পর্যন্ত হবে। মজার ব্যাপার ছিল যে, খরস্রোতা ক্ষুদ্র পাহাড়ী নদী বা গাঙ্গের সাথেও আমার সাক্ষাত ছিল সেই প্রথম, পথের প্রায় অনেকটাই 'গঙ্গী' (সে অঞ্চলে গাঙ্গের কোমল রূপ) চলেছিল আমাদের পাশাপাশি আর আমরা চলছিলাম স্রোতের বিপরীতে, পথের ক্লান্তি ভুলে। রিক্শা থেকে নামতেই সন্ধ্যা আমাদের ঘিরে ধরলো, ছেলে বেলার চোখের সীমীত জ্যোতি আর অন্ধকারের ভয় বুকে নিয়ে অনেকটা অন্ধের মতই বাবার হাত ধরে পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম, রাতের অাঁধার মাত্র নামলো, কিন্তু রাস্তার আশ-পাশে তাকানোর মত সাহস ততক্ষণে আমাকে ছেড়ে বহুদূর দেশে বেড়াতে চলে গেছে, ছোট ভাইটির অবস্থাও তদ্রূপ।

অনেকটা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে পথচলার মত করেই চলতে চলতে একসময় অনুভব করলাম যে, বাবা-চাচাদের চলার গতি কমতে কমতে দাঁড়িয়ে গেল, চোখ তুলে ভাল করে চারদিক দেখার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলাম যে, বাড়ীর উঠোনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই। করাঘাত করতে থাকলেন বাড়ীর মালিক মানে আমাদের সফরের সাথী চাচা, যিনি আমাদেরকে আনতে বাবার সঙ্গী হয়েছিলেন আসা-যাওয়ায়, কিছু পরে কেরোসিন-প্রদীপ হাতে দরজা খুলে ধরলেন মায়ের বয়সী একজন ভদ্রমহিলা, চাচা জানিয়ে দিলেন- ইনি তোমার চাচী (উল্লেখ্য যে, এই চাচা বাবার বন্ধু, তাই আগে কখনো দেখিনি ওনাদের)। (চলবে)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।