আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ-3,,;;''-'';;..চেরাপুঞ্জির ঝর্ণা হতে সুরমার শীতলতায়,,;;''-'';;..

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

পূর্বাংশ পড়ুন- Click This Link ছন্দ ঘুম পাড়ায়, পতন জাগিয়ে তোলে, একটানা ঝিক্-ঝিক্, ঝিক্-ঝিক্, তারপর হঠাৎ কূ... এবং ছন্দপতন। যখন সোবহে সাদিক, তখন ঘুম ঢুলু ঢুলু ঝাঁকুনি থামিয়ে কোন এক স্টেশনে স্থির হলো আমাদের নিয়ে বিরতি-বহমান রেল নামক যান্ত্রিক পোকাটি। বাংলার গাঢ় সবুজ-অাঁধারের ওপার হতে উঁকি দেয়া ভোরের রঙ সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর। সারাদিনে আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল পল্লীগাঁয়ের ভোর, যেখানে থাকতো লাল আভা, অনেক বড় আকারের সূর্যিমামা, পাখিদের কিচির-মিচির, নিঝুম প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন শোনা, এইসব। নানার প্রিয় ছিলাম খুব, তাই নানা-নানীর আশ-পাশেই থাকতাম, ভোরের ঘুম ভাঙ্গতো নানার দেয়া ফজরের আযান শুনে।

তারপর ফজরের সালাতে উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত শুনে শুনে ত্রিশ পারার বেশ ক'টি সূরা আমার না পড়েই মুখস্থ হয়ে যায়। শুনতে খুব ভাল লাগতো সূরা আল-বুরূজ এবং সূরা আল-বাইয়্যেনাহ্। ছেলেবেলার অন্ধকার নামক জুজু-বুড়ির ভয় উপেক্ষা করে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখতে প্রায়ই বেরিয়ে পড়তাম আঁধার থাকতে থাকতেই। বাড়ীর দহজিলে ছিল একটি সিমেন্ট-পাকা ছাদ-দেয়ালহীন সালাতের স্থান, যাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলে 'নামাযের টঙ', সেখানটার কিনারে বসে সবুজ দুর্বার ডগায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশির-জলে পা ডুবিয়ে অনড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, দেখতাম অন্ধকারের বিদায়, আলোর আগমন, ভিন গাঁয়ের ওপারের কোন মায়াবী জগত থেকে কিভাবে দৃষ্টিকে, অনুভবকে ফাঁকি দিয়ে অতিধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে একটি আলোক বিন্দু। তারপর রূপ নেয় একটি পরিপূর্ণ গোলকের, লাল টকটকে, খুব ভোরেই শুধু খালি চোখে যাকে প্রাণভরে দেখা যায়, পরবর্তী উত্তাপে-উজ্জ্বলে তো চোখ রাখা দায়।

ভোরের মিষ্টি বাতাস এতটাই মধুর লাগতো কখনো কখনো যে, নাস্তার কথাই ভুলে যেতাম। শুনতাম তুলাগাছটির শীর্ষ ডালে বসে থাকা বাজের হুংকার, কোকিলের মুখে রক্ত না আসা পর্যন্ত কুহু কুহু (যদিও এটা বাচ্চাদের বানানো একটা গল্প) আর বাংলার ভোরের ঘুম ভাঙ্গানো অজস্র রকমের পাখালীর প্রভাতী-সংগীত; কি যে ভাল লাগতো। মজা পেতাম দামালদের গত রাতে পেতে রাখা মাছ ধরা জালে সাপেদের কারাজীবন দেখে, বিশাক্ত আর বক্রতাপূর্ণ সাপগুলোকে তখন অনেক অসহায় মনে হয় যখন ধরা পড়ে, দুষ্টোগুলো ওদের লেজ ধরে সেকি মজার খেলা শুরু করে দেয়, দূর থেকে বসে বসে দেখতাম যতক্ষণ না সূর্য তাপ ছড়িয়ে তার প্রভাব প্রতিপত্তির কথা জানান দিত। স্টেশন মানেই কুলিদের হাঁক-ডাক, যাত্রীদের ঊচ্চস্বরের কথা-বার্তা, পায়ের শব্দ, মালপত্রের টানাটানি, ঘন্টাধ্বনি, হৈচৈ এর মাঝে আবার হঠাৎ শোনা যায় কূ... এবং হেলে-দুলে অলস পথিকের মত শুরু করে পথচলা। একজন হকারকে দেখলাম ময়ূরপুচ্ছ বিক্রি করছে, খুবই আপ্লুত হলাম দেখে, এই প্রথম পরিপূর্ণ ময়ূরপুচ্ছ দেখি কি না।

খুব শিশুকালে মায়ের কোলে চড়ে চিড়িয়াদের দেখতে গিয়েছিলাম, এতটাই ছোট ছিলাম যে, গিয়েছি শুধু এতটুকুই মনে আছে অথবা সবার কাছ থেকে শুনতে শুনতে এমনটি মনে হয়ে গিয়েছিল, হয়তো। মক্তবে যে কয়দিন যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, দেখেছি শিক্ষার্থীরা কুরআন শরীফের কোন পর্যন্ত পড়েছে তা চিহ্নিত করতে ময়ূরপুচ্ছের একটা অংশ রেখে দিচ্ছে, এ নিয়ে কত মজার মজার গল্প শুনতাম পিচ্ছিবেলার বন্ধুদের কাছ থেকে, মনে হলে হাসি পায় খুব। তো সেই পিচ্ছিমনের আবেগ নিয়েই একটা ময়ূরপুচ্ছ কেনার আগ্রহ দেখালাম, আম্মু ধমকটা দিতে একেবারেই সময় নেননি, তবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, পরে কেনা যাবে; এখন নয়। এই থামে তো আবার চলতে শুরু করে, ভিড় নেই তো একটু পরেই যেন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে, এভাবে কি আর সৌন্দর্য গেলা যায়? ত্যক্ত-বিরক্তিতে মন-আর শরীর যেন একটু একটু বিষিয়ে উঠতে লাগলো। তবুও যখনি দেখি একটা পাহাড় এগিয়ে আসছে, সব ভুলে মনটা যেন ট্রেন ছেড়ে ঝাঁপ দিতে চায় ঐ পাড়াড়ের বুকে।

কারণ, সেই ছিল আমার প্রথম পাহাড় দেখা, ইতিপূর্বে যা দেখেছি তার মধ্যে ঢাকায় আসা-যাওয়ার পথে কুমিল্লার লালমাইয়ের লালটিলাগুলো দূর থেকে দিগন্তের মতই চেয়ে চেয়ে দেখা আর ক্লাস ওয়ান-টু এর বইয়ে দেখা সাদা-কালো আঁকা ছবি। শুধু কি পাহাড়, পাহাড়-টিলাগুলো জুড়ে সারি সারি চা বাগানগুলো যেন টিভি সিরিয়ালের মতই ট্রেনের জানালার ফাঁক গলে চলে যাচ্ছে পরবর্তী দৃশ্যপটে। রাতের আকাশে তারা ছিল কিনা এখন মনে করতে পারছি না, কিন্তু দিনের কিছুটা এবং সিলেট সীমান্তের কিছুটা পার হওয়ার পর আকাশ যেন বেঁকে বসলো, দারুন থমথমে ভাব, বৃষ্টি ঝরাবেই ঝরাবে। বৃষ্টি ভেজা ট্রেন যখন আমাদের নিয়ে সিলেট পেঁৗছুলো, তখন মধ্যাহ্ন এক-দু' পা করে দুপুরের সীমানায় যাচ্ছে মাত্র। ট্রেনের দীর্ঘ পথে খাওয়া-দাওয়ায় তেমন বহুলতা ও রুচিবিচার ছিল না বলে সবারই ক্ষুধা তখন গলা ছুঁই ছুঁই করছিল, তাই আপাততঃ হোটেলই গন্তব্য ঠিক হলো।

ভোজন পর্বে ইতি টেনে একটু হাত-পা ঝেড়ে নিলাম কংক্রিটের রাস্তায়, গিরাগুলো মুড়ি ভাজার মত করে ফুটিয়ে নিতে ভুলিনি কিন্তু। ঠাসাঠাসি করেই যেন বসতে হলো আমাকে মাইক্রোটির পেছনের সীটটাতে, ঐ যে শুরুতে বলেছিলাম, শরীরে এতটা বৃদ্ধি ঘটেনি যে পুরো একটা সীট দখল করতে পারবো, আবার এতটাই ছোট নই যে একেবারে কোলে উঠে বসতে হবে। আহা! ঐ যে দেখতে পাচ্ছি আমার প্রিয় আরেকটি অনুভব, নদী! সুরমার জল দেখা যাচ্ছে দূর থেকে। আমার ভালবাসার একটা ভাল অংশ দখল করে আছে নদী। আমাদের অঞ্চলে নদী নেই, যে নেই তার জন্যই হয়তো মানব মনের আকুলতা বেশী থাকে, তাই নদীর সাথে আমার প্রথম এই দৃষ্টি বিনিময়ে অনেক তোলপাড় শুনতে পেলাম বুকের সীমান্ত থেকে।

বইয়ে পড়া সুরমা, মনে মনে যার ছবি এঁকে রেখেছি কত রঙে, সে কি না আমার সামনেই, একটু পরেই দেখা হবে দুজনায়, আবেগে আনন্দে কম্পন অনুভূত হলো হাতে হাত ধরা দু'ভাইয়ের হাতেই, আমি আর মাসুদ (আমার ছোটভাই) হয়তো এদিকের নদী আবেগী আর ওদিকের নদী ভীতির। জ্ঞান, বুঝ আর ভাবনার প্রকাশই তো আমাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া । (চলবে) পরাংশ পড়ুন- Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।