আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাই বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা!

কিংশুক কল্যাণ সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য ২০১২-১৩ সেশনে আবেদন করে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তার রোল নম্বর ছিল ১১২৩৪২। মেধা তালিকায় স্থান ছিল ৭৯০১। লিখিত পরীক্ষায় তিনি ৫৪ দশমিক ২৫ নম্বর পান। কিন্তু সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগ না পেয়ে কিংশুক হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে আবেদন করেন।

হলি ফ্যামিলির ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের গত বছরের তালিকায় কিংশুকের নামও আছে। দেখা যায়, মেধা তালিকায় কিংশুকের চেয়ে কম নম্বর পাওয়া ৬৬ জনকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি করেছে। কিংশুকের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, গত বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভর্তি হওয়ার জন্য গেলে হলি ফ্যামিলি কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, ভর্তি শেষ। আসন খালি নেই। এরপরে আবার যোগাযোগ করলে ভর্তির জন্য ২৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়।

কিন্তু কিংশুকের বাবার পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে কিংশুক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। বিষয়টি নিয়ে হলি ফ্যামিলি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, কিংশুক ভর্তি হওয়ার যোগ্য ছিলেন। তবে ভর্তির জন্য বিপুল টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এটি একটি গত বছরের ঘটনামাত্র।

এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, সন্তানকে নিয়ে অনেক বাবা-মা স্বপ্ন দেখেন সন্তান চিকিৎসক হবেন। এ জন্য প্রস্তুতিও থাকে। কিন্তু এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রায় সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজই অনেকটা 'দোকান' খুলে বসেছেন। ভর্তি করতে গেলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা চান।

কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে কতজন অভিভাবক ভর্তি করতে পারেন। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখিও হচ্ছে। কিন্তু যারা এ অবস্থার প্রতিকার করবে অর্থাৎ সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর বিষয়টি নিয়ে কোনো কথাও বলে না কোনো দায়ও নিতে চায় না।  

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আগামী ৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

২২টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা দুই হাজার ৮১১টি, আর ৫৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন চার হাজার ২৪৫টি। তাছাড়া নয়টি সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগে আসনসংখ্যা ৫৬৭টি। এ আসনগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। তবে প্রতিযোগিতা হলেও ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র সাড়ে ১০ পেয়েও ভর্তি হওয়ার নজির রয়েছে।  

সংশ্লিষ্টদের মতে, এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে নীতিমালা অমান্য করে এবং টাকার জোরে।

জানা গেছে, আদদ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি প্রায় ১২ লাখ, মেডিকেল কলেজ অব ওমেন উত্তরার ভর্তি ফি ১৩ লাখ, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি প্রায় ১৩ লাখ টাকা, গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি ১৪ লাখ টাকা। ধানমন্ডিতে অবস্থিত পপুলার মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি ২৫ লাখ টাকা। উত্তরা মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি সাড়ে ১২ লাখ টাকা। ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০ লাখ টাকা। ধানমন্ডির স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্স বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি ফি তিন থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি বাবদ ১৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ১২ লাখ টাকা, হলি ফ্যামিলিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ভর্তি ফি নির্ধারিত রয়েছে।

এসব মোটা অংকের ভর্তি ফির পাশাপাশি রয়েছে সেশন ফি। শিক্ষার্থীদের থেকে প্রতি সেশনে ১০ থেকে ১২ হাজার সেশন ফি নেওয়া হয়।  

মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভর্তি ফি প্রতিবছরই বাড়ানো হয়। এবারও বেপরোয়া হারে ভর্তি ফি আদায়ের ফন্দি আঁটছেন অনেক চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবসায়ী। গত বছর কোনো কোনো কলেজে ঘোষিত ভর্তি ফি ছিল ১৮ লাখ টাকা।

উন্নয়ন ফি, ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, টিউশন ফি (মাসিক), মেডিকেল টেস্ট ফি, ল্যাবরেটরি চার্জ (মাসিক), বিশেষ ইংরেজি কোর্স ফি, পরিচয়পত্র, লাইব্রেরি কার্ড, নিরাপত্তা ফি, এসব কথা বলে এই অর্থ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তার দায়হীনতার কারণে বেপরোয়া ভর্তি ফি আদায়ের সুযোগ পাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার নামে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।  

এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবদুল হান্নান বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা অনুসরণ করার নির্দেশনা সবাইকে দেওয়া হয়েছে।

তবে ভর্তি ফি মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর ঠিক করে না।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.