আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন"

♪ একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়াল... শীষ দিয়ে গান গায় ধূসর খেয়ালে...♪
এক. মেয়েটার নাম অস্তিত্ব। বয়স ৯ বছর। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সে তার বাবামাকে ঝগড়া করতে দেখে আসছে। এমন দিন খুব কমই আছে তারা ঝগড়া করে না। একজন আরেক জনকে সহ্যই করতে পারে না।

ছোট তুচ্ছ বিষয় নিয়েও চলে তুমুল ঝগড়া। বাবা মা যখন ঝগড়া করে তখন অস্তিত্বর খুব কষ্ট লাগে। তখন সে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে কান্না করে। তার ধারনা বাবা মা দুজন দুজনকে অপছন্দ করলেও শুধু তার কারনেই এক সাথে থাকছে। মাঝে মাঝে তার মরে যেতে ইচ্ছা করে! অস্তির এক বান্ধবী লুবনার কাছে শুনেছিল হারপিক খেলে নাকি মানুষ মারা যায়।

তাই আগে যখন সে হারপিকের বোতলের দিকে তাকাত তখন তার কেমন জানি ভয় ভয় করত, কিন্তু এখন আর তার তেমন ভয় করে না! দুই. বাসা থেকে স্কুলটা দুরেই। গ্রামের রাস্তায় কোনো গাড়িও চলে না। মাঝে মাঝে নিরিবিলি রাস্তাতে একা একা স্কুলে যেতে আসতে সাথীর ভয় করে। সামনে তার জেএসসি পরীক্ষা। ক্লাস-কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।

রাস্তায় এলাকার বকাঠে ছেলেরা খুব বিরক্ত করে। ওকে দেখলেই ওরা শিস দেয়, রাস্তা আগলে দাঁড়ায়, আজেবাজে কথা বলে। সাথীর চোখে পানি চলে আসে। বাড়ি ফিরে মাকে বলে আর শুধু কাঁদে! মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে সে যে পাপ করেছে, একদিন আত্মহত্যা করে তার প্রায়শ্চিত্ত করবে! আচ্ছা সে মরে গেলে কি তার মা খুব কষ্ট পাবে? তিন. শিপলু ঠিক করে রেখেছে একদিন সে রেললাইনে শুয়ে থাকবে, ট্রেন এসে তার উপর দিয়ে চলে যাবে! ছোট বেলায় তার বাবা-মা প্রায়ই বলতেন যে, শিপলুকে নাকি তারা হাসপাতালের বারান্দায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন! কথাটা শুনে সে কান্না শুরু করে দিত। তখন বাবা-মা খুব হাসাহাসি করতেন।

ওর কান্না দেখে মা বলতেন যে, তারা মজা করেছেন! আশ্বস্ত হয়ে সে তখন চোখ মুছে ফেলত। এই তো কয়েকদিন আগে ক্লাস সেভেনের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হল। সে শেষ পরীক্ষাটা না দিয়ে বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতে গিয়েছিল। এই খবরটা তার বাবার কান পর্যন্ত পৌছুতে সময় লাগে নি। সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফেরার পর তার বাবা তাকে বেদম পিটিয়েছিলেন।

তার বাবার প্রচন্ড রাগ। রাগের সময় অনেক বকুনিও দেন। বাবার কাছে মার আর বকুনি খেতে খেতে তার অভ্যাস হয়ে গেছে! কিন্তু সমস্যা হল, সেদিন বকুনি দেওয়ার সময় তার বাবা তাকে কয়েকবার 'শালা' বলে গালি দিয়েছেন! তখন থেকেই শিপলুর ধারনা সে আসলেই তার বাবামায়ের সন্তান না! তাকে তারা সত্যি সত্যি কুঁড়িয়েই পেয়েছেন। সন্তানকে বাবা কখনই 'শালা' বলতে পারেন না। আর ঠিক সেই দিন থেকেই তার মনোজগৎ উল্টা-পাল্টা হয়ে গেল।

বিঃ দ্রঃ শেষ কাহিনীটার মত ঠিক এমন একটা ঘটনা পত্রিকায় পড়ার পর পরিচিত একজন আমার সাথে এমন কিছু শেয়ার করেছিল। আর 'কুড়িয়ে পাওয়া কাহিনী' শুনে শুনে মন খারাপ করা এমন এক পিচ্চির খাতাতে তার নিজের কিছু লেখা পড়ে খুব অবাক হয়েছিলাম! এত অল্প বয়সে তার মনোজগৎ এর কত বড় পরিবর্তন হয়েছে দেখে শিউরে উঠেছিলাম!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।