আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসরাইল,ইরান,ইন্ডিয়া ও আমেরিকার মুসলমানদের উপর অত্যাচার এর কারন এবং একজন মুসলিম হিসেবে কী করনীয়

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী আজ যখন একদিকে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আল্লাহ্‌র দ্বীন কায়েমের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে এবং মুসলিম উম্মাহ আবারও তাওহীদের সেই বিপ্লবী ঘোষণা ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ কে নিজেদের জীবনের যাবতীয় ব্যাপারে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে নিতে শুরু করেছে এবং এই ইসলামী আক্কিদা থেকে উদ্ভূত ইসলামি জীবন বেবস্থাকে পুনরায় দুনিয়ার জমিনে পুনরুজ্জীবিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনিই আমরা দেখতে পাই কাফের মুশরিকদের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। তারা সত্য সঠিক জীবন বেবস্থা ইসলামকে ঠেকানোর জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। বুদ্ধিভিত্তিক আগ্রাসন থেকে শুরু করে সামরিক আগ্রাসন কিছুই তারা বাদ দিচ্ছে না। পশ্চিমাদের গবেষণা সংস্থাগুলো (Think Tank) ভলিউমের পর ভলিউম রিপোর্ট সরবরাহও করছে তাদের সরকারগুলোকে ইসলামের উথান রোধ করার পরামর্শ দিয়ে। এমনকি পশ্চিমা রাষ্ট্র প্রধানরাও ইসলামী জীবন বেবস্থার পুনরুত্থানে ভীত হয়ে পরেছে এবং তাদের মুখ থেকেই তা প্রকাশ পাচ্ছে।

স্মরণ করে দেখতে পারেন আল্লাহ্‌র দুষমন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশের ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসের সেই ভাষণ যাতে সে বলেছিল, “ উগ্রপন্থীরা মনে করে যে তারা যদি কোন একটা মুসলিম দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খিলাফত কায়েম করতে পারে তবে তাদের চারপাশে মুসলিম জনগণ সমবেত হবে আর তারপর তারা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যপন্থি (এখানে মধ্যপন্থি বলে বুশ কিন্তু পশ্চিমাদের দালাল শাসক শ্রেণীকেই বুঝাচ্ছে) সরকারগুলকে উৎখাত করে স্পেন থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিপ্লবী ইসলামী সাম্রাজ্য কায়েম করতে চায়। যাকে তারা কিনা বলে খিলাফত। কিন্তু আমিসহ আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্টই তা হতে দেবে না”। আজ যখন কাফেররা খিলাফতের উথানের ভয়ে ভীত হয়ে দেশে দেশে তাদের পদলেহনকারি দালাল শাসকশ্রেণীকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ঠিক তখনিই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি একশ্রেণীর ভাড়াটে আলেমও এই দালাল শাসকদের টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আজ আমরা এই বিষয়টাই আলোচনা করব।

এ আর্টিকেলটি হয়তো অনেকের মনঃকষ্টের কারণ হতে পারে কিন্তু সত্য প্রকাশ না করে তো উপায় নেই। আর তাই কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাচ্ছি ইনশাল্লাহ। সালফে সালেহিন ও মুজতাহিদ ইমামগণের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী শাসক যদি কুফর বুওাহ করে অর্থাৎ সে যদি আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মানব রচিত আইন দ্বারা বিচার ফায়সালা শুরু করে দেয় অথবা আল্লাহর আইনের স্থলে নিজে আইন তৈরি করে অথবা অন্য কোন মানুষের রচিত আইন বাস্তবায়ন করে তবে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং তাকে অপসারণ করা ফরয । কিন্তু তার পরও কিছু সংখ্যক আলেম নামধারী মুনাফেক তাগুত শাসকদেরকে বাঁচানোর জন্নে রাসুল(স) এর হাদিসের চরম অপবেখ্যা করছে। তারা ঐ সমস্ত হাদিস, যে হাদিসগুলুতে শাসকের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এমনকি তারা যদি খারাপও হয় ব্যাবহার করে বলতে চায় যে বর্তমান মুসলিম দেশসমূহের শাসকদেরও মানতে হবে।

তাদের অপসারণ করা যাবে না । এমনকি তারা বলে এদের মানা নাকি ফরয। (আস্তাগফিরুল্লাহ)। অথচ রাসুল(স) এর হাদিসে যে সমস্ত শাসকদের মানতে বলা হয়েছে তারা হলেন ইমাম বা খলিফা । এবং এই খলিফা যদি বেক্তিগতভাবে ফাসেক ও হয়ে যান এবং তার মধ্যে যদি এমন কিছু প্রকাশ পায় যা কিনা তাকওয়ার পরিপন্থী তবুও তাকে মানতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি মুসলমানদের সামস্টিক জীবনে শারিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করেন।

আর এটা একেবারে স্পষ্ট যে রাসুল(স) এর ‘শাসক এবং শাসন’ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস একত্র করলে এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে ইসলাম একমাত্র খলীফাকেই মুসলমানদের শাসক এবং একমাত্র বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে । এবং রাসুলাল্লাহ(স) এটা উম্মাতকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে উনার পর কোন নাবী নেই কিন্তু ধারাবাহিকভাবে একের পর এক খালিফাহ আসবেন যাদের আনুগত্য করতে হবে। নিম্নের হাদিসটি দেখুন- আবু হাযিমের বরাত দিয়ে ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, “আমি আবু হুরাইরার(রা)সাথে ৫ বছর অতিবাহিত করেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি, রাসুল(স) বলেছেন, “বানী ইসরাইলকে শাসন করতেন নবীগণ। যখন একজন নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তার স্থলে আরেকজন নবী আসতেন, কিন্তু আমার পর আর কোন নবী নেই, শীঘ্রই অসংখ্য খলিফা আসবেন। তারা(সাহাবাগন) জ্ঞিজ্ঞেস করলেন, তখন আপনি আমাদের কি করতে আদেশ করেন? তিনি(স)বলেন, তোমরা একজনের পর একজনের বায়াত পূর্ণ করবে, তাদের হক আদায় করবে।

অবশ্যই আল্লাহ্‌ তাদেরকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্তের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন। ”(সহি বুখারি ও সহি মুসলিম) অতএব ভালো করে দেখে নিন যে রাসুল(স) স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন যে নবুয়াত পরে আল্লাহ(সুওতা) খিলাফতকে মানব জাতির দেখাশুনা করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। এবং খলীফারাই হলেন আল্লাহ্‌ ও তার রাসুল(স)কতৄক বৈধ একমাত্র শাসক যিনি আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের(স) প্রতিনিথি হয়ে কোরান ও সুন্নাহ মোতাবেক মুসলমানদের সামস্টিক জীবন পরিচালনা করবেন। সুতরাং একমাত্র খলীফারাই হলেন ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের বৈধ শাসক। তবে এরপরও দেখা যায় যে কাফের মুশরিকদের দালালদের অর্থ সম্পদে লালিত পালিত ঐসব ভাড়াটে সরকারি আলেমরা এটা বলে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায় যে হাদিসে ইমাম বা আমির বলা হয়েছে।

সুতরাং আমাদের এখনকার রাষ্ট্র প্রধানরাও তো আমীর। তাহলে তাদের আমরা মানব না কেন? এর উত্তরে আমরা বলব যে ওহে মূর্খের দল তোমরা কি জানো না যে শুধুমাত্রও আভিধানিক অর্থের উপর ভিত্তি করে কোন মাসলা সম্পর্কে রায় দেয়া যায় না? যেমন সালাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে দুয়া করা কিন্তু শরিয়াতের পরিভাষায় সালাহ শব্দের মানে হোল সুনিদ্রিস্ট কিছু কাজ সম্পাদন করা তাকবীরে তাহরিমা থেকে শুরু করে সালাম ফেরানো পর্যন্ত। আবার যেমন জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হোল সরবচ্চ চেষ্টা সাধনা করা অথচ শারিয়াতের পরিভাষায় জিহাদের মানে হোল আললল্লাহ্‌র দ্বীনকে বুলন্দ করার উদ্দেশে কাফের মুশ্রেকদের সাথে সশস্ত্র লড়াই। এরকম আরও অসংখ্য উধাহরন রয়েছে যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় শরিয়াত প্রণেতা অর্থাৎ আল্লাহ্‌(সুওতা) শব্দের আভিধানিক নয় বরং পারিভাষিক দিকটিই নির্দেশ করেছেন। আমি একটি হাদিস উল্লেখ করে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই কেননা যে হাদিসটি আমি এখানে উল্লেখ করব সেটি আমাদের সকলেরই জানা আছে, তাই বোঝাটাও সহজ হবে ইনশাল্লাহ।

রাসুল(স)বলেছেন, ”ইলিম অর্জন করা প্রত্যেকের ওপর ফরয”। কিন্তু কথা হোল কোন ধরনের ইলিম? এখানে যদি আমরা ইলিম শব্দের আভিধানিক অর্থটি গ্রহণ করি তাহলে এর মানে হবে সব ধরণের ইলিম অর্জন করাটা আমাদের ওপর ফরয। অর্থাৎ সবাইকেই এখন পৃথিবীর যাবতীয় বিদ্যা অর্জন করতে হবে। এর মানে হোল সকল মুস্লিমকেই এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারি, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি যাবতীয় বিদ্যা অর্জন করতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটি কি তাই? মোটেও না।

বরং সালফে সালেহিন থেকে শুরু করে আইম্মায়ে মুজতাহিদিন সকলেই এই হাদিসের মধ্যে উল্লেখিত ইলিম বলতে বুঝেছেন ‘আল মা’লুম মিনাদ দ্বীন বি-জরুরাহ’ অর্থাৎ জরুরাতে দ্বীন এর মানে হোল একজন মুসলমানকে শরিয়াত অনুযায়ী জীবন যাপন করার জন্য যতটুকু দ্বীনী জ্ঞেন অর্জন করা দরকার তাকে অবশ্যই ততটুকু জ্ঞেন অর্জন করতে হবে নুন্নতমভাবে। অতএব যারা হাদিসে উল্লেখিত আমীর বা ইমাম বলে যে কোন আমির বা ইমাম বুঝাতে চায় তারা হয়ত মূর্খ অথবা তারা কাফেরদের দালাল যারা কিনা বর্তমান মুসলিম দেশসমূহের তাগুত শাসকগোষ্ঠীর গদি বাচাতে ব্যস্ত রয়েছে এবং ঐ সমস্ত আল্লাহদ্রোহি শাসকগোষ্ঠীর চাহিদা মোতাবেক ফতওয়া ও সরবরাহ করে চলেছে। অর্থাৎ এটি আমাদের কাছে এটি স্পষ্ট হয়ে গেল যে হাদিসের মধ্যে উল্লেখিত আমির বা ইমাম বলতে যেকোনো শাসক নয় বরং এটি শুধমাত্র মুসলিমদের আমিরুল মুমেনিন বা খলিফাতুল মুস্লেমিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাকে কোরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন করার জন্নে বায়াত দেয়া হয়েছে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়সমূহ আল্লাহ্‌র কিতাব ও রাসুলের(স) সুন্নাহ অনুযায়ী শাশন করবেন ততক্ষণ মুসলমানরা তাকে মানতে বাধ্য থাকবেন এমনকি তিনি যদি বেক্তিগত জীবনে তাকওয়ার পরিপন্থী কর্ম করে থাকেন। হাদিসে উল্লেখিত খারাপ শাসকের মানে এটাই।

এখন আমরা দ্বিতীয় সংশয়টির দিকে নজর দিবো ইনশাল্লাহ যাকিনা এসব ভাড়াটে আলেমরা ব্যাপকভাবে ছড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে হাদিসের অপবেখ্যা করার মাধ্যমে্। আর তাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্নও ইসলামিক সেন্টারগুলোকেও একাজে তারা বেশ ভালোভাবেই ব্যাবহার করছে। তারা বলে থাকে যে শাসককে অপসারণ করা যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সালাত কায়েম রাখে বা সালাত পড়তে থাকে। তাদের দলিল হোল নিম্নোক্ত হাদিসগুল- রাসুল(স)বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে এমন সব লোকও শাসন চালাবে যাদের অনেক কথাকে তোমরা মারুফ ও অনেক কথাকে মুনকার পাবে। এ ক্ষেত্রে যে বেক্তি তাদের মুনকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, সে দা্যমুক্ত হয়ে গেছে।

আর যে বেক্তি তা অপছন্দ করেছে সেও বেঁচে গেছে। কিন্তু যে বেক্তি তাতে সন্তুষ্ট হয়েছে এবং তার অনুসরণ করেছে সে পাকড়াও হবে”। সাহাবাগন জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে এ ধরনের শাসকের বিরুদ্ধে আমারা যুদ্ধ করব না?” নবি(স) জবাব দিলেনঃ “না” “যতদিন তারা সালাত পড়তে থাকবে” (মুসলিম শরীফ)। আরেকটি হাদিসে রাসুল(স) বলেছেন, “তোমাদের নিকৃষ্টতম শাসক হোল যারা তোমাদের ঘৃণা করে এবং তোমরাও তাদের ঘৃণা করো, তোমরা তাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকো এবং তারাও তোমাদের প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকে। সাহাবাগন আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ(স) যখন এ অবস্থার সৃষ্টি হবে তখন কি তাদের মোকাবেলার জন্য আমরা মাথা তুলে দাঁড়াব না? তিনি(স) জবাব দিলেনঃ না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখে, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখে (মুসলিম শরীফ)।

এখানে সালাত পড়া এবং কায়েম রাখা বলতে আসলে কি বোঝানো হয়েছে সেটা বুঝা দরকার। এখানে মূলত সালাত পরা এবং কায়েম রাখার ব্যাপারটি আসলে প্রতীকী অর্থে বোঝানো হয়েছে। মূলত এর অর্থ হোল সামস্টিক জীবনে ইসলামী শাসন কায়েম রাখা। কেননা খলীফাকে বায়াত দেয়া হয় এই শর্তে যে যতক্ষণ তিনি আল্লাহ্‌র কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন করবেন ততক্ষণ তাকে মান্য করা হবে আর যদি তিনি কিতাব ও সুন্নাহ বাদ দিয়ে মানব রচিত আইন দ্বারা শাসন করেন তবে তার আনুগত্তের প্রশ্নই আসে না। আর খলিফাকে তো বায়াত দেয়া হয় সম্পূর্ণ ইসলাম বাস্তবায়ন করার জন্য।

শুধুমাত্র সালাত পরার জন্য অথবা সালাত কায়েম রাখার জন্য তো খলিফাকে বায়াত দেয়া হয় না। আর একথা তো সবার জানা। সুতরাং হাদিসে উল্লেখিত সালাত পড়া এবং সালাত কায়েম করার মানে হোল ইসলামী আইন সমাজে বাস্তবায়ন করা এবং তা কায়েম রাখা। আর এটি আরবি ভাষার একটি মাধুর্য যে একটি বেবস্থার কোন একটি উল্লেখযোগ্য দিকের উল্লেখ করে মুলত ঐ সমগ্র বেবস্থাটির দিকেই নির্দেশ করা হয়। আরবি ভাষার বালাগাত ও ফাসাহাত (অলঙ্কারশাস্ত্র) সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তাদের এটি অজানা থাকার কথা নয়।

এ ব্যাপারে আরও কয়েকটি উধাহরন পেশ করছি। আশা করি এতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন কোরআন মাজিদের সূরা নিসার ৯২ নাম্বার আয়াতে, ভুল করে যদি কেউ কাউকে হত্যা করে ফেলে তাহলে এর কাফফারা কিভাবে দিতে হবে তার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। আর কাফফারাগুলোর মধ্যে একটি হোল দাস মুক্ত করা। কিন্তু আল্লাহ্‌ (সুওতা) এই আয়াতে দাস শব্দটি উল্লেখ করেননি।

বরং তিনি বলেছেন, “ফা তাহরিরু রাকাবাতিন’’ অর্থাৎ “ঘাড় মুক্ত করে দেও”। এখানে রাকাবা বা ঘাড় শব্দটি উল্লেখ করে আল্লাহ (সুওতা) সম্পূর্ণ একটি দাস মুক্ত করার কথা বলেছেন শুধুমাত্র দাসের ঘাড় মুক্ত করার কথা বলেননি। আরেকটি উধাহরন দিচ্ছি। সূরা নিসার ৩৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ (সুওতা) বলেন, “আর তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র বন্দেগী করো। তার সাথে কাউকে শরীক করো না।

বাপ মার সাথে ভালো ব্যাবহার করো। নিকট আত্মীয় ও ইয়াতিম মিসকিনদের সাথে ভালো ব্যাবহার করো, আত্মীয় প্রতিবেশী অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী,মুসাফির এবং যাদের ওপর বিজয়ী হয়েছে তোমাদের ডান হাত(ওয়ামা মালাকাত আইমানুকুম)তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করো” (নিসা ৩৬)। দেখুন এখানে ‘ওয়ামা মালাকাত আইমানুকুম’ বা ডান হাতের উল্লেখ করে একটি বিরাট ও ব্যাপক চিত্রকে কেমন চমৎকারভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ওয়ামা মালাকাত আইমানুকুম এর অর্থ কিন্তু ব্যাপক। এর দ্বারা ডান হাত বা তরবারির মাধ্যমে যাদের অধিনস্ত বা যাদের মালিকানা অর্জন করা হয়েছে তাদের অর্থাৎ দাস-দাসীদের বুঝানো হয়েছে।

এর মানে হোল জিহাদের ময়দানে পরাজিত কাফেরদের দাস দাসীতে পরিণত করার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ(সুওতা) তাদের সাথে মুসলমানদের ভালো ব্যাবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এভাবে কোরআনের আরও আয়াতগুলোতেও আল্লাহ(সুওতা) দাসদাসী সংক্রান্ত বিঁধানের আলোচনা করতে গিয়ে শুধুমাত্র ‘ওয়ামা মালাকাত আইমানুকুম বা ডান হাত’ উল্লেখ করেছেন কিন্তু এই একটি দিকের উল্লেখ করেই সমগ্র চিত্রটিই ফুটিয়ে তুলেছেন। আর এটিই হোল আরবিয় ভাষা রীতি। এরকম আরও অসংখ্য উধাহরন আরবি ভাষাতে পাওয়া যায়।

সুতরাং যারা ‘সালাত পরা বা কায়েম রাখার’ হাদিস দ্বারা বর্তমান শাসকদের বৈধতা প্রমাণ করতে চান তারা হয় বুঝতে ভুল করেছেন আর না হয় তারা জেনে বুঝেই তাগুতের গদি বাঁচাতে বেস্ত রয়েছেন। এখন একটি হাদিস উল্লেখ করেই এই আলোচনার ইতি টানবো যা কিনা সমস্ত সংশয়য়ের নিরসন করবে এবং আমাদের উপরোক্ত আলোচনা যা কিনা এতক্ষণ করে এসেছি তাঁকে স্পষ্টভাবে সঠিক প্রমাণ করে দিবে ইনশাল্লাহ। শাসক যখন কুফরী করে তখন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার এবং তাকে অপসারণ করার স্পষ্ট দলীল হলো উবাদা ইবনুস সামিত রদিআল্লাহু আনহুর হাদীস- তিনি বলেন, ‘‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা বাইয়াত হলাম। তিনি তখন আমাদেরকে যে শপথ গ্রহণ করান তার মধ্যে ছিল- ‘আমরা শুনবো ও মানবো, আমাদের অনুরাগে ও বিরাগে, আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিলেও যোগ্য ব্যক্তির সাথে আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না। ’ তিনি বলেন, যে যাবৎ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর (কুফর বুওাহ) দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।

’’’ [বুখারী ও মুসলিম; সহীহ মুসলিম ইস. ফাউ. হাদীস নং ৪৬১৯] আন নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘আল কাযী আইয়াজ বলেন, ‘আলেমগণ এব্যাপারে ইজমা করেছেন যে, কাফিরের হাতে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না; সুতরাং তার (নেতা) থেকে যদি কুফরী প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে অপসারণ করতে হবে। ’’’ তিনি আরো বলেন,‘‘সুতরাং তার থেকে কোন কুফরী বা শারীয়াহ পরিবর্তন বা বিদয়াত প্রকাশ পেলে, তাহলে সে তার দায়িত্ব থেকে খারিজ হয়ে গেল এবং তার আনুগত্যের হক সে হারালো; আর এ অবস্থায় মুসলিমদের জন্য আবশ্যক যে তারা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, তাকে অপসারণ করবে এবং একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক নিয়োগ করবে। ’’ [সহীহ মুসলিম বি শারহ আন নববীঃ কিতাব আল ইমারা ১২/২২৯] আর এই ইজমা, যার কথা ইবনাল কাযী উল্লেখ করেছেন; তার ব্যাপারে ইবনে হাজার বর্ণনা করেছেন যাতে ইবনে বাত্তাল, ইবনে আত তীন, আদ দাউদী প্রমুখের ইজমা রয়েছে এবং ইবনে হাজার স্বয়ং তাতে সমর্থন দিয়েছেন। আর ইবনে হাজার বলেন, যদি শাসক কুফরী করেঃ ‘‘আর এ ব্যাপারে ইজমার সারমর্ম হলো তাকে তার কুফরীর কারণে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমকে এই উদ্দেশ্যে রুখে দাঁড়াতে হবে।

’’ [ফাতহুল বারী] হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে শাসক যদি কুফর বুওাহ বা প্রকাশ্য কুফর করে তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে। আর এখনকার শাসকদের কুফর বুওাহ কি গুনে শেষ করা সম্ভব? এই তাগুত শাসকেরা আল্লাহর আইনকে বাতিল করেছে। তাদের কুফরি সংবিধানে স্পষ্ট লিখা আছে যে ঐ সংবিধানের সাথে যা কিছু যতটুকু সাঙ্ঘরশিক ততটুকু বাতিল বলে গণ্য হবে। এর মানে হোল কোরআন ও সুন্নাহ পুরোটাই এদের দৃষ্টিতে বাতিল(নাউজুবিল্লাহ) কেননা কোরআন এবং সুন্নাহের বিধি বিধানের সাথে তাদের সংভিধানের আগাগোড়াই অমিল রয়েছে। তারপর দেখুন এরা সুদকে হালাল করেছে, মদের লাইসেন্স দিচ্ছে, পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স দিচ্ছে,মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করছে।

সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র(সুওতা) বিধানকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আল্লাহ্‌র আইনকে চ্যালেঞ্জ করে জাতিসঙ্ঘ এবং আরও অন্য কুফুরি সংস্থাগুলা যে বিধান রচনা করছে এতেও এরা সাক্ষর করছে এবং নিজেদের দেশে ঐ কুফুরি আইনগুলো বাস্তবায়ন করছে। এদের কুফর বুওাহ এর সংখ্যা গুনেও শেষ করা সম্ভম না। এখানে আরেকটি ব্যাপার পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করছি যাতে করে আল্লাহ্‌র দুষমনেরা এই ‘কুফর বুওাহ’ শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে। দেখুন খলিফাকে বায়াত দেয়া হয় সম্পূর্ণ দ্বীন ইসলাম বাস্তবায়ন করার শর্তে।

এখন তিনি যদি ইসলামের পরিবর্তে অর্থাৎ মানব রচিত আইন যা কিনা আল্লাহ্‌র কিতাব ও রাসুলের(স) সুন্নাহ থেকে বের করা হয়নি, এমন কিছু দিয়ে শাসন করেন তখন সেটিই হোল কুফর বুওাহ। অর্থাৎ যে শর্তের অধীনে খলিফাকে বায়াত দেয়া হয়েছে সে শর্তের বিপরীতে গিয়ে যদি উনি শাসন পরিচালনা করেন তখন সেটিই হবে কুফুর বুওাহ। কেননা হাদিসে উল্লেখিত কুফর বুওাহ শব্দটি হচ্ছে ‘আন নাকিরাহ আল মাউসুফা’ বা অনিদ্রিস্ট বর্ণনানাত্তক যাকিনা মূল শর্তের (এখানে শর্ত হোল কোরআন সুন্নাহ দ্বারা শাসন)বিপরীত সব কিছুর ওপরই প্রযোজ্য হবে। এছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় আর তা হোল উবাদা ইবনুস সামিতের(রদিয়াল্লাহু আনহু) হাদীস যাতে বলা হয়েছেঃ ‘‘আমরা যেন আমাদের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে না যাই’’। তিনি বলেছেন, ‘‘যতক্ষণ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর বা কুফর বুওাহ দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।

’’ আর এই হাদীসের দ্বারা অন্য সকল হাদীস শর্তাধীন হয়ে যায় যেসব স্থানে অত্যাচারী আমীর বা ইমামদের ব্যাপারে সবর করতে বলা হয়েছে। যেমন ইবনে আববাস (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর বর্ণিত হাদীস যেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ যদি সুলতানের মাঝে এমন কিছু দেখে যা সে ঘৃণা করে, তাহলে সে যেন সবর করে। ’’ আউফ বিন মালিকের (রদিয়াল্লাহু আনহু) হাদীস, ‘‘না, যতদিন পর্যন্ত তারা তোমাদের মাঝে সালাত কায়েম রাখে। ’’ আর একারণেই ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থের ‘কিতাব আল-ফিতান’ অধ্যায়ে ইবনে আববাস (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর হাদীসের পর উবাদা ইবনুস সামিতের (রদিয়াল্লাহু আনহু) হাদীস উল্লেখ করেছেন, যাতে তার পক্ষ থেকে এই বর্ণিত সীমারেখাটি দৃশ্যমান হয়। আর এইসব শাসকদের অপসারণ করার প্রয়োজনীয়তা একজন বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের বুঝতে কোন প্রকার কষ্ট হওার কথা নয়।

তো এটা স্পষ্ট ভাবে প্রমান হয়ে গেল যে- ১)যে হাদিসগুলোতে আমীরকে আনুগত্য করতে বলা হয়েছে(এমনকি সে যদি ফাসেকও হয়ে থাকে) সেগুলা হোল খলিফা সংক্রান্ত। ২)হাদিসে উল্লেখিত আমীর বা ইমাম মানে হোল খলিফা যেকোনো আমীর নন। আর এই তাগুত শাসকরা তো এই হাদিসের মুখাতিব হওার কোন প্রশ্নই আসে না কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে একমাত্র বৈধ শাসক হলেন খলিফা। ৩) খলিফাকে মানতে হবে যতক্ষণ তিনি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করেন, তিনি যদি তাকওয়া পরিপন্থী কাজও করেন তবুও তাকে মানতে হবে কেননা সামাজিক জীবনে তিনি শারিয়াহ কায়েম রেখেছেন। আর যদি তিনি আল্লাহর আইন পরিবর্তন করেন তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে এবং তাকে অপসারণ করতে হবে।

আর এটাই সালফে সালেহিনের মত। ৪)এখনকার মুসলিম দেশসমূহের তাগুত শাসকেরা আনুগত্তের হকদার নয় কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে এদের শাসন একেবারে শুরু থেকেই অবৈধ। সুতরাং এদের আনুগত্য হারাম এবং হাদিসে উল্লেখিত ‘শাসকের আনুগত্য’ এদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় সমাপ্ত হোল। আল্লাহ্‌ (সুওতা) আমাদের হক বুঝার তৌফিক দিন।

আমীন। শাফকাত মাহমুদ, প্রথম ড্রাফট, ১২ জানুয়ারি, ২০১৩ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।