আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী হবে অক্টোবরে

বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকিকে গুরুত্ব না দিয়ে আগামী ২৪ অক্টোবরের পরও ক্ষমতায় বহাল থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এবং নির্বাচনী পথপরিক্রমায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই গঠন করা হবে নির্বাচনকালীন সরকার। জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধাগ্রস্ত হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৪ অক্টোবরের মধ্যে যদি কোনো কারণে বিরোধী দলের সঙ্গে সমাঝোতা না হয় তাহলে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভাবছে অন্যকথা।

তাদের মতে, আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি মেনে না নিলে ২৭ অক্টোবর থেকেই মহাজোট সরকার সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করবে। কারণ বিএনপি মনে করে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া দলমত নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষের অবস্থানই এখন দলীয় সরকারের অধীনে এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে। পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের সব মেশিনারিজই সরকারের বিপক্ষে কাজ করতে শুরু করবে। এ অবস্থায় সব রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকারের একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ প্রতিরোধে যা যা করা দরকার সবকিছুই করা হবে।

অক্টোবরের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন যে রূপ নেবে তাতে সরকার অচল হয়ে যাবে। জানা গেছে, সারা দেশে মানুষের দৃষ্টি এখন ২৪ অক্টোবরের দিকে। সবাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন ২৪ অক্টোবরের পর কী হয় তা দেখার জন্য। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ২৪ অক্টোবর কিছুই হবে না। বিএনপির আন্দোলন করার কোনো ক্ষমতাই নেই।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক বলেন, সরকারের মেয়াদ আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংবিধানে ১২৩(ক) ধারায় বলা হয়েছে, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন দিলে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন দিতে হবে। অপরদিকে একই ধারার (খ)-তে বলা হয়েছে, সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হতে পারে। ৫৬(৪) ধারায় বলা হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত না নতুন এমপি-মন্ত্রী শপথ গ্রহণ না করবেন ততদিন পর্যন্ত বর্তমানরাই দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৪ অক্টোবরের আগে যদি সংবিধান সংশোধন করা না হয় তাহলে বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না। এতে কোনো সাংবিধানিক সংকটও সৃষ্টি হবে না। সরকার চাইলে ২৪ অক্টোবর থেকে সরকার তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৭ অক্টোবরের পর নির্বাচন অনুষ্ঠান শুরু করার সময়। আশা করব এ সময় সরকার এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না যাতে নির্বাচন প্রভাবিত করে।

দলীয় সরকারের অধীনে বা অন্তর্বর্তীকালীন অথবা তত্ত্বাবধায়কসহ যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক নির্বাচন প্রভাবিত করে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি, ঘোষণা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এ সময়ে সরকারের উচিত নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচনের জন্য লেভেন প্লেইয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি দমন-পীড়নও বন্ধ থাকতে হবে। সরকারের উচিত হবে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, সংসদ বহাল রেখে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করা হলে অক্টোবরের পর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলন যে রূপ নেবে, তাতে সরকার অচল হয়ে যাবে। আর নির্বাচন নেওয়ার জন্য সরকার যত কূটকৌশল ও যুক্তিই দেখাক না কেন_ বিএনপি ও ১৮ দল সে ফাঁদে পা দেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে সরকার দেশে সংকট তৈরি করেছে বলেও উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার মওদুদ। তিনি বলেন, সরকার যত তাড়াতাড়ি এ সংকটের সমাধান করবে ততই ভালো। কিন্তু তারা সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার চেষ্টা করছে, যা অবাস্তব, কাল্পনিক ও অসাংবিধানিক।

সে নির্বাচন এ দেশে হবে না। আন্দোলনের তোড়ে সরকার এ ধরনের নির্বাচনী অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের ১২৩(৩)-এর ক ধারা অনুসারে সরকার আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়। এ জন্য ২৫ অক্টোবরের পর তারা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার কথাও বলেছে। এভাবে সংসদ বহাল রেখে এবং নিজেরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার কোনো নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।

আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর সেজন্যেই প্রয়োজন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, গণফোরাম, বিকল্পধারাসহ এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দলেরই আজ এই দাবি। তারাও ২৫ অক্টোবরের পরই একই দাবিতে মাঠে নামবে। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া আরও বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে তা প্রতিরোধে যা যা করা দরকার তার সবই আমরা করব।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সংবিধানে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো বিধান নেই। কাজেই এ অবস্থা ফ্রি, ফেয়ার নির্বাচন করতে হলে সংবিধানে হয় সংশোধনী আনতে হবে, না হয় ১৯৯১ সালের তিন জোটের রূপরেখার মতো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করে সে অনুসারে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে এবং পরে নতুন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর তা সংসদ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে এবং সংসদ বহালসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে বাইরে রেখে যেভাবে একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের কোনো নজির আর নেই। এ ব্যাপারে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন এবং সে অনুযায়ীই কর্মসূচি পালন করা হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।