আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের প্রথম কাজ হলো বাল্যবিবাহ রোধ করা

জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে প্রায় এক হাজার মানুষ। অনেকের মতে, এই বিপুল জনগোষ্ঠী দেশের জন্য বোঝা। আবার অনেকে মনে করেন, আমাদের এই জনসংখ্যা বোঝা নয়, বরং সম্পদ। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এ কে এম নুর-উন-নবী

 

প্রথম আলো: বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৫ কোটিরও বেশি।

এই বিপুল জনসংখ্যাকে আপনি বোঝা, না সম্পদ হিসেবে দেখছেন?
নুর-উন-নবী: কোনো দেশের জনসংখ্যা বোঝা হবে, না সম্পদ হবে, সেটা নির্ভর করে তাদের আকার, বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ওই জনসমষ্টির সম্পৃক্ততার ওপর। বর্তমানে অনেক উন্নত দেশে শ্রমশক্তি কম থাকায় ওই দেশে জনসংখ্যা সমস্যা। একইভাবে জনসংখ্যা বেশি হলে সেটাও সমস্যা। দেশের আয়তন ও সম্পদের সঙ্গে বিবেচনা করলে বোঝা যাবে, জনসংখ্যা সমস্যা, না সম্পদ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এ দেশের জনসংখ্যা ছিল বিশেষ সম্পদ।

১৯৬৯-এর সাধারণ নির্বাচনে আমরা জিতেছি। কারণ, আমাদের জনসংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে বেশি ছিল। এরপর যখন আমাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি, তখন আমরা যুদ্ধ করেছি এই বিশেষ শক্তি নিয়ে। বর্তমান অবস্থা কী দেখা যাচ্ছে, দেশের আকার ও সম্পদ সীমিত। কিন্তু আমাদের আছে ১৫ কোটির বেশি জনসংখ্যা।

আশার কথা হচ্ছে, এ দেশে মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ কর্মক্ষম। উৎপাদকের সংখ্যা কম, ভোক্তার সংখ্যা বেশি। সুতরাং, তাদের অর্থ উপার্জনমূলক কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করা গেলে তারা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করছেন?
নুর-উন-নবী: কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে।   সেটা যেন আরও বাড়ে সে চেষ্টা করতে হবে।

কর্মসংস্থান ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান দেশের অভ্যন্তরেই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যেহেতু এ দেশে কর্মসংস্থানের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা বেশি, সেহেতু তাদের বেতন কম। যার ফলে বিশ্ববাজারে তাদের চাহিদা রয়েছে। প্রচুর অদক্ষ কর্মী বিদেশে যাচ্ছে।

আমরা দেশীয়ভাবে লাভবানও হচ্ছি। কিন্তু আমি বলব, এই নীতি প্রথমত পরনির্ভরশীল নীতি। তা ছাড়া বিদেশি মুদ্রা দেশে থেকেই আয় করা সম্ভব, যেটা ভারত করছে।
প্রথম আলো: বিদেশি মুদ্রা দেশেই কীভাবে আয় করা সম্ভব?
নুর-উন-নবী: বিশ্ববাজারে আউটসোর্সিংয়ে ৪০ হাজার কোটি ডলারের মার্কেট রয়েছে, যার ১০ হাজার কোটি ডলারের মার্কেট দখল করেছে ভারত। ভালো 

অবস্থানে আছে চীন ও ফিলিপাইন।

আমাদের দেশে যেটা হচ্ছে, তা চাহিদামাফিক নয়। এ ক্ষেত্রে যারা শিক্ষিত, তাদের প্রশিক্ষিত করে এর আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজন দক্ষ প্রশিক্ষক, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট।

প্রথম আলো: জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের জন্য কী কী নীতি গ্রহণ করা উচিত?

নুর-উন-নবী: নীতি হওয়া উচিত দরিদ্রবান্ধব, থাকতে হবে কার্যকারিতার ধারাবাহিকতা। সরকার পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন তার গতিরোধ না হয়।

বাড়াতে হবে বিদেশি বিনিয়োগ। একজনের শিক্ষা, তার মেধা ও প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নও করতে হবে।

প্রথম আলো: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি অনেক কার্যক্রম সত্ত্বেও দেশে জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। এর পেছনে মূল কারণ কী কী বলে আপনি মনে করছেন?

নুর-উন-নবী: এ দেশে ৬৮ শতাংশ নারী, যাদের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়। তাদের ঠিক নারী বলব না, যেন একটা শিশুকে আরেকটা শিশু জন্মদানে বাধ্য করা হচ্ছে।

যাদের ৩৫ শতাংশ ১৯ বছরের মধ্যেই মা হচ্ছে। জনসংখ্যার একটি অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা রয়েছে। এই গতিশীলতার বেগ অনেক তীব্র। প্রতিবছর ১৮ থেকে ২০ লাখ লোক আমাদের জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে। আরেকটা হলো জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সব জায়গায় পৌঁছাচ্ছে না।

দেশের ৬৫ শতাংশ মা সন্তান উৎপাদনে উৎসাহী থাকেন না। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ-সামগ্রী হাতের কাছে না থাকায় তাঁরা মা হতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এটা নিশ্চিত করা গেলে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৩ থেকে নেমে আসবে ১ দশমিক ৬-এ। প্রচলিত কিছু সামাজিক রীতিনীতিও জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম কাজ হলো সামাজিক আন্দোলন করে বাল্যবিবাহ রোধ করা।

প্রথম আলো: যেসব দেশের জনসংখ্যা নিজেদের জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পেরেছে, তার মধ্যে চীন ও মালয়েশিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দুই দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভিন্ন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত?

নুর-উন-নবী: চীন কমিউনিস্ট এবং মালয়েশিয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে মিল হলো, তারা নিজেদের উন্নয়নের শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে গেছে। চীনে উৎপাদিত পণ্য সস্তা এবং বিশ্বের সব দেশে ছড়িয়ে গেছে।

দেশে দেশে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। এটা আমাদেরও অনুকরণীয়। মালয়েশিয়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর দেশ। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশটি অনেক এগিয়ে গেছে। দুই দেশের সরকার নিজ নিজ অবস্থান থেকে দীর্ঘস্থায়ী ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রক্রিয়ায় অগ্রসরমাণ।

আমাদের অবস্থান থেকে সেটা করাই উচিত হবে বলে আমি মনে করি।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।