আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেই জগত উপেক্ষিত

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

কাশেমের সাথে ঘন্টা দুয়েক যাবত হুজ্জোত করার পর থেকে বশিরের ভালো লাগছেনা বিশেষ । সকাল থেকে পেটে দানাপানি পড়েনি বিশেষ । রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে সামনে পিছে যতগুলা কুকুর দেখেছে প্রত্যেকটাকে তাড়া করেছে কারণ ছাড়াই । তারা দৌড়েছে আর সে হো হো করে হেসেছে ।

এ এক আজব খেলা মাইরী । মেজাজ বিলা থাকলেই এই খেলাটা খেলে সে । পান চিবুচ্ছিলো অনেকক্ষণ । রাস্তার ধারে পানের পিক ফেলে কিছু দূরে গিয়ে নোংরা পানি দিয়েই কুলি করে ফেললো । এই সময়ে বশির কি করবে ভেবে পায়না ।

অসম্ভব অস্থিরবোধ করতে থাকে । তাদের মিলের বেতন নিয়ে অনেকদিন যাবত ঝুট - ঝামেলা চলছে । শ্রমিক ছাঁটাই হবে সামনের মাসে এমন কথা কানে এসেছে তার । বছর পাঁচেক হলো এই মিলে পড়ে আছে সে । মিলের সব শ্রমিকের হয়ে সেই কথা বলে উপরওয়ালা কারো সাথে ।

আজ পর্যন্ত কোন বিষয় নিয়ে কেলো করেনি । কিন্তু এবারে করবে । দীর্ঘদিন যাবত বেতনটা বাড়েনি তাদের কারো । শালারা তাদের রক্ত - ঘাম পানি করা পয়সায় মাগীবাজি করে বেড়াবে আর কেবল চেয়ে চেয়ে দেখে যাবে এভাবে চলতে পারেনা । ভাবতে ভাবতে হঠাৎ জয়নাবের কথা মনে পড়লো ।

মুখতে তেতো হয়ে গেলো বশিরের । নিজের কারণেই । জয়নাবের কথা ইদানিং বেশ মনে পড়ে । মনে করলেই মুখ তেতো হয়ে যায় । বছর তিনেক আগে বিয়ে করে ঢাকায় এনেছিলো মেয়েটাকে ।

আজীবন গায়ে - গঞ্জে মানুষ হওয়া । শহরের যাই দেখতো মুগ্ধ হয়ে যেতো । মাস আটেক গেলে যখন ধীরে ধীরে গ্যাঞ্জাম একটার পর একটা বাড়তেই লাগলো বশিরের সহ্য হতোনা । দিন কয়েক পরপরই পীঠে বসিয়ে দিতো দু চার ঘা । মিলের সব ঝামেলা , বাড়িতে টাকা পাঠাবার পরে হাতে আর কিছু না থাকা বহুবিধ হতাশায় মাল খেতে বসতো প্রায় প্রতিদিন ।

নেশার মতো হয়ে গিয়েছিলো । এই নিয়ে জয়নাব একদিন ত্যাক্ত - বিরক্ত হয়ে বাপ - মা তুলে কথা শুনিয়ে দিলে হাতের সামনে কাঠের তক্তা দিয়ে পিটিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো বশির । তার মাস চারেক পরে খবর পেয়েছিলো জয়নাব শহর ছেড়ে যায়নি । বাজারে ঘর নিয়েছিলো । একবার কাছে গিয়ে ঘরটা দেখেও নিয়েছিলো ।

আজকে এই মাত্র মনঃস্থির করলো জয়নাবের ঘরে যাবে । একগাদা গালাগাল শুনবে তবু তাই সই । অস্থিরতা কাটাতে এই মুহূর্তে জয়নাবই বশিরের শেষ ভরসা । তাকে সামনের সময়ে দৌড়াতে হবে অনেক । দিনে সাত থেকে আটজনের বেশী ঘরে নেয়না জয়নাব ।

বাজারে আসবার মাস পাঁচেকের মধ্যে নিয়ম - কানুন , নিজের শরীর সম্পর্কে জানা হয়ে গিয়েছিলো তার । বুঝে গিয়েছিলো ছবির নায়িকাদের মতো ' তাদের ' ও শরীর ধরে রাখতে জানতে হয় । নইলে দ্রুত বুড়িয়ে গেলে কেউ বাল দিয়েও পুছবেনা । চল্লিশের বেশী বয়সের কয়েক বুড়িকে এখানে দেখে দেখে শিখেছে এসব । নিজের শরীরটা ধরে রাখতে হবে জয়নাবের ।

আজকে সাতজনকে নিয়েছিলো । প্রতিটা মাল পাড় খচ্চর । শালাদের শখের মা - বাপ নাই । ক্যাপ ছাড়াই ' ওটা ' ঢুকাবে । ভিতরে মাল খসাবে তো খসাবেই ।

অসুখ - বিসুখ নিয়ে টেনশন নাই তো নাই এতোবার বুঝানো লাগলো যে বাজারের সবার উপরে নিষেধ আছে ক্যাপ ছাড়া কাস্টমার নিতে না । জয়নাব পুরুষ মানুষে ত্যাক্ত - বিরক্ত হয়ে এখন প্রায়শই খিস্তি করে । শালার একটাও যদি ঠিকভাবে করতে জানতো । পড়ালেখা করা বাবুরাও শুয়োর হয়ে যায় । এদের বউরা সহ্য করে কেমনে ? ভাবতে ভাবতে যখন নিচে নেমে এসেছিলো তখন সেই চেনা পরিচত কন্ঠস্বর ।

জয়নাবের দুই সেকেন্ড শক্ত পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা । পিছনে ফিরে সেই চেহারার দিকে তাকালে আপাদমস্তক দেখে বুঝলো মানুষটা কিছুতেই ভালো নাই । এটাও বুঝলো শরীরের টানে আসেনি । বুক হু হু করা একেবারেই উচিত না নিজেকে সেই সময়ে থামাতে চেষ্টা করলোনা । পিছে পিছে আসতে বললো ।

ঘন্টা দুয়েক পর ঘর থেকে লোকটা বের হলে বুক ঠেলে কান্না এলে তাকে সামলেছিলো । জয়নাবের ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়েই মনের খুশীতে দুইটা সিটি বাজালো বশির । যেমন ভেবেছিলো তার কিছু হয়নি । পেটে দানাপানি তো পড়লোই তাকে দেখে জয়নাব হইচই , রাগারাগি করলোনা কিছু । হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় দেখে ভাবলো খুশীতে বাংলা মেরেই দেয় ।

মেরে দেওয়ার পর প্রথম চুমুকেই কলিজা মনে হয় ঠান্ডা মেরে গেলো । আরো কিছু সময় পর একটু টলে যেতে যেতেই গা ঘেঁষে একটা প্রাইভেট কার চলে গেলো । আরেকটু হলেই সোজা উপরে চলে যেতো । নিরাপদ দূরত্বে গাড়ীটা চলে যেতেই দুইবার চুতমারানীর বাচ্চা , তিনবারের পাছার ভিতরে জিনিস ঢুকিয়ে দেওয়ার কথাগুলো বলে স্বস্তি পেলো । জয়নাবের মুখটা মনে পড়ে গেলে উৎফুল্ল হয়ে চারপাশকে ভুলে যেতে সর্বনাশটা হয়ে গেলো ।

সেই গাড়ী যে ব্যাক করতে পারে ধারণাই করতে পারেনি । এবারে কোন ভুল হলোনা । গাড়ি থেকে যে বের হলো সে খাপ থেকে ছুরিটা বের করে দুই - তিনবার পেটে ঠেকিয়েই সোজা পালালোনা । ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে পেটের ভেতরটা এফোড় - ওফোড় করে দিলো । মিলের বেতন নিয়ে আপাতত মাস ছয়েকের জন্য হুজ্জোত বন্ধ ভেবে মিল মালিক নিশ্চিন্ত মনে গাড়িতে বসে সিগারেট ধরালো একটা ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।