আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেইনেসের ছিল একশ পাউন্ড, রোনালদোর তিন লাখ!

১৯৬১ সালে জনি হেইনেসের বেতন নিয়ে সে কী তোলপাড় ইংল্যান্ডে। দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল তুমুল সমালোচনা—একজন ফুটবলারের সাপ্তাহিক বেতন কেন এত হবে! এমনকি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টেও। তা কত বেতন পেতেন ফুলহামের এই ফুটবলার, যা নিয়ে এত হইচই? সপ্তাহে ১০০ পাউন্ড!

মাত্র ৫২ বছরে দৃশ্যপটটা যে কীভাবে ঝড়ের বেগে পাল্টেছে, সেটা ফুটবলারদের বর্তমান বেতনের অঙ্কটা দেখলেই বোঝা যায়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেতন পাওয়া ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আয় করছেন সপ্তাহে প্রায় তিন লাখ পাউন্ড! অঙ্কটা চোখ কপালে তুলে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

সন্দেহ নেই আমূল পরিবর্তনই ঘটে গেছে ফুটবল অর্থনীতিতে।

কীভাবে বদলে গেল এই ইউরোপিয়ান ফুটবল অঙ্গন?

আজ যে বিপুল পরিমাণ অর্থ রোনালদো আয় করছেন, সেজন্য তিনি ধন্যবাদ দিতে পারেন জিমি হিলকে। ইংলিশ এই ভদ্রলোকই খুলে দিয়েছিলেন ফুটবলারদের ধনী হওয়ার রাস্তাটা। ১৯৬১ সালের আগে ফুটবলারদের বেতন ছিল নির্ধারিত। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ পাউন্ড। ফুলহামের মিডফিল্ডার হিলের চোখে যেটা ছিল ‘অন্যায্য’।

পেশাদার ফুটবলে এই বেতন-সীমা বিলুপ্ত করার জন্য বেশ ভালোই লড়াই করেছিলেন হিল। অবশেষে ১৯৬১ সালে জয়ী হন তিনি। ফুটবল ক্লাবগুলো সুযোগ পায় নিজেদের ইচ্ছামতো বেতন কাঠামো নির্ধারণের। আর প্রথম ফুটবলার হিসেবে তার সুফল ভোগ করেন হিলেরই সতীর্থ জনি হেইনেস।

আধুনিক ফুটবলের প্রথম মহাতারকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইংলিশ এই ফরোয়ার্ডকে।

তিনিই ফুটবল বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় যাঁর একজন এজেন্ট ছিল। সে সময় হেইনেসের বেতন ছিল সপ্তাহে ১০০ পাউন্ড। এখন অঙ্কটা খুব কম মনে হলেও সে সময় এটাই ছিল অনেক বড় ব্যাপার। ফুলহামের তখনকার সভাপতি টমি ট্রিনডার এটাকে বিবেচনা করেছিলেন ক্লাবের খ্যাতি বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে। সেই যে শুরু হয়েছে, আর তো কমেইনি বরং ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে ফুটবলারদের বেতন।



১৯৬৮ সালে পরবর্তী মাইলফলকটি তৈরি করেছিলেন জর্জ বেস্ট। সে বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাঁর বেতন নির্ধারণ করে সপ্তাহে ১ হাজার পাউন্ড। এরপর সবচেয়ে বেশি বেতনের ফুটবলারের রেকর্ডটা আর ইংল্যান্ডে থাকেনি। ১৯৮০ সালে পরবর্তী মাইলফলকটি আসে ইতালিয়ান লিগ থেকে। ব্রাজিলিয়ান তারকা ফ্যালকাওকে (না, মোনাকোর ফ্যালকাওয়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না) সপ্তাহে ১০ হাজার পাউন্ড বেতন দেওয়া শুরু করে রোমা।

১০ বছর পর রবার্তো ব্যাজ্জিও যখন ফিওরেন্তিনা থেকে জুভেন্টাসে নাম লেখান তখন তাঁর বেতন দাঁড়ায় সপ্তাহে ৫০ হাজার পাউন্ড।

১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগ প্রতিষ্ঠার পর রমরমা হয়ে ওঠে ফুটবল বাণিজ্য। সম্প্রচার স্বত্ব, বৈশ্বিক স্পনসরশিপ ইত্যাদি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসতে থাকে ফুটবল অঙ্গনে। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেই প্রিমিয়ার লিগের আয় ছিল ২২০ কোটি ডলার। ফলে ১৯৯২ সালের পর থেকে শুধু বেড়েই চলেছে ফুটবলারদের বেতন।



২০০১ সালে পরবর্তী মাইলফলকটি সল ক্যাম্পবেলের। টটেনহাম থেকে আর্সেনালে যাওয়ার পর ইংলিশ এই ডিফেন্ডারের বেতন দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ পাউন্ড। ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার পর আর্জেন্টাইন তারকা কার্লোস তেভেজ আয় করতেন সপ্তাহে ২ লাখ পাউন্ড। এক বছর পরই এই রেকর্ড ভেঙে দেন ওয়েইন রুনি। সে সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাঁকে দেওয়া শুরু করে সপ্তাহে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড।

আর সবচেয়ে বেশি বেতনের সর্বশেষ ফুটবলারের নামটি তো সবারই জানা। মাত্র কয়েক দিন আগে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পকেটে পুরছেন সপ্তাহে ২৮৮০০০ পাউন্ড!

১৯৬১ সালের পর বেতন বৃদ্ধির হারের তুলনা দেখুন
খনি শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে ৬০৩৭ শতাংশ
ফুটবলারদের বেতন বেড়েছে ১৪,৩৯,৯০০ শতাংশ!

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেতন পাওয়া আট ফুটবলারের বার্ষিক বেতন:

১, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড
২. লিওনেল মেসি: ১ কোটি ২৩ লাখ পাউন্ড
৩. নেইমার: ১ কোটি ২৫ লাখ পাউন্ড

৪. জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ: ১ কোটি ২১ লাখ পাউন্ড

৫. রাদামেল ফ্যালকাও: ১ কোটি ১৭ লাখ পাউন্ড

৬. ওয়েইন রুনি: ১ কোটি ১৫ লাখ পাউন্ড

৭. সার্জিও আগুয়েরো: ১ কোটি ১৩ লাখ পাউন্ড

৮. ইয়া তোরে: ১ কোটি ৯ লাখ পাউন্ড

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     বুকমার্ক হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.