আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সউদী রাজপরিবার: কে তাদের প্রকৃত পূর্বপুরুষ? একটি মরুময় ঘৃণিত অঞ্চল নজদ এর দস্যুদের পরিচয় উদঘাটন



“আমরা সউদী রাজ পরিবার ইহুদীদের ভাই। আমরা যে কোন মুসলমান এবং যে কোন আরবীর সাথে দ্বিমত পোষণ করি, যারা ইহুদীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। বরং তাদের সাথে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আরব হচ্ছে সেই উৎসভূমি যেখান থেকে ইহুদীরা বিস্তার লাভ করেছিল; পরে তার বংশধররা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ” (বাদশাহ ফায়সাল আল সউদ, ১৯৬৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন পোস্ট ) সত্যিই কি সউদী রাজ পরিবার “আনজা বিন ওয়াইল” গোত্রের সদস্য, যা তারা দাবি করে থাকে তারা কি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মের অনুসারী? আসলেই কি তারা আরব বংশোদ্ভূত? উপরের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর সউদী রাজ পরিবারের অনেক দাবির উপর কলঙ্ক আরোপ করবে এবং যুক্তির দ্বারা অনেক মিথ্যা উদ্ধৃতি খণ্ডন করবে।

অপরদিকে মুনাফিকরা তাদের বিবেক বুদ্ধি বিক্রি করে দিয়ে, প্রকৃত সত্য গোপন করে সউদী রাজ পরিবারের মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছে। উচ্ছিষ্টভোগী কয়েকজন সাংবাদিক এবং ঐতিহাসিক সামান্য কিছু আর্থিক আনুকূল্যের কারণে সউদী রাজ পরিবারের বংশানুকূলের পরিচয়কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। নাউযুবিল্লাহ! এ সকল মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীরা বলতে চায় এই সউদী শাসকরা হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত খলীফা। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এ সকল তোষামোদির মূল কারণ হচ্ছে সউদী রাজপরিবারের অপরাধ, নৃশংসতাকে জায়িয করার লক্ষ্যে সমর্থন আদায় করা, যাতে তাদের সিংহাসন অটুট থাকে এবং তাদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগগুলো যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। অথচ তাদের এ সকল কর্মকাণ্ড, স্বৈরাচারী মানসিকতা ইসলামের প্রকৃত বিশ্বাসের পরিপন্থী।

ইসলাম ধর্মে রাজতন্ত্রের কোন সুযোগ নেই। কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের যে কোন সদস্যের চাপিয়ে দেয়া শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে রাজতন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের অধিকারকে দমিয়ে রাখে এবং রাজার স্বৈরাচারী এবং স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যে কোন সরব বক্তার বাক রুদ্ধ করে। কুরআন মজিদে এ সকল রাজাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে “রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে, বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে। তারাও এরূপ করবে। ” (সূরা নমল : আয়াত- ৩৪) অথচ এই সউদী রাজ পরিবার কুরআন মজিদ-এর আয়াত শরীফকে প্রকাশ্য উপেক্ষা করে আবার দৃঢ়তার সাথে মিথ্যা দাবিও করে যে, তারা হচ্ছে কুরআনুল কারীমের সঠিক অনুসারী।

সউদী সরকারের তরফ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে, রেডিও, টেলিভিশনে কুরআন শরীফ-এর সূরা নমলের ৩৪ নম্বর আয়াত শরীফ যেন তিলাওয়াত করা না হয়। শুধু তাই নয়, যে কোন প্রকাশনায়, জার্নালে, লেখায় এই আয়াত শরীফ-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সউদী রাজ পরিবার ভীত যে, এই আয়াত শরীফ-এর তিলাওয়াত এবং প্রচারণা তাদের রাজতন্ত্রের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে। কারা এই সউদী? এদের শেকড় কোথায়? এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? সউদী রাজ পরিবারের সবাই ভালভাবেই অবগত যে, বিশ্বের সকল মুসলমানগণ জেনে গেছে তাদের মূলে রয়েছে ইহুদী রক্ত। বিশ্বের সকল মুসলমান, তাদের রক্তাক্ত অতীত এবং বর্তমানের কদর্য এবং নিষ্ঠুর অত্যাচারের ইতিহাসও জেনে গেছে।

বর্তমানে ইসলামের তথাকথিত লেবাস পরে (সুন্নতী পোশাক নয়) তারা প্রাণপণে তাদের ইহুদী অস্তিত্ব ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কারণে বংশানুক্রমে তারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে-এই দাবি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট অপচেষ্টাও চালাচ্ছে। তারা ভুলে গেছে বা উপেক্ষা করছে যে, ইসলাম কখনই শুধু বংশ পরিচয়কে প্রাধান্য দেয় না। কুফরী করলে কেউ নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলের অন্তর্ভুক্ত থাকে না। ইসলাম মানুষের ঈমান, আমলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআন মজীদ-এ ইরশাদ করেন “হে মানবজাতি, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহিযগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, সব কিছুর খবর রাখেন। ” যে কোন ধর্মত্যাগী বা কাফির নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা দাবি করতে পারে না। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- যদিও তিনি ছিলেন আবিসিনিয়ার অধিবাসী এবং পরাধীন; কিন্তু ইসলামের কারণে তিনি ছাহাবীর মর্যাদা পেয়েছিলেন।

বিপরীতে আবু লাহাব কুফরীর কারণে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা হবার পরেও তার কোনো মর্যাদা নেই। ইসলামে কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। মানুষের তাক্বওয়া, পরহিযগারীর উপর তার মাক্বাম ও মর্যাদা। কার কতটা বিত্ত, বৈভব বা কে কোন্‌ রাজবংশের তার মাধ্যমে ইসলাম কাউকে মর্যাদা দেয় না। এই সউদী রাজ পরিবারের প্রকৃত পূর্বপুরুষ কে? ৮৫১ হিজরী সনের কথা।

আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের একদল লোক একটি কাফিলা তৈরি করে ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। আল-মাসালিক ছিল আনজা গোত্রের শাখা। এই কাফিলার উদ্দেশ্য ছিল ইরাক থেকে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে এনে নজদে সরবরাহ করা। সেই কাফিলার প্রধান ছিল শামী-বিন-হাতলুল। কাফিলা যখন বসরায় পৌঁছে, তখন খাদ্যশস্যের এক ইহুদী বড় ব্যবসায়ীর সাথে দলের লোকজন সাক্ষাৎ করে।

সেই ইহুদী ব্যক্তিটি ছিল মোরদাখাই বিন ইব্রাহীম বিন মোসেহ। কোন কোন প্রাচীন ইতিহাসে ইহুদী মোরদাখাইকে মানি বিন রাবিয়া আল মুরাইদি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মোরদাখাই-এর বংশধরেরা ম্রুদা গোত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সেই ইহুদী ব্যবসায়ীর সাথে দর কষাকষির সময় ইহুদী ব্যক্তিটি প্রশ্ন করে “আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?” উত্তরে তারা বলেন, আমরা আনজা গোত্রের এবং আল-মাসালিক সম্প্রদায়ভুক্ত। আল মাসালিক সম্প্রদায়ের কথা শুনেই সেই ইহুদী ব্যবসায়ী আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের উপস্থিত সবাইকে আবেগাপ্লুত হয়ে মুয়ানাকা করতে শুরু করে এবং বলে সেও মূলত আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের তবে সে বসরায় এসে বসবাস করছে।

তার পিতার সঙ্গে আনজা গোত্রের কয়েকজন সদস্যের ঝগড়া বিবাদের ফলে সে এখন বসরায়। এই বানানো গল্প বলার পর পর সে-ই ইহুদী ব্যবসায়ী তার ভৃত্যকে সমস্ত গম, খেজুর, অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যসমূহের বস্তা উটের পিঠে চড়াতে বললো। সেই সুদূর ইরাকে আনজা গোত্রের এবং আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের সম্প্রদায়ের একজন এত উদার ব্যক্তি পেয়ে বেশ গর্ব অনুভব করলো। তারা সেই ইহুদীর সকল কথাই বিশ্বাস করলো। যদিও সে মাসালিক সম্প্রদায়ের ছদ্মবেশে ছিল একজন ইহুদী।

কিন্তু খাদ্যশস্যের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়াতে সে সহজেই সবার কাছে বিশ্বস্ত হতে পেরেছিল। যখন সেই কাফিলা খাদ্যশস্য বোঝাই করে নজদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে সে সময় সেই ইহুদী ব্যবসায়ী তাদের কাফিলার সঙ্গী হতে চাইলো। সে তার মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার জন্যে আকুল ইচ্ছা প্রকাশ করলো। তার এই অভিপ্রায়ের কথা শুনে কাফিলার সবাই তাকে চরম উৎসাহে অভিনন্দন জানালো। সেই ছদ্মবেশী ইহুদী, কাফিলার সাথে নজদে এসে উপস্থিত হল।

নজদে এসে শুরু হয় তার ভিন্ন রকমের কার্যকলাপ। সে তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে নিজের সম্পর্কে অনেক প্রোপাগান্ডা শুরু করে এবং ধর্মীয় অনেক বিষয়ে নিজের মনমত ফতওয়াও দিতে থাকে। সেই সুবাদে কিছু ভক্তও জুটিয়ে ফেলে। কিন্তু সে সময় আল-কাসিমে বসবাসরত একজন বড় আলিম ও বুযূর্গ ব্যক্তি হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক সেই ইহুদী বাধাগ্রস্ত হয়। মুসলমানের ছদ্মবেশে সেই ইহুদীর প্রচারিত বহু ফতওয়ার বিরুদ্ধে তিনি চরম প্রতিবাদ করেন।

হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি নজদ, ইয়েমেন এবং হিজাজেও তালিম দান করতেন। উনার প্রচেষ্টায় সেই ইহুদীকে (বর্তমান সউদী রাজ পরিবারের পূর্ব পুরুষ) আল-কাসিম থেকে আল-ইহসাতে বিতাড়িত করেন। নতুন এলাকায় এসে এই ইহুদী (মোরদাখাই) তার নাম পরিবর্তন করে হয় মারক্বান বিন দিরিয়া এবং আল-কাতিফের নিকট বসবাস শুরু করে। সেখানে এসে, সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঢাল সংক্রান্ত একটা মিথ্যা গল্প প্রচার করা শুরু করে। গল্পটা এ রকম- “মক্কার কাফিরদের সাথে মুসলমানদের যখন উহুদ পাহাড় প্রান্তে যুদ্ধ হয়, সেই উহুদের যুদ্ধে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি ঢাল মুবারক এক কাফিরের হস্তগত হয়।

পরবর্তিতে সেই কাফির ব্যক্তি সেই ঢাল মুবারক বিক্রি করে দেয় ইহুদীদের বনু-কুনাইকা গোত্রের কাছে যা তারা পবিত্র সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করে আসছে। এভাবে সে ইসলাম ধর্মের প্রতি ইহুদীদের ধর্মীয় সহানুভূতির কথা বোঝাতে চাইতো। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবেও সে নিজের অবস্থান বেদুইনদের মধ্যে শক্ত করে নেয়। সে মুসলমানের ছদ্মবেশে ইহুদীদের পক্ষে কাজ করতে থাকলো। ইহুদী মোরদাখাই বা মারক্বান বিন দিরিয়া আল-কাতিফের নিকট দিরিয়া শহরে বসবাস শুরু করে।

সে মনে মনে আরব ভূখণ্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উচ্চাশা পোষণ করতো। তার আশা পূরণের লক্ষ্যে, মূল পরিকল্পনা গোপন করে আরব বেদুইনদের তার পক্ষ সমর্থনের জন্য আবেদন নিবেদন করতে থাকে এবং নিজেই সেখানকার স্ব-ঘোষিত রাজা বলে দাবি করে। তার এই অপচেষ্টাকালে, আরবের আজামান গোত্র এবং বনু খালিদ গোত্র একত্রে এই ইহুদীর আসল পরিচয় পেয়ে তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা দিরিয়া আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কিন্তু সেই সুচতুর ইহুদী সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

বর্তমান সউদী রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ এই ইহুদী মোরদাখাই বা মারক্বান বিন দিরিয়া আল-আরিদের নিকট আল মালিবিদ-গুশাইবা নামক একটি খামারে আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্তমানে একে বলা হয় আল-রিয়াদ। এই ইহুদী সেই খামারের মালিকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সেই খামারের মালিক ছিল অত্যন্ত দয়ালু একজন মানুষ, সে তখনই তাকে আশ্রয় দান করেন। কিন্তু এক মাসের কম সময়ের মধ্যেই সেই কুচক্রী দুষ্ট ইহুদী, খামারের মালিকসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে।

কিন্তু সে প্রচার করে তারা লুটেরা কর্তৃক নিহত হয়েছে এবং সে খামার দখল করে নেয়। সে দিরিয়া নামক যে স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল সেই নাম অনুসারে এই স্থানেরও নাম আল-দিরিয়া রাখে। (কিছু সত্য গোপন করে কোন কোন ইতিহাসে লেখা আছে- ৮৭৩ হিজরী (কাছাকাছি) অর্থাৎ ১৪৪৬ সালের দিকে ইহুদী মোরদাখাইয়ের ম্রুদা গোত্র দিরিয়া নামক স্থানে বসবাস করতে থাকে। আসলে মোরদাখাই পরিবারই ম্রুদা গোত্র নামে পরিচিত। ইহুদী মোরদাখাই সেখানে তার আত্মীয় ইবনে দির কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে আল-রিয়াদে বসবাস শুরু করে বলেও কথিত আছে।

ইবনে দির ছিল সেখানকার শাসক এবং বহু ক্ষেত-খামারের অধিকারী। বলা হয়, ইবনে দির তাকে আল মুলাইবিদ এবং গুশাইবা নামে দুটি খামার দান করে; যা সে পরবর্তিতে আল-দিরিয়া নামে নামকরণ করে। ) বর্তমান সউদী রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ সেই ইহুদী মোরদাখাই সেখানে “মাদাফ্‌ফা” নামে একটি অতিথিশালা খুলে এবং তার চারপার্শ্বে কিছু মুনাফিক জড়ো করে। সেই মুনাফিকরা প্রচার করতো এই ইহুদী হচ্ছে একজন বড় আরব বণিক। সেখান থেকে সে তার মূল শত্রু হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং আল-যালাফি নামক শহরের একটি মসজিদে উনাকে শহীদ করে।

হযরত আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শাহাদাতের পর মোরদাখাই নিজেকে যথেষ্ট মুক্ত ও নিরাপদ মনে করে সেই দিরিয়া গ্রামে বসবাস করতে থাকে। ইহুদী মোরদাখাই সেখানে অনেক বিয়ে করে এবং তার সকল সন্তানের সে আরবীয় নাম রাখে। তার বংশধররা সেখানে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরবর্তিতে সউদী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত হতে থাকে। তার বংশধররাও আরবজাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। তারা অনেক কৃষিক্ষেত্র অবৈধভাবে দখল করে নেয় এবং যারাই তাদের দুষ্ট পরিকল্পনার বিরোধিতা করতো তাদের তারা হত্যা করতো।

তারা তাদের সাফল্যে পৌঁছবার লক্ষ্যে গোপনে বিভিন্ন প্রকার দুরভিসন্ধি প্রয়োগ করেছিল। যারা এই ইহুদী পরিবারের সঠিক ইতিহাস বলতে বা লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলো তাদেরকেই ঘুষ প্রদান করা হয়েছিল। বিশেষত সেই এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নারী ও অর্থের মাধ্যমে প্রলোভিত করে দমিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের কলঙ্কিত ইতিহাস মুছে ফেলে তাদের বংশানুক্রম বিখ্যাত আরব গোত্র রাবিয়া, আনজা এবং আল-মাসালিকের সাথে সম্পৃক্ত প্রমাণ করে তাদের ইতিহাসকে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছিল। (সউদি পরিবারের পূর্বপুরুষ যে ম্রুদা গোত্রের এ ব্যাপারে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।

প্রচলিত আছে যে, তারা প্রাচীন রাবিয়া গোত্রের বিশেষত ‘ওয়াইল’-এর শাখা। কিন্তু যে বিষয়ে সব ইতিহাসে বিতর্ক আছে তা হচ্ছে সউদীরা ওয়াইলের কোন শাখার? বহু ঐতিহাসিক এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নজদের অধিবাসীরা বনু হানিফা গোত্রের যারা নজদ ও রিয়াদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে জোর দিয়ে বলতে চায় তারা হচ্ছে আনজা নামক বড় বেদুইন গোত্রের। নজদে বসবাসরত অন্যান্য আনজা গোত্রের পরিবারের মত তথাকথিত ম্রুদা গোত্রের কোন লিখিত বা মৌখিক তথ্যও নেই যে ম্রুদা আনজা গোত্র থেকে মাইগ্রেশন করে নজদে আসে। ) বর্তমান সময়ের একজন চরম পর্যায়ের মুনাফিক হচ্ছে আমিন আল তামিমি, যে সউদী আরবের জাতীয় লাইব্রেরীর ডাইরেক্টর।

সে সউদী আরবের এই ইহুদী শাসকগোষ্ঠীর বংশ তালিকা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সাথে সম্পৃক্ত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তার এই মিথ্যা জালিয়াতি কর্মের জন্য ১৯৪৩ সালে মিশরে নিযুক্ত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহীম আল-ফাদেলের কাছ থেকে আমিন আল তামিমি ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) হাজার মিশরীয় পাউন্ডে পুরস্কৃত হয়। সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী মোরদাখাই বহু আরবী মহিলাকে বিয়ে করে এবং তাদের ঘরে বহু সন্তানের জন্ম হয়। সেই একই ধারাবাহিকতা বর্তমান সউদী রাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও প্রচলিত আছে। (সউদী আরবের বাদশাহ আব্দুল আজিজের চুয়াল্লিশ জন ছেলে এবং অগণিত কন্যা সন্তান।

বাদশাহ সউদের ছিল বায়ান্ন জন পুত্র এবং চুয়ান্ন জন কন্যা) ইহুদী মোরদাখাই-এর এক পুত্রের নাম ছিল আল-মারাক্বান কারো মতে আল মুক্বরিন। মূলত তার নাম আরবীকরণ করা হয়েছিল ইহুদী নাম মেকরেন থেকে। সেই মেক-রেন বা আল মারাক্বান বা আল মুক্বরিন এর এক পুত্র ছিল মুহম্মদ (মুহম্মদ বিন মুক্বরিন) এবং তার এক পুত্রের নাম ছিল সউদ (সউদ বিন মুহম্মদ)। সেই সউদ থেকে হয়েছে সউদী রাজবংশের নাম। সউদের বংশধরগণ বিশেষত সউদের পুত্র মুহম্মদ বিন সউদ আরবের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়।

তারা প্রচার করতো যে, সকল আরব ধর্মীয় নেতারা মুরতাদ হয়ে গেছে এবং তারা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে সরে গেছে। বিভিন্ন গোত্রের নেতারা ধর্মের নামে শিরকে মশগুল- এই অজুহাতে অনেক মুসলমানকে শহীদ করা হয়। সউদী রাজ পরিবারের নিজস্ব ইতিহাসবিদ দিয়ে রচিত The history book of Saudi familyi৯৮ থেকে ১০১ পৃষ্ঠার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে, সউদী বংশের সবাই নজদের সকল অধিবাসীদের মুরতাদ, কাফির মনে করতো। ফলে তাদের হত্যা করা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের মহিলাদের দাসীতে পরিণত করাকে জরুরী বলে মনে করতো। মূলত সে সময় নজদের প্রধান মুহম্মদ বিন সউদ ছিল ওহাবী আক্বীদা দ্বারা বিভ্রান্ত।

ওহাবী মতবাদের প্রচার ঘটে আব্দুল ওহাব নজদীর মাধ্যমে যে ছিল বনু তামিম গোত্রের (যদিও তার পূর্বপুরুষ ইহুদী ছিল) তার জন্ম হয় উয়াইনিয়া গ্রামে, নজদের হুরাইমিলা শহরের পার্শ্বে, ১১১১ হিজরী অর্থাৎ ১৬৯৯ সালে। তার মৃত্যু হয় ১২০৬ হিজরী মোতাবেক ১৭৯২ সালে। প্রথমে সে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইরাকের বসরায় যায়। পরে ইরান, ভারত, দামেস্কেও ভ্রমণ করে। সেখানে সে “নজদের শায়খ” নামে নিজেকে পরিচয় দিত।

সে ছিল অত্যন্ত চতুর। ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে অনেক কিছু শেখে এবং একজন নেতা হবার স্বপ্ন পোষণ করে। ১১২৫ হিজরী অর্থাৎ ১৭১৩ সালে তার সাথে পরিচয় হয় ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপারের। গুপ্তচর হ্যামপার এই ওহাবী নজদীর নেতা হবার অভিলাষ বুঝতে পেরে তার সাথে দীর্ঘ সময়ের জন্য সখ্যতা গড়ে তোলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের শেখা অনেক পদ্ধতি এবং মিথ্যা তার উপর সে প্রয়োগ করে।

হ্যামপার ওহাবী নজদীর মধ্যে সব সময় ইসলাম ধর্মের নতুন অপব্যাখ্যা শুনতে পেত এবং তার মধ্যে ভিন্ন চিন্তার এক শায়খ হবার সম্ভাবনা দেখতে পেত। আব্দুল ওহাব নজদে ফিরে এসে গ্রামের লোকদের জন্য ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিন্ন চিন্তার বিভিন্ন লেখা লিখতে থাকে। সে মু’তাযিলা সম্প্রদায় এবং ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাছ থেকে যা শিখেছিল তার উপর সে লিখতে ও বলতে থাকে। গ্রামের লোকজন এবং তাদের প্রধান ইহুদী মোরদাখাই-এর বংশধর মুহম্মদ বিন সউদ তাকে অনুসরণ করতে থাকে। আরবদের কাছে বংশ পরিচয় ছিল অনেক বড় কিন' যেহেতু সে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য গোত্রের ছিল না তাই সে মুহম্মদ বিন সউদকে তার মত প্রচারে ব্যবহার করতে শুরু করে।

যার নাম দেয় সে ওহাবী মতবাদ। সে নিজেকে কাজী এবং মুহম্মদ বিন সউদকে বাদশাহ হিসেবে পরিচয় দিত। তারা দু’জন পরবর্তিতে চুক্তিতে আসে যে তাদের সন্তানরা তাদের পরে ক্ষমতায় আসবে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইবনে আব্দুল ওহাবের কন্যাকে বিন সউদের পুত্রের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। ১১৫০ হিজরীতে অর্থাৎ ১৭৩৭ সালে আব্দুল ওহাব নজদীর ওহাবী মতবাদ একটা রাজনৈতিক রূপ লাভ করে সমগ্র আরবে ছড়িয়ে পড়ে।

সেই ধারাবাহিকতায় সউদী বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন মুহম্মদও ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং সে প্রথম ১৭৯১ সালে মক্কা শরীফ-এর আমীর হযরত শরীফ গালিব ইফেন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পূর্ব থেকেই গোপনে তারা ওহাবী মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছিল। তারা অনেক মুসলমানকে নিপীড়ন করে এবং শেষে হত্যা করে। অনেক মহিলা ও শিশুদের বন্দি করে এবং তাদের সম্পদ দখল করে। যারা আব্দুল ওহাব নজদীর (যার পূর্বপুরুষও ছিল ইহুদী এবং তুরস্কের অধিবাসী) আক্বীদার সাথে মিল না রাখতো তাদেরকে তারা মুসলমান বলতো না।

এই ওহাবী নজদীর ভুল ফতওয়ার কারণে সউদী রাজ পরিবারের সন্ত্রাসী লোকজন সুন্নী অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে ফেলে। শিশুসহ বহু মানুষ হত্যা করে, মহিলাদের উপর নিপীড়ন চালায় এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের উদর চিড়ে ফেলে, শিশুদের হাত পা কেটে ফেলে আগুনে নিক্ষেপ করতো। শুধু ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী না হওয়াতে মুসলমানদের মুরতাদ আখ্যায়িত করে তাদের সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করতো। মূলতঃ মিথ্যা ধর্মীয় অনুশাসনের নামে এই ওহাবী আক্বীদা সম্পন্ন ইহুদীরা বিভিন্ন প্রকার নৃশংসতা চালায়। আর এই অনুশাসনের প্রবর্তক ছিল ইহুদী মোরদাখাই, যে সন্ত্রাসের বীজ বপন করেছিল তার সময় থেকে।

এই ইহুদী পরিবার ১১৬৩ হিজরী সাল থেকে সউদী আরবসহ মুসলিম দেশসমূহে নৃশংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গোটা আরব ভূ-খণ্ডের নাম তাদের পরিবারের নাম অনুসারে রাখে “সউদী আরব”। ভাবখানা এমন যে গোটা আরব তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি আর সেখানকার সকল অধিবাসী তাদের গোলাম বা ক্রীতদাস, যারা সকাল সন্ধ্যা শুধু তার প্রভুর আরাম আয়েশের জন্যই খেটে যাচ্ছে। এই সউদী রাজ পরিবার দেশের সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের সম্পত্তি বলে বিবেচনা করে। যদি কোন সাধারণ নাগরিক তাদের এই ইহুদী শাসক গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচার এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তবে জনগণের সম্মুখে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।

এই ইহুদী রাজ পরিবারের এক রাজকুমারী আমেরিকার ফ্লোরিডার এক বিলাস বহুল হোটেলের ৯০টি সোয়ীট (Suite) এক রাত্রির জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ভাড়া করে। কেউ কি তার অপচয়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে? যদি করে তবে তার পরিণতি হবে জনসম্মুখে তরবারীর আঘাতে শিরোচ্ছেদ। ১৯৬০ সালে “সোয়াত আল আরব” মিশরের কায়রোর ব্রডকাস্টিং স্টেশন এবং ইয়েমেনের সানার ব্রডকাস্টিং স্টেশন এই সউদী রাজ পরিবারের ইহুদী পূর্বপুরুষের ব্যাপারে সত্যতা স্বীকার করে। ১৯৬৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন পোস্টে বাদশাহ ফায়সাল আল সউদ এই চরম সত্যটি অস্বীকার করতে পারেনি। সে বলেছিল, “আমরা সউদী রাজ পরিবার ইহুদীদের ভাই।

আমরা যে কোন মুসলমান এবং যে কোন আরবীর সাথে দ্বিমত পোষণ করি, যারা ইহুদীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। বরং তাদের সাথে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আরব হচ্ছে সেই উৎসভূমি যেখান থেকে ইহুদীরা বিস্তার লাভ করেছিল; পরে তার বংশধররা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ” ওহাবী বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন সউদের ইখওয়ান বাহিনী তৈরির ধারণা থেকেই সিআইএ তালেবান বাহিনী তৈরির ধারণা পায় ১৯১৩ সালে কুয়েত এবং বুরাইদার মধ্যভাগে আতাউইয়া নামক মরুদ্যানে বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন সউদ প্রথম ইখওয়ান জনপদ প্রতিষ্ঠা করে। রাজ্য শাসনে ইবনে সউদকে ওহাবী উলামাদের সমর্থনের প্রয়োজন ছিলো।

সে ইখওয়ান জনপদ তৈরি করে সেখানে ওহাবী উলামাদের দ্বারা কট্টর ওহাবী মতবাদ প্রচার-প্রসার করতে থাকে। এভাবে আতাউইয়া রিয়াদের মতো একটি বিশাল জনপদে পরিণত হয়। এ থেকে ইবনে সউদ যে কোনো সময় যে কোনো সংখ্যক সৈন্য সংগ্রহ করতো। ফলে ইখওয়ান তার ক্ষমতার উৎস বা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলো। এদিকে ব্রিটিশ সরকার আব্দুল আজিজকে মাসিক ৫ হাজার পাউন্ড করে দিতো।

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ইবনে সউদকে এবং তখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার গভর্নর শরীফ হুসাইনকে ভাতা বন্ধ করে দেয় ১৯২৩ সালে। আব্দুল আজিজ আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য সে হিজাজ আক্রমণ করে। হিজাজ অভিযান করে হাজীদের নিকট থেকে হজ্জ কর আদায় করার চেষ্টা করে। আব্দুল আজিজ বিন সউদ জানতো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ধর্মীয় কেন্দ্র পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ-এ আধিপত্য বিস্তার না করলে মুসলিম বিশ্বে ইবনে সউদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না। ফলে হিজাজ দখল ছিলো তার জন্য জরুরী।

১৯২৪ সালে পবিত্র মক্কা শরীফ ইবনে সউদের দখলে আসে। ইবনে সউদ স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র সর্বত্র চালু করে। সে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মুসলিম বিশ্বের সাথে সখ্যতা রক্ষার জন্য গোল আলু নীতি, অনুসরণ শুরু করে। তাকে এমন কিছু করতে হয় যা কট্টরপন্থী ওহাবীদের ক্ষুদ্ধ করে। ইখওয়ানদের ব্যবহার করে তার রাজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে, সে বাদশাহও হয়েছে এখন আর ইখওয়ানদের প্রয়োজন নেই, ফলে ইখওয়ান ভ্রাতৃসংঘ বিলুপ্ত করতে থাকে।

সে ইখওয়ানদের হিজাজ থেকে নিজ গোত্রে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়। ফলে ইখওয়ানদের মধ্যে হতাশা, নিরাশা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেয়। একইভাবে, একই পথ অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তান থেকে রুশ সৈন্য হঠাবার জন্য তালেবান তৈরি করে এবং তাদের মাধ্যমে আফগানিস্তান রুশ দখল মুক্ত করে। আবার আফগানিস্তানে সরাসরি নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সেই তালেবানদের উপর নির্বিচারে গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। আর এই পরিকল্পনার মূল শরীক দেশ হচ্ছে আব্দুল আজিজ বিন সউদের বংশধরদের দ্বারা চালিত ‘সউদী আরব’।

এবার দেখি হাদীছ শরীফ উনার মাঝে নজদীদের সম্পর্কে কি বলা হয়েছে কা’বা শরীফের পূর্ব দিকের একটি মরুময় ঘৃণিত অঞ্চলকে নজদ বলে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসীরা আল্লাহ পাক-এর গযবপ্রাপ্ত এবং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অভিশপ্ত। মক্কা বিজয়ের পর হযরত নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদকে আরবের অন্যান্য দেশ হতে পৃথক করে ঘৃণিত অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি খানায়ে কা’বার সঙ্গে সম্পর্ক করে বলেন, রোকনে ইয়ামনী, রোকনে শামী ও রোকনে ইরাকী। কিন্তু এখানে রোকনে নজদী বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফের দিক চিহ্নিত করেননি।

কারণ নজদীরা প্রকৃত কা’বা শরীফ পন্থী ছিল না। আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর ইসলাম প্রচার কালে কা’বা শরীফের চতুর্দিকে কাফিররা ইসলামী আদর্শে মুগ্ধ হয়ে দ্বীন ইসলামে দীক্ষিত হন। আর মক্কা শরীফ হতে দূর দূরান্তে অবস্থারত অধিবাসীরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র মুবারক ও আদর্শ মুবারকে মুগ্ধ হয়ে কালাম পাক-এর মহাবানীতে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তারা ওফদ নাম ধারন করত মক্কা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হন। সে সময় তাঁদের কারো কারো মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল “ইয়া নবী আল্লাহ” আর কারো মুখে উচ্চারিত হতো আযানের বাক্যবলীর আল্লাহু আকবার। তাঁরা দূরদূরান্ত হতে কা’বা শরীফ-এর আঙ্গিনাতে ঊপস্থিত হয়ে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহন করত দ্বীন ইসলাম গ্রহন করে ধন্য হয়েছেন।

এমনকি “নসীবাইনের” জ্বিন জাতি পর্যন্ত রসূলে পাক হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহন করেন। কিন্তু কম বখত কোন নজদী হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহন করেনি। বরং নজদীরা ঈমান লাভের পরিবর্তে ঈমানদারগণকে নির্মমভাবে শহীদ করতো। এ কথার জ্বলন্ত প্রমাণ নজদের বীরে মাঊনাতে ৭০ জন ঈমানদার মুবাল্লিগ হাফিযে কুরআন ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে শহীদ করা ও “রজি” এর ঘটনাতে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শুলে ঝুলিয়ে শহীদ করা। এ দুটি ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা বুখারী শরীফের মধ্যে বর্ণিত আছে।

প্রকত পক্ষে নজদীরা ছিল জন্মগত নাফরমান নাস্তিক ও কাফির। নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদ ও নজদীদের সম্পর্কে কি কি অভিমত পোষণ করেন সে ব্যাপারে ছহীহ সনদ সূত্রে কয়েকটি হাদীছ শরীফ নিম্নে বর্ণিত হলো- হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মূল কাফির বা প্রধান কাফির পূর্ব দিকে। সেখান থেকেই শয়তানের শিং বের হবে। অর্থাৎ মক্কা শরীফ-এর পূর্ব দিকে আরব ভূখন্ডের অন্তভূর্ক্তূ ঘৃণিত প্রদেশ নজদ অবস্থিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বর্ণনা অনুযায়ী সেখানেই কাফিরদের মূল ঘাটি অবস্থিত।

অথবা ঐ এলাকাতে যারা বসাবস করেছে তারাই প্রকৃত কাফির। কারণ, সেখানকারই তথাকথিত শেখ নজদী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ঘুমন্ত অবস্থায় শহীদ করার জন্য আবু জাহিলকে কুপরামর্শ দিয়েছিল। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যখনই পূর্বমূখী হতেন, তখনই তিনি পূর্ব দিককে অভিশপ্ত আখ্যায়িত করে বদ দুয়া করতেন। আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম- এ হাদীছ শরীফটির দ্বিতীয় অংশে বলেন, এই নজদ হতে শয়তানের ধারাল শিং এর আবির্ভাব হবে। দ্বিতীয় বাক্যটির মধ্যে করনুশ শয়তান বা শয়তানের প্রথম শিং মিথ্যা নুবুওওয়াতের দাবীদার মুসায়লামাতুল কাজ্জাবকে এবং দ্বিতীয় শিং দ্বারা ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে বুঝানো হয়েছে।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বানীটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব রূপ ধারণ করেছে। প্রথম শিংকে দমন করা হয় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফত কালে। আধুনিক কালের শয়তানের শিং অর্থাৎ ১৮০১ ইং ওহাবীরা সাউদ বিন আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে কারবালার পবিত্র ভূমি হতে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পবিত্র মাযার শরীফ ভেঙ্গে দেয়। ১৮০৩ ঈসায়ী সালে মক্কা শরীফ আক্রমণ করে কাবা শরীফ-এর গিলাফ ছিড়ে ফেলে। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, আওলিয়ায়ে কিরাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাযার শরীফসমূহ ভেঙ্গে ফেলে।

১৮০৪ ঈসায়ী সালে মদীনা শরীফ আক্রমণ করে। এই পবিত্র স্থানটি ১৮১৩ ঈসায়ী সাল পর্যন্ত ওহাবীদের দখলে ছিল। তাদের অধীনে থাকা অবস্থায় তারা জান্নাতুল বাক্বীর সকল মাযার শরীফসমূহ ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। এমনকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওযা শরীফ-এর উপরও ঘৃণিত কালো থাবা বিস্তার করেছিল। ওহাবীরা যে কুফরী কর্মে লিপ্ত হয়েছিল তা পবিত্র কুরআন শরীফে ঘোষিত কাফিরগণও এরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়নি।

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে বলেন, একদা আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বমূখী হয়ে অর্থাৎ নজদের দিকে ফিরে বলেন, এ দিক হতে ফিৎনা ফ্যাসাদ আবির্ভূত হবে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) হাদীছ শরীফে পূর্ব দিকের কথা উল্লেখ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদকেই বুঝিয়েছেন। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মূল কুফর পূর্ব দিকে এবং গর্ব ও অহংকার রাখালদের মধ্যে। অন্য আর এক বর্ণনাতে রয়েছে যে, কঠিন অন্তর ও জুলুম অত্যাচার পূর্ব দিকের লোকদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবে। আর ‘ঈমান’হিজাজ এর বাসিন্দাদের মধ্যে থাকবে।

উপরোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ের দ্বারা নজদ ও নজদীদের প্রকৃত স্বরূপ বুঝানো হয়েছে। কারণ গর্ব ও অহংকার এবং জুলুম ও অত্যাচার তাদের দ্বারা যেমন প্রকাশ পেয়েছে এরূপ আর কোন এলাকার লোকদের দ্বারা তা প্রকাশিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইরশাদ করেন, পূর্ব দিক হতে (অর্থাৎ নজদ দেশ হতে) একদল লোক বের হবে, তারা ঠিকই কুরআন শরীফ পাঠ করবে, কিন্তু কুরআন শরীফ-এর মর্মার্থ তাদের কণ্ঠনালীর নিচে নামবে না। অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এর অর্থ বুঝবে না। তারা ইসলাম ধর্ম হতে এমনিভাবে দূরে সরে পড়বে যেমন তীর ধনুক হতে ছুড়লে আবার ফিরে আসে না।

এসব লোকের সাধারণ লক্ষণ হল তাদের মাথা মুড়ানো থাকবে। ঠিক এই লক্ষণটি পরিলক্ষিত হয়েছে নজদবাসী ইবনে ওহাব নজদী ও তার অনুসারীদের মাঝে। স্মর্তব্য, আমাদের এদেশেও তথাকথিত একদল মুবাল্লিগ জনসাধারণের মধ্যে খ্যাতি অর্জনের জন্য মাথা মুড়ায়ে ফেলে। তারা দাবী করে যে, তারাই প্রকৃত ইসলামের অনুসারী। প্রকৃত পক্ষে তারা হল ইসলামের চরম শত্রু।

আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।