আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Does it really matter what we do on this Small Island

ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড

আজকে যে শিশুটির হাসিমুখ দেখে আমরা আনন্দে আত্মহারা- আমাদেরই কারো ছেলে- মেয়ে বা প্রিয় অন্য কেউ, ওদের বয়স যখন সাইত্রিশ বা চল্লিশ এবং আমাদের যখন ৬০, ৭০ বা ৮০/৯০ তখন পৃথিবী ২০৫০ খ্রিস্টপরবর্তী বছর পাড় করে ফেলবে। এখন থেকে ৫০ বা একশ বছরের পরের পৃথিবী তাই তেমন দূরের কিছু না, যদিও সংখ্যাগুলো শুনতে বেশ দূরের লাগে। মাত্র দুদিন আগে শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেখানে আগামী একশ বছরের পৃথিবীর জন্য বেশ ভয়ংকর আশংকার কথা ধ্বনিত হয়েছে। এবং বলাবাহুল্য যে আশংকা পৃখিবীর উষ্ণায়ণ নিয়ে, জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে। বিশ্ব উষ্ণায়ণের কারণে যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে তার অনেকগুলোই আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়তো মোকাবেলা করতে পারবো ধরে নিলেও সমুদ্রের কাছে আমাদের হার অবধারিত বলা হয়েছে।

সবচেয়ে আশাবাদী মানুষটিও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে, যে ক্ষতি আমরা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি তার কারণে আগামী একশ বছরে কম করে হলেও দেড় থেকে দুই ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এখন পৃথিবীর নিয়তি। এমনকি দুনিয়ার সব মানুষ এখন থেকে দিনরাত চেষ্টা করেও এই যাত্রা ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ পৃথিবীর আগামী একশ বছরের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য একসাথে কাজ করতে কী প্রস্তুত? না মোটেই। ওইদিন শুক্রবারেই ব্রিটিশ জলাবায়ূ বিষয়ক মন্ত্রীর একটি সাক্ষাতকার দেখলাম এখানকার টিভিতে। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলো- এই যে ভীতিকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ে আপনারা কি করছেন? ব্রিটেনবাসীর সুরক্ষার ব্যাপারে কী ভাবছেন? মন্ত্রী জবাবে যা বললো তার সরমর্ম দাড়ায়- তারা বন্যা প্রতিবোধের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন, এছাড়া সবুজ শক্তি ব্যবহারের জন্য তাদের নানান উদ্যোগ রয়েছে।

সাংবাদিকের যে প্রশ্নটি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুললো সেটা এমন- বাট মি. মিনিস্টার, ডাজ ইট রিয়েলি ম্যাটার হোয়াট উই ডু ইন দিস লিটল আইল্যান্ড? পিপল ইন চায়না এন্ড ইনডিয়া স্টিল বানিং কোল ফর এনার্জি। “ মন্ত্রী জবাবে বললেন- ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্য তবে বৃটেন চেষ্টা করছে তাদেরকে সাথে নিয়েই একটা সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কিছু করতে। তারপর যথারীতি কিছু রাজনৈতিক কথা- যেমন, পৃথিবী চায় বৃটেন জলবায়ূ বিষয়ক উদ্যোগের নেতৃত্বে আসুক এবং সেটা তারা করার চেষ্টা করছেন। (এই বক্তব্য অবশ্য পুরোটা শুনতে হয় নি, সাংবাদিক তার আগেই সাক্ষাতকারটির ইতি টেনেছেন)। আমারা পৃথিবীর যে প্রান্তেই খাকি না কেন, আমরা শেষ পর্যণ্ত পানিবন্দী মানুষ।

সে পানি কোন ছোট নদীর নয়, আমাদের বাড়ির পাশের শুকিয়ে যাওয়া খাল নয়। সে পানি পৃথিবীর তিনভাগ সমুদ্রের। আমি নেদারল্যান্ডে, নাকি নিউইয়র্কে নাকি লন্ডনে নাকি সাতক্ষীরায় – তা আসলে তেমন কোন বিবেচনার বিষয় নয়। ভারত মহাসাগরে সুনামি উঠলে তাই আমাদের বাড়ির পাশের পুকুরের পানিও ছিটকে রাস্তায় উঠে আসে। সারা পৃথিবীর ভয়ের এবং আশার জায়গাটাও তাই এখানেই।

আমরা হযতো পৃথিবীর যুদ্ধ বিগ্রহ কিংবা বারাক ওবামার সাথে হাসান রুহানি টেলিফোনালাপ নিয়ে এতই মগ্ন কিংবা জাস্টিন বিবার বা সেলেনা গোমেজের প্রেমোপ্যাখ্যান অথবা মাইলি সাইরাসের টোয়েকিং, আমরা আসলে পৃথিবীর জন্য আমাদের সত্যিকার করণীয়টা ভুলেই যাই। এবং এটাও ধরে নিই- হয়তো এমনিতেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। প্রকৃতি সব ঠিক করে নেবে নিজের মতো করে। প্রকৃতি সব ঠিক করে নেয় বটে, নিতে ভুল করে না, কিন্তু তার মূল্যটা কত ভয়াবহ হতে পারে তার নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে গত কয়েক বছরে অসংখ্য এসেছে, আমরা দেখিনি বা দেখেও না দেখার ভান করে আছি। পৃথিবীর অনেক দেশই এখন সমুদ্রের সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হল্যান্ডের প্রোজেক্ট ডেল্টা এমন উদ্যোগের অন্যতম। বৃটেনের যেমন টেমস ব্যারিয়ার। ১৯৮২ সাল থেকে চালু হওয়া এই বাধের মূল কাজ যদিও লন্ডনের বন্যা নিয়ন্ত্রন তবে এর অন্যতম মূল লক্ষ্য নর্থ সি থেকে আসা যেকোন প্লাবনকে থামানো। যখন এটি তৈরি করা হয়েছিলো তখন ধারণা করা হয়েছিলো আগামী একশ বছর অর্থাৎ ২০৮২ সাল পর্যন্তু এটি যথেষ্ট হবে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য। কিন্তু বর্তমানের ধারণা হচ্ছে আগামী দশ বছরের মধ্যে এই বাধ অকেজো হয়ে যাবে সমুদ্রের কাছে।

এ সবকিছুর কারণ সমুদ্রের পানির মৌলিক উচ্চতা বেড়ে যাওয়া। সমুদ্রের কাছে মানব জাতি ও সভ্যতা এবং সেই সাথে সারা পৃথিবীর স্থল জগত জিম্মি হয়ে পড়ছে দিন দিন। জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন এবং বিশেষত বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য মানুষের কার্যক্রমকেই দায়ী করা হয়েছে জাতি সংঘের প্রতিবেদনে এবং শেষে আহ্বান জানানো হয়েছে অন্তত সাধ্যমত যা কিছু করণীয় তা করার। নইলে পৃথিবী নামক আপাতত জানা একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহটির ভয়ানক পরিণতি ঠেকানো যাবে না। আসলেই আমাদের কী করণীয় আছে? আদৌ কী আমাদের সাধ্যের মধ্যে কিছু আছে? ব্যক্তিগত পর্যায়েই অনেক কিছু করার আছে আমাদের।

সে প্রসঙ্গে একটু পরে বলবো। তার আগে জাতীয়ভাবে আমাদের ধ্বংসাত্মক প্রবণতার কথাটা বলা দরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের। ভারতের সহায়তায় কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন হবে সুন্দরবনের কাছে রামপালে। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিয়ে আমাদের দেশের কতটা অর্থনৈতিক উন্নতি হবে সেটা আমাদের ভেবে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা না।

আমরা আরো কতভাবে সে পরিমাণ অর্থনৈতিক উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করছি সেটাও আমরা জানি। কিন্তু আমরা যে বিষয়টা বুঝতে একেবারেই পারি না সেটা হচ্ছে তৌফিক এলাহি বা গওহর রিজভী এরা আসলে কোন দেশের মানুষ? এরা আদৌ পৃথিবীর কোন বাসিন্দা কি-না সেটাও মাঝে মাঝে প্রশ্নের মুখে পড়ে। এদের ছেলে মেয়ে বা অন্য কোন ভবিষ্যত প্রজন্ম আছে কি-না সেটাও বুঝতে পারি না। নইলে কীভাবে এত এত সাবধানবাণী সত্তেও তারা এমন একটি আত্মঘাতি প্রকল্প এগিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর হয়? তারা কী ভেবে বসে আছেন- এখন থেকে ২০ বছরের মধ্যে তারা এমনিতেই মারা যাবেন সুতরাং তখব বাংলাদেশ বা পৃথিবীর কী হয় তাতে তাদের কি যায় আসে? কিন্তু আমাদের তো অনেক কিছু যাবে আসবে, আমাদের তো চোখের সামনে আমাদের নতুন প্রজন্ম ধ্বংসের দোড়গোড়ায়, তাদের নিরাপত্তা, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। রামপালের প্রকল্প তাই যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে।

এটা শেখ হাসিনা, শেখ জয় কিংবা তৌফিক এলাহিদের বিষয় না। এদের জীবনকাল বেশি বাকি নেই আর। সুতবাং তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যত যাচনা করে লাভ নেই। ভবিষ্যত চাইতে হবে তাদের কাছে যারা ভবিষ্যতের ভালো মন্দের ফল ভোগ করবে। অনেকেই বলবেন, ১৩২০ মেগার বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করেই কী পৃথিবীর ভাগ্য বদলাবে? আমরা বলবো- ভাগ্য বদলাবে না, কিন্তু প্রতিটা ছোট উদ্যোগ একসাথে করে অনেক বড় কিছু হতে পারে।

বিদ্যুত উন্নতির একমাত্র নিয়তি নয়। উন্নয়নের আরো অনেক জায়গা আছে। নতুন কয়েকটি কারখানায়, নতুন কিছু বাড়িতে বিদ্যুত পাঠিয়ে টিভি দেখার আনন্দ দেয়ায়, কিংব নতুন কয়েকটা স্কুলে কম্পিউটার চালানোর ব্যবস্থা করার মধ্যেই উন্নতি বন্দী হয়ে নেই। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের দেশে সুর্যোর আলোর এমন উদার প্রাপ্তি যে সহজেই আমরা সৌর বিদ্যূতের দিকে যেতে পারি। সারা পৃথিবী সেদিকেই ছুটছে।

আমাদের ব্যক্তিগত অভ্যাসের পরিবর্তন এখন খুবই জরুরি। আমাদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের পিছনে একটু একটু শক্তি সাশ্রয় করেও অনেক কিছু হতে পারে। সব কিছু দেখার মতো তাৎপর্যপূর্ণ হতে হবে এমন। আমরা প্রকৃতিকে সামান্য ভালো কিছু দিলে সেটা সে অনেকগুণ বাড়িয়ে নেয়। আমাদের উঠতি প্রজন্মের মধ্যে এ ভাবনাটা যদি দেয়া যেতো! পৃথবীটা তাদের, তাদেরকেই এর সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

আজকে যে শিশুটির হাসিমুখ দেখে আমরা আনন্দে আত্মহারা- আমাদেরই কারো ছেলে- মেয়ে বা প্রিয় অন্য কেউ, ওদের বয়স যখন সাইত্রিশ বা চল্লিশ এবং আমাদের যখন ৬০, ৭০ বা ৮০/৯০ তখন পৃথিবী ২০৫০ খ্রিস্টপরবর্তী বছর পাড় করে ফেলবে। এখন থেকে ৫০ বা একশ বছরের পরের পৃথিবী তাই তেমন দূরের কিছু না, যদিও সংখ্যাগুলো শুনতে বেশ দূরের লাগে। মাত্র দুদিন আগে শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেখানে আগামী একশ বছরের পৃথিবীর জন্য বেশ ভয়ংকর আশংকার কথা ধ্বনিত হয়েছে। এবং বলাবাহুল্য যে আশংকা পৃখিবীর উষ্ণায়ণ নিয়ে, জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে। বিশ্ব উষ্ণায়ণের কারণে যে সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে তার অনেকগুলোই আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়তো মোকাবেলা করতে পারবো ধরে নিলেও সমুদ্রের কাছে আমাদের হার অবধারিত বলা হয়েছে।

সবচেয়ে আশাবাদী মানুষটিও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে, যে ক্ষতি আমরা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি তার কারণে আগামী একশ বছরে কম করে হলেও দেড় থেকে দুই ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এখন পৃথিবীর নিয়তি। এমনকি দুনিয়ার সব মানুষ এখন থেকে দিনরাত চেষ্টা করেও এই যাত্রা ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ পৃথিবীর আগামী একশ বছরের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য একসাথে কাজ করতে কী প্রস্তুত? না মোটেই। ওইদিন শুক্রবারেই ব্রিটিশ জলাবায়ূ বিষয়ক মন্ত্রীর একটি সাক্ষাতকার দেখলাম এখানকার টিভিতে। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলো- এই যে ভীতিকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ে আপনারা কি করছেন? ব্রিটেনবাসীর সুরক্ষার ব্যাপারে কী ভাবছেন? মন্ত্রী জবাবে যা বললো তার সরমর্ম দাড়ায়- তারা বন্যা প্রতিবোধের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন, এছাড়া সবুজ শক্তি ব্যবহারের জন্য তাদের নানান উদ্যোগ রয়েছে।

সাংবাদিকের যে প্রশ্নটি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুললো সেটা এমন- বাট মি. মিনিস্টার, ডাজ ইট রিয়েলি ম্যাটার হোয়াট উই ডু ইন দিস লিটল আইল্যান্ড? পিপল ইন চায়না এন্ড ইনডিয়া স্টিল বানিং কোল ফর এনার্জি। “ মন্ত্রী জবাবে বললেন- ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্য তবে বৃটেন চেষ্টা করছে তাদেরকে সাথে নিয়েই একটা সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কিছু করতে। তারপর যথারীতি কিছু রাজনৈতিক কথা- যেমন, পৃথিবী চায় বৃটেন জলবায়ূ বিষয়ক উদ্যোগের নেতৃত্বে আসুক এবং সেটা তারা করার চেষ্টা করছেন। (এই বক্তব্য অবশ্য পুরোটা শুনতে হয় নি, সাংবাদিক তার আগেই সাক্ষাতকারটির ইতি টেনেছেন)। আমারা পৃথিবীর যে প্রান্তেই খাকি না কেন, আমরা শেষ পর্যণ্ত পানিবন্দী মানুষ।

সে পানি কোন ছোট নদীর নয়, আমাদের বাড়ির পাশের শুকিয়ে যাওয়া খাল নয়। সে পানি পৃথিবীর তিনভাগ সমুদ্রের। আমি নেদারল্যান্ডে, নাকি নিউইয়র্কে নাকি লন্ডনে নাকি সাতক্ষীরায় – তা আসলে তেমন কোন বিবেচনার বিষয় নয়। ভারত মহাসাগরে সুনামি উঠলে তাই আমাদের বাড়ির পাশের পুকুরের পানিও ছিটকে রাস্তায় উঠে আসে। সারা পৃথিবীর ভয়ের এবং আশার জায়গাটাও তাই এখানেই।

আমরা হযতো পৃথিবীর যুদ্ধ বিগ্রহ কিংবা বারাক ওবামার সাথে হাসান রুহানি টেলিফোনালাপ নিয়ে এতই মগ্ন কিংবা জাস্টিন বিবার বা সেলেনা গোমেজের প্রেমোপ্যাখ্যান অথবা মাইলি সাইরাসের টোয়েকিং, আমরা আসলে পৃথিবীর জন্য আমাদের সত্যিকার করণীয়টা ভুলেই যাই। এবং এটাও ধরে নিই- হয়তো এমনিতেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। প্রকৃতি সব ঠিক করে নেবে নিজের মতো করে। প্রকৃতি সব ঠিক করে নেয় বটে, নিতে ভুল করে না, কিন্তু তার মূল্যটা কত ভয়াবহ হতে পারে তার নিদর্শন আমাদের চোখের সামনে গত কয়েক বছরে অসংখ্য এসেছে, আমরা দেখিনি বা দেখেও না দেখার ভান করে আছি। পৃথিবীর অনেক দেশই এখন সমুদ্রের সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হল্যান্ডের প্রোজেক্ট ডেল্টা এমন উদ্যোগের অন্যতম। বৃটেনের যেমন টেমস ব্যারিয়ার। ১৯৮২ সাল থেকে চালু হওয়া এই বাধের মূল কাজ যদিও লন্ডনের বন্যা নিয়ন্ত্রন তবে এর অন্যতম মূল লক্ষ্য নর্থ সি থেকে আসা যেকোন প্লাবনকে থামানো। যখন এটি তৈরি করা হয়েছিলো তখন ধারণা করা হয়েছিলো আগামী একশ বছর অর্থাৎ ২০৮২ সাল পর্যন্তু এটি যথেষ্ট হবে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য। কিন্তু বর্তমানের ধারণা হচ্ছে আগামী দশ বছরের মধ্যে এই বাধ অকেজো হয়ে যাবে সমুদ্রের কাছে।

এ সবকিছুর কারণ সমুদ্রের পানির মৌলিক উচ্চতা বেড়ে যাওয়া। সমুদ্রের কাছে মানব জাতি ও সভ্যতা এবং সেই সাথে সারা পৃথিবীর স্থল জগত জিম্মি হয়ে পড়ছে দিন দিন। জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন এবং বিশেষত বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য মানুষের কার্যক্রমকেই দায়ী করা হয়েছে জাতি সংঘের প্রতিবেদনে এবং শেষে আহ্বান জানানো হয়েছে অন্তত সাধ্যমত যা কিছু করণীয় তা করার। নইলে পৃথিবী নামক আপাতত জানা একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহটির ভয়ানক পরিণতি ঠেকানো যাবে না। আসলেই আমাদের কী করণীয় আছে? আদৌ কী আমাদের সাধ্যের মধ্যে কিছু আছে? ব্যক্তিগত পর্যায়েই অনেক কিছু করার আছে আমাদের।

সে প্রসঙ্গে একটু পরে বলবো। তার আগে জাতীয়ভাবে আমাদের ধ্বংসাত্মক প্রবণতার কথাটা বলা দরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের। ভারতের সহায়তায় কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন হবে সুন্দরবনের কাছে রামপালে। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিয়ে আমাদের দেশের কতটা অর্থনৈতিক উন্নতি হবে সেটা আমাদের ভেবে নিতে কষ্ট হওয়ার কথা না।

আমরা আরো কতভাবে সে পরিমাণ অর্থনৈতিক উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করছি সেটাও আমরা জানি। কিন্তু আমরা যে বিষয়টা বুঝতে একেবারেই পারি না সেটা হচ্ছে তৌফিক এলাহি বা গওহর রিজভী এরা আসলে কোন দেশের মানুষ? এরা আদৌ পৃথিবীর কোন বাসিন্দা কি-না সেটাও মাঝে মাঝে প্রশ্নের মুখে পড়ে। এদের ছেলে মেয়ে বা অন্য কোন ভবিষ্যত প্রজন্ম আছে কি-না সেটাও বুঝতে পারি না। নইলে কীভাবে এত এত সাবধানবাণী সত্তেও তারা এমন একটি আত্মঘাতি প্রকল্প এগিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর হয়? তারা কী ভেবে বসে আছেন- এখন থেকে ২০ বছরের মধ্যে তারা এমনিতেই মারা যাবেন সুতরাং তখব বাংলাদেশ বা পৃথিবীর কী হয় তাতে তাদের কি যায় আসে? কিন্তু আমাদের তো অনেক কিছু যাবে আসবে, আমাদের তো চোখের সামনে আমাদের নতুন প্রজন্ম ধ্বংসের দোড়গোড়ায়, তাদের নিরাপত্তা, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। রামপালের প্রকল্প তাই যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে।

এটা শেখ হাসিনা, শেখ জয় কিংবা তৌফিক এলাহিদের বিষয় না। এদের জীবনকাল বেশি বাকি নেই আর। সুতবাং তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যত যাচনা করে লাভ নেই। ভবিষ্যত চাইতে হবে তাদের কাছে যারা ভবিষ্যতের ভালো মন্দের ফল ভোগ করবে। অনেকেই বলবেন, ১৩২০ মেগার বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করেই কী পৃথিবীর ভাগ্য বদলাবে? আমরা বলবো- ভাগ্য বদলাবে না, কিন্তু প্রতিটা ছোট উদ্যোগ একসাথে করে অনেক বড় কিছু হতে পারে।

বিদ্যুত উন্নতির একমাত্র নিয়তি নয়। উন্নয়নের আরো অনেক জায়গা আছে। নতুন কয়েকটি কারখানায়, নতুন কিছু বাড়িতে বিদ্যুত পাঠিয়ে টিভি দেখার আনন্দ দেয়ায়, কিংব নতুন কয়েকটা স্কুলে কম্পিউটার চালানোর ব্যবস্থা করার মধ্যেই উন্নতি বন্দী হয়ে নেই। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের দেশে সুর্যোর আলোর এমন উদার প্রাপ্তি যে সহজেই আমরা সৌর বিদ্যূতের দিকে যেতে পারি। সারা পৃথিবী সেদিকেই ছুটছে।

আমাদের ব্যক্তিগত অভ্যাসের পরিবর্তন এখন খুবই জরুরি। আমাদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের পিছনে একটু একটু শক্তি সাশ্রয় করেও অনেক কিছু হতে পারে। সব কিছু দেখার মতো তাৎপর্যপূর্ণ হতে হবে এমন। আমরা প্রকৃতিকে সামান্য ভালো কিছু দিলে সেটা সে অনেকগুণ বাড়িয়ে নেয়। আমাদের উঠতি প্রজন্মের মধ্যে এ ভাবনাটা যদি দেয়া যেতো! পৃথবীটা তাদের, তাদেরকেই এর সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।