আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাত দ্রোণাচার্যের সাতকাহন

নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। এরই মধ্যে ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোয় চলছে নানারকম মেরুকরণ। পয়েন্ট তালিকায় জনপ্রিয় দলগুলো কেউ ওপরে, কেউ নিচে। চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাউন্ডও ইতিমধ্যে মাঠে গড়িয়েছে। ক্লাবগুলোর সাফল্য-ব্যর্থতার সারথি কোচদের প্রাথমিক পারফরম্যান্সও এখন অতসী কাচের নিচে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, আর্সেনাল, বায়ার্ন মিউনিখ, রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার দ্রোণাচার্যরাও এখন ব্যস্ত সাফল্য-ব্যর্থতা, বীরদর্পে এগিয়ে চলা আর হোঁচট খাওয়ার খতিয়ান মেলাতে। ইউরোপের শীর্ষ সাতটি ক্লাবের কোচদের বর্তমান অবস্থা আর ভাবনা নিয়েই প্রথম আলো ডটকমের পাঠকদের জন্য এই বিশেষ প্রতিবেদন

ডেভিড ময়েস: শুরু থেকেই সংকট

স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের উত্তরসূরি হওয়াটাই একটা চাপ। আরও বড় চাপ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো সাফল্য-প্রধান দলের কোচ হওয়া। একসময় এভারটনের কোচ ছিলেন। ইপিএলে মাঝামাঝি একটা অবস্থানের বাইরে যাওয়ার কোনো চাপ ছিল না।

কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ডের লাল বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে চাপ কাকে বলে সেটা খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন ডেভিড ময়েস। লিগের ৬ ম্যাচে ৩ হারে ময়েসের চাপটা এখন রূপ নিয়েছে অবিন্যস্ত এক সংকটে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এ মুহূর্তে তাঁর দল ইউনাইটেডের অবস্থান দ্বাদশ। ময়েস রাতে ঘুমাচ্ছেন কীভাবে কে জানে!

ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি: হাল ছাড়তে নারাজ

ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হয়েই দলের সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন ম্যানচেস্টার ডার্বিতে বাজিমাত্ করে। তবে শনিবার অ্যাস্টন ভিলার কাছে দুবার এগিয়ে গিয়েও হারের পর একটু চাপে আছেন।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সিটির অবস্থান খুব একটা খারাপ নয়। তবে আরও ভালো হতে পারত ছোটখাটো ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে। এখনো পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৩ জয়, ২ ড্র আর এক হারে তাদের অবস্থান পঞ্চম।

লিগ টেবিলে ৩ নম্বর অবস্থানে থেকে মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য অনুপ্রেরণা পেতেই পারেন পেলেগ্রিনি। হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনো অবস্থানে নেই এবারই দায়িত্ব নেওয়া এই চিলিয়ান কোচ।



হোসে মরিনহো: যত দোষ ওই রেফারির!

লিগ টেবিলে চেলসির অবস্থান খুব একটা খারাপ নয়। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচেই সুইস দল এফসি বাসেলের কাছে হেরে যাওয়ায় মালিক রোমান আব্রামোভিচের শ্যেনদৃষ্টি পড়ে গেছে মরিনহোর ওপর। লিগের পারফরম্যান্সটা খুব একটা শক্তপোক্ত নয়। সেদিন টটেনহামের সঙ্গে কোনোমতে ড্র করে মান বাঁচিয়েছে দল। তবে মরিনহো স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে উদোর পিণ্ডি অন্যের ঘাড়েই চাপাতে চাইছেন।

টটেনহামের বিপক্ষে ম্যাচে তোরেসের লালকার্ডটি নিয়েই তিনি এখন বাজার গরম করে যাচ্ছেন। রেফারিং ‘খারাপ’ হলে কোনো দলের পক্ষেই লড়াই করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

পেপ গার্দিওলা: বায়ার্নকে হাঁটাচ্ছেন নিজের পথেই

বার্সেলোনা ছেড়ে এক বছর ফুটবলের বাইরে ছিলেন এই স্প্যানিশ কোচ। এ বছরের শুরুতে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভ্রূ কিছুটা কুঁচকেছিলেন নিন্দুকেরা, ‘এবার বোঝা যাবে পেপের দৌড় কতদূর। ’ নিন্দুকদের ওই কথায় কান দেননি বার্সার হয়ে প্রায় সবকিছুই জয় করা এই কোচ।

বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নিয়েই একাগ্রচিত্তে দল সাজাতে শুরু করলেন। আপাতত দল নিয়ে তিনি খুশিই। জার্মান বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন স্বমহিমাতেই উজ্জ্বল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বরুসিয়া ডর্টমুন্ড সমানে টক্কর দিয়ে চললেও পয়েন্টে এখনো সমানে-সমানই। গোলগড়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও গার্দিওলা দলকে হাটাচ্ছেন তাঁর পথেই।

কিছুদিন আগেই তিনি বলেছেন, বায়ার্ন নাকি ধীরে হলেও সঠিক পথে চলা শুরু করেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ের শুরুটাও ভালো। ভেলা ভাসিয়ে দিয়েছেন গার্দিওলা। অপেক্ষা কেবল তীরে পৌঁছানোর। এখনো আশাহত হওয়ার মতো কোনো ঘটনাই গার্দিওলার বেলায় ঘটেনি।




আর্সেন ওয়েঙ্গার: স্বপ্ন এবার অনেক বড়

২০০১ থেকে ২০০৪-এর সময়টা এখনো ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে আর্সেন ওয়েঙ্গারের মধ্যে। কী মধুরই না ছিল সময়টা! পর পর দুবার সাফল্যের শীর্ষে গিয়ে হঠাত্ই যেন খেই হারিয়ে ফেলল তাঁর দল। ২০০৪ থেকে ২০১৩। দীর্ঘ বিরতি। নয়-নয়টি বছর।

একেবারেই সাফল্য-বুভুক্ষু ক্লাবটি। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে। এবারের ইংলিশ লিগে এখনো পর্যন্ত শীর্ষ স্থানটা আর্সেনালেরই দখলে। ৬ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে ওয়েঙ্গারের দল। ড্র নেই; হার মাত্র একটিতে।

ফরাসি কোচের মনের মধ্যে এখনই লিগ জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। তাঁর মন বলছে, এবার আর ব্যর্থ হবে না তাঁর দল।

কার্লো আনচেলত্তি: আপাতত নির্বিকার

রিয়াল মাদ্রিদ কোচের যেন কোনো কিছুতেই রা নেই। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হারটাও হজম করে নিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত লিগে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর মতো কোনো বার্তা নেই।

বরং রিয়ালের খেলা বার্তা দিচ্ছে উল্টোটারই। তার পরও আনচেলত্তি এসব নিয়ে ভাবছেন না। তিনি এগিয়ে যেতে চান। দেখতে চান শেষ। এখনো লিগের সাত ম্যাচে ৫ জয়, ১ হার আর ১ ড্র নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার যে পারফরম্যান্স, তাতে অপেক্ষা করে যাওয়া ছাড়া আর কীইবা করার আছে এই ইতালীয় কোচের!

জেরার্ডো মার্টিনো: চির বিনয়ী

বার্সেলোনার কোচরা এমনই হন। কথাবার্তা খুব বেশি বলেন না। চুপচাপ কাজ করে যাওয়াটাই তাঁদের লক্ষ্য। গার্দিওলা, ভিলানোভা—সবাই এই পথেই হেঁটেছেন। আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্ডো মার্টিনোও ব্যতিক্রম নন।

স্প্যানিশ লা লিগায় শীর্ষ স্থানটা তাঁর দলেরই। প্রথম থেকে টানা সাতটি ম্যাচ জেতাতে পারেনি বার্সার ইতিহাসের আর কেউই। প্রতিটি ম্যাচেই যেন নিজেদের আরও পরিশীলিত ঢংয়ে আবিষ্কার করছে দলটি। দলের এই প্রাথমিক সাফল্যের কোনো কৃতিত্বই নিতে চান না মার্টিনো। জানিয়েছেন, পাড়ি দেওয়ার পথ এখনো অনেক বাকি।

পুরো মৌসুম বাকি, পড়ে আছে চ্যাম্পিয়নস লিগও। সব জিতেই উত্সবটা করতে চান ‘টাটা’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।