আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প লিখলাম , পড়বেন না শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে ।

ভেঙে ভেঙে নিজেকে আবার গড়েছি । এইবার হয়তো থাকতে পারবো ।

স্কুল শেষ আজকের মত। বাসায় ফিরতে ফিরতে মনে পড়ে আশিকের ;একটু পানি খাওয়া হয়নি আজ ক্লাসে, এমনকি টিফিনেও না। বোতলের পানি ফুরোয়নি, আম্মু বার বার করে দিয়েছিল সব পানি যেন শেষ হয়।

ব্যাগের থেকে পানি ভর্তি সেভেন আপের হাফ-লিটারের বোতলটা বের করে নেয়, মুখে একটূ একটূ পানি নেয় আর পিচিক পিচিক কুলি করে করে ফেলতে থাকে আর হাঁটতে থাকে বাসার দিকে। দুপুরের খাড়া রোদে পথের পাশের শুকনো বালি ভেজার আগেই শুকিয়ে যায়। বোতল খালি হয়ে আসে। বাকিটা পথ একটা পাথরকে লাথি দিয়ে দিয়ে নিজেদের কোয়ার্টার পর্যন্ত নিয়ে আসে। ঘরে এসে আশিক প্রতিদিনকার মত কাঁধ থেকে ছুড়ে দেয় সোফার উপর, ঠিক সোফার উপরে পড়লনা ব্যাগটা, পায়ায় লেগে নিচে পড়ে গেল।

পিছন থেকে মিসেস মতিন চেঁচাতে থাকেন, "এই ব্যাগ ওঠা আশিক, কত বার বল্লাম ড্রইং রুমের এভাবে ব্যাগ রাখবিনা... দেখো দেখো মোজা গুলো পর্যন্ত জুতার ভিতরে গুঁজে রাখলোনা ছেলেটা। " কিছুই কানে নিলোনা আশিক। চলে গেল বারান্দায়। মাথা উবু করে নিচে দেখতে লাগলো। দেখতে পেলো মাসুদ ভাই আসছে।

হাতে তার একটা পাখির খাঁচা। খাঁচার ভেতরে একজোড়া রঙ্গিন পাখি। রং নিয়ে জ্ঞ্যন খুবি সীমিত আশিকের। মনে মনে যা বুঝলো তা হলো কমলা সবুজ রঙ্গের দুইটা পাখি আনসে মাসুদ ভাই। মাসুদ ভাই আশিকদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন; মিতুর বড় ভাই।

মিতু আশিকের মতই ক্লাস সিক্সে পড়ে। কলোনীর পাশেই গার্লস স্কুলে। মিতুরা অনেক বছর ধরেই এই কলোনীতে। আশিকরা এসেছে গত বছরের শুরুর দিকে । মুখচোরা আশিকের বরাবরই লজ্জা পায় মিতুকে দেখলে।

কথা খুঁজে পায়না। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থেকেও তাদের বন্ধুত্ব হয়ে ওঠেনি কখনো। আশিকের কাছে মিতু বরাবরি একটা রহস্য। এদিকে মাসুদ ভাইও দেখি বারান্দায় এসে গেছেন। বারান্দায় গ্রিলের পাশে কায়দা করে খাঁচাটা ঝুলিয়ে দিলেন।

মাসুদ ভাইদের বারান্দাটা আশিকদের বারান্দা থেকে বেশি দূরে না। সাত-আট ফিট হবে। কিছুক্ষণ পর মিতু আসলো বারান্দায়। খুব খুশি হয়ে দেখতে লাগলো পাখিগুলোকে। ঐ বারান্দা মিতুকে আসতে দেখে আশিক ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল খুব ব্যস্ত পায়ে।

বিকালে ক্রিকেট খেলতে নামলো আশিক। মাসুদ ভাইদের সাথেই খেলে। খেলতে বললেন মাসুদ ভাই আশিককে, "লাভবার্ড পায়া গেলাম এক জোড়া সস্তায়, নিয়া নিসি, মিতুর বার্থডে আইজকা, হ্যার খুব পছন্দ নাকি লাভবার্ড" শুনে আশিক মাথা নাড়ায়, মুখে বলে "ওঃ!" পাখিগুলো সুন্দর বটে, কিন্তু লাভবার্ডের নাম আজ সে প্রথম শুনলো। খেলা শেষে বাসায় ফিরে আশিক। বারান্দায় পা ফেলতেই দেখে ঐ বারান্দায় মিতু।

এক মনে লাভবার্ডের জোড়া দেখছে। আস্তে করে ঘরে ঢুকে যায় আশিক। এভাবে দিন কেটে যেতে থাকে। ১২ দিন পর, স্কুল শেষে, ড্রেস না পাল্টেই নিয়মমত বারান্দায় যায় আশিক। উবু হয়ে নিচে দেখতে থাকে।

গুণগুণ করে মাথা দোলাতে দোলাতে হঠাৎ মিতুদের বারান্দায় চোখ আটকে যায় আশিকের। খাঁচায় একটা পাখি নেই। আশিক অবাক হয়। বিকালে খেলতে গিয়ে মাসুদ ভাইয়ের কাছে জানতে পায় একটা লাভবার্ড মারা গেছে গতরাতে, মিতু সারাদিন কিছু খায়নি, স্কুলেও যায়নি। শুনে আশিকের মন ছটফট করে ওঠে।

কি যেন খেলে যায়। আশিকের মাথা বুদ্ধি খেলে শুধু একটা লাভবার্ড কিনবে। উপহার দেবে মিতুকে। পরের দিন স্কুলে শেষে তৌফিকের বাসায় যায়। তৌফিকের মামার পাখির শখ খুব।

উনার কাছে থেকে জেনে নেয় লাভবার্ড সম্পর্কে। অনেক দাম নাকি। আশিকের সাধ্যের বাইরে। বাবাও কোনদিন কিনে দেবেনা। হাল ছাড়েনা আশিক।

বাসায় আসে জমানো সব টাকা বের করে। ঈদের সালামী, বড় মামা বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু টাকা দিয়েছিল, সব। একটা আইপড ন্যানো কিনবে বলে জমাচ্ছিলো টাকা। সব মিলিয়ে ১৩০০ টাকা। পরের দিন স্কুলের পর পাখির মার্কেটে হাজির হয় আশিক।

ঘুরতে থাকে পাখির মার্কেটে। কেওই শুধু একটা লাভবার্ড বিক্রি করবেনা, জোড়াই কিনতে হবে। শেষে খুঁজতে খূঁজতে একটা পেয়ে যায়, আরেকটা জোড়াবিহীণ লাভবার্ড, ওটারো নাকি জোড়া মরে গেছে। কিনে নিয়ে আসে আশিক। ঘরে ঢুকে আম্মু দেখার আগেই বারান্দায় পাচার করে পাখি সমেত খাঁচা।

একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে খাঁচাটা ঝোলানোর বন্দোবস্ত করতে থাকে আশিক। এমন সময় মিতুর ডাকে প্রায় আঁতকে উঠে সে, "আশিক? ওটা কি?" আশিক উপরের দিকে তাকিয়ে খাঁচা বাঁধতে বাঁধতে অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়, "লাভবার্ড"। "তুমি কিনেছো?" মিতু জিজ্ঞেস করে। "হুঁ" মিতুর দিকে না তাকিয়েই জবাব দেয় আশিক। "আরেকটা কোথায়?" মিতুর প্রশ্ন।

ঢোঁক গিলে আশিক। একটু থেমে জবাব দেয় "মারা গেছে। " মিতু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে "আনতে না আনতেই?" আশিক আর জবাব দেয়না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মিতু ভেতরে ঢুকে যায়। আশিকের মাথা ভোঁ ভোঁ করতে থাকে।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পাশাপাশি থাকে ওরা। আজই প্রথম কথা বললো মিতু ওর সাথে। এদিকে মিসেস মতিন বারান্দায় এসে তো রীতিমত ভিরমি খেয়ে ওঠেন। আশিক আম্মুকে বোঝায় তৌফিকের পাখি এটা। কিছুদিনের জন্য এনেছে সে।

আবার দিয়ে আসবে। চেঁচাতে চেঁচাতে রান্নাঘরে ফিরে যান মিসেস মতিন। বিকালে আবার ক্রিকেট খেলতে নামে আশিক। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শুনতে পায় পেছন থেকে মিতু ডাকছে। মিতু ইনিয়ে বিনিয়ে যা বল্ল আশিক তা নিচের দিকে তাকিয়ে শুনে গেল।

মিতুর যা বল্ল তা হলো পোটলার সঙ্গী হিসেবে আশিকের নতুন পাখিটা মিতুর খাঁচায় থাকতে পারে, আশিকের যদি তাতে কোন সমস্যা না থাকে আর কি। আশিক এদিকে চিন্তা করতে থাকে লাভবার্ডের নাম আবার পোটলা হয় কিভাবে। ঐ জোড়ার নাম ছিলো নাকি পোটলা-পুটলি। আশিক মনে মনে খুব খুশিই হয়। কিন্ত মুখে একরাশ বিরক্তি এঁকে বল্ল "আচ্ছা দেখি!"- বলে এক লাফে চার ধাপ সিঁড়ী ডিঙ্গাতে ডিঙ্গাতে নেমে খেলতে চলে গেল।

পরদিন শুক্রবার, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা আশিক। পাখিটাকে খাওয়ায়। এরপর খাঁচাসহ নিয়ে হাজির হয় মিতুদের ফ্ল্যাটের সামনে। কলিং বেল টেপে। এদিকে আশিকের বুক ঢিপ ঢিপ করছেই তো করছে।

দরজা খোলে মিতুর মা। মাসুদ ভাই নেই। বন্ধ শেষে খুলনা চলে গেছেন উনি। কুয়েটে পড়েন মাসুদ ভাই। মিতুর মা বেশ অমায়িক মহিলা।

পুরা কলোনির সবাই রাজিয়া আপা নামে চেনে। খুব হাসি হাসি মুখে আশিকের দিকে দেখেন তিনি। "কেমন আছো বাবা? হাতে এটা কি তোমার?" জিজ্ঞেস করেন। পাখি, আন্টী, মিতু দেখতে চেয়েছে, আন্টী। রাজিয়া আপা বলেন, "তো ভেতরে আসো বাবা।

" এদিকে মিতুও আসে। খাঁচা হাতে মিতুর পিছে পিছে ওদের বারান্দায় যায় আশিক। মিতু আশিকের হাত থেকে খাঁচাটা নেয়। বের করে আনে পাখিটাকে, এরপর একটা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে পোটলার খাঁচায় পুরে দেয় আশিকের লাভবার্ডটাকে। আশিক দেখতে থাকতে ভ্যাবলার মত।

এবার মিতু আশিকের দিকে ঘুরে তাকায়, "ওরা একসাথে থাকলে কিছুদিন পরে ডিম দেবে। ডিম থেকে বাচ্চা হলে ওটাকে আমরা পোষ মানাতে পারব। পোষ মানলে ওরা হাতের আঙ্গুলে বসবে। বাজার থেকে নতুন কেনা পাখিরা সহজে পোষ মানেনা। " মিতু বলতে থাকে।

আশিক কল্পনায় ডুবতে থাকে। এরপর থেকে প্রতিদিন আশিক মিতুদের বাসায় আসতে থাকে, একসাথে পাখিদুটোকে দেখে, খাওয়ায়। আর স্বপ্ন দেখতে থাকে তাদের লাভবার্ড ডিম দিবে। বাচ্চা হবে। সে বাচ্চা তারা পোষ মানাবে।

মিতুর হাতে লাভবার্ড বসে আছে চিন্তা করে কেমন যেন আনন্দ পায় আশিক। এদিকে আশিকের আর তর সয়না। তৌফিকের কাছে থেকে জানতে পারে, পাখিদের ডিম দেওয়া ত্বরান্বিত করতে তাদের কিছু আলাদা খাওয়া দিতে হয়। যাকে পাখি যৌনউত্তেজক খাবার বলা হয়। অত কিছু আশিকের মাথা ঢুকেনা।

বন্ধুর কাছে থেকে নিয়ে আসে পাখির যৌন উত্তেজক খাবার। খাওয়ানো হয় পোটলা আর নতুন পুটলি কে। মিতুকে এসব কিছুই জানায় না আশিক। এভাবে আরো অনেক দিন চলে যায়। স্বপ্নেরা ডানা মেলে, ডানা ঝাপটায় অপেক্ষায়।

আশিক মিতুর অপেক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। এমন সময় মাসুদ ভাই বাসায় ফেরত আসেন। ইউভার্সিটিতে দুই পার্টির মারামারি, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। একদিন আশিক সব খুলে বলে মাসুদ ভাইকে। সব শুনে মাসুদ ভাই খাঁচা খুলেন।

পোটলা পুটলিকে বের করে আলাদা করে কিছুক্ষন দেখেন। এরপর হাঁসিতে ফেটে পড়েন। এরপর যা জানা যায় তা হলো, পোটলা সঙ্গী হিসেবে আশিক যে পুটলি এনেছিল, সেটাও একটা পোটলা ছিল। মানে আরো একটা মদ্দা পাখি, খাঁচার পুরোনো মদ্দা পাখির সাথে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.