আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী হতে যাচ্ছে আমেরিকায়?

১৭ বছর পর আবারও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে আমেরিকার সরকারব্যবস্থার অচলাবস্থা। গণমাধ্যমের ভাষায়, এটা ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউন’। সোমবার মধ্যরাত থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে জাতীয় পার্ক, পরিবেশবিষয়ক সংস্থা, মহাকাশ গবেষণা সংস্থাসহ (নাসা) কেন্দ্রীয় সরকারের বহু সেবা খাত। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে আংশিকভাবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাত লাখ চাকুরেকে বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটিতে চলে যেতে হয়েছে।

প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মার্কিন অর্থনীতিতেও।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতিবিদেরা হিসাব করে দেখেছেন, দুই সপ্তাহের অচলাবস্থা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে দিতে পারে ০.৩ শতাংশ। আর যদি এই ‘শাটডাউন’ তিন বা চার সপ্তাহ ধরে চলে, তাহলে এটা কমে যাবে ১.৪ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে এই অচলাবস্থা স্থায়ী হয়েছিল ২১ দিন। এবারের পরিস্থিতিটা বারাক ওবামা প্রশাসনের জন্য অস্বস্তিকরই হওয়ার কথা।

কারণ অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে, বেশ কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রটির অর্থনীতি।

সেবা খাতে অর্থ বরাদ্দসংক্রান্ত বিল অনুমোদন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় শুরু হয়েছে এই অচলাবস্থা। ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের এই রেষারেষি যদি চলতেই থাকে, তবে খুব দ্রুত আরও বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে মার্কিন সরকার। কারণ, এ মাসেই তারা অতিক্রম করে যাবে ‘ঋণ গ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা’। নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি না হলে দেশটির অর্থনীতিতে নানা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আসলে গত ১৯ মে ১৬.৬৯৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সর্বোচ্চ সীমাটি পেরিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ বিশেষ দক্ষতায় সবকিছু পরিচালনা করছে। কিন্তু সেটা খুব বেশি দিন সম্ভব হবে না। কংগ্রেস যদি এই ‘ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা’টা বাড়িয়ে না নিতে পারে, তবে ১৭ অক্টোবরের পর থেকেই মুদ্রাসংকট শুরু হবে বলে জানিয়েছে রাজস্ব বিভাগ।

অনেকে এটাকে খুব বড় সমস্যা হিসেবে না-ও দেখতে পারেন।

কারণ, ১৯৬০ সালের পর থেকে এই ‘ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা’টা বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে ৭৮ বার। কাজেই আরও একবার সেটা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা হয়তো খুব বেশি কঠিন হবে না। কিন্তু ঋণের বোঝাটা যে ক্রমেই ফুলেফেঁপে উঠছে, সেটাও আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। আর এবার ধার করা অর্থ দিয়েই আগের ঋণগুলোর সুদ পরিশোধ করার সুযোগও আমেরিকা হয়তো পাবে না।

এর আগে কোনোবারই আরও বেশি দেনা করার ন্যায্যতা নিয়ে রাজনৈতিক দর-কষাকষি হয়নি, বরং সত্যিকারের বিতর্কটা হয়েছে, এটা কোন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে সেটা নিয়ে।

কিন্তু বর্তমানের দ্বিধাবিভক্ত কংগ্রেসে এটা পরিণত হয়েছে গণবিধ্বংসী রাজনৈতিক অস্ত্রে।

সরকারের অচলাবস্থার চেয়ে এই ‘ঋণ নেওয়ার সর্বশেষ সীমা’র বিষয়টিকেই মার্কিন অর্থনীতির জন্য বেশি হুমকি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশওয়ার্থ বলেছেন, ‘“ঋণ নেওয়ার সর্বশেষ সীমা” বাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়ে যে আলোচনা হওয়ার কথা, বর্তমান অচলাবস্থা সেটার জন্য খুব ভালো ইঙ্গিত বহন করছে না। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতারা যেভাবে এই অচলাবস্থা তৈরি করেছে, তাতে ঋণসংক্রান্ত আলোচনায় তাঁদের অবস্থানটা খুব বিপজ্জনকই হবে। ’

১৭ অক্টোবর আমেরিকান ট্রেজারির হাতে থাকবে মাত্র ৩০ বিলিয়ন ডলার।

সারা দিনে সরকারের সব খরচ বহন করার জন্য যেটা যথেষ্ট না। সাধারণত এক দিনে সরকারের খরচ হয় প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। তারপর আসলে কী হবে, সেটা এখনো কেউই জানে না। কারণ এ রকম অবস্থায় আমেরিকাকে আগে কখনোই পড়তে দেখা যায়নি। সে রকম পরিস্থিতি যে এই ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউনের’ চেয়েও খারাপ কিছু হবে, সেটা ইতিমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথমবারের মতো ঘটবে। গভর্নমেন্ট শাটডাউনের চেয়ে সেটা অনেক বেশি ভয়ংকর। তা হবে একটা অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। ’

কাজেই আগামী কয়েক সপ্তাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে যে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিরই কৌতূহলী নজর থাকবে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।