আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"...ভুত তো পূরুষদের বেলায়, তোমাকে পেত্নীর মত লাগছিল"

দু:খিত, সার্ভার এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে। একটু পর আবার চেষ্টা করুন।

পৃথিবীর অনেক কঠিন কাজের মধ্যে একটা কঠিন কাজ হচ্ছে মানুষকে আনন্দ দেয়া| নিটোল আনন্দ দেয়া| ছোট্ট কিছু একটা লিখবেন যা পড়ে সবাই হোঃ হোঃ করে হেসে উঠবে| দুষ্কর ব্যাপার| মানুষ তার জীবনে পুরো সময়টার বেশীক্ষণ হাসে নাকি বেশীক্ষণ কাঁদে? আমার মনে হয় মানুষের হাসি কান্না গুলো একটা আনুপাতিক হারে হয়| যেমন অনেকদিন পর কারও ছোট্ট রসিকতায় হেসে ফেললেন, আর ওমনি চোখটাও জলে ভিজে উঠলো| বুঝবেন; অনেক দিন এভাবে প্রান খুলে হাসেন না এবং অনেক দিন সমস্ত বুক শূন্য করে কাঁদেন না| আরও মজার ব্যাপার আয়োজন করে কখনও হাসা যায় না, আবার ঘর অন্ধকার করে চুপ চাপ বসে কাঁদাও যায়না| আনন্দ কষ্টের পুরো ব্যাপারটা মাঝেমাঝে পাশাপশি হাটে, অনেকটা রেল লাইনের মত, সমান্তরাল হয়ে| তাহলে আনন্দ অশ্রুটা কি? এইটাকে রেল লাইনের “T” পয়েন্ট অথবা জাংশন বলা যায়| এই জায়গা গুলোতেই রেল লাইন একে অপরকে ক্রস করে, এখানটা তে ট্রেন তার দিক পরিবর্তন করে| আর তাই বোধ হয় আনন্দে আত্নহারা হয়ে মন ও ‘তার” দিক পরিবর্তন করে| আনন্দ ঘন মূহুর্তে চেনা শত্রুকে ও ক্ষমা করে দেয় অনেকে| তিরিশ দিন তারাবী নামাজ পড়তে আসা পিতা ও তার পুত্র, কত হবে পুত্রের বয়স ১৩ কি ১৪? বোধ করি আমি কালে ভাদ্রে তারাবী নামাজে গেলেই ঐ দুই জনকে মসজিদের বারান্দায় নির্দিষ্ট জায়গায় প্রায় সব দিনই দেখেছি| “ঈদের” নামাজে ও এই দুজন কে দেখতে পাই| ইনফেক্ট এরা দু’জনই আমার ঠিক সামনেই বসে আছে| পিতা পুত্রের গায়ে একই ধরনের পাঞ্জাবী, তাদের টুপি ও একই ডিজাইনের, অতি সস্তা দরের| ঠিক পিছনে বসায় তাদের আতরের তীব্র গন্ধে আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হবার উপক্রম| খুদবা চলছে পিতা সমানে ঝিমাচ্ছেন আর পুত্রটি ভীষন রকম বিরক্ত| পিতার ঝিমুনি কেটে গেলেই তিনি পুত্রের পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করে দিচ্ছেন এতে পুত্রটি আরও বিরক্ত কিন্তু কিছুই বলছে না| বাবার এই অতি তদারকি তাকে ভীষন লজ্জায় ও ফেলে দিয়েছে বটে| সে যাই হোক, নামায শেষ হলো খুদবা শেষ হলো| হুজুর মহাদয় এবার লম্বা মোনাজাত ধরেন| এই সময়টায় অনেকেই কাঁদেন| ক্ষমা চান আল্লার কাছে| ক্ষমা চান জীবনের শত কোটি পাপের জন্যে, আর কেঁদে কেটে একাকার হয়ে যান| খেয়াল করলাম এই পিতাও দু’হাতে মুখ ডেকে কাঁদছেন| তিনিও আল্লাহর কাছে তার জীবনের সকল পাপের জন্যে ক্ষমা চাচ্ছেন| …এক মিনিট ..এই জায়গাটায় এভাবে লিখতে ভালো লাগছে না। লেখাটার গতি পাল্টে দিতে ইচ্ছে করছে, বরং এ ভাবে লিখি.. এর পর থেকে….. খেয়াল করলাম পিতা দু’হাতে মুখ ডেকে কাঁদছেন| কেন জানি মনে হচ্ছে, …তিনি কাঁদছেন এক ধরনের গ্লানি থেকে| তিনি কাঁদছেন এক ধরনের অপরাধ বোধ থেকে| এক ধরনের ব্যর্থতা তথা পরাজয়ের কষ্টো থেকে| এই পিতার সামর্থে নিশ্চয় কুলায়নি আজকের দিনে পরিবারের জন্যে ভালো কোন খাবার দাবার আর দামী কাপড়-চোপড় এর ব্যবস্থা করতে| হয়ত করতে পারেননি তার “সাত” বছর বয়সি আদরের মেয়েটির জন্যে হাল ফ্যাশানের "মাসাককালি" (২০০৮ এর) ড্রেস কিনে দিতে কংবা স্ত্রীর জন্যে পছন্দো মত কোন শাড়ী| এই পিতা কাঁদছেন কারন তার অর্থোনৈতিক মুক্তি আসেনি| স্বচ্ছলতা নামের ঐ জল ফড়িং তার হাত ফসকে গেছে এবার ও| কারন অফিসের ঈদ বোনাস মানে স্যালারীর ৫০%| স্যালারীর ৫০% মানে বেসিক এর ৫০%| আর এই ৫০% এ জিনিস পত্রের গগনচুম্বী দাম, ফায়ার ব্রিগেডে খবর দেবার মত আগুন দামের বজার সদাই| আর ৫০% বোনাস মানে আমার মত লোক জনের লেখা-লেখি করার কোন বিষয় খুঁজে বের করা যা অতি পুরনো ট্রিকস| যে সব পড়ে মন ভালো না কেবল খরাপ হয়| ঈদ আনন্দ খুঁজে পাবেন চেনা অলি গলির অচেনা গরীব ছোট্ট ছেলে-মেয়ে গুলোর উচ্ছাসে ভরা মুখ গুলোর দিকে তাকালে| ওদের রঙীন জামার দিকে তাকিয়ে বুঝবেন আনন্দের একটা বিশেষ রং আছে, এবং আনন্দের বিশেষ একটা বেসুরো সুর আছে অর্থাৎ এই ছোট্ট ছোট্ট মানুষ গুলোর অহেতুক চিৎকার চেচামিচি আর উচ্চ স্বরে হাসি আনন্দ শুনলেই বুঝবেন| এদের কাছে ঈদ আনন্দ মানে রাস্তার মোড়ের লাল শার্ট পরা ভাসমান আইসক্রীম ওয়ালার কাছ থেকে দুই টাকা দামের (সর্ব নিম্ন রেট) আইসক্রীম কিনে খাওয়া| এলাকার নব্য ব্যবসায়ী কিশোর সাইজ বয়সী বড় ভাইদের সবুজ প্যান্ডেল (আস্থায়ী) পোষ্টার, ঈদ কার্ড আর ষ্টিকার এর দোকান থেকে সালমান শাহ্ আর পূর্ণিমার পোষ্টার কেনা| আর যথারীতি ঐ দোকান গুলোর উচ্চ ভলিউমে হিন্দী গান বাজে (যথারীতি ইন্ডিয়ান সিভিল ওয়ার এর থিম সং)| ছোট্টো ছোট্টো ছেলে মেয়ে গুলোর চোখের প্লাষ্টিক সান গ্লাস আর লাল ছোট্ট পার্স এর সাথে, আনন্দের অদ্ভুদ বহিপ্রকাশ| ওরা কিন্তু এতেই ভীষন খুশি| ওদের বাধাহীন ছোটা ছুটি আর ব্যস্ততার সারাদিন এ বাড়ী ও বাড়ী, আর সাথে সালামি কলেক্ট.. এটাই একটা আনন্দো!! অসাধারন!! এই আনন্দে আরো যোগ হয় আগন্তুক চটপটি ওয়ালা| চটপটি ওয়ালাও আনন্দিত তার রমরমা ব্যবসা আর জমজমাট ক্রেতাদের ভীরে| আবার একটা ছোট্ট গল্পের মত দু’টি মানুষের জীবনের সমীকরন যদি আঁকি এ ভাবে….! আবির আর সরার পরিচয়টা ইউনিভার্সিটিতে| একটা সময় পর দু’জনই অনুভব করে অদৃশ্য এক দুরন্ত প্রজাপতির অস্তিত্ব… ওটা বোধ হয় ছিল একটা অনিরময় যোগ্য অসুখ ঐ দু’জনার| এটি এপিডেমিক না কিন্তু এর অনুভুতির সেল ডিভিশন অনেক তারাতারি| এদের দু’জনার ভালোবাসার বাড়াবাড়ি শেষমেশ সূনীল এর কবিতা| .. দু’জন ঠিক করে ঈদে রিক্সা করে ঘুরবে জোড়া শালিকের মত দিনমান..| কিন্তু ঈদের দিন তো সম্ভব না| তাই ঈদের দ্বিতীয় দিন বাসায় মাকে সত্যি.. মিথ্যে বুঝিয়ে বাসা থেকে বের হয় “সারা”| “আবির” অপেক্ষা করবে বিকেলে ঠিক তিনটায়, “ছায়ানটের” সামনে শঙ্করে| এক আজব ঘটনা ঘটলো সেদিন| “সারা” এলো শাড়ী পরে.. দূর থেকে দেখে “আবির” চিনতেই পারেনি| অদ্ভুত তো!! অসাধারন!!! এতো সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে, এক কথায় বললে love at first sight…। আবার নতুন করে প্রেমে পরার মত, শুধু কপালে ছোট্টো একটা টিপ আর চোখে কাজল এই তার সাজগোজ| দেরী করে ফেল্লাম” আবির হেসে ফেল্ল, বললো না ঠিক আছে …সারা তোমাকে সুন্দর লাগছে.. অনেক সুন্দর.. ঠিক কেমন যেন ‘না বুঝে ওঠার মত সুন্দর’ ।

সারা হেসে ফেল্ল, খিলখিল করে হেসে ফেল্ল.. বিকেলের রোদ ঠিকরে পড়ছে সারার গালে, মৃদু বাতাস একে বেকে দোলা দিয়ে গেল এক দমকা সারার চুলে এটাই বোধ হয় না বুঝে ওঠার মত সুন্দর…. || চমৎকার সুন্দর একটা সময়| ….রিক্সা কিছুদুর যাবার পর সারা চমকে উঠে বললো আবির একটা ভুল হইছে’ বাসা থেকে তারাহুরো করে বেরুনর সময় আমি পুরোন সেন্ডেল টা পরে বের হইছি| এখন কি হবে? চলো বাসায় ব্যাক করি| আরে এই মেয়ে বলে কি! আবির বল্লো কিচ্ছু হবেনা, চলো কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি| কিন্তু মনে হচ্ছে সারা” নারাজ.. উফ্ আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে, আবির এই সব দোষ তোমার|.. চলো ..চলো বাসায় ব্যাক করি| আবির বুঝলো ঈদের বিকেলটাই মাটি| আবিরের উপর কয়েক হাজার রাউন্ড ঝারি চলে| আবির অতিমাত্রার এক জন গন্ডার চামড়ার দ্বিপদী মানব বিশেষ| বকাঝকা এক কান দিয়ে ডুকিয়ে দিব্যি অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়|কারন সে জানে সারার এই রাগ একটু পর কমে যাবে| আবির বল্ল চলো কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি, কিছু খাই তারপর তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসব ok| সারা কিছুই আর বলেনা শুধু রাগে গজগজ করছে। সারা বল কি খাবে? কি খাবে বল? সারা রেগে আছে আর উত্তোর টা রেগেই দিল। বল্লো কাচ্চি খবো। এই বিকেলে কেউ কাচ্চি খায়?...ok ok done কাচ্চিই খাব। রিক্সা সোজা লালবাগ “রয়েল”।

কিন্তু বিপদ যখন আসে তখন বোধ হয় চারদিক থেকেই আসে। রিক্সা থেকে নামার সময় সারা হালকা হোচট খেলো.. কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো ঠিক| কিন্তু ঝামেলা এই মেয়ে আরো কিছু একটা করছে। রিক্সা থেকে নেমেই সারার মুখ আরো লাল। সে এখন রাগের ঠিক বিপদ সীমা অতিক্রম করছে। আবির আমার হাতটা ধরো তো।

আবির সারার হাতটা ধরল.. সারার হাত ঘেমে একাকার। আবির আমার সেন্ডেলটা ছিড়ে গেছে, হাটতে পারছিনা দেখতো কোথাও মুচি পাও কিনা। এই মেয়ে বলে কি!! এখানে মুচি কোথায় পাব? মুচি পাওয়া গেলনা সুপার গ্লু দিয়ে আপাদত সেন্ডেল জোড়া দেয়া গেলো। খাবার চলে এসেছে টেবিলে, ধোঁয়া ওঠা গরম কাচ্চি, বোরহানি, বরফ শীতল মিনারেল ওয়াটারের বোতল। সারা চুপ করে আছে।

কোন কথাই বলছেনা এবং কিছুই খাচ্ছেনা। ভীষন গম্ভীর, পরিবেশ থমথমে। আবীরের খুব যেন অচেনা লাগে সারা কে। এই সারাই কি সেই সারা? যে কার্জন হলের সিরিতে বসে ছোট চিরকুটে লিখে পাঠাত “ছোট্টো ছানা ব্যাঙের পোনা,, ব্যাঙে না হলে চলে না”?? অদ্ভূত!! কেন জানি মনে হচ্ছে সারা একটু পর কেঁদে ফেলবে এবং সারা ঠিক তাই করল একটু পর তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে লাগল, সারা কাঁদছে আর অন্য দিকে বরফ শীতল মিনারেল ওয়াটারের বোতল বেয়ে পানি পরে টেবিল ভেসে যাচ্ছে। … অদ্ভূত সুন্দর লাগছে সারাকে, ঠিক সেই অভিমানি কিশোরীর মত।

যে সারাটি বিকেল ধরে অপেক্ষা করে থাকে তার গোপন ভালোবাসার মানুষটির জন্যে। আর বিকেল শেষে দেখা হয়না তাদের। সারা ব্যাগ থেকে টিসূ বের করে চোখ মুছলো, কিন্তু তার কান্না কিছুতেই থামছেনা। তার টিস্যূ ও ফুরিয়ে গেলো এক সময়, ওয়েটার কে ডেকে আরো গোটা পাঁচেক টিস্যূ আনা হলো তাও ফুরিয়ে গেলো। আবির বললো চলো বাসায় ফিরে যাই।

এক মিনিট তার আগে চলো চোখ মুখে পানি দিয়ে আসবে। ওয়াস বেসিনের সামনের আয়নায় তাকিয়ে সারা চমকে উঠলো। আবির .. তুমি এতক্ষণ বলনি কেন, আবির হাসছে,, সারা বল্লো আমাকে কি ভুতের মত দেখাচ্ছে? আবির কিছুই বলেনা। আবির শুধু হাসছে,, সারা অনবরত মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে। লেপ্টে থাকা কাজলের দাগ মুছে গিয়েছে।

সারা আবারো বল্লো আমাকে কি ভুতের মত দেখাচ্ছিলো? আবির হাসছে,, আবির বল্লো “না। ভুত তো পূরুষদের বেলায়, তোমাকে পেত্নীর মত লাগছিল ” । এবার সারা হেসে উঠলো,…. দুজন ই অনবরত হাসছে, আবিরের চোখ জলে ভিজে উঠলো, নিছক একটা আনন্দে| রেস্টুরেন্টের জানলা দিয়ে রোদ ঠিকরে পরছে সারার গালে, রেস্টুরেন্টের এসির ঠান্ডা বাতাস একে বেকে দোলা দিয়ে গেল এক দমকা সারার চুলে এটাই বোধ হয় ‘না বুঝে ওঠার মত সুন্দর”….ভীষন ভলোলাগে আবিরের, প্রিয় এই মানুটার আলোকিত মুখের দিকে তাকিয়ে …সারা তোমাকে সুন্দর লাগছে.. অনেক সুন্দর.. ঠিক কেমন যেন ‘না বুঝে ওঠার মত সুন্দর’|| চমৎকার! সুন্দর একটা সময়|| সুন্দর এই সময়| (বিঃদ্রঃ কাজল বলে যে জিনিসটি মেয়েরা ব্যবহার করে সেটি একটি ভয়ঙ্কর পেন্সিল বিশেষ ব্যবহার বিধি তারচেয়েও ভয়ঙ্কর…more risky আরও ভয়ঙ্কর যখন কোন মেয়েকে দেখি “চলন্ত গাড়ি” তে বসে ছোট্ট আয়না ধরে ঝটপট তার চোখ একে নেয়, সে দৃশ্য)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।